অভিমান হাজারো পর্বঃ২২

0
1999

অভিমান হাজারো পর্বঃ২২
আফসানা মিমি

—“আফরা, প্লিজ দোহাই লাগে। আর কাঁদিস না। কান্না বন্ধ কর প্লিজ! কষ্ট হচ্ছে আমার।” অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলে অতশী। সেই যে আসার পর থেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে, এখনো থামার নাম নিচ্ছে না মেয়েটা। ওর অসুস্থতা জেনে এভাবে কাঁদবে এটা জানা ছিল না অতশীর।
—“তুই একটা পাষাণী, নির্দয়া। তুই একটা অমানুষ। তোর কোন মায়াদয়া নাই। তুই আমাদের কাউকেই ভালবাসিস না। সবাইকে পর ভাবিস তুই। আমাদের ভালো থাকা না থাকায় তোর কিছুই যায় আসে না। তুই……”
—“আফরা প্লিজ!”
কান্নারত অবস্থায় অভিযোগগুলো করছিল আফরা। তার কথার মাঝখানেই অতশী তাকে থামিয়ে দেয়। কী বলছে এসব আফরা! এ কথাগুলোর একটাও যে সত্যি নয়। আফরা আবারো সেই অবস্থায়ই বললো
—“কিভাবে পারলি তুই এটা করতে? তোকে যারা এতো ভালবাসে তাদের কথা একটাবার ভাবলি না তুই? কেন করেছিস এ গুরুতর কাজটা?”
—“আফরা, আমার কথাটা তো শোন!” অতশী বললো হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে।
আফরা গোঁ ধরে বলে
—“তোর কোন কথা-ই আমি শুনবো না।”
—“আমার এমন করার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে, তাই না? যা করেছি ভালোর জন্যই করেছি।”
—“কী কারণ আছে বল! কী ভালোটা আছে এখানে দেখা আমাকে। কার ভালো করতে তুই এমন একটা কাজ করেছিস?” আফরা তেতে উঠে।

দক্ষিণপাশের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অতশী। দৃষ্টি তার সুদূরবিস্তৃত আকাশপানে নিবদ্ধ। ভিতরটা তার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এসে তাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যাবে। যার ফলে ওর কোন অস্তিত্বই থাকবে না এই পৃথিবীতে।
—“আমি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত এটা জানতে পারি আমার বিয়ের দেড় মাস আগে। জানিস, এটা শুনে দুনিয়াটা আমার মুহূর্তেই কেঁপে উঠেছিল। যে দুনিয়াটাতে দুইটা মানুষের স্থায়ী বসবাস। সবার প্রথমে আমার চোখের পর্দায় বাবার চেহারাটা ভেসে উঠেছিল। কারণ এই বাবা-ই আমাকে বাবা এবং মায়ের দুইজনের ভালবাসা-ই দিয়ে গেছে নিঃস্বার্থভাবে। কখনো বুঝতে দেননি যে আমার মা নেই। মাকে আমি যে কারণে হারিয়েছি, সেই একই কারণে আমারও হয়তো এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে তা ভেবেই কষ্ট লাগছিল বাবার জন্য। বাবার চোখের সামনে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে প্রাণঘাতী ব্রেইন টিউমার নামক ব্যাধিতে। আমার বাবাটা আবারো একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছে সেটা ভেবেই কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিল আমার। বাবার পরে আমার অন্তরতম প্রদেশের একছত্র অধিপতি, যার পুরোটা জুড়ে শুধুমাত্র তাঁরই বসবাস, আমার একমাত্র বাঁচার অবলম্বন, আমার ভালবাসা স্পন্দনের মুখাবয়বটা চোখের তারার স্বচ্ছ আবরণে ভেসে উঠেছিল। এই পাগলটার কথা মনে পড়তেই আমার আঁখিযুগল অশ্রুসিক্ত হয়ে মর্মভেদী এক নিদারূন যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল আমার হৃৎপিণ্ডে। পাঁজরে পাঁজরে অসম্ভব বেদনারা আক্রমণ করেছিল আমাকে। জর্জরিত করে দিয়ে গেছে আমার ভিতর বাহির সবটাকে। আমার নিজের কথা তো আমি জানি। ওকে ছাড়া আমার একবার নিঃশ্বাস ফেলা-ও দুষ্কর ছিল। বাঁচতেই পারতাম না ওকে ছাড়া। আর ওর কথা কী আর বলবো! আমি বলতে যে ছেলেটা পাগল, সে ছেলেটা আমাকে ছাড়া কিভাবে নিঃশ্বাস নিবে এই পৃথিবীর বুকে? কিন্তু আমি জেনেশুনে কী করে ওকে আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াই বলতে পারিস?” নীরব কান্নার সাথে কথাগুলো বলে আফরার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি মেলে তাকায়। এতোক্ষণ আফরা নির্বাক হয়ে মনযোগের সহিত অতশীর কথাগুলো শুনছিল। তার করা প্রশ্নে আফরা প্রত্যুত্তর করতে পারলো না কিছুই। নীরব চাহনি মেলে তাকিয়েই রইলো অপলক। হঠাৎই বলে উঠলো
—“তাহলে রিমন ভাইকে বিয়ে করতে চেয়েছিলি কেন? স্পন্দন ভাইয়াকে তোর অনিশ্চিত জীবনের সাথে না জড়িয়ে উনাকেই বা জড়াতে চেয়েছিলি কেন? তোর কী উচিৎ ছিল না যতদিনই পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিবি, তা যেন ভাইয়ার বুকে মাথা রেখেই নিতে পারিস!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


অতশী আবারো বাইরে দৃষ্টি রাখলো। সেদিকে তাকিয়েই আফরাকে জিজ্ঞাসা করলো
—“লিসার কথা মনে আছে তোর?”
—“কী বলিস তুই এসব? স্কুলে পড়াকালীন আমাদের বেস্টফ্রেন্ড ছিল সে। ওকে ভুলি কী করে? মেয়েটা সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। কখনো কী ভেবেছিলাম আত্মার সম্পর্কের কেউ একজন এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে! কিন্তু তুই হঠাৎ লিসার কথা জিজ্ঞাসা করছিস কেন?” বেশ মন খারাপ ভাব নিয়েই জানতে চায়লো আফরা। লিসার কথা হঠাৎ এভাবে মনে করায় খুব খারাপ লাগছে তার। মেয়েটা অল্প বয়সেই রোড এক্সিডেন্ট করে পরপারে পাড়ি জমালো। অতশীর একটা কথায় তার ভাবনার সুতোয় আচমকা টান পড়লো।
—“লিসা কাকে ভালবাসতো জানিস?”
—“কাকে?” ভ্রু কুঞ্চিত হলো তার।
—“রিমন ভাইকে। তারা একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসতো।”
—“তুই কী করে জানলি? ও তো কখনোই আমাদের এসব বলেনি।” বিস্মিত হয়ে বলে আফরা।
—“আমি জানতে পেরেছি কয়েক বছর আগে। আমার ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ডের বড় ভাই রিমন। তার কাছ থেকেই জেনেছিলাম সবকিছু। লিসা মারা যাওয়ার পর থেকেই নাকি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল রিমন ভাই। মানসিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। নিজেকে বদ্ধ ঘরে আটকে রাখতো সবসময়। পরে উনার বাবা মা সাইকিয়াট্রিস্টের মাধ্যমে কাউন্সিলিং করে উনাকে ডিপ্রেশন থেকে আস্তে আস্তে বের করে আনে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকেন উনি।”

অতশীর কথার মাঝখানে আবারো তাকে থামিয়ে দিয়ে আফরা বললো
—“কিন্তু তুই উনাকে বিয়ে করতে চায়লি কেন?”
—“বলছি। কয়েক মাস আগে বাবা আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। অবশ্য এটাকে চাপ বলা যায় না। মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে সব বাবা মায়েদেরই টেনশন হয়। তার ওপর আমার মা নেই। বাবা আমাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ভুগেন। সেজন্যই বিয়ের কথা বলছিল। কাউকে পছন্দ করে থাকলে বাবাকে যেন বলি। তখন সাথে সাথেই আমি বলতে পারিনি। আমার ইচ্ছা ছিল আগে স্পন্দনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো। তারপর বাবাকে বলবো সবকিছু খুলে। কিন্তু তার আগেই সবকিছু উল্টেপাল্টে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল।” শেষ কথাটা বেশ আক্ষেপের সুরেই বললো অতশী। ভ্রু কুঁচকে আফরা জানতে চায়লো
—“কেন, কী হয়েছিল সেদিন? ভাইয়াকে আঙ্কেলের কথাগুলো বলিসনি?”
অতশীর বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। তারপর বলতে শুরু করলো
—“সেদিন বাসা থেকে বের হয়েছিলাম স্পন্দনকে এ ব্যাপারে বলতে। কিন্তু তার আগেই আমি রাস্তার ফুটপাতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাই। নিজেকে যখন হাসপাতালে আবিষ্কার করি তখন বেশ অবাক হয়েছিলাম। কেবিনে বসে ছিলাম একা একা। তার বেশ কিছুক্ষণ পর একটা হালকা চেনা মুখ আমার সামনে দেখতে পেলাম। আস্তে ধীরে মনে পড়লো ওটা রিমন ভাই। অনেকদিন পর দেখেছিলাম তো তাই প্রথমেই চিনতে পারিনি। উনি আমাকে ভালো করেই চিনতো। কেবিনে প্রবেশ করেই জানতে চেয়েছিল
—“অতশী, এখন কেমন লাগছে?”
—“জ্বি আগের চেয়ে কিছুটা ব্যাটার। এখানে কী আপনিই আমাকে নিয়ে এসেছেন?”
—“হ্যাঁ, আমিই এনেছি। তোমার কাছে কিছু জানতে চাওয়ার ছিল অতশী।”
—“জ্বি বলেন না রিমন ভাই।”
—“তুমি কী তোমার রোগের ব্যাপারে অবগত?”
—“কোন রোগের ব্যাপারে?” আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়লো অতশী।
—“বুঝতে পারছি না তোমাকে বলা ঠিক হবে কিনা! কিন্তু কোন উপায়ও তো দেখছি না। তোমার গার্ডিয়ানের সাথে বললে ব্যাটার হতো।” রিমনকে কিছুটা অস্থির দেখায়।
—“সমস্যা নেই রিমন ভাই। আপনি বলুন।”
কিছুক্ষণ অস্থিরভাবে পায়চারি করে রুদ্ধশ্বাসে বললো
—“তুমি যে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত তুমি কী তা জানো?”
অতশীর মনে হলো ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। মাথার ওপর থেকে ছাদ উড়ে গেছে। মনে হচ্ছিল যেন শূন্য ভাসমান অবস্থায় আছে সে সেই মুহূর্তে। পুরোটাই দুঃস্বপ্নের মতো লাগছিল তার কাছে। যেন ঘুম ভাঙলেই নতুন একটি স্নিগ্ধ সকালের দেখা পাবে। সে অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে কোনমতে উচ্চারণ করলো
—“ব্রেব্… ব্রেইন টিউমার!”

—“স্পন্দন, প্লিজ ভাই নিজেকে সামলা। তুই যদি এভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে অতশীকে কে সামলাবে? ওকে সামলানোর দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ তোর এখন। মনে নেই ডক্টর কী বলেছে? এ অবস্থায় এমন রোগীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, হীনমন্যতায় ভুগে। বুঝতে পারছিস তুই সে এখন কতটা বিপর্যস্ত মানসিকভাবে? তোর সাপোর্টের দরকার ওর এখন। আর তুই কিনা পাগলামো করছিস!”
স্পন্দনকে বুঝাতে হিমশিম খাচ্ছে অয়ন। ছাদে দাঁড়িয়ে আছে তারা অনেকক্ষণ। সেই কখন থেকে স্পন্দন নিজের চুল টেনে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। চোখ তার লাল টকটকে জবা ফুলের মতো। তাতে অশ্রু টলমল করছে কিন্তু তা বের হচ্ছে না। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কপাল জুড়ে। অস্থিরভাবে পায়চারি করছে সে। পুরো বিধ্বংসী পরাজিত সৈনিকের মতো লাগছে তাকে। মনে হচ্ছে যেন জীবন যুদ্ধে হেরে গেছে। অতশীর এই ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। যতবার ভাবছে অতশী তাকে ছেড়ে চিরতরে চলে যাবে ততবারই যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে তার। ভাবতে চায়ছে না সে এই মুহূর্তে এখন এসব। কিন্তু সে না চায়তেও মাথায় উঁকিঝুকি মারছে তার নিষেধাজ্ঞা না শুনে। অয়ন তাকে কিছুতেই স্বাভাবিক করতে পারছে না।

—“সেদিন আচমকা এই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে ছিটকে পড়ে যাই আমি। স্পন্দনকে আর বলা হলো না বাবার কথাগুলো। ভিতর থেকে কে যেন বাধা দিচ্ছিল। বারংবার শুধু একটা কথা-ই মনে মনে আউড়াচ্ছিলাম। স্পন্দনকে কিছুতেই আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াতে পারবো না। নিজের ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য ওর স্বপ্ন, ইচ্ছেগুলোকে গলা টিপে মারতে মন সায় দিচ্ছিল না। বরঞ্চ বারবার এটা ভাবতে ভাবতে পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম যে কিভাবে নিজের কাছ থেকে স্পন্দনকে সরাতে পারবো। নিজের জীবন থেকে ওকে মুক্তি দিতে পারবো। ওর ভালোর জন্য, সুখের জন্য শত কষ্ট হলেও এটুকু আমার করতেই হবে। তাই সেদিনের পর থেকে ওকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে লাগলাম। ফোনে যোগাযোগ কমিয়ে দিলাম। ফোন দিলে নানা বাহানায় এটা সেটা বলে রেখে দিতাম। দেখা করতাম না। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এগুলো করতে যে আমার কী পরিমাণ কষ্ট হতো আমি আর এক আল্লাহ্ ছাড়া কোন কাকপক্ষীও টের পায়নি। অশ্রুকণায় বালিশ ভিজতো প্রতিরাতে।

একদিন একপ্রকার জোর করেই স্পন্দন বাধ্য করে ওর সাথে দেখা করতে। আমিও মনে মনে ভেবে নিই আজই শেষদিন। ওকে আজই বলে দিব আমাদের একসাথে যায় না। আমি অন্যকাউকে ভালবাসি। কিন্তু পাগলটাকে বলার পর বিশ্বাস তো করলো না-ই। উল্টো আরো রাগারাগি শুরু করলো। তাই উপায় না পেয়ে আমি বলে দিয়েছিলাম কতকগুলো বানোয়াট মিথ্যে কথা। যেগুলো বলতে চাইনি সেগুলোও বলেছি।

রিমন ভাইয়ের সাথে আমার চুক্তি হয়েছিল উনাকে বিয়ে করে স্পন্দনের লাইফ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে ডিভোর্স নিয়ে আমি হারিয়ে যাব দূর অজানায়। বিয়ের পরপরই ডিভোর্স নিব এমনটাই কথা ছিল। উনি কিছুতেই এটা করতে রাজী হচ্ছিলেন না। পা’য়ে সুদ্ধ পড়েছি উনার। কেঁদে কেঁদে আহাজারি করেছি আমাকে এটুকু সাহায্য করার জন্য। বলেছিল ‘যতদিন বাঁচবা নিজের প্রিয় মানুষটার হাত ধরেই বাঁচো। ততদিন তাঁর সাথেই একসাথে নতুন ভোরের আগমণ দেখো। জীবনটা উপভোগ করে নাও।’ কিন্তু আমি এমনটা চাচ্ছিলাম না। তাই শেষ মুহূর্তে লিসার দোহাই দিয়ে উনাকে রাজী করিয়েছিলাম। উনি বাকরুদ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। শত অনুনয় করার পর রাজী হয়েছিলেন। বাবার সাথে রিমন ভাইয়েরই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। এবং এটাও বলেছিলাম এ চুক্তির ব্যাপারে তৃতীয় কেউ যেন না জানে। তারপর থেকে তো তুই সবই জানিস।”

বলেই পিছনে ঘুরে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অতশী নিজের জায়গায়। পায়ে কে যেন পেরেক গেঁথে দিয়েছে তার। সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘোরাতে লাগলো। দরজার সামনে স্পন্দন আর অয়ন নিঃশব্দে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভয় লাগতে শুরু করলো ওর। স্পন্দন কী সব শুনে ফেলেছে! শুনলেও কতটুকু শুনেছে! কালকের পর থেকে এ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি সে অতশীর সাথে। অতশী বারবার বলতে চেয়েছিল। কিন্তু স্পন্দন সেই সুযোগটাই দেয়নি ওকে। অতশীর দৃষ্টি অনুসরণ করে আফরা তাকিয়ে দেখলো দরজার বাইরের দুইজন হতভম্ব মানুষকে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে