অভিমান হাজারো পর্বঃ-২
আফসানা মিমি
—“এ্যাই মেয়ে, তুমি কি প্রতিজ্ঞা করেছো যে আমাকে শান্তিতে একটু ঘুমাতে দিবে না?”
হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফ্লোরে বসে কাঁদছিল অতশী। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে স্পন্দন। অতশীকে দেখেই ওর বুকটা ধুক করে উঠলো। কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করেছে মেয়েটা! মেয়েদের চোখে এতো পানি কই থেকে আসে? যেন সমুদ্রের সাথে মেয়েদের চোখের যোগসূত্র আছে! একটু কিছু হলেই গড়িয়ে পড়বে।
—“আমি তো তোমাকে বিরক্ত করছি না। তাহলে এসব বলছো কেন?”
স্পন্দন তাকে কিভাবে বুঝাবে যে তার নীরব কান্না ওর বুকের ভিতর গিয়ে বিঁধছে! একেক ফোঁটা চোখের পানি যেন একেকটা তীরের ফলা। এটা কি সে বুঝতে পারে না? এটাও তার বুঝিয়ে দিতে হবে ওকে? নাহ, বুঝাতে হবে না তাকে। বুঝোক প্রিয়জন কষ্ট দিলে কেমন লাগে! নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুটা কঠিন হয়েই বললো
—“তোমার এসব ন্যাকা কান্না আমার বিরক্তই লাগছে। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ো।”
—“কিন্তু তুমি তো……”
—“যা বলছি তা করো আর কথা না বাড়িয়ে।”
অতশী চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর স্পন্দন গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দূর আকাশপানে তাকিয়ে থাকে। রাজ্যের চিন্তা ভর করেছে তার মাথায়। শতশত প্রশ্নেরা মাথায় ঠেলাঠেলি করছে। একটা সিগারেটের দরকার ছিল এখন। যাতে টেনশন থেকে একটু মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু তা চায়লেও সম্ভব না। কারন সে অতশীকে কথা দিয়েছে আর কোনদিনও সিগারেট স্পর্শ করবে না। অতশীকে দেওয়া কথা রাখতেই হবে। নয়তো সে অনেক কষ্ট পাবে। চোখের পর্দায় যেন রিপিট হচ্ছে সেদিনের ঘটনাটা।
…
—“কি হলো এভাবে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছো কেন মুখের দিকে? খুব তো ঝগড়া করে ফোন রেখে দিয়েছিলে। কেঁদে কেটে কি অবস্থা করেছো মুখের সেই খেয়াল আছে তোমার? ঝগড়া করে আবার একটু পরেই দেখা করতে চায়লে। ব্যাপার কি?”
অতশী অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
—“সেটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করবো। ব্যাপারটা কি? আজকে হঠাৎ চুইমগাম চিবাচ্ছো যে!”
স্পন্দন থতমত খাওয়া গলায় কোনমতে বললো
—“আরে একটা চুইমগামই তো! এতে এভাবে তাকানোর কি আছে? এতোটা খারাপ জিনিসও না
এটা, ওকে?”
যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে তেমন একটা ভাব ধরে বললো
—“তার জন্যই তো সন্দেহ হচ্ছে।”
—“মানে কি? কিসের সন্দেহ?”
—“সেদিন আমি একজনের কাছ থেকে খবর পেয়েছি যে তুমি ধূমপান করেছো।”
অতশীর কথা শুনেই স্পন্দন চমকে উঠে। এ খবরটা আবার কে দিল ওকে? আজকে বোধহয় তার আর রেহাই নেই! অতশীর ধমকে ঘোর ভাঙলো স্পন্দনের।
—“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
—“আরে কিসব আবোল তাবোল বলছো তুমি? কে না কে বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে?”
হঠাৎ অতশী স্পন্দনের ডান হাতটা তার মাথায় রাখে। ভয় পেয়ে যায় স্পন্দন। তবে কি……?
—“এবার বলো সত্যিটা।”
হাতটা সরিয়ে নেয় স্পন্দন। সত্যিটা বলার সৎ সাহস তার নেই। মাথা নিচু করে বসে রইলো।
—“তার মানে তুমি সত্যিই…..! আর আজকেও আবার মুখে নিয়েছো ঐ সিগারেট? কি হলো কথা বলছো না কেন এখন? উত্তর দাও!”
অনেকটা চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলো অতশী। কি বলবে স্পন্দন? যে সেদিন সত্যিই সিগারেট নামক বিষপান করেছিলাম! আর আজকেও।
—“তোমার সাহস হয় কি করে ঐ ঠোঁটে সিগারেট ছোঁয়ানোর? যেখানে কিনা আমিই এখনো পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারিনি সেখানে ঐ বিষটা কিভাবে ছোঁয়ালে? আমার অনুমতি নিয়েছিলে তুমি?”
কাঁচুমাচু হয়ে স্পন্দন বললো
—“ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করো। নেক্সট টাইম তোমার পারমিশন নিয়েই সিগারেট খাব।”
—“ঠোঁট কেটে ফেলবো একদম। জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো। কত্ত বড় সাহস! কলিজা বড় হয়ে গেছে, তাই না? আবার বলে কিনা পারমিশন নিয়ে খাবে! তবে আমিও বলে রাখছি এরকমটা পরবর্তীতে দেখলে নিজের দ্বিগুণ ক্ষতি করবো। যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। মনে থাকে যেন! কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালো করে।”
…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
অতশীর ডাকে কল্পনার রাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরলো। রুমে গিয়ে দেখে বিছানার এক কোণায় অতশী জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
—“কি হলো? এভাবে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমাকে রাত জেগে পাহারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছো নাকি?”
হ্রস্বীভূত হয়ে মাথা নিচু করে অতশী বললো
—“না তা নয়। আসলে কোথায় ঘুমাবো বুঝতে পারছি না। তাই…..”
—“এতো ঢং না করে এক পাশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ো। রাত অনেক হয়েছে।” বিরক্তির সাথে বললো
—“তোমার কোন অসুবিধা হবে না তো?”
—“আমার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে তোমাকে অত ভাবতে হবে না আপাতত। নিজেকে নিয়ে ভাবো। যাও আর বিরক্ত না করে শুয়ে পড়ো। এমনিতেই ভীষণ ক্লান্ত আমি। আর কথা বাড়িও না।”
স্পন্দনের এসব কটু কথা শুনতে মোটেও ভালো লাগছে না অতশীর। তার নিজের করা ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আজ। সে জানে না কতদিন পর্যন্ত এই ভুলের মাশুল তাকে দিতে হবে! আজকে যেন তার চোখের পানির বাঁধ মানছে না। উপচে পড়ছে অশ্রুধারা। এতো বিরহ কেন ভালবাসায়? এ বিরহের শেষ কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতে এক পাশ হয়ে শুয়ে পড়লো।
আজকে নাকি তাদের বাসর রাত! দুইজন খাটের দুই মাথায় পড়ে আছে। যেন পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুইজন। স্পন্দনের ভিতরটা অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ভালবাসার মানুষটাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক? অতশীর নীরব কান্নার দমকে ক্ষণে ক্ষণে খাটটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। এ মেয়েকে নিয়ে হয়েছে আরেক জ্বালা! এতো কান্নার কি আছে? সে বুঝেও কেন বুঝে না যে তার কান্না স্পন্দনের সহ্য হয় না!
নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে অতশীকে হেঁচকা টান দিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। এতে করে যদি তার কান্নাটা একটু থামে! আর তার বুকটাও শান্তি খুঁজছে। জ্বলতে থাকা ভেতরের আগুনটা না নেভানো পর্যন্ত শান্তি নেই। মনে মনে আওড়াতে লাগলো
“তোমাকে তো আল্লাহ্ তায়ালা আমার বুকের বাঁ পাঁজরের সবার উপরের হাড়টা দিয়েই তৈরি করেছে। কিন্তু তুমি এখন আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদার কারনে আমার পাঁজরের বাকি হাড়গুলোতেও অসহ্য ব্যথা অনুভব করছি। এ ব্যথা সইবার ক্ষমতা আল্লাহ্ আমাকে দেয়নি। এমনকি কোনকালে দিবে বলেও মনে হয় না।”
…
খুব সকালেই ঘুম ভেঙে যায় অতশীর। তাই অজু করে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ স্পন্দনের শিয়রে বসে থাকে। কি শান্তির ঘুম দিয়েছে মানুষটা! ঘুমের মধ্যে একেবারে নিষ্পাপ লাগে। আর কাল সারাটাদিন কত রেগেই না ছিল। কিছুক্ষণ চুলে হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে মুচকি হাসে অতশী। স্পন্দন হালকা নড়েচড়ে উঠায় রুম থেকে ত্রস্তে বেড়িয়ে যায় সে।
স্পন্দন চোখ মেলে তাকায়। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা। যে মেয়ে লজ্জায় ভালো করে কথাই বলতে পারতো না। তার চোখে সরাসরি চোখ রাখতে পারতো না বেশিক্ষণ। সেই মেয়ে নিজ থেকেই কপালে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়েছে। ভাবা যায় এগুলো? পরক্ষনেই আবার কি মনে করে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।
স্পন্দন নিচে নেমে দেখে তার মা আর অতশী টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজাচ্ছে। চাউলের গুঁড়ার রুটি আর মুরগীর গোশতের ঝাল ভুনা দেখেই যেন তার জিহ্বায় পানি চলে আসলো। কারন এগুলো তার ফেভারিট খাবার। তাড়াতাড়ি করে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তার যেন আর সহ্য হচ্ছে না। সবাই এসে একে একে টেবিলে বসতে লাগলো। সবার মধ্যে টুকটাক কথা হচ্ছে। সর্বপ্রথম স্পন্দনই খাওয়া শুরু করলো। স্পন্দনের এমন অবস্থা দেখে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি দেখা গেল অতশীর। এক টুকরো রুটি ছিড়ে গোশত নিয়ে মুখে দিয়ে দুই তিন চিবান দিয়েই মুখটা অন্ধকার করে ফেললো স্পন্দন। এটা দেখে অতশীরও মনটা খারাপ হয়ে গেল। তবে কি খাবার ভালো হয়নি?
স্পন্দনের উঠে যাওয়া দেখে ওর মা প্রশ্ন করলো
—“কিরে না খেয়েই ওঠে যাচ্ছিস যে!”
—“জঘন্য হয়েছে খাবার। যাকে তাকে দিয়ে খাবার বানাতে যাও কেন?”
যদিও স্পন্দন জানে যে আজকের রান্নাটা অতশীই করেছে। এবং রান্নাটা খুবই সুস্বাদু হয়েছে। শুধুমাত্র তাকে কষ্ট দিতেই এরকমটা করলো সে। এ কষ্ট তো অতশীর তাকে দেওয়া কষ্টের কাছে কিছুই না। বুঝোক প্রিয় মানুষের দেওয়া কষ্ট কতটা ক্ষতবিক্ষত করে হৃদয়টাকে! কেমন অনুভূতি হয়!
আচ্ছা স্পন্দন কি ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে? ও তো আমার রান্না করা খাবার অনেক ভালবাসে। তাহলে আজ এমন করলো কেন? ছলছল চোখ নিয়ে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো অতশী।
—“কিরে রান্না তো খুবই ভালো হয়েছে। তুই জঘন্য বলছিস কেন?”
—“যা সত্যি তাই বলেছি। ভালো হলে তোমরাই খাও।”
আর কিছু না বলেই হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে গেল স্পন্দন। সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অতশী। ভাবছে তোমার সাথে করা অন্যায়ের কি কোন ক্ষমা নেই তবে?
অতশীকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার শাশুড়ী মা বললো
—“মামনী এসো। খেতে এসো। কাল থেকে তো মনে হয় ভালো করে কিছুই খাওয়া হয়নি তোমার।”
চোখের কার্নিশে জমা পানিটা আলগোছে মুছে বললো
—“না আন্টি আমি ঠিক আছি। আর আমার এখনো ক্ষিদে পায়নি। পরে খেয়ে নেব। আপনারা খান।”
—“সে কি কথা! তোমার মুখটা তো শুকিয়ে আছে। আসো তাড়াতাড়ি বসে খেয়ে নাও।”
—“আন্টি আমি ক্ষিদে লাগলে পরে খেয়ে নেব। প্লিজ এখন জোর করবেন না।”
—“আচ্ছা ঠিক আছে খেয়ে নিও কিন্তু। কোনরকম লজ্জা পাবে না। নিজের বাড়ি মনে করবে এটা ঠিক আছে?”
—“ঠিক আছে আন্টি।”
অতশী রুমে এসে দেখে স্পন্দন রেডি হচ্ছে।
—“না খেয়ে চলে আসলে যে!”
—“ক্ষিদে নেই।”
—“ক্ষিদে নেই নাকি আমার রান্না করা খাবার দেখে খাওনি?”
—“যদি বলি তাই!”
—“এতো ঘৃণা আমার প্রতি যে খাবারটাও খেলে না!”
অতশীর এমন কথায় স্পন্দন নিশ্চুপ রইলো।
—“এতো সকাল সকাল ফর্মাল ড্রেস পরছো যে! কোথাও যাবে নাকি?”
—“হুম অফিসে।” আস্তিনের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো
অতশী কিছুটা অবাক হয়ে বললো
—“আজ কিসের অফিস? অফিস থেকে ছুটি নাওনি?”
—“অফিস না গেলে কি বস আমার সেলারি বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে? বসে বসে খাওয়ার জন্য রেখেছে আমাকে? যত্তসব!”
—“এতো রাফ বিহেভ করো কেন? ভালো করে বললেই তো হয়। জানো না এমন ব্যবহার আমি নিতে পারি না!”
—“ভালো বিহেভিয়ারের যোগ্য না তুমি। সেই যোগ্যতা হারিয়েছো তোমার নিজের ভুলে।”
আর কথা বাড়াতে চায় না অতশী। তাদের সম্পর্কটা আট দশটা সম্পর্কের মতোই যেন স্বাভাবিক হয়ে যায় সেই চেষ্টাই করবে সে। স্বাভাবিক হওয়ার জন্য বললো
—“আচ্ছা আজকে তো আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা।”
—“যেতে হলে যাও। আমার কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছো কেন?”
—“তোমাকে ছাড়া……”
—“যাও তো সামনে থেকে। মেজাজ খারাপ করো না। আহ্লাদ করতে এসেছে এখানে! যত্তসব!”
কিছুটা জোরে ধমকের সাথে বললো স্পন্দন
ওড়নার আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে ব্যালকনিতে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো অতশী। ভালবাসার মানুষটার কাছ থেকে এতো কষ্ট নিতে পারছে না সে। একটুও কি কষ্ট হচ্ছে না স্পন্দনের তাকে এতো কষ্ট দিয়ে? খুব কি শান্তি পাচ্ছে স্পন্দন?
কেমন লাগে অতশী ভালবাসার মানুষের দেওয়া কষ্ট? সইতে খুব কষ্ট হয় তাই না? আমারও ঠিক এমনই লাগতো তোমার ব্যবহার। এবার আস্তে আস্তে বুঝাবো অবহেলায় কতো কষ্ট! কতো যন্ত্রণা! যেমনটা আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছি। এখন থেকে তোমার পালা। ড্রাইভ করতে করতে মনে মনে বলছে স্পন্দন।
…
কয়েকদিন আগের ঘটনা। কেন যেন মনে হচ্ছে অতশী স্পন্দনকে এড়িয়ে চলতে চায়ছে। সম্পর্কের চার বছর চলছে অথচ অতশী সেই চার বছর আগের অতশীই আছে। একদিন যদি দেখা না হয় তার অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো। যদি একটু ব্যস্ততার জন্য তাকে ফোন না দিতে পারতো তাহলে কেঁদে চোখমুখ ফুলিয়ে ঢোল বানিয়ে বলতো
—”জানি তো এখন পুরনো হয়ে গেছি তাই আর অত ইন্টারেস্ট নেই আমার প্রতি। নিশ্চয় অন্য আরেকজনকে পেয়েছো। যে কিনা আমার চেয়েও সুন্দরী।”
অতশীর এমন কথা শুনে স্পন্দন কিছুক্ষণ থম মেরে থাকতো। আবার পরক্ষনেই গগনবিদারী হাসি দিতো আর বলতো
—”আরে পাগলী, আমার আত্মাটা তো তোমার কাছেই বন্দী। যেদিন তোমার কাছ থেকে চলে আসবে মনে করবে সেদিন আমার মৃত্যু হয়েছে। অন্য কোন মেয়ের কাছে যাবে না। আর তুমি তো আমার অক্সিজেন। আমার বেঁচে থাকার কারণ। তোমাকে ছাড়া তো আমি শ্বাস প্রশ্বাস নিতেই ভুলে যাই। তোমাকে আমি অলটাইম মিস করি। একটা সেকেন্ডও ভুলে থাকতে পারি না। বুঝো না তুমি?”
গাল ফুলিয়ে কণ্ঠে এত্তগুলা অভিমান ঢেলে বলতো
—“ইহ অক্সিজেন না ছাই! আমি তো তোমার নাইট্রোজেন। আমার সাথে দেখা করলেই যেন নাইট্রোজেন গ্যাসের প্রকোপে মারা যাবে! তাই তো দেখা করতে তোমার এতো এতো সমস্যা।”
অতশীর এমন কথা শুনে স্পন্দন মনে মনে হাসে আর ভাবে এমন পিচ্চিই থাকবে সবসময়। আমার একটু ভালবাসার অভাব হলেই যেন এই এত্তগুলা অভিযোগ করতে পারো। আর আমি তা মুগ্ধ চোখে শুনবো।
আগের অতশীর সাথে এখনকার অতশীর কোন মিলই খুঁজে পাচ্ছিল না স্পন্দন। আগে দেখা না করলে, ফোন না দিলে কেঁদে অবস্থা খারাপ বানিয়ে ফেলতো। আর এই কয়েকদিন যাবৎ স্পন্দন ফোন না দিলে যেন অতশী বেঁচে যায়। নিজে থেকে একটাবারও ফোন দিয়ে খোঁজ নিতো না। দেখা না করলেও আগের মতো আর অভিযোগ করতো না। বরং দেখা না করলেই যেন বড় বাঁচা বাঁচে! সত্যিই এরকম করার কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না স্পন্দন।
সেদিন এক প্রকার জোর করেই অতশীর সাথে দেখা করে স্পন্দন। পাক্কা ছয় দিন পর তাদের দেখা হয়েছে। অতশীকে দেখেই স্পন্দনের বুকে ব্যথা শুরু হয়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। মুখটা যেন শুকিয়ে গেছে। চোখগুলো গর্তের ভিতর দেবে গেছে। চোখের নিচে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে। মুখে সেই আলোর ঝলকানিটা দেখতে পায়নি সেদিন। আগে তার সাথে দেখা হলে অতশীর খুশির সীমা থাকতো না। চোখেমুখে যেন সবসময় আলোকছটা বর্ষিত হতো। স্পন্দন বুঝে পায় না তাকে ছাড়া যেহেতু অতশী ভালো নেই তাহলে সে এরকম করছে কেন? এর পেছনে বড় কোন রহস্য নেই তো! কিছু লুকাতে চায়ছে না তো!
পাগল পাগল হয়ে স্পন্দন জিজ্ঞাসা করেছিল
—“অতশী তোমার কিছু হয়েছে? আমাকে খুলে বলো। তোমার এই অবস্থা কেন? কেউ কিছু বলেছে?”
অতশী দায়সারাভাবে বলেছিল
—“আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি। এখন কি বলবে বলো। এভাবে জোর করে আমাকে এখানে ডেকে আনার মানে কি?”
—“এভাবে কথা বলছো কেন জান? কতদিন ধরে তোমায় দেখি না! আমাকে দেখতে একটুও ইচ্ছে হয় না তোমার?”
—“না হয় না।” নির্বিকার গলায় বললো
স্পন্দন অবাক হয়ে যায় তার এহেন কথায়।
—“কি? কি বললে তুমি? আবার বলো তো!”
—“একবার বলেছি তো।” আগের মতোই নির্বিকার
—“আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলো। আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নেই প্রাণপাখি।”
—“আমি এ সম্পর্কটা থেকে মুক্তি চাই।”
অতশীর এমন কথায় যেন ছোটখাটো একটা বোমা ব্লাস্ট হলো। হঠাৎ এমন একটা কথা শুনে স্পন্দনের যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে। অতশীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে তার দুই কাঁধ ঝাকিয়ে চিৎকার করে বলেছিল
—“পাগল হয়ে গেলে তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার?”
নিজেকে স্পন্দনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
—“হ্যাঁ আমার মাথা ঠিকই আছে। তোমার সঙ্গ আমার আর ভালো লাগে না। তোমাকে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে। কোন ফিলিংস আসে না এখন আর তোমার প্রতি। আমাকে মুক্তি দাও।”
—“তোমাকে আমি ভালবাসি বুঝেছো? ভালবাসি। কোন ছেলেখেলা নয় এটা যে বললেই ভেঙে দেয়া যায়। আর তুমি এমন করছো কেন আমাকে খুলে বলো না সোনা? তোমার ওপর কেউ আঙ্গুল তুলেছে আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে? নাকি আমার করা কোন ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছো বলো? প্লিজ একটিবার বলো আমায়!”
—“আমার ভালো লাগে না তোমাকে আর আগের মতো। প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও, প্লিজ! আর কিছু জিজ্ঞেস করো না আমাকে দয়া করে। মুক্তি চাই আমি।”
হাত জোর করে কাকুতিমিনতি করছিল অতশী।
—“এই মেয়ে, নিজেকে কি ভাবো তুমি? তুমি বললেই তোমাকে আমি ছেড়ে দিব? বাচ্চা পেয়েছো আমাকে? অসম্ভব! কস্মিনকালেও তা সম্ভব হবে না।”
—“আমি অন্য আরেকজনকে ভালবাসি। কানে ঢুকেছে কথাটা? সামনে তার সাথেই আমার বিয়ে। আমার জীবন থেকে সরে যাও। নয়তো আমি সুখী হতে পারবো না। আমার সুখের কথা ভেবে হলেও সরে যাও।”
এ কথা শুনে স্পন্দন যেন একেবারে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। অতশী কি বলছে এসব? তার ভালবাসায় কি কোন তবে ঘাটতি ছিল? তার ভালবাসায় কি জোর ছিল না তবে? যার কারনে ওকে তার ভালবাসায় আঁটকে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে! নাহ, অতশী নিশ্চয়ই মিথ্যে কথা বলছে।
—“এ চোখে চোখ রেখে বলো যে তুমি আমায় ভালবাসো না। অন্য আরেকজনকে ভালবাসো!”
—“পারবো না আমি। একবার তো বলেছিই। আজকের পর থেকে আমার সাথে আর কোন ধরনের কন্টাক্ট করার চেষ্টা করবে না। আমাকে একটু সুখে থাকতে দাও। প্লিজ প্লিজ!”
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় অতশী। স্পন্দনের আর কিছু বলার নেই। তার মুখের ভাষারা সব কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
কল্পনার রাজ্য থেকে ফিরে এসে গাড়ির স্টিয়ারিং এ জোরে একটা ঘুষি দিয়ে রেগে ফেটে বললো
“কেন সেদিন এমন করেছিলে তুমি অতশী? কি কারনে তুমি এতোটা কষ্ট আমায় দিয়েছিলে? আমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে কি খুব সুখে ছিলে তুমি? খুব জানতে ইচ্ছে করে। সুখে থাকার জন্যই তো আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলে। চলে গিয়ে খুব কি সুখে ছিলে? সুখে থাকার এইই কি নমুনা? নাকি কোন রহস্য লুকিয়ে আছে যা আমার চোখে পড়ছে না! সত্যিটা কি তা জানতেই হবে।”
চলবে……..