অভিমান হাজারো পর্বঃ৮
আফসানা মিমি
এই কয়েকদিন যাবৎ স্পন্দন খেয়াল করছে অতশী প্রায়শই দুইহাতে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে। রাতে ঘুম থেকে ওঠে চুপিচুপি কতকগুলো ট্যাবলেট খায়। তাও আবার স্পন্দনের অগোচরে। অতশী যখন তার বুক থেকে ওঠে যায় তখন সেও জেগে যায়। ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকে। চুপিচুপি অতশীর কর্মকান্ড দেখে। ঔষধ খেয়ে ঔষধের বক্সটা লুকিয়ে রাখে। অতশীর এমন ব্যবহারের কারণ খুঁজে পায় না স্পন্দন। কিছু কি লুকাতে চায়ছে অতশী তার কাছ থেকে!
আজকে রাতেও অতশীর এমন কর্মকান্ড দেখে অবাক হয় স্পন্দন। স্পন্দনের বুকের ওপর থেকে আস্তে করে সরে গিয়ে কতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তারপর ওয়্যারড্রোব থেকে কিসের কাগজ বের করে তার সাথে মিলিয়ে কয়েকটা পাতা থেকে ঔষধ খায়। খেয়ে কতক্ষণ স্পন্দনের শিয়রে বসে ওর মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। স্পন্দনেরও ইচ্ছে করে অতশীর চোখে চোখ রেখে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে তার ভিতরটা পড়ে ফেলতে। কিন্তু ভিতর থেকে কে যেন বাধা দেয়। স্পন্দনের কাছ থেকে ওঠে গিয়ে ব্যালকনির সোফায় মাথা নিচু করে মুখ ঢেকে কান্না করে। রাতের বেলায় চারপাশ নিস্তব্ধ থাকার কারণে অতশীর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজটা দেয়ালে দেয়ালে বারি খেয়ে স্পন্দনের বুকটা ঝাঁজরা করে দেয়। এতোদিন দূর থেকেই দেখে গেছে অতশীকে। আজকে কেন জানি একটু বেশিই বুক জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে অতশীর জন্য। যাকে বলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলা।
ফ্লোরে হাটু ফেলে অতশীর বাম পাশে বসে পড়ে স্পন্দন। এখনো কেঁদে চলেছে অতশী। গলা ও কানের বামপাশে গরম বাতাস অনুভব করছে অতশী। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কাছে মনে হচ্ছে স্পন্দনের চোখের দৃষ্টি তার কান্না করার কারণ জানতে চায়ছে। স্পন্দনকে দেখে তার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অতশী।
—“অতশী কি হয়েছে তোমার? এভাবে কান্না করছো কেন?”
স্পন্দনের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। এভাবে কান্না করার মানে কি! অতশী স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে নিশ্চুপ কেঁদে চলেছে।
—“প্লিজ অতশী বলো না! কি হয়েছে তোমার?”
—“আমাকে কখনো ভুল বুঝো না স্পন্দন। জানো আমার বুকের ভিতর অনেক কষ্ট জমে আছে। সারাটাক্ষণ এই বুকের ভিতরটা পুড়ে। প্রতিনিয়ত এ বুকের ভিতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আর সে আগুনে পুড়ে পুড়ে আঙ্গার হয়ে যাচ্ছি আমি।”
স্পন্দনের হৃদপিণ্ডে অজানা একটা কষ্ট আর শঙ্কা এসে খামচে ধরলো যেন। কিসের এতো কষ্ট অতশীর!
—“প্লিজ শান্ত হও, কান্না থামাও জান আমার। তোমার কিসের কষ্ট আমাকে শুধু একবার বলো সোনা! আমি সব দূর করে করে দিব প্রমিস করছি।”
—“আমি তোমার ভালোর জন্যই এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কে চায় চোখের সামনে নিজের ভালবাসার মানুষটা কষ্ট পেয়ে ধুকে ধুকে মরুক! আমিও এমনটা চাইনি তাই তোমার সাথে এরকম করতে চেয়েছিলাম। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝে আর দূরে সরিয়ে দিও না। আমার যে বড্ড কষ্ট হয়। তুমি কেন বুঝো না তোমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য কতটা উতলা আমি! কেন একটুও ভালবাসা দাও না আমাকে? আমি কি এতোই খারাপ যে তোমার একটু ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না!”
স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললো অতশী। আর স্পন্দন নীরবে অতশীর অভিযোগগুলো শুনলো বসে। সোজা করে অতশীকে বসিয়ে নিজেও অতশীর পাশে বসে দুইহাতে মুখটা তুলে কপালে একটা ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিল। গাল বেয়ে পড়া চোখের নোনতা পানিগুলো একে একে ঠোঁট দিয়ে শুষে নিচ্ছে স্পন্দন। সবশেষে বন্ধ চোখের পাতায় চারটি চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিল অতশীকে।
আস্তে করে বিছানায় শোয়ালো অতশীকে। অতঃপর ঠোঁট ডুবালো অতশীর গোলাপী ঠোঁটে। খুব করে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে অতশীকে। যাকে বলে মনপ্রাণ উজার করে। পরিপূর্ণ করতে চায় তাদের ভালবাসা। ঠোঁট থেকে মুখ নামিয়ে আস্তে আস্তে গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়েছে স্পন্দন। স্পন্দনের প্রত্যেকটি উষ্ণ নিঃশ্বাস অতশীর পুরো শরীর শিহরিত করছে। আবেশে চোখ বন্ধ করে স্পন্দনের চুল দুই হাতে আঁকরে ধরে। গলায় পরপর কয়েকটি চুমু দেওয়ার পর হঠাৎ করেই স্পন্দনের মনে পড়ে যায় অতশী অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল। আজ তার জায়গায় ঐ অচেনা ছেলেটি থাকতো। ঠিক এভাবেই আদর করতো অতশীকে। আচ্ছা অতশীও কি এভাবে উপভোগ করতো ঐ ছেলেটার আদরগুলো! যেভাবে এখন উপভোগ করছে তার আদর! গলা থেকে মুখ উঠিয়ে অতশীর দিকে তাকায় স্পন্দন। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। নিঃশ্বাস দ্রুততর উঠানামা করছে অতশীর।
হঠাৎ করেই এসব কথা মনে পড়ে যাওয়ায় অতশীকে ছেড়ে উঠে বসে পড়ে স্পন্দন। যে মেয়েটা তাকে ঠকিয়ে অন্যকাউকে তার রাজ্যের সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল। সে মেয়েটাকেই সে ভালবাসতে যাচ্ছিল! তাকে জ্বলিয়ে পুড়িয়ে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে সুখী হতে যাচ্ছিল এই বিশ্বাসঘাতক মেয়েটা। আর সে কিনা এসব ভুলে গিয়ে তাকেই মনপ্রাণ উজার করে ভালবাসতে যাচ্ছিল! এই মেয়েটা তার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না। তাকে তার করা কর্মকান্ডের ফল ভোগ করতেই হবে।
খাট থেকে নেমে ব্যালকনিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিল স্পন্দন। আচমকা হাতে টান অনুভব করে। পিছনে তাকিয়ে দেখে অতশী চোখে মুখে পরিপূর্ণ হওয়ার আকুলতা নিয়ে অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়। সোফায় হেলান দিয়ে বসে একটা সিগারেট জ্বালায়। আজ অনেকদিন বাদে মুখে সিগারেট নিয়েছে স্পন্দন। যদিও অতশীকে কথা দিয়েছিল জীবনে আর কখনোই সিগারেটের নামও মুখে নেবে না। কিন্তু এতোদিন বাদে আজ নিতেই হচ্ছে। ভিতরটায় একটা অজানা কষ্ট মাথাচাড়া দিয়ে বেড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। বুকের পুরোটা জায়গা খুব পুড়ছে। সেই আগুনটা নিঃশেষ করতে হবে এই আগুন দিয়ে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
স্পন্দনের এমন কান্ডে যারপরনাই অবাক হয়ে যায় অতশী। সে ভেবেছিল আজ স্পন্দনের উজার করা ভালবাসা পাবে। কিন্তু সবার কপালে কি সব সয়! তার কপালেও যে ভালবাসা সইবে না। আজ একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে অতশী। বুকের ভিতরের কষ্টগুলো চোখ দিয়ে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে। ‘এমন কেন করছো স্পন্দন? আমি কি তোমার একটুও ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না? তোমার ভালবাসা পাওয়ার অধিকার কি আমার নেই? এতোই ঘৃণা করো আমাকে? ঘৃণাই যেহেতু করো তাহলে গলা টিপে মেরে ফেলছো না কেন আমাকে? আমার যে এতো মনের জোর নেই। তোমার অবহেলা যে আর নিতে পারছি না আমি। কলিজায় কামড় দেয় যখন তুমি আমাকে ইগনোর করো। একটা ভুল, শুধুমাত্র একটা ভুলের মাশুল তুমি এভাবে নিচ্ছো আমার কাছ থেকে! একটুও বুঝার চেষ্টা করলে না আমাকে! তোমার ভালো চাওয়াটা কি আমার অপরাধ? যদি অপরাধই হয় তবে মনে রেখো আজ থেকে নতুন এক অতশীকে দেখবে। নিষ্প্রাণ এক অতশীকে দেখবে। কোন কিছুর দাবি নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবো না। সুখে থাকো তুমি, সুখে থাকো।’
…
আজ আফরাকে দেখতে আসবে। পাথরের মূর্তির মতো এক ধ্যানে বসে আছে সে। তার যেন কোন অনুভূতিই কাজ করছে না। আচ্ছা যার সাথে তার বিয়ে হবে সেও যদি তাকে প্রথমজনের মতো তার ভালবাসার মর্যাদা না দেয়! যদি দূরে ঠেলে দেয় তার ঐ মানুষটির মতো! সে কি সইতে পারবে? আচ্ছা অয়নের কি খারাপ লাগবে? তার অন্যকারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলে! হঠাৎ করে মাথায় এমন চিন্তা খেলে যাওয়ায় আফরা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে গেল। অয়নের কথা তার হঠাৎ এভাবে এসময় মনে পড়লো কেন? আর তার বিয়ে হয়ে গেলে অয়নেরই বা খারাপ লাগবে কেন? সে কি হয় অয়নের? তাদের দুজনের মধ্যে কি আদৌ কোন সম্পর্ক আছে? নাহ নেই তো। তাহলে? ক্ষণিকের ভালো লাগায় কি কারোর জন্য বুক পুড়ে? কিন্তু তার বুকের ভিতর এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন? যেন মনে হচ্ছে তার কলিজাটা কেউ টেনে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে জোরজবরদস্তি করে।
আফরার চিন্তার রাজ্যে ব্যাঘাত ঘটিয়ে তার মা এসে উপস্থিত। তার ডাক পড়েছে ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য। ছেলেপক্ষ নাকি অপেক্ষা করছে। শুনেই হাত পা যেন অসাড় হয়ে আসছে। সারা শরীর কাঁপছে। ফ্যানের নিচে বসে থেকেও কুলকুল করে ঘাম ঝরছে যেন ওর পুরো শরীর বেয়ে। সাথে হাজার মাইলের হার্টবিট। বুক ব্লাস্ট করে বেড়িয়ে না আসলেই হয়।
ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দিল। এক মধ্যবয়স্কি মহিলা আফরাকে উনার পাশে নিয়ে বসালেন। এটা সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললেন। হঠাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠ শুনে সেদিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হা হয়ে গেল আফরা। স্পন্দন ভাইয়া এখানে কি করছে! তার পাশেই চোখ যেতে তব্দা খেয়ে বসে রইলো আফরা। অয়ন! এখানে! এখানে কি করছে সে? তবে কি অয়নের সাথেই তার বিয়ে ঠিক হচ্ছে? কিন্তু সেদিন তো তার চোখে একরাশ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়নি আফরা। তবে আজকে এসবের মানে কি? সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে আফরার।
ভাবনার রাজ্য থেকে বেড়িয়ে আসতে হলো তার পাশে বসা মহিলার কথায়।
—“কিরে অয়ন তোর কি কিছু বলার আছে? চায়লে আলাদা কথা বলে নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়া করে নিতে পারিস। তাহলে দুজনের মধ্যে আন্ডার্স্টেন্ডিংটা ভালো হবে। একে অপরের সাথে কথা বলে সবকিছু মিটমাট করে নে।”
মুহূর্তেই আফরার মাথায় খেলে গেল ‘কি মিটমাট করার কথা বলছে এই আন্টি?’ আফরা মনে মনে চায়ছিল অয়ন যাতে রাজি হয় আলাদা কথা বলতে। তাহলে অন্তত ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবে ঐদিনের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে অয়ন বলে ওঠলো
—“না ফুপ্পি তার কোন দরকার নেই।”
‘মুখটা এমন প্যাঁচার মতো মুখ করে বসে আছে যেন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত উনি! উনাকে কি কেউ গলায় ছুরি ধরে বিয়ে করাতে এনেছে নাকি এখানে? তাহলে মুখের এমন অবস্থা কেন? একটু হাসলে কি হয়!’
অয়নের দিকে তাকিয়ে আপনমনে বিড়বিড় করে এসব বলছে আফরা। মাথাটা এখনো সেই নিচু করে বসে মোবাইল গুতাচ্ছে। মোবাইলে কি সংসার পেতেছে নাকি? হুহ্! মনে তো হচ্ছে না যে একবারও তার দিকে তাকিয়েছে।
মাথা ওপরে তুলে আঙ্কেলকে কি যেন ইশারা করলো। কিন্তু আফরার দিকে একবারও তাকালো না। আঙ্কেলের কথা শুনে মাথায় চক্কর দিচ্ছে আফরার। এসব কি বলছে আঙ্কেল? সে তো এতো তাড়াতাড়ি তা আশা করেনি।
…
—“প্লিজ প্লিজ লাবণী আমার কথাটা তো শুনো!”
—“ঐ ফকির আমার নাম লাবণী নয় লাবণ্য। আর এভাবে ছেঁচড়ার মতো আমার পেছনে পড়ে আছিস কেন? তোর মাঝে কি লজ্জা শরমের বালাই নেই?”
—“আমি তো তোমাকে ভালবাসি। তাই ভালবেসেই এই নামে ডাকি এবং আজীবন ডাকবো। আর তাছাড়া ভালবাসায় লজ্জাকে স্থান দিতে নেই। নয়তো ভালবাসাকে আদায় করে নেয়া যায় না।”
হাল ছেড়ে দিয়ে বললো
—“তোকে আল্লাহ্ কি মাটি দিয়ে তৈরি করেছে রে? এতো অপমান করি তবুও গায়ে লাগে না তোর?”
—“ভালবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেতে গেলে এরকম একটু আধটু অপমান সহ্য করতেই হয়। আর তাছাড়া আমি জানি এগুলো তোমার মনের কথা নয় মুখের কথা। আমার জন্য তোমার ফিলিংস আসে আমি জানি। আর তুমিও আমাকে ভালবাসবে।”
তাচ্ছিল্যের সাথে লাবণ্য বললো
—“ভালবাসা! আর তোকে! হুহ্ দিবাস্বপ্ন দেখতে থাক। তোর এ আশা জীবনেও পূরণ হবার নয়।”
—“তবে চ্যালেঞ্জ রইলো তোমার সাথে! আমার ভালবাসা দিয়ে তোমাকে আমি জয় করবোই।”
—“আমি অন্যকাউকে ভালবাসি তুই জানিস না? তবুও কেন এভাবে আমার পেছনে ঘুরঘুর করিস? বিরক্ত লাগে না?”
একটু হেসে সামির বললো
—“ভালবাসলে কাঁটার আঘাতও সইতে হয়। আর যাকে ভালবাসি তাকে আমার ভালবাসা বুঝাতে বিরক্ত লাগবে কেন? বরং এটা তো সুখের মুহূর্ত। যতক্ষণ তোমাকে আমার ভালবাসাটা বুঝাবো ততক্ষণ তোমার মুখটা তো অন্তত দেখতে পারবো! তোমার মুখ দেখার মাঝে যে কত শান্তি পাই আমি তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।”
—“থাক আমাকে বুঝাতে আসতে হবে না। আমার পেছনে এভাবে চরকির মত ঘুরঘুর করবি না। আমার অসহ্য লাগে তোর উপস্থিতি।”
বলেই হনহন করে ক্লাসে চলে গেল লাবণ্য। সামিরের মাথায় আসে না তার ভালবাসাটা লাবণ্যকে কি উপায়ে বুঝাবে! মেয়েটা বুঝতেই চায়ছে না তার পবিত্র ভালবাসাটা। সারাক্ষণ রনক রনক করে। রনকের ব্যাপারে ওকে কিছু বলতেও পারছে না। বললো আরো উল্টো ভুল বুঝে তাকে ঘৃণা করবে। এমনিতেই ওর চক্ষুশূল সামির।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ক্লাসের দিকে রওয়ানা দেয় সামির। মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে সে। তবে যেকোন উপায়েই হোক লাবণ্যর ভুলটা ভাঙাতে হবে। সেই সাথে তার ভালবাসায় ওকে আবদ্ধ করে ফেলতে হবে। এবং এই কাজটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হবে। লাবন্যর কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই। নয়তো নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না সামির। ভালবাসে তো অনেক।
ক্লাসে ঢুকার আগে মোবাইলটা বেজে উঠে। পকেট থেকে বের করে দেখে মায়ের ফোন।
—“হ্যা আম্মু বলো কোন দরকার?”
—“দরকার বলেই তো ফোন দিয়েছি। তুই কোথায় এখন?”
—“কোথায় আবার ভার্সিটিতে।”
—“বাসায় চলে আয় তাড়াতাড়ি।”
—“কেন?”
—“যা বলছি তা কর না রে বাপ।”
—“আরে আমার আবার কি দরকার পড়লো হঠাৎ করে?”
—“আরে এতো কথা বাড়াচ্ছিস কেন বলতো? দরকার এজন্যই তো আসতে বলছি। তাড়াতাড়ি আয়।”
—“আচ্ছা ঠিকাছে আসছি।”
ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বাড়ির পথে পা বাড়ালো সামির।
চলবে………