অভিমানী বিকেল শেষে পর্ব-১১

0
465

#অভিমানী_বিকেল_শেষে ( একাদশ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
এই মুহূর্তে তুলির বাবা, নিরুপমা এসেও রঙ্গনকে দেখে গিয়েছিল। কিন্তু ওরাও কিরকম নিশ্চুপ হয়ে গেছিল এই অবস্থায় ছেলেটাকে দেখে। তবে তুলি আজ বুঝেছিল রঙ্গন এর ওপর দিয়ে একটা ঝড় চলে গেছে হঠাৎ। এরপর ওর সামলাতে অনেকটা সময় লেগে যাবে হয়তো!

তুলির ভাবনাটা কিরকম সত্যি হয়ে গেছিল যেন। রঙ্গন এই ঘটনাকে একসেপ্ট করতে পারেনি কিছুতেই। তুলি সেটা প্রথম বুঝেছিল সেদিন রাত্রে। রঙ্গন স্বপ্নের ঘোরে বার বার বলছিল, —–” আপনারা এরকম করবেন না! প্লিজ! আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম। প্লিজ এরকম করবেন না!”
কথাগুলো বলতে বলতেই ও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠে বসেছিল হঠাৎ।
সেই মুহূর্তে রঙ্গন এর চিৎকার শুনে তুলির ঘুমটাও ভেঙে গেছিল। ও ছেলেটাকে এইভাবে ছটফট করতে দেখে ঘাবড়ে গেছিল কেমন। তাড়াতাড়ি ঘরের আলো জ্বালিয়ে রঙ্গনকে ডেকেছিল কোনভাবে। ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলেছিল,
—–” কিছু হয়নি। কেউ নেই এখানে! কেউ আসবে না।”
সেই মুহূর্তে তুলির গলার আওয়াজ শুনে রঙ্গন এর ঘুমের ঘোরটা কেটেছিল। ও হঠাৎ ওই অতো লোকের ভিড়, চিৎকার, আওয়াজ থেকে তুলির কাছে ফিরে এসেছিল যেন স্বপ্ন ভেঙে। তাই কিরকম বাচ্চাদের মতন জড়িয়ে ধরেছিল ওকে। যেন একটা আশ্রয় খুঁজছিল এতক্ষণ! যাকে আঁকড়ে ধরা যায়। তারপর তুলির চোখের সামনেই কিরকম নিস্তেজ হয়ে গেছিল ওর বুকে মাথা রেখে। তুলি এবার রঙ্গন এর শরীরের উষ্ণতাটা ফিল করেছিল হঠাৎ। ও ঘাবড়ে গিয়ে ছেলেটার কপালে, গালে হাত ঠেকিয়ে দেখেছিল জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে রঙ্গন এর। তুলির এবার চারিদিকটা সত্যিই অন্ধকার হয়ে এসেছিল কেমন। এতটা জ্বর কখন এলো! আর তুলি বুঝতেও পারলো না কিছু। কথাটা চিন্তা করতে করতেই ও রঙ্গনকে কোনভাবে শোয়ালো। তারপর নিজেই জল পট্টি দিয়ে, ওষুধ খাইয়ে, সারা রাত জেগে বসে থেকে কোনভাবে জ্বর কমানোর চেষ্টা করলো ছেলেটার। এই পুরো সময়টা রঙ্গন তুলির হাতটা শক্তভাবে নিজের কাছে ধরেছিল! কিরকম তুলিকে নিজের মধ্যে জড়িয়ে ছিল যেন মন থেকে। তুলির এইসব দেখে নিজের ওপরই রাগ হচ্ছিল কেমন। কেন এই ছেলেটার ওপর রেগে ছিল এতদিন! কেন একবারের জন্যও কথা বলেনি নিজে থেকে! রঙ্গন তো কত চেষ্টা করছিল নিজের ভুলটাকে ঠিক করার। কত দিন সময়ে অসময়ে ওদের বাড়ি যেত। বস্তির স্কুলটাতে গিয়ে বসে থাকতো। কত ফুল, চকলেট, কার্ড তুলিকে পাঠিয়েছে, ওর একবার ফিরে তাকানোর অপেক্ষায়! একবার কথা বলার অপেক্ষায়। কিন্তু তুলি চুপ থেকেছে সব সময়। রঙ্গন এর কাছে যাওয়া তো দূরে থাক, ওর দিকে তাকায় অব্দি নি ঠিক করে।
সেদিন এসব ভাবনার ভিড়েই ভোর হয়েছিল। থার্মোমিটারে তখন রঙ্গন এর শরীরের উষ্ণতা দেখাচ্ছিল একশ এক। তার মানে জ্বরটা কমেছে কিছুটা। কাল রাতে তো একশ তিন উঠে গেছিল! কথাটা ভেবে তুলি খেয়াল করলো রঙ্গন এর ক্লান্ত মুখটা। কেমন ফ্যাকাসে চেহারায় ঘুমিয়ে আছে ছেলেটা! এই একদিনেই কতটা বদলে গেছে যেন! কথাগুলো কেমন আনমনে মনে হয়েছিল ওর।

তবে সেদিন একটু বেলা বাড়তে তুলি ডাক্তারকে কল করেছিল। রঙ্গন এর আবার জ্বর এসেছে আসলে। তুলি, নিরুপমা বুঝতে পারছে না কি হলো ছেলেটার! নিরুপমা তো ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে এই অবস্থায় দেখেই চিন্তায় অর্ধেক হয়ে গেছিল। আর তুলি সারাটা রাত জেগে সব সামলালো! একবারও ওকে ডাকলো না ঘুম থেকে! কথাগুলো কিরকম অগোছালো হয়ে বলেছিল ও। তুলি তখন খুব শান্ত গলায় উত্তর দিয়েছিল,
—-” তোমার এমনিই হাই প্রেশার। তার ওপরে কাল সারাদিন কম টেনশন তো করোনি! এরপর রাত্রিবেলা ঘুম ভাঙিয়ে এসব বললে আর তুমি ঠিক থাকতে!”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল তুলি। কিন্তু নিরুপমা কিরকম আদর মাখা চোখে দেখেছিল ওকে! এই মেয়েটা কোন্ দিন যে নিজের মেয়ে হয়ে গেছে; বুঝতেই পারেনি ঠিক।
যাইহোক, তবে সেদিন ডাক্তার এসে রঙ্গনকে দেখে বলেছিল এই জ্বরটা মেন্টাল স্ট্রেস আর ট্রমা থেকে এসেছে ওর। কালকের ঘটনাটা খুব বেশিভাবে এফেক্ট করেছে ওকে। তাই মনের সাথে শরীরও এই ধকলটা নিতে পারেনি! কথাগুলো শুনে তুলির চারিদিকটা আবছা হয়ে গেছিল যেন। চোখে জল জমেছিল হঠাৎ। আর যারা রঙ্গন এর এই অবস্থা করলো তাদের কি কোন শাস্তি হবে না! একজন এত ব্রাইট একটা ডাক্তারকে এইভাবে অপমান করে, মেরে ধরে সবাই ছাড়া পেয়ে যাবে! কথাগুলো ভেবেই ও পুলিশ স্টেশনে গেছিল সেদিন। কাল তো একটা এফ. আই.আর করা হয়েছিল। তারপর কি কেউ গ্রেপ্তার হলো! কথাগুলো জানার জন্যই গেছিল আজ। কিন্তু ওখান থেকে থানার ও.সি খুব অল্প কথায়ই বলেছিল,
—–” যারা আপনার হাজবেন্ড কে মেরেছে, তারা পার্টির লোক! খুব ইনফ্লুয়েন্স আছে ওদের। সেই জন্য এরেস্ট করা যায়নি। প্লিজ আর থানায় ফোন করে বিরক্ত করবেন না আমাদের। যা হয়েছে মিটে গেছে। এই নিয়ে আর আমাদের কিছু করার নেই!”

কথাগুলো খুব সহজভাবে বলে উনি অন্য কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন সেদিন। কিন্তু এসব শুনে তুলির ধৈর্য্যের সীমা শেষ হয়ে গেছিল যেন। তবে ও জানতো পলিটিকাল কনেকশন আছে বলেই খুব সহজে ছাড় পেয়ে যেতে পারে ছেলেগুলো। তাই আজ খুব সাবধানে নিজের হাতের আড়ালে ফোনটাকে ধরে ভিডিও ক্যামেরাটা অন রেখেছিল ও। আর সেদিন ও.সির বলা প্রত্যেকটা কথা রেকর্ড করেছিল নিজের ফোনে। এরপর থানা থেকে বেরিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেছিল ওর স্কুলের বন্ধু তন্ময়কে। তন্ময় এখন খুব নাম করা একজন ইউটিবার পশ্চিমবঙ্গের। তুলি জানতো, অন্য কোন মিডিয়ার কাছে গেলে হয়তো কোন লাভ হবে না। একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াই সাধারণের কথা শোনে। তাই তন্ময়কে ফোন করে জানিয়েছিল সবটা। হোয়াটস অ্যাপ করেছিল থানার ও.সির ভিডিও ফুটেজ, কালকের হসপিটালের সিসিটিভি ফুটেজ, আর রঙ্গন এর রক্তাক্ত চেহারা, চোট গুলোর ছবি। তন্ময়কে ও এরপর নিজে থেকেই বলেছিল সাহায্যের জন্য।
<২৩>
সেদিন তন্ময় সব কিছু শুনে না করেনি তুলিকে। বরং এক রাতের মধ্যে এই সমস্ত ফুটেজ, ছবি দিয়ে একটা ভিডিও শেয়ার করেছিল ইউটিউব ফেসবুকে। সেই ভিডিওতে তুলি নিজে একটা বাইট দিয়ে বলেছিল রঙ্গন এর কথা। বলেছিল কত বছর দিন রাত পড়াশোনা করে, খেটে, পরিশ্রম করে রঙ্গন একজন ডাক্তার হয়েছে! কলকাতার নাম করা হার্ট সার্জেন। কত পেশেন্ট ওর ট্রিটমেন্ট এ নতুন জীবন পেয়েছে! কত গ্রামে বস্তিতে গিয়ে রঙ্গন নিজের উদ্যোগে মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে, চেম্বার করেছে। অনেক সময় আটচল্লিশ ঘণ্টার ওপর ডিউটি করে পেশেন্টদের সঙ্গে থেকেছে। আর আজ তাকেই এইভাবে মারা হলো! এতগুলো লোক মিলে হামলা করা হলো কিছু না জেনে, না বুঝে। একবারও কেউ এটা দেখলো না যে পেশেন্টের অলরেডি এর আগে দুবার হার্ট এটাক হয়ে গেছে! হার্টের অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিল সেই কারণে। এই পরিস্থিতিতে একজন ডাক্তারের হাতে বেশি কিছু থাকে না করার মতন, তাও যেখানে হার্ট এ্যাটাকের অনেকটা সময় পার করে হসপিটালে আনা হয়! কথাগুলো আসলে সেদিন পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পর, হসপিটালে গিয়ে অন্য ডাক্তারদের থেকে জেনেছিল তুলি। রঙ্গন এর জন্য হসপিটালের বাকি ডাক্তারদের মনেও খুব ক্ষোভ ছিল! আসলে আজ যেটা রঙ্গন এর সাথে হয়েছে, কাল তো সেটা বাকি ডাক্তারদের সাথেও হতে পারে! ইভেন কত কত ডাক্তার এই হ্যারাসমেন্ট অলরেডি ফেস করেছে এইভাবে! ফিজিক্যালি এসল্টেড হতে হয়েছে। তাই তুলির রিকুয়েস্ট এ রঙ্গন এর বন্ধু, কলিগ, হসপিটালের বাকি ডাক্তাররাও বাইট দিয়েছিল নিজেদের ওই ভিডিওতে। যাইহোক, এরপর এই ভিডিওটা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেছিল ইউটিউব ফেসবুকে। সাধারণ মানুষ জেনেছিল রঙ্গন এর দিকের ঘটনাটা। ফিল করেছিল ডাক্তার হিসেবে ওর যন্ত্রণাটা।
তবে এই সবই রঙ্গন এর অজানা ছিল সেইদিন। তুলি সারাদিন পুলিশ স্টেশন, হসপিটাল ঘুরে যখন বাড়ি পৌঁছেছিল, তখনও দেখেছিল ছেলেটা জ্বরের ঘোরে আছে! নিরুপমা ছেলের পাশে কিরকম ভেজা চোখে বসেছিল সেই মুহূর্তে। তুলি এবার নিরুপমার কাছে গিয়ে বলেছিল,
——” মা, তুমি এবার একটু রেস্ট নাও। আমি তো এসে গেছি। আমি বসছি ওর কাছে।”
নিরুপমা এর উত্তরে খুব এলোমেলো হয়ে বলেছিল,
—–” আমি আর দেখতে পারছি না ছেলেটাকে এইভাবে! সুস্থ ছেলে আমার কাল হসপিটাল গেল; আর এ কি অবস্থা হয়ে ফিরে এলো! ডাক্তার হওয়ার জন্য এরকম শাস্তি পেতে হলো ছেলেটাকে! এই জানলে তো এই প্রফেশনে আসতেই দিতাম না ওকে। কত ভালো রেজাল্ট ছিল জয়েন্টে। চাইলে ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়তে পারতো! কিন্তু আমি বলেছিলাম মেডিক্যাল পড়তে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ভুল করেছিলাম।”
কথাগুলো খুব কষ্ট থেকে বললো নিরুপমা। তুলি এই মুহূর্তে ঠিক কি উত্তর দেবে, ভেবে পেল না যেন! আসলে রঙ্গনকে এরকম নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ওরও চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে আজ। মনে হচ্ছে যেভাবেই হোক, আবার ছেলেটাকে আগের মতন সুস্থ, হাসি খুশি করে তুলতে হবে। তুলি এইভাবে রঙ্গনকে ভেঙে পড়তে দেবে না!
যাইহোক, এইসব ভাবনার ভিড়ে তুলি সেই রাতটাও জেগে কাটিয়েছিল প্রায় রঙ্গন এর কাছে। বার বার জল পট্টি দেয়া, টেম্পারেচার চেক করা, ওষুধ দেওয়া, সব করেছিল নিজে। তারপর ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটেছিল শহরে। তুলিরও এবার শরীরটা ছেড়ে দিয়েছিল। চোখ দুটোতে কান্তি নেমে এসেছিল কেমন। তাই রঙ্গন এর বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল আজ।
তবে সকালে রঙ্গন এর জ্বরটা নেমে গেছিল। তাই নিজে থেকেই ঘুমটা ভেঙে গেছিল ওর। কিন্তু চোখ খুলতেই দেখেছিল তুলিকে! ওকে আঁকড়ে ধরে কিরকম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে এই মুহূর্তে। দেখে মনে হচ্ছিল সরল, নিষ্পাপ একটা মুখ! যে কোন জটিলতা বোঝে না। যে বেহিসেবী ভাবে ভালোবাসে, আগলে রাখে! কথাগুলো ভেবেই মনে পড়ে গেছিল নিজের সেই দিনের ব্যবহারটা। এই মেয়েটাকেই ও সন্দেহ করেছিল! কত খারাপ কথা বলেছিল! এমনকি বাড়ি থেকেও চলে যেতে দিয়েছিল! কথাগুলো মনে হতেই কিরকম চোখটা ভিজে এলো ওর, নিজের ভুলের জন্য। তাই কিছু না ভেবেই আজ তুলিকে ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিজের মধ্যে। ঘুমন্ত তুলির মাথায় কপালে আদর করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল আলতো করে। তুলির অবচেতনেই ওকে ভালোবাসলো ভীষণভাবে।
<২৪>
সেদিন এরপর যখন তুলির ঘুম ভেঙেছিল, ঘড়িতে তখন সকাল দশটা! রঙ্গন ইচ্ছে করেই তুলিকে ডাকেনি আসলে। ওর জন্য দু রাত জেগেছে মেয়েটা। এরপর যদি তুলির শরীর খারাপ হয়!

কিন্তু সেদিন তুলি ঘুম থেকে উঠে রঙ্গন কে জেগে থাকতে দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিল! ও তাড়াতাড়ি রঙ্গন এর কপালে হাত ঠেকিয়ে বলেছিল,
——” জ্বর নেই তো তোমার? শরীর ঠিক আছে?”
রঙ্গন এই প্রশ্নে শান্ত গলায় বলেছিল,
—–” ঠিক আছি আমি।”
তুলি এবার তাড়াতাড়ি উঠে বসেছিল। কিন্তু ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই কেমন আঁতকে উঠেছিল নিজে! এত দেরি হয়ে গেছে! কথাটা ভেবেই ও বলেছিল রঙ্গনকে,
—– ” এতক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছি! আর তুমি ডাকোনি আমাকে!”
রঙ্গন এই কথায় সেই শান্ত ভাবেই বলেছিল,
—–” তোমার আরো ঘুম দরকার। দু রাত জেগে তুমি!”
এই উত্তরে তুলি আর বেশি কথা বাড়ায়নি। তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে গেছিল। ছেলেটাকে কিছু খেতে দিতে হবে এখন। এই জ্বরের জন্য তো ঠিকভাবে খায়ওনি কাল!
তবে সেদিন খাবার নিয়ে এসেও তুলি খেয়াল করলো রঙ্গন চুপ করে বসে। যাইহোক, তুলির জোরাজুরিতে একটু খেয়েছিল তারপর ছেলেটা। কিন্তু অল্প খাওয়ার পরই কিরকম অন্ধকার মুখে বলেছিল,
——” আমি আর খাবো না। ইচ্ছে করছে না! পেট ভরে গেছে।”
কথাটায় তুলি বুঝেছিল রঙ্গনের মন আজও খারাপ। সেই জন্যই এইভাবে থমকে আছে সারাক্ষণ। খেতেও চাইছে না ঠিকভাবে। তাই ও একটু জোর দেখিয়ে বলেছিল,
—— ” ডাক্তার তো তুমি! নিশ্চয়ই জানো, যে এতটা জ্বর থেকে ওঠার পর, এত এত ওষুধ খাওয়ার পর ঠিকভাবে খাবার খাওয়াটা কতটা দরকার! তাই ইচ্ছে না হলেও খেতে হবে।”
কথাটা বলে তুলি নিজের হাতে একটা রুটির টুকরো ছিঁড়ে রঙ্গন এর মুখের কাছে ধরলো। কিন্তু রঙ্গন এই মুহূর্তে ওর দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে বললো,
—- ” তুমি খেয়েছ কিছু কাল রাত থেকে?”
এই প্রশ্নে তুলি একটু এলোমেলো হয়ে বললো,
—– ” না, মানে! আমি!”
রঙ্গন তখন নিজে তুলির হাত থেকে রুটির টুকরোটা নিয়ে ওর কাছে গিয়ে বললো,
——” জানি কাল কিছু খাওনি। আর সারা রাত জেগেও ছিলে। তাই আমার সাথে তোমার খাওয়াটাও দরকার। বুঝলে।”
কথাগুলো শেষ করে রঙ্গন নিজে ওকে খাইয়ে দিল এই মুহূর্তে। তুলিও আর কিছু ঠিক বলতে পারলো না! শুধু নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। যার নিজের ওপর দিয়ে এতটা ঝড় গেছে, যার শরীর এত খারাপ, সেই অবস্থায়ও ছেলেটা ওর কথাই ভাবছে! ও খেয়েছে কি না সেই নিয়ে চিন্তা করছে! কথাগুলো যেন আনমনে মনে হলো হঠাৎ। আর চারিদিকটা গোলাপি আভায় ছেয়ে গেল তুলির! ভালোবাসার রঙ এসে ধরা দিল মনে।

তবে এই দিনগুলোতে রঙ্গন কেমন বদলে গেছিল যেন। খুব চুপচাপ থাকতো সারাক্ষণ। দরকার ছাড়া কথা বলতো না! মোবাইলটা অর্ধেকের বেশি সময় অফ রাখতো। নিজের বেশিরভাগ পেশেন্ট কে ই অন্য ডাক্তারদের কাছে রেফার করে দিয়েছিল। হসপিটালে যাওয়া তো দূরে থাক, ঘর থেকে ছাদ টুকু অব্দিও যেত না রঙ্গন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে