অভিমান হাজারো পর্বঃ২১

0
1948

অভিমান হাজারো পর্বঃ২১
আফসানা মিমি

অতশী ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাচ্ছিল। চোখের সামনের সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগছিল। মাথার ভিতর হঠাৎ ঘূর্ণিপাক খাওয়ায় পড়ে যেতে নিচ্ছিল। দেয়াল ধরে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে কোনমতে। প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় চোখ অন্ধকার হয়ে আসায় বাথরুমে ঢুকা মাত্রই নিজের ওপর ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যায়।

অতশী স্পন্দনের বুক থেকে উঠা মাত্রই তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। চোখ বুজে পড়েছিল বিছানায়। হঠাৎই কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে তার হুঁশ হলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অতশীকে খুঁজলো। না পেয়ে কী মনে করে হেঁটে গিয়ে বাথরুমে উঁকি দেয়। দিয়েই হতভম্ব হয়ে যায় সে। অতশী অচেতন অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। কপালের কোণা দিয়ে হালকা রক্ত পড়ছে। কয়েকটা মুহূর্ত সে হতবুদ্ধি অবস্থায়ই দাঁড়িয়েছিল। হুঁশ হওয়া মাত্র দ্রুত অতশীকে তুলে বিছানায় নিয়ে শুয়ালো। অজানা আশঙ্কায় স্পন্দনের হাত পা কাঁপতে লাগলো অনবরত। কাঁপা কাঁপা হাতেই পানির গ্লাস থেকে অতশীর চোখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ওর জ্ঞান ফিরছে না দেখে স্পন্দন পাগল পাগল হয়ে গেল। সেই অবস্থাতেই ওকে পাঁজাকোলে তুলে নিচে নেমে এলো। স্পন্দনকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে ইয়াসমিন বেগম থমকে দাঁড়ালো। অস্থির হয়ে জানতে চায়লো

—“স্পন্দন, কী হয়েছে অতশীর? কই নিয়ে যাচ্ছিস ওকে?”
স্পন্দনের গলা কেঁপে উঠে। বুকের ভিতর কান্নারা ভীড় করছে।
—“মা আমি জানিনা অতশীর কী হয়েছে। সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছে। জ্ঞান ফিরছে না। আমার খুব ভয় করছে মা।”
ইয়াসমিন বেগম স্পন্দনের উৎকণ্ঠা বুঝতে পেরে দ্রুত আদিলকে ডাক দিল গাড়ি বের করার জন্য। অতঃপর স্পন্দন, ইয়াসমিন বেগম আর আদিল অতশীকে নিয়ে চললো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

হাসপাতালে ঢুকে স্পন্দনদের হাসপাতালের করিডোরে দেখে অজানা কারণেই বুকের ভিতর হঠাৎ ধ্বক করে উঠলো অপূর্বর। এ হাসপাতালে সে জয়েন করেছে বেশ কিছুদিন হলো। বেশ অভিজ্ঞ হওয়ায় তাকে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে নিযুক্ত করেছে। আর এজন্যই তাকে দ্রুত ফোন করে এই সকালবেলা এখানে আনা হয়েছে। বলা হয়েছে ইমারজেন্সি কেইস। তাদের দেখে কেন জানি সর্বপ্রথম সায়রার কথা-ই মাথায় এলো অপূর্বর। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানতে চায়লো
—“আপনারা এখানে? আপনাদের বাড়ির কেউ কি অসুস্থ নাকি?”
স্পন্দন উত্তর দেওয়ার আগেই অপূর্বর ডাক পড়লো ডাক্তারদের চেম্বার থেকে। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেখানে যাওয়ার পর তাকে বলা হলো
—“দ্রুত সিটিস্ক্যান রুমে চলে যান। সেখানে একজন রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। আপনি প্লিজ একটু দেখুন ব্যাপারটা। রিপোর্টগুলো চেক করে তার আত্মীয়দের ভালোমতো বুঝিয়ে দিন।”
অপূর্ব আর কিছু না বলে সেখানে চলে গেল যেখানে অতশীকে রাখা হয়েছে। রুমে প্রবেশ তাকে দেখামাত্রই যেন অপূর্বর দুনিয়ায় ঘূর্ণিঝড় হানা দিল। লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল তার ভিতর বাহির সবটা। হৃৎপিণ্ডে খামচে ধরলো নাম না জানা একটা কষ্ট এসে। কে যেন তার হাতে কতকগুলো রিপোর্ট ধরিয়ে দিল। ভূতগ্রস্তের মতো সেগুলো তার হাতে নিল। পা’দুটো যেন কেঁপে কেঁপে অসাড় হয়ে আসছিল। তাই ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লো সে। খেয়াল করলো তার হাতটা কাঁপছে বিরতিহীন ভাবে। নিষ্প্রতিভ চোখে তাকিয়ে রইলো রিপোর্টগুলোর দিকে। সাহসে কুলাচ্ছে না সেগুলো খোলার। আরেকবার তাকালো অতশীর দিকে। মুখটা রক্তশূন্য হয়ে কেমন পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

নিজের চেম্বারে বসে আছে রিপোর্টগুলো সামনে নিয়ে। অথচ এখন পর্যন্ত খুলেনি। ঐদিকে স্পন্দনরা বসে আছে অতশী কী কারণে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল তা জানতে। কাঁপা হাতে রিপোর্টটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো নির্নিমেষ। অতঃপর মনে কিছুটা সাহস সঞ্চালন করে রিপোর্টটা খুলতে সক্ষম হলো। তাতে চোখ বুলিয়েই যেন মাথায় সাত আসমান ভেঙে পড়লো অপূর্বর। তাহলে তার সন্দেহটাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়ে গেল! চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এলো তার। হাত থেকে টেবিলে পড়ে গেল রিপোর্টগুলো। দু’হাতে কিছুক্ষণ মাথার চুল টেনে মুখ ঢেকে বসে রইলো। সে জানে না কেন জানি মনে হচ্ছে তার গলায় কিছু একটা আটকে আছে। সেটাকে কান্না নাম দিলে বোধহয় ভুল হবে না। কণ্টকাকীর্ণের মতো ঠিক গলার মাঝখানে আটকে আছে। যা গিলতেও পারছে না, উগরাতেও পারছে না।

এক গ্লাস পানি খেয়ে রওয়ানা দিচ্ছিল স্পন্দনদের উদ্দেশ্যে। ঠিক সেই মুহূর্তেই স্পন্দন আর অতশীর বাবাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো অপূর্ব। তাদেরকে বসতে বলে নিজেও বসলো চেয়ারে। কিভাবে কী শুরু করবে ভেবে পায় না অপূর্ব। সায়রার বাবাকে নিজের পরিচয়টা আগে দিতে হবে ভাবছে অপূর্ব। তাই জিজ্ঞাসা করলো
—“কেমন আছেন স্যার?”
অতশীর বাবা অবাক হয়ে জবাব দিল
—“আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু তোমাকে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে। তুমি করে বলাতে কিছু মনে কোরো না আবার।”
স্মিত হেসে অপূর্ব বললো
—“আপনার ছাত্র আমি। চেনা চেনা তো লাগবেই। আমার নাম ইমতিয়াজ আহমেদ অপূর্ব। চিনতে পেরেছেন স্যার?”
অতশীর বাবা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার্ড নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো। স্কুলে উনার প্রিয় ছাত্র ছিল অপূর্ব। তিনি খুশী হয়ে বললেন
—“হ্যাঁ হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি। তুমি এখানে যে! তুমি কী ডাক্তার?”
—“জ্বি স্যার, আমি একজন নিউরোসার্জন।

আরো কিছু টুকটাক কথা বলে আসল কথায় আসলো তারা। এ পুরোটা সময় স্পন্দন নির্জীব প্রাণী হয়ে বসেছিল। অপূর্ব জিজ্ঞাসা করলো
—“বেয়াদবি নেবেন না স্যার। আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনি তো শিক্ষক মানুষ। তাহলে এতোটা ইররেসপন্সিবল কিভাবে হলেন?”
অবাক হয়ে অতশীর বাবা জানতে চায়লো
—“কেন কী হয়েছে?”
একটু থেমে অপূর্ব নিচুস্বরে বললো
—“সায়রা যে এতোবড় একটা গুরুতর ব্যাধি নিয়ে দিনযাপন করছে আপনারা কেউই কী টের পাননি?” অপূর্বর কণ্ঠটা কী হালকা কেঁপেছিল!
অপূর্বর কথা শুনে দুজনেই পাথরের মূর্তির মতো শক্ত হয়ে বসেছিল। ধাতস্থ হতেই স্পন্দন উত্তেজনায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। বিস্মিত হয়ে আর্তনাদ করে জানতে চায়লো
—“মানে? অতশীর কী হয়েছে?”
স্পন্দনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে শুরু করলো
—“দেখুন শান্ত হন। মনকে শক্ত করেন। ভেঙে পড়বেন না। আপনারা দুজনই এখন ওর গার্ডিয়ান। তাই দুজনকেই সত্যিটা বলছি। আমি পারতাম স্যারের কাছ থেকে এটা লুকাতে। শুধু আপনাকেই বলতে পারতাম। যেহেতু আপনি ওর হাজবেন্ড। কিন্তু স্যারেরও জানা দরকার। আমি আসলেই জানতে চাচ্ছি যে স্যার এটা আগে থেকেই জানেন কিনা!” বলেই থামলো অপূর্ব
স্পন্দন আবারো আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে জানতে চায়লো
—“কিসের সত্যির কথা বলছেন আপনি? কী হয়েছে আমার অতশীর?”
স্পন্দনের মুখে ‘আমার অতশী’ কথাটা শুনে তার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অপূর্ব বললো
—“সায়রার ব্রেইন টিউমার। থার্ড স্টেজের শেষ সময়ে অবস্থান করছে সে এখন। অতি দ্রুতই ফোর্থ স্টেজ অর্থাৎ লাস্ট স্টেজ পদার্পণ করবে।”

কথাটা যেন বোমার মতো ফাটলো সেই বদ্ধ রুমের ভিতরে। অতশীর বাবা বিস্ময়ে এবং উত্তেজনায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে অস্ফুট স্বরে শুধু এটুকুই বলতে পারলো ‘ব্রেইন টিউমার!’ তার পর পরই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতে লাগলেন। অপূর্ব গিয়ে তাড়াহুড়ো করে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে পাশের একটা খালি কেবিনে শুয়ালো। আর স্পন্দন যেন এই দুনিয়াতেই নেই। সে যে জায়গায় দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকে চেয়ার সহ কয়েক কদম পিছিয়ে গেল। চোখ তার রক্তলাল। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রুদ্ধশ্বাসে বিড়বিড় করে কয়েকটা কথা আওড়ে গেল ‘না! অতশী আমার সাথে এমন করতে পারে না। এভাবে ঠকাতে পারে না ও আমাকে। সেই রাইট ওর নেই। আমি দেইনি ওকে সেই অধিকার।’ দিশাহারা হয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।

তিনজন পুনর্বার মুখোমুখি হলো। এ ব্যাপারটা নিয়ে খুলাখুলি কথা না বলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না স্পন্দন। অপূর্ব বলতে শুরু করলো
—“প্রথমে ক্যান্সার আর টিউমার নিয়ে বলি। বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোন কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে, এবং সেই রকম ক্রিয়া যুক্ত কোষকে নিওপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ ট্রান্সফরমেশন (পরিবর্তিত) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী – এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্ট্যাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র (Lymphatic System) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।

তারপর আসি ব্রেইন টিউমারে। মস্তিষ্কে মাংসের অথবা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়াকে ব্রেইন (মস্তিষ্ক) টিউমার বলা হয়। যখন মাথায় এই টিউমার বৃদ্ধি পায় তখন মস্তিষ্কের ভেতরে চাপ বেড়ে যায় যা মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ব্রেইন টিউমার বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে। ব্রেইন টিউমার তখনই হয় যখন মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কোষগুলির ডিএনএ-তে কোনো ত্রুটি থাকে। শরীরের কোষগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে যায় এবং মরে যায়। যার পরিবর্তে অন্য কোষ সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়ে যায় তবে দেখা যায় পুরনো কোষগুলো সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয় না। যার ফলে এই কোষগুলো জমাট বেঁধে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ব্রেইন টিউমার মস্তিষ্কে কোষের সংগ্রহ বা বস্তু। যখন কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় তখন ব্রেইন টিউমার সৃষ্টি হয়। ব্রেইন টিউমার দুই ধরনের হয়। এক হলো ক্যান্সারযুক্ত অর্থাৎ ম্যালিগন্যান্ট আরেকটি ক্যান্সারহীন অর্থাৎ বিনাইন। ম্যালিগন্যান্ট ব্রেইন টিউমার বৃদ্ধি পেলে তা মস্তিষ্কের ভেতরে চাপ বাড়িয়ে তোলে। এটা আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

ম্যালিগন্যান্ট ব্রেইন টিউমারে ক্যান্সার সেল (কোষ) থাকে যা ব্রেইন বা মস্তিস্কের টিস্যুতে বেড়ে ওঠে ও মস্তিস্কের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেয়। ম্যালিগন্যান্ট ব্রেইন টিউমার খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে ও অপারেশন করার পর আবারও তৈরী হতে পারে। টিউমারের আকার ও সেটি কত তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠছে, তার উপর নির্ভর করে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের গ্রেড বা ক্রমবিভাগ করা হয়ে থাকে।

⭕⭕ প্রথম গ্রেডের টিউমার খুব ধীরে ধীরে এবং খুব কম গতিতে আশেপাশের টিস্যুতে প্রভাব বিস্তার করে।
এটা পুরোপুরি নির্মূল করতে সার্জারি করলে ভালো
হয়ে যায়।
⭕⭕ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গ্রেডের টিউমার অনেকটা ইন্টারমিডিয়েট স্টেজের। ইয়ং এডাল্ট অর্থাৎ ২০-৪০ বছরের মধ্যে তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ ধরনের ব্রেইন টিউমার বেশি হয়। কাছাকাছি যে টিস্যুগুলো আছে, সেগুলোর অভ্যন্তরে দ্রুতগতিতে প্রসারতা বৃদ্ধি পায়। এবং তা পুনরুদিত হয়। তখন টিউমারের কোষ দেখতে স্বাভাবিক কোষের চেয়ে পৃথক দেখায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে সার্জারি করে সম্ভব হলে পুরো টিউমারটুকু বের করে আনা। পুরোটুকু না পারলে বেশিরভাগ টিউমার ফেলে দেওয়া। এতে করে ৫ বছরের মতো বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে।
⭕⭕ চতুর্থ গ্রেডের টিউমার অর্থাৎ লাস্ট স্টেজ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। এটা বৃদ্ধি এবং বিস্তৃত হয় খুবই ক্ষিপ্রগতিতে। এবং টিউমারের কোষগুলো দেখতে স্বাভাবিক কোষের মতো নয়। এতে সার্জারি করলেও পুরোপুরি নির্মূল হয় না। সার্জারি করলে ১ বছরের মতো বেঁচে থাকে।

পৃথিবীতে ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং তাদের চিকিৎসাও আলাদা। তার মধ্যে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মস্তিষ্কের প্রাথমিক টিউমারে আক্রান্ত হয়। ১৫ বছরের কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ হিসাবে মস্তিষ্কে টিউমারের অবস্থান দ্বিতীয়। তাছাড়া অনেক সময় বংশগত কারণেও ব্রেইন টিউমার হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাবা, মা অথবা আত্মীয় কারো ব্রেইন টিউমার থাকলে। এর সাথে জীনগত সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সার অথবা ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও তাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।

দেখুন সায়রার অবস্থা বেশ শোচনীয়। দিন দিন শুধু অবনতির দিকেই যাবে। আপনাদেরকে আমি খুলে বলছি। প্রাথমিক অবস্থায় যদি এটা ধরা পড়তো তাহলে তা সারানোর সম্ভাবনা ছিল অনেকটাই। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ তখন সেটা বিনাইন অর্থাৎ ক্যান্সারহীন টিউমার হতো। যা খুব সহজেই সার্জারি করার মাধ্যমে ফেলে দেওয়া যেতো। কিন্তু যেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় এটা টের পাওয়া যায়নি তাই এটা ম্যালিগন্যান্ট অর্থাৎ ক্যান্সারযুক্ত টিউমার। যা কিনা খুবই মারাত্মক। আচ্ছা স্যার আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। আপনাদের পরিবারে কী এমন কোন ব্যক্তি ছিল বা আছে, যে জন্য জীনগত কারণে সায়রার মধ্যে এটা এসেছে?”

এক নাগারা এতোগুলো কথা বলে থামলো অপূর্ব। হাঁপিয়ে গেছে সে। এক গ্লাস পানি খেলো ঢকঢক করে। এতোক্ষণে অতশীর বাবা মুখ খুললো
—“হ্যাঁ, অতশীর মায়েরও ব্রেইন টিউমার ছিল। অতশীর যখন ১০ বছর বয়স তখনই ওর মায়ের ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। যার কারণে ওর মা মারা যায়।”
—“বুঝলাম। ওর মায়ের ছিল বলেই এটা জীনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে ওর মধ্যেও এসেছে।

স্পন্দন আঁতকে উঠে এটা শুনে। তার মাথায় বারি খেতে লাগলো একটা কথা ‘লাস্ট স্টেজে এসে সার্জারি করলেও পুরোপুরি নির্মূল হয় না। ১ বছরের মতো বেঁচে থাকে।’

#তথ্যসূত্রঃ_উইকিপিডিয়া

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে