অভিমান হাজারো পর্বঃ২৫
আফসানা মিমি
—“কিরে ইরিন, সেদিন ওভাবে চলে গেলি কেন বল তো? যা বলার জন্য তোকে ফোন করে এনেছিলাম সেটা ভালো করে তোকে বলতেই পারলাম না। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে শুনতে হয়েছে তোকে।”
—“চলে আসবো না তো কী করবো? সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে তোদের রোম্যান্স দেখবো? আমার বাবা লজ্জাটা একটু বেশি তাই একপ্রকার পালিয়েই চলে এসেছি। বাপ্রে! ভাইয়া দেখি সেই লেভেলের রোম্যান্টিক! আমার সামনেই কিভাবে তোকে চুমু খেলো। তা-ও আবার যেনতেন জায়গায় না। একেবারে ঠোঁটে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিল! কাউকেই মনে হয় তোয়াক্কা করে না, তাই না? সবসময় বুঝি এভাবেই আগ্রাসীর মতো আদর……”
ইরিনকে থামিয়ে দিয়ে অতশী লজ্জায় লাল হয়ে বললো
—“এই ইরিন! প্লিজ মুখে লাগাম দে। এভাবে লজ্জা দিচ্ছিস কেন আমাকে তুই?”
দুষ্টু হেসে ইরিন বললো
—“বাহ্বা! উনারা করতে পারবে আমি বললেই মুখে লাগাম দে, না? যত দোষ নন্দ ঘোষ তাই নারে অতশী? বাবা হওয়ার আনন্দে বেচারার মাথা ঠিক ছিল না। তাই বোধহয় শ্যালিকার সামনেই….”
আবারো ইরিনকে মাঝপথে থামালো।
—“এইই… তুই চুপ করবি? আমি না তোর ২৫ দিনের বড়? একটু তো বাছবিচার করে কথা বল!”
সিরিয়াস হয়ে বললো
—“আচ্ছা যা চুপ করলাম। একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
—“হুম কর না!” অতশীও সিরিয়াস।
—“আমি আসলে একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না। আমরা তো সেদিন তোর অসুখের ব্যাপারটা নিয়েই কথা বলছিলাম, তাই না? তাহলে ভাইয়াকে তুই যে মিথ্যেটা বললি তা সত্য হলো কিভাবে? আমার মাথায় খেলছে না আসলে বিষয়টা। এটা কী কো-ইন্সিডেন্স ছিল?”
—“না, কো-ইন্সিডেন্স না। আর না স্পন্দনকে আমি মিথ্যে বলেছি। তোকে সেদিন ফোন করে আমার কাছে এনেছিলাম এটা বলার জন্যই যে আমি মনে হয় কন্সিভ করেছি। হোম টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। আলট্রাসনো করে কনফার্ম হওয়ার জন্য তোকে নিয়ে হসপিটাল যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ কথা সে কথার ভীড়ে আসল কথাটাই চাপা পড়ে গিয়েছে স্পন্দনের আচমকা আগমনে। তারপর তো তুই চলেই গেলি।”
—“ও আচ্ছা… সেই কথা! আমি তো ভাবলাম তোর অসুস্থতার কথা লুকাতে ভাইয়াকে মিথ্যে বলেছিস। জানিস না বাসায় এসে কী পরিমাণ টেনশন করেছি আমি! শুধু মনে হয়েছে যখন জানতে পারবে তুই প্রেগন্যান্ট না তখন ভাইয়ার কী অবস্থা হবে! যাক আল্লাহ্ ইজ্জত বাঁচাইছে। কিন্তু লাভের লাভ কী হলো বলতো? সে-ই তো জেনে গেল তোর অসুস্থতার কথা। আচ্ছা তোর শশুরবাড়ির কেউ তোকে কিছু বলেনি এতোবড় একটা সত্যি যে লুকিয়েছিস? এতোটা স্বাভাবিক কী করে তারা?”
—“তাদের কাউকে তো জানাই-ই-নি। বলবে কী করে?”
—“কীহ্! কেউ জানে না? ভাইয়া কাউকে বলেনি?” ইরিন যেন আসমান থেকে পড়লো এটা শুনে। এটা কোন কথা হলো! কাউকেই বলেনি! পরে শুনলে কী অবস্থা হবে!
—“না, স্পন্দনকে আমি নিষেধ করেছি কাউকে কিছু বলার জন্য।”
—“আর ভাইয়াও তোর কথা মেনে নিল?” ইরিনের অবাকের ঘোর কাটছে না।
—“না মেনে উপায় আছে? ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছি বলেই না সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে খবরটা!”
—“কিন্তু পরে যদি কোনভাবে জানতে পারে! তাহলে কী হবে ভেবে দেখেছিস? কষ্ট পাবে না তারা?”
—“হ্যাঁ, ভেবে দেখেছি। কিছু অমোঘ সত্য আছে যা প্রিয়জনদের ভালোর কথা ভেবে লুকালে মন্দের চেয়ে ভালোই হয়। জানিস, এ বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য আমাকে কতটা ভালবাসে! এখন যদি এটা তাঁদের কানে যায় তাহলে সবাই ভেঙে পড়বে। মনে হচ্ছে যেন সবাই আমাকে করুণার চোখে দেখবে। আর আমি কারো করুণা নিয়ে বাঁচতে চাই না। এখন তাঁরা জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে। তাদের কষ্ট আমি দেখতে পারবো না রে। তার চেয়ে ভালো হবে যখন সবটা শেষ হওয়ার পথে চলে যাবে তখন জানলে। সেই পরিস্থিতিতে তো আর নিজের চোখে তা দেখতে হবে না। সেটা ভেবেই সবার কাছ থেকে লুকিয়েছি। তাই তো এতোটা স্বাভাবিক। আর আমিও স্বস্তি পাই এতে। কারণ এখন কারো চোখেই আমার জন্য করুণা দেখার ভয় নেই।”
—“এই কিসব বলছিস তুই? কিসের সবটা শেষ হওয়ার পথে চলে যাবে? একদম বাজে কথা বলবি না বলে দিচ্ছি।” ধমক দিয়ে রেগে বললো ইরিন।”
—“আচ্ছা যা বললাম না। না বললেই তো আর সত্যিটা মিথ্যা হয়ে যাবে না, তাই না?”
—“উফফ্ অতশী! তুই মনে হয় সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছিস। জানিনা তোর মাথার কয়টা স্ক্রু ঢিলা হয়েছে। তবে কাজটা তুই মোটেও ভালো করিসনি। এমনও তো হতে পারে যে ওরা তোর অসুস্থতার খবর শুনে তোকে করুণার চোখে না দেখে বরং আগের চেয়ে বেশি ভালবাসবে! কেন এমন জেদ করছিস তুই বলতো? এতে লাভের লাভ কিছু হবে? বরঞ্চ আরো খারাপ হবে। মাঝে মাঝে তুই একদম বোকাদের মতো কাজ কারবার করিস। ভালো লাগে না তোর এমন কর্মকাণ্ড।” ইরিন বেশ বিরক্ত হয় অতশীর সিদ্ধান্তে।
—“আরে আমি……”
—“চুপ, একদম চুপ! একটাও কথা বলবি না তুই আমার সাথে।” কথার মাঝপথেই থামিয়ে দেয় অতশীকে। রাগের পারদ তার তিরতির করে বাড়ছে।
—“এই যে মুখে আঙুল দিলাম। হলো এবার!”
…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
উচ্ছ্বসিত হয়ে আছিয়া বেগম বললেন
—“মেয়ে তো আমাদের দেখা-ই আছে। খুব লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। রূপে গুণে একেবারে পারফেক্ট। তোর সাথে খুব মিলবে।” তারপর আফরার দিকে ফিরে বলে “ইয়ে আফরা, বেয়াইসাহেবকে বলে দে কালকেই আমরা গিয়ে বিয়ের কথা পাকা করে আসবো। যদি রাজী থাকে তাহলে কালকে বাগদানটাও সেরে ফেলবো গিয়ে।”
মায়ের কথা শুনে সামিরের গলায় যেন হৃৎপিণ্ডটা এক লাফে চলে এসেছে। কার কথা বলছে মা! সে যার কথা ভাবছে সে যেন অন্তত না হয়। তাই আমতাআমতা করে বললো
—“তুমি কার কথা বলছো মা?”
—“কেন? আমাদের অরুনিমার কথা।”
সামিরের হাত পা অবশ হয়ে আসতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত এ রণচণ্ডী মেয়েটাকে বিয়ে করতে হবে! নো নো নো! অসম্ভব! এ নাকি লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে! মা যদি এই মেয়ের আসল রূপটা জানতো তাহলে জেনেশুনে তার মতো নিষ্পাপ ছেলের গলায় ঐ মেয়েটাকে ঝুলাতো না। নাহ্! এভাবে হবে না। মেয়েদের মতো বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না এমন ভাব ধরে বসে থাকলে হবে না। তার মনের কথাটা মাকে বলতেই হবে।
—“দ্যাখো মা, তোমাকে একটা কথা বলি। মন দিয়ে শুনবা, ঠিক আছে? আর আফু তুইও শুনবি।”
—“হুম বলো কী বলবা।” আফরা জবাব দিল।
—“আমার পক্ষে অরুনিমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি… আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। বিয়ে করলে তাকেই করবো।” লজ্জাকে একপাশে সরিয়ে বলেই ফেললো মনের কথাটা।
সামিরের কথা শুনে অবাক বিস্ময়ে আছিয়া বেগম এবং আফরা হা করে তাকিয়ে আছে। আফরা মনে মনে ভাবছে ‘তাহলে অরুনিমা যা বলেছিল সত্যিই বলেছিল! ভাইয়া অন্যকাউকে ভালবাসে! কিন্তু কে সেই মেয়ে! অরুনিমা কিভাবে জানলো এই কথা! ভাইয়া তো নিজে থেকে কখনোই অরুনিমাকে বলার মানুষ না যে সে এক্স্যাক্টলি কাকে ভালবাসে। তাহলে কিভাবে কী?’ মাথায় জট লেগে যাচ্ছে আফরার। মায়ের অবাক কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরলো।
—“কে সে? পরিচয় কী সেই মেয়ের? তাহলে এতোদিন বলিসনি কেন?”
—“বলার প্রয়োজন হয়নি তাই বলিনি। আজ প্রয়োজন পড়েছে তাই বলে দিলাম।”
—“এখন আমি বেয়াইসাহেবের সামনে মুখ দেখাবো কী করে? বড় মুখ করে যে উনার মেয়ে চাইলাম সেই চাওয়ার দামটা রইলো কই?”
—“তুমি আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে অরুনিমার সাথে বিয়ে ঠিক করতে যাও কেন? এখনো কী সেই আদিমকালেই পড়ে আছো? আমার মতামত ছাড়াই কী বিয়ে করিয়ে দিতে?” সামির বেশ বিরক্ত মায়ের এমন কাণ্ডে।
—“মতামত ছাড়াই যদি বিয়ে করিয়ে দিতাম তাহলে তোকে এসে এখন বলতাম না। একেবারে বিয়ের দিনই জানতি কাকে বিয়ে করছিস। আর তোকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করার পর তুই ঐ মেয়ের কথা না বলে কেন বললি যে মেয়ে দেখা শুরু করতে? আর আমি যেই বললাম যে মেয়ে ঠিক করে ফেলেছি অমনি তুই লাফিয়ে উঠে বলে দিলি অরুনিমাকে বিয়ে করবি না। তোর আরেকজনকে পছন্দ। সেটা প্রথমেই কেন বললি না?”
—“ভুল হয়ে গেছে মা। মাফ করো।” দুই হাত জড়ো করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বললো।
—“বুচ্ছিস! এ পরিবারে না আমার দাম আছে, আর না আছে আমার কথার দাম। এখন বেয়াইসাহেবকে আমি কী বলবো?” আছিয়া বেগমকে কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত দেখালো।
—“ঠিক আছে যাও তোমার কথা-ই মেনে নিলাম। তবুও তুমি খুশি থাকো। দরকার নেই আমার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার। কালা, লুলা, অন্ধ, প্রতিবন্ধী যাকে বলো তাকেই চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে তোমার মনোবাসনা পূরণ করে দিব। যাতে তোমার সম্মান বেঁচে যায়।” মায়ের ওপর রেগে কথাগুলো উগরে দিল সামির।
—“তোর মাকে তুই এমন স্বার্থপরই ভাবিস যে সন্তানের সুখ না দেখে সম্মানের চিন্তা করবো? এ কথাটা বলতে পারলি তুই আমাকে?” আছিয়া বেগমের চোখ ভরে এলো পানিতে। সামির এভাবে বলতে পারলো!
—“ভুল হয়ে গেছে মা আমার। প্লিজ ক্ষমা করে দাও!” সামিরের কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পড়ছে।
—“আচ্ছা বাসা কই সেই মেয়ের? পরিচয় কিভাবে?”
—“মা! এখন পরিচয় কিভাবে হয়েছে সেটা বিশ্লেষন করতে হবে বসে বসে?” কিছুটা বিরক্তির সাথে বললো সামির।
—“ঠিক আছে তা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু মেয়েটি কে?”
—“ওকে তোমরা দেখলেও দেখে থাকতে পারো। অতশীর ননদ। লাবণী… আই মীন লাবণ্য ওর নাম।”
আফরা যারপরনাই অবাক হয়েছে এটা শুনে। এতোক্ষণ সে মা এবং ভাইয়ের দ্বন্দ্বযুক্ত নীরবে শুনে যাচ্ছিল কিছু না বলে। অতশীর ননদকে দেখেছিল সে তাদের রিসেপশনে। চেহারা সুরৎও ভালোই মোটামুটি। তবে অরুনিমার চেয়ে বেশি নয়। যদিও সৌন্দর্যই সবকিছু নয়। আফরা কিছু বলতে যাবে তখন তার মা বলে উঠলো
—“আচ্ছা ঠিক আছে। তোর কথা-ই রইলো তবে! ঠিকানা দিস প্রস্তাব নিয়ে যাব শীঘ্রই।” বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলেন আছিয়া বেগম।
অনেকক্ষণ পর অবাকের ঘোর কাটিয়ে আফরা কোনমতে বললো
—“ভাইয়া তুমি যাকে ভালবাসো সেও তোমাকে ভালবাসে তো!” আফরার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে।
কনফিডেন্সের সাথে সামির জবাব দিল
—“হ্যাঁ।
আফরা আর কথা বাড়ালো না। চলে গেল সেখান থেকে। সামিরের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা দিল। লাবণ্য যে ওকে এভাবে ভালবাসার কথা জানাবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি।
…
—“বউরাণী কী বাপের বাড়ি গিয়ে পতিদেবকে ভুলে গেছে?”
—“(আফরা নিশ্চুপ)”
—“ও বউ!”
অয়ন এভাবে ডাকলে আফরার বুকের ভিতর কেমন ধড়াস করে উঠে। সুখপাখিটা অনবরত ডানা ঝাপটাতে থাকে।
—“বউ গো শুনো না! এমন পাষণ্ডী কেন তুমি, হ্যাঁ? আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না তুমি জানো না?” অয়নের কণ্ঠে বেদনার সুর।
—“একটা রাত, মাত্র একটা রাতের জন্য মায়ের কাছে এসেছি। আর তাতেই আপনি এতো উতলা হয়ে গেছেন? কই, এতো ভালবাসা তো আপনার কাছে থাকাকালীন দেখান না। এখন এমনভাবে বলছেন যেন ভালবাসা উথলে পড়ছে। ইশ ঢঙ্গে আর বাঁচি না!” আফরা বললো মুখ ভেঙচিয়ে।
—“তুমি সুযোগ দিলে তো দেখানোর! নিজে যে আমি কাছে আসলেই সবসময় পালাই পালাই করে তা স্বীকার করবে না। সারাদিন পরিশ্রম করে যদি বউসাহেবার চাঁদমুখটা না দেখি তাহলে যে আমার বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা হয় সে খবর কী কেউ রাখে?” অয়ন কথাগুলো বললো বেশ অভিযোগের সাথে। আবার বললো “আর তাছাড়া রাতেই তো তোমাকে আমার দরকার বেশি। জানো না নাকি তুমি?”ঠোঁটে দুষ্টু হাসি তার।
আফরা বেশ লজ্জা পেল অয়নের এমন কথায়। কপট রাগ দেখিয়ে বললো
—“আপনি আসলেই একটা অসভ্য।”
—“সেকি! এটা তুমি এতোদিনে বুঝতে পারলে? আমি তো ভেবে বসে আছি যে তুমি এটা বিয়ের আগে থেকেই জানতে। তাছাড়া তুমিও কিন্তু কম যাও না।”
—“মানে?” আফরা অবাক
—“বিয়ের রাতে জোর করে আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করেছিল কে, শুনি?”
আফরা ধসকায়। কতটা অসভ্যর হাড়ি হলে এসব বলে মানুষ!
—“দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি….”
—“ইশ বউ! তুমি কী লজ্জা পাচ্ছো? কিন্তু তোমার এই লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখবো কিভাবে? আমার যে তর সইছে না। উম্ম্ম…. আচ্ছা তাহলে আমি এখন চলে আসি, কী বলো!”
—“এই এই আপনি পাগল হলেন? এই রাত সাড়ে বারোটায় আপনি এখানে আসবেন? মাথা খারাপ হয়েছে আপনার?”
—“হ্যাঁ গো বউ। তোমাকে ছাড়া পাগল পাগল লাগছে। মাথাটা পুরোপুরিই খারাপ হয়ে গেছে। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি বরং এখন রওয়ানা দিয়ে দেই!”
—“দে.. দেখুন এখন যদি আপনি আসেন তো আপনার একদিন কী আমার যতদিন লাগে।” থতমত খেয়ে বললো আফরা। পাগলটা কী সত্যি সত্যিই চলে আসবে নাকি?
—“এভাবে বলে না বউটা। তোমার যতদিন তুমি কাজে লাগিও। আমার একদিনই যথেষ্ট। সহজ ভাষায় বলতে গেলে একটা সুন্দর মুহূর্তই যথেষ্ট তোমাকে কাবু করার। কী, এসে কী প্রমাণ করে দেব?” আফরাকে ভয় দেখানোর জন্য বলে অয়ন।
—“একদম না। আপনি….”
—“বউ গো! একটু শুনো না!”
আফরা থেমে যায় অয়নের ডাকে। উফফ্ আবার! আবার এভাবে ডাকছে! হার্টএটাক করিয়ে মেরে ফেলার প্ল্যান আছে নাকি এই বেটার! কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয়
—“ক্ক… কী?”
—“আমার বেবিটা কেমন আছে সোনা বউটা?”
আফরা হতভম্ব হতে গিয়েও হয় না। অস্ফুটস্বরে হালকা চিৎকার করে বলে
—“কীহ্!”
—“শুনতে পাওনি?”
—“কিসের বেবির কথা বলছেন আপনি? আর কার বেবি?” আফরার অবাকের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
—“কেন? জানো না? আমাদের দুইজনের বেবি। ডিম্বাণুর সাথে শু….”
—“এই… চুপ চুপ চুপ! কী অসভ্য কথাবার্তা বলছেন! বেবি আসবে কোত্থেকে?” অয়নের কথায় যেমন রাগ হচ্ছে তেমনি লজ্জাও পাচ্ছে আফরা।
—“কেন? তোমার গর্ভ থেকে।”
—“তখন থেকে কিসব আবোলতাবোল বকছেন! যার কোন অস্তিত্বই নেই এই পৃথিবীতে আপনি তার কথা শুধুশুধু বলছেন কেন?”
—“উম্মম্ম…. তুমি চাইলে এই নেই অস্তিত্বটাকে তোমাকে দিয়ে এই পৃথিবীতে আনতে পারি। আর তারপর তোমাকে আম্মু আম্মু, আমাকে আব্বু আব্বু…..”
অয়নের কথা শেষ করার আগেই খট করে ফোনটা রেখে দেয় আফরা। লজ্জায় তার মুখ কান গরম হয়ে গেছে। তা থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর সেই ধোঁয়ার ভাপ এসে নাকে মুখে লেগে যেন পুড়ে যাচ্ছে। শরীর তিরতির করে কাঁপছে উত্তেজনায়। এই পাগলটার মুখে কোন লাগাম নেই। যখন তখন তাকে লজ্জায় ফেলে ইচ্ছাকৃত ভাবে।
অপরদিকে আফরা ফোন রেখে দেবার পর হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে অয়ন। এই মেয়েটা এতো লজ্জা কই থেকে যে আমদানী করে! আল্লাহ্ মালুম।
চলবে……..