অভিমান হাজারো পর্বঃ২৮

0
1969

অভিমান হাজারো পর্বঃ২৮
আফসানা মিমি

সামির,
প্রিয় বলতে পারলাম না। কারণ সেই অধিকারটা বোধহয় আমার নেই। আর আমি জোর করে সেই অধিকারটা ছিনিয়ে নিতে চাই না। ভাইয়া বললাম না, কারণ তোমাকে আমি অন্য চোখে দেখি। তাই ভাইয়া ডাকার প্রশ্নই আসে না।

এই নির্দয়া, পাষণ্ডী, অকৃতজ্ঞ মেয়েটাকে কী মাফ করা যাবে!? ভুল তো মানুষই করে, তাই না? ভুল ভাঙানোর সুযোগটা দেয়া যাবে? দিনের পর দিন যার নিষ্কলুষ ভালবাসাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে গেছি, তার একটু ভালবাসার ভাগীদার কী করবে আমাকে?! বড্ড তৃষ্ণার্ত আমি সামির। তোমার ভালবাসার অমৃত সুধা একটিবারের জন্য পান করতে দিবে? অতিশয় অসহায় আমি। তোমার মনের রাজ্যের এক টুকরো জায়গায় আমাকে একটু স্থান দিবে? রাণীর জায়গা চাইছি না। দাসী হিসেবে নাহয় দাসত্ব করে যাব আজীবন, আমরন।

ইতি
তোমার লাবণী

চিরকুটটা এই নিয়ে না হলেও পঞ্চাশ বার হবে পড়েছে সামির। কী যেন আছে এই ছোট্ট চিরকুটটায়। যতবার পড়ছে ততবারই এক মিশ্র অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে সে। লাবণ্যকে মাফ করে দিয়েছে সে অনেক আগেই। ভালবাসার মানুষটার ওপর কী রাগ করে থাকা যায়! হয়তো খানিক সময়ের জন্য অভিমান করে থাকতে পারে। কিন্তু রাগ করে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। সে-ও পারেনি লাবণ্যর সাথে রাগ করে থাকতে। লাবণ্যর ডাককে উপেক্ষা করতে পারেনি। সেদিন ভার্সিটিতে এক ছোট টুকাই ছেলেকে দিয়ে এই চিরকুটটা তার কাছে পাঠিয়েছিল লাবণ্য। এটার উত্তরও সে সাথে সাথেই দিয়েছিল। তবে সরাসরি কিছু বলেনি।

পাঞ্জাবী পরে বুকের উপরের তিনটে বোতাম লাগাতে লাগাতে এসব ভাবছিল সামির। আর বেশিক্ষণ দেরি নেই লাবণ্যকে নিজের করে নেওয়ার। একটা স্বস্তির হাসি যেন তার ঠোঁটের কোণে লেগেই আছে। একটু পরই তারা রওয়ানা দিবে লাবণ্যদের বাসার উদ্দ্যশ্যে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

প্রিয় লাবণী,
তুমি সবসময়ই আমার প্রিয় জায়গায়ই থাকবে। তাই নিঃসঙ্কোচে প্রিয় বলেই সম্বোধন করলাম। যে আমার নিঃস্বার্থ ভালবাসা ডিজার্ভ করে একমাত্র তার জন্যই বরাদ্দ এটা। কেবলমাত্র সে ছাড়া আর অন্যকেউ এই অমৃত সুধা পান করতে পারবে না। জানো তো, আমার মনের রাজ্যটা খুবই এক্সপেনসিভ। তাই সেখানে তেমন কাউকেই স্থান দিব, যার যোগ্যতা আছে সেই জায়গাটা জয় করে নেওয়ার। অবশ্যই রাণী করে রাখবো তাকে, দাসী করে নয়। তাঁর জন্মই তো হয়েছে সেই জায়গাটা রাজত্ব করার জন্য, দাসত্ব করতে নয়।

—–সামির—–

পার্লারে চোখ বন্ধ করে বসে চিরকুটটার কথাগুলো মনে মনে আওড়ালো লাবণ্য। একদিকে পেডিকিউর মেনিকিউর চলছে, আরেকদিকে তার ভাবনা চিন্তারা সামিরের নাম জপ করে যাচ্ছে লাগাতার। চিরকুটটার প্রতিটা লাইনের প্রতিটা অক্ষর যেন মুখস্ত হয়ে গেছে লাবণ্যর। সে ভাবতেও পারেনি সামির ইনডিরেক্টলি তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছিল এসব। একটু পরই সে সামিরের হয়ে যাবে চিরতরের জন্য। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ব্যাপারটা। মনে হচ্ছে সে স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। তা ভাঙলেই যেন সব আগের মতো দেখতে পাবে সে। কিন্তু এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তবই। তার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরায় উত্তেজনায় কাঁপুনি শুরু হয়েছে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে। কেমন যেন সুখ সুখ লাগছে সবকিছুই। কিন্তু এই সবের মাঝেও একটা অচেনা অজানা ভয় এসে যেন গ্রাস করে ফেলছে তাকে। মনে হচ্ছে যেন পুরো শরীরটাকে অতি দ্রুতই গ্রাস করে ফেলছে। এরকমটা হওয়ার কারণ কী সে বুঝে উঠতে পারছে না। আল্লাহ্ যেন খারাপ কিছু না করে অন্তত আজকের দিনটাতে। মনেপ্রাণে প্রার্থনা করে চলেছে লাবণ্য।

চার ঘন্টায় লাবণ্যর সাজ কমপ্লিট হলো শেষে। নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছে না লাবণ্য। আচ্ছা সামির চিনবে তো তাবে?! প্রশ্নটা মাথায় আসতেই মনে মনে হাসলো সে। বিস্ময়ে হা হয়ে থাকবে আজ সামির ওকে দেখে। মুখের মুচকি হাসিটার জন্য লাবণ্যকে এখন আরো মোহনীয় লাগছে। ওর সাথে ওর বান্ধবী শিপু আর নাবিলা এসেছে। তাদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। সব গুছিয়ে নিয়ে পার্লার থেকে বেরিয়ে মূল গেইটের কাছে এসে দাঁড়ালো তারা। তাদের গাড়িটা এই মূল গেইট পর্যন্ত আসে না। রাস্তাটা সরু চিকন হওয়ায় আসতে পারেনি। মিটার শতেক দূরে গাড়িটা দাঁড় করানো। তিনজন একসাথে হেঁটে গাড়ির কাছে গিয়ে পৌঁছে দেখে ড্রাইভার নেই। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় লাবণ্যর। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে আসে তার। সেই অবস্থাতেই পার্স থেকে সেলফোনটা বের করে ড্রাইভারকে কল করার উদ্দেশ্যে। কানে ফোনটা ঠেকানোর আগেই কে যেন ওর মোবাইলটা কেড়ে নেয়। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়েই সে থমকে যায়। হাত পা কাঁপা শুরু করে অজানা আতঙ্কে। ওর সাথের দুই বান্ধবীও ভয়ে সেটিয়ে যায় একপাশে। এই রাস্তাটায় আশেপাশে কেউ নেই। তবুও ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকায় লাবণ্য। কিন্তু একটা কাকপক্ষীও সে দেখতে পাচ্ছে না। পিছুতে পিছুতে সে গাড়ির সাথে লেগে যায় একেবারে। সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটা পিশাচের মতো হেসে লাবণ্যর দিকে এগিয়ে আসে। এসে একেবারে লাবণ্যর মুখোমুখি দাঁড়ায়। কপালের ওপর থেকে কয়েক গাছি উড়োচুল ফুঁ দিয়ে সরিয়ে ওর গালে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে স্লাইড করে বলে
—“এবার কই যাবে সুন্দরী? আমার হাতের নাগাল থেকে রক্ষা পাওয়া এতো সহজ না ডার্লিং।”

—“বৌমণি তোমাকে কিন্তু আমি বলেছিলাম যে আমি বিয়েতে এটেন্ড করতে পারবো না। তবুও কেন তুমি অহেতুক জোরজুরি করছো বলো তো?” বেশ বিরক্ত দেখায় অরুনিমাকে।
—“তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগবে না অরু। প্লিজ চলো না! আমার কথা ভেবে হলেও চলো। আমার এই কথাটা রাখো প্লিজ!” ইনোসেন্ট মুখ করে আফরা বললো।
—“যা সম্ভব নয় তা শুধুশুধু বলে নিজের দাম কমিও না বৌমণি। আমি যাব না মানে যাব না।” একরোখাভাবে বললো অরুনিমা।
—“আমি জানি তো আমার দাম নেই। কমার কথা আসছে কেন এখানে?” মন খারাপ করে আফরা জবাব দেয়।
হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে অরুনিমা বললো
—“বৌমণি প্লিজ! এভাবে বোলো না। আমার খারাপ লাগে। আমি তো এখানে আসতামই না। শুধুমাত্র তোমার কারণে রাজী হয়েছি। আসার সময়ই বলে এসেছি শুধু গায়ে হলুদে অংশগ্রহন করবো, বিয়েতে না। তবুও এখন কেন এমন করছো? প্লিজ চলে যাও। তোমার জন্য সবার যাওয়া দেরি হচ্ছে।”
—“হোক দেরি। তোমাকে না নিয়ে আমি যাচ্ছি না।”
তখনই অয়নকে দেখা গেল বাড়ির ভিতরে আসতে। তাকে দেখেই বললো
—“এই একটু এদিকে আসেন তো।”
অয়ন কাছে এসে বললো
—“আমি তো তোমাকে ডাক দেবার জন্যই আসলাম। এতো দেরি করছো কেন বলো তো? সাজ কমপ্লিট হয়নি এখনো?” আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে বললো “মনে তো হচ্ছে সাজ কমপ্লিট হয়েছে। তো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঐদিকে সবাই ওয়েট করছে তো।”
—“দ্যাখেন না অরুকে বলছি সাথে আসতে। সে কোনমতেই রাজী হচ্ছে না। প্লিজ আপনি একটু বলে দ্যাখেন না! আমার কথা শুনছেই না মেয়েটা।”
অরুনিমার দিকে তাকিয়ে বললো
—“কিরে অরু, যাবি না কেন? বাসায় একা একা কী করবি? আমাদের সাথে চল।”
তার উত্তরে সে হালকা হেসে বলে
—“আমি একা কোথায়? আন্টিরা আছে না বাসায়! তোমরা চলে যাও তো। এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।”
—“আরে উনারা থাকলেই বা কী! তোর বয়সী সবাইই তো বিয়েতে যাচ্ছে, তুই যাবি না কেন?”
—“ভাইয়া আমার মাথায় পেইন হচ্ছে অনেক। তাছাড়া এতো মানুষের ভীড়ে থাকতেও ভালো লাগছে না। পেইনটা আরো বাড়বে মানুষের কোলাহলে। কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই আমি। প্লিজ তোমরা যাও।”
এ কথার পরে অয়ন আর কিছু বলতে পারলো না। আফরা কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই অরুনিমা একটা রুমের ভিতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। সেদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিল আফরা। তার হাত ধরে বাধা দেয় অয়ন। ওকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে। অরুনিমার জন্য কষ্ট হচ্ছে আফরার। মেয়েটা নিজের কষ্ট লুকাতে মাথা ব্যথার বাহানা করে একা থাকতে চায়ছে। সে নিশ্চিত জানে অরুনিমা এখন প্রচুর কাঁদবে। ওর কান্নার সাক্ষী থাকবে বদ্ধ ঘরের চারটি ইট সিমেন্টের দেয়াল। যা কিনা কোন মানুষ দেখতেও পাবে না, জানতেও পারবে না কখনো।

—“অতশী, হলো তোমার?” রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটি বলছিল স্পন্দন। ঢোকামাত্রই সে থমকে দাঁড়ালো নিজের জায়গায়। এমন সাজে অতশীকে মনে হচ্ছে আজ প্রথম দেখছে। তাছাড়া অতশী সাজগোজের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। বিয়ের দিন ক্ষণিক সময়ের জন্য দেখেছিল ভিডিও চ্যাটে। রাতেও ভালো করে তাকিয়ে দেখেনি। আসলে অনেক রেগে ছিল সে তাই এতোদিকে খেয়াল করেনি সেদিন। কিন্তু আজ তার দু’চোখ যেন ধন্য হলো অতশীকে এমন গর্জিয়াস সাজে দেখে। চোখে কাজল লাগাচ্ছে সে। এই মুহূর্তটা পারলে সে ক্যাপচার করে রাখতো সারাজীবনের জন্য। আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে গেল সে অতশীর দিকে। অতশী তখনও অবগত নয় স্পন্দনের আগমনের ব্যাপারে। মাথা নিচু করে হাতে কয়েক গাছি কাচের চুড়ি পরছিল অতশী। আচমকা পেটে কারো উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঈষৎ কেঁপে উঠলো যেন সে। মাথা তুলে আয়নায় তার অর্ধাঙ্গের প্রতিবিম্বটা দেখতে পেল। হাসি হাসি মুখ করে ওর কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে ওর চোখের দিকে নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। মুচকি হেসে দৃষ্টি নত করে ফেললো অতশী। ওর হাসি দেখে স্পন্দন ওকে কানের গোড়ায় একটি চুমু দিয়ে ধীরস্বরে বললো

—“আমাকে তোমার প্রেমে ফের মাতোয়ারা না করলেই চলছিল না তোমার? শান্তিতে থাকতে দিবা না আমাকে?”
—“আমি তোমাকে অশান্তি দিলাম কখন আবার? এতোই সমস্যা হলে চোখ বন্ধ করে রাখো তোমার।” নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো অতশী।
স্পন্দন আরেকটু চেপে ধরে বললো
—“এরকম একটা এটম বোমা চোখের সামনে ঘুরঘুর করবে, আর আমি কিনা চোখ বন্ধ করে রাখবো! ইম্পসিবল। আরেকটু কম সাজলেই হতো তোমার। এতো সুন্দর করে সাজার কী দরকার ছিল?”
—“সাজলাম কই আমি? মুখে তো একটু ক্রীমও দেইনি। শুধু চোখে কাজলটা লাগিয়েছি, কানে ঝুমকা আর গলায় সিম্পল একটা নেকলেস পরেছি। ও হ্যাঁ, আর হাতে একমুঠো কাচের চুড়ি পরেছি। এতেই বলছো এতো সেজে ফেলেছি! আচ্ছা যাও সব খুলে ফেলছি। লাগবে না এসব।” অভিমান করে বলে অতশী।
—“এতেই যে আমি ঘায়েল হয়ে গেছি গো সোনাবউটা। সেটা তোমাকে কে বুঝাবে! আমার চোখে তো তুমি এমনিতেই আকর্ষণীয়। তার জন্য সাজতে হবে না তোমার। এই সাজে দেখেই আমার মাথা ঠিক থাকে না। খালি আদর করতে মন চায়। আর সাজলে তো……”
তার কথা থামিয়ে দিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে অতশী বলে
—“উফফ্! চুপ করো তো। কিসব বলছো তুমি!”

লজ্জা রাঙা গালে নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে একটু ঘষে বললো
—“ইশ! কিভাবে লজ্জা পায় দেখো বউটা! এই এখন একদম লজ্জা পাবা না আমার সামনে। উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবো কিন্তু। তখন আমার দোষ দিতে পারবা না একদম। সব দায় তখন তোমার নিতে হবে।”
—“হয়েছে ঢং ছাড়ো এখন। নিচে চলো। সবাই মনে হয় অপেক্ষা করছে।”
—“কিন্তু আমার যে যেতে ইচ্ছে করছে না।”
—“তুমি থাকো তাহলে আমি যাই।” নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো অতশী।
—“আরে… আমি কী এখানে একা বসে থাকবো নাকি? নিচে গেলে তো তোমাকে পাবোই না আর এক সেকেন্ডের জন্যও। তাই…..”
—“আর তাই আমারও এখানে থাকতে হবে তাই তো?”
সামনের দুই পাটি দাঁত বের করে স্পন্দন হেসে বলে
—“হ্যাঁ হ্যাঁ, এইতো বুঝতে পেরে গেছো আমার মনের কথা।”
—“বুঝেও লাভ নাই আমার প্রাণপ্রিয় বর মহাশয়। নিচে চলো। আর কথা বাড়িও না বলে দিচ্ছি। চলো!”
অতশীর এমন কথায় মুখ গোমরা করে রুম থেকে বের হতে নেয় স্পন্দন। তাকে আটকিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায় অতশী। আর স্পন্দন মাথা চুলকে মুচকি হেসে নিচে যাওয়ার জন্য কদম ফেলে।

বরযাত্রী এসে পৌঁছেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হয়েছে মাত্র। বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু কনের দেখা নেই। পার্লার থেকে নাকি এখনো আসেনি। ইয়াসমিন বেগম চিন্তা করতে করতে রীতিমতো ঘেমে নেয়ে একাকার যাচ্ছেন। আরমান সাহেবকেও দেখা গেলো অস্থিরভাবে পায়চারি করতে। এদিকে মানুষজনের মুখে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মেয়ে মনে হয়ে পালিয়েছে এ কথার। সামিরের কানে লাবণ্যর এখনো এসে না পৌঁছানোর কথাটা শুনার পর ওরও অস্থির লাগতে শুরু করলো। রাস্তাঘাটের কোন বিপদআপদ হলো নাকি কে জানে!

আদিল লাবণ্যকে বেশ কয়েকবার ট্রাই করলো ফোনে। কিন্তু বারবারই নট রিচেবল আসছে। শেষে ড্রাইভারকে ফোন দিল। ফোন দেওয়া মাত্রই সেখানেই বেজে উঠলো। ড্রাইভার বাড়ির ভিতর ঢুকে ভয়ার্ত মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরমান সাহেব, আদিল, ইয়াসমিন বেগম আর স্পন্দন গিয়ে ড্রাইভারের সম্মুখে দাঁড়ালো। চোখে মুখে সবার প্রশ্ন খেলা করছে। ইয়াসমিন বেগম আতঙ্কে নীল হয়ে আছেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
—“সেলিম, তুই একা কেন? লাবণ্য কোথায়?”
ভয়ে কাঁপতে লাগলো সেলিম। কিভাবে বলবে সে খবরটা!
—“ব.. বব্.. বড়মা… আপ্.. আপা.. আপামণি…..”
হালকা চিৎকার করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন
—“কী হয়েছে লাবণ্যর? কোথায় সে?”
ঠিক তখনই লাবণ্যর দুইটা বান্ধবীকে দেখতে পেলেন ইয়াসমিন বেগম। ওর সাথে ওদের দুজনকেই পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বললো
—“লাবণ্য কই? তোমরা….”
উনার কথা শেষ করার আগেই নাবিলা লাবণ্যর কথা বলে উঠে। যা শুনে বিয়ে বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আর ইয়াসমিন বেগম বেহুঁশ হয়ে যান একটা চিৎকার দিয়ে। সামিরের কানে কথাটা ঢুকার পর যেন টুপ করেই হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানিটা আচমকা বন্ধ হয়ে গেছে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে