অভিমানী বিকেল শেষে পর্ব-০১

0
747

#অভিমানী_বিকেল_শেষে ( প্রথম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১>
কলকাতায় ভিড়ে ঠাসা বড়বাজার। নানা রকম দোকানে হাজারটা জিনিস, আর হাজার রকম লোকের ভিড়। তার মধ্যেই তুলি আর তুলির বাবা ঘুরে ঘুরে পুজোর বাজার করছিল। সামনেই তো মা আসছে! শরৎ এর আমেজ চারিদিকে। এর মধ্যে মাসি, পিসি, জ্যাঠতুত বোন, খুর্তুত দিদি সবাইকে পুজোয় কিছু না কিছু তো দিতেই হবে। তারই একটা লম্বা লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে মা কাল রাতে। আর তুলির বাবার পক্ষে তো এতকিছু বুঝে কেনা সম্ভব না! তাই অফিস শেষে তুলিকে ডেকে নিয়েছে বড়বাজারে, মার্কেটিং এ হেল্প করার জন্য। আর তুলিরও স্কুল ছুটি হয়েছে সেই বিকেল চারটে; এরপর আজ আর কোন গানের টিউশনি নেই। তাই বাবার সাথে হাজির হয়েছে এখানে। আর এই বিভিন্ন রকম জামা কাপড় দেখা, তারপর দরদাম করে কেনা, এসব আসলে তুলির বেশ পছন্দের একটা কাজ। তাই বেশ ভালোই কাটছিল বিকেলটা বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে।
কিন্তু সন্ধ্যের দিকে সমস্ত কেনাকাটি শেষ করে যখন ওরা বাড়ি ফিরছে, তখন এই সুন্দর সময়টার তাল কেটে গেল হঠাৎ। তুলি আর তুলির বাবা ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়েছিল বাস ধরবে বলে। কিন্তু আচমকা একটা ট্যাক্সি এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তুলির বাবাকে ধাক্কা মারলো জোরে। আসলে টায়ার ব্লাস্ট করে কন্ট্রোল রাখতে পারেনি কোনভাবে, তাই এই বিপত্তি। কিন্তু এই একটা ধাক্কায় তুলির বাবা ছিটকে পড়লো রাস্তার ওপর। আর মাথাটা জোরে গিয়ে ধাক্কা লাগলো শক্ত পিচের রাস্তায়, তারপর চোখের পলকে তুলির চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে গেল যেন! বাবার মাথা ফেটে সেই মুহূর্তে গলগল করে রক্ত পড়ছে। তুলি হাতের সমস্ত ব্যাগ ফেলে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে। নিজের ওরনা দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো সঙ্গে সঙ্গে। তারপর কোন রকমে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে সোজা নিয়ে এলো কাছের টিউলিপ নার্সিং হোমে।
সেদিন এই পুরো ঘটনাটায় তুলি একদম একা ছিল হসপিটালে। আসলে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেছিল তুলির, তাই কাউকে কল করতে পারেনি। আর বাবাও ফোনটা আজই বাড়িতে ফেলে অফিস গেছে! কথাটা সেদিন মার্কেটিং করতে করতেই বলেছিল অশোকবাবু তুলিকে। তাই এই বিপদের সময়ে একটা ফোন করারও কাউকে সুযোগ পায়নি মেয়েটা! সেদিন এরপর কোন রকমে ট্যাক্সি ড্রাইভার এর সাহায্যে একটা স্ট্রেচার জোগাড় করে তুলি বাবাকে নিয়ে গেছিল নার্সিং হোম এর ইমারজেন্সিতে। কিন্তু এক্সিডেন্ট কেস যেহেতু, তাই কিছুতেই ওরা এডমিট করতে চাইছিল না অশোকবাবু কে। থানায় ডায়রি করার পরই ভর্তি নেওয়া হবে, বার বার একটা কথাই বলে যাচ্ছিল ডিউটি তে থাকা নার্স। তুলি এই মুহূর্তে প্রায় হাত জোড় করে বলে উঠেছিল অন্তত প্রাইমারী ট্রিটমেন্ট টুকু যেন শুরু করে ওরা! কিন্তু নার্স, নার্সিং হোমের স্টাফেরা, কেউই কোনভাবেই রাজি হচ্ছিল না ওর কথায়।
তবে এই পরিস্থিতিতে একজন হঠাৎ এসে সবটা পাল্টে দিল যেন! ডক্টর রঙ্গন চ্যাটার্জি, কলকাতার একজন নাম করা হার্ট সার্জেন, যিনি এই নার্সিং হোম এ নিয়মিত বসেন। সেই ডক্টর রঙ্গন এই সময় ইমার্জেন্সির পাশ দিয়ে নিজের চেম্বারে যাওয়ার সময় তুলির গলার আওয়াজ শুনেছিল আনমনে। তারপর ইমারজেন্সি রুমে উঁকি মেরে দেখেছিল সব কিছু। তুলির বাবার তো রক্তে পুরো শার্টটাই লাল হয়ে গেছিল! প্রায় কোন সেন্স ছিল না আর! আর তুলি এইসবের মধ্যে শুধু একটাই রিকুয়েস্ট করে যাচ্ছিল ডিউটিতে থাকা নার্সকে, যে কোনভাবে অন্তত সামান্য হলেও ট্রিটমেন্ট শুরু করে ওরা বাবার! এই সময় রঙ্গন এগিয়ে এসেছিল ইমারজেন্সি রুমে। তারপর নিজে নার্সকে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছিল এক্ষুণি পেশেন্টকে এডমিট করার করার জন্য। শুধু তাই না, একজন চেনা লোকাল পুলিশ অফিসার কে ফোন করে রঙ্গন তুলির সাথে যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছিল, যাতে আর কোন প্রব্লেম না হয়! তুলি এই সময় যেন।আলো খুঁজে পেয়েছিল একটা! আসলে বাবাকে কোনদিন এইভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেনি তো! তাই কেমন মাথা কাজ করছিল না যেন এতক্ষণ! সব কিছু খুব আবছা হয়ে গেছিল চোখের সামনে! এই মুহূর্তে এই অচেনা মানুষটা এসে সাহায্য না করলে তুলি সব কিছু সামলাতে পারতো না! সেদিন এইসব ভাবনার ভিড়েই পুলিশ অফিসার এর সাথে কথা শেষ করেছিল তুলি। তারপর সেই অচেনা মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলেছিল স্থির গলায়, —–” থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ.. আপনি এই সময় হেল্প না করলে আমি যে কি করতাম!”
কথাটায় রঙ্গন অল্প কথায়ই উত্তর দিয়েছিল,
—–” থ্যাঙ্কস এর কিছু নেই। ইটস মাই ডিউটি এজ আ ডক্টর..”
কথাটা শেষ করেই রঙ্গন ইমারজেন্সি রুমটা খালি করে চলে গেছিল নিজের চেম্বারে। তুলি তবে নিঃস্তব্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক সেকেন্ড! আসলে হঠাৎ মনে হচ্ছিল, যে এত হেল্প করলো এই বিপদে; তার নামটাই জানা হলো না!
তবে এরপর তুলিও বাবার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিল ও.টি রুমের দিকে! কয়েকটা সেলাই পড়বে বাবার! আর বেশ কিছু টেস্টও আছে। যতক্ষণ না সুস্থভাবে মানুষটাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, ততক্ষণ শান্তি নেই মনে।
<২>
সেদিন এরপর সাতটা সেলাই পড়েছিল অশোকবাবুর। তবে ইন্টারনাল কোন ইঞ্জুরি নেই। তাই কোন চিন্তার কারণ নেই। কদিন অবজারভেশন এ রেখে ছেড়ে দেবে নার্সিং হোম থেকে। কথাগুলো জেনে যেন তুলি আর ওর মায়ের মনটা একটু স্থির হয়েছিল! আসলে মা ও এই এক্সিডেন্ট এর খবর শুনে কেমন এলোমেলো হয়ে ছুটে এসেছিল নার্সিং হোমে। তুলির তো এইসব দেখে মা কে নিয়েও চিন্তা শুরু হয়ে গেছিল খুব। এমনিতেই হাই প্রেশারের পেশেন্ট! এত স্ট্রেস নিয়ে যদি মায়ের শরীরটা খারাপ হয়ে যায়! তবে সেদিন ডাক্তার এসে বলেছিল ঠিক সময়ে ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েছিল বলেই বেশি ব্লাড লস হয়নি। নইলে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারতো!
এইসব শুনে তুলির সেই মুহূর্তে একজনের কথাই মনে পড়ছিল! ওই হঠাৎ আসা অচেনা মানুষটার কথা। উনি যদি এসে সাহায্য না করতেন তাহলে আজ বাবা ঠিক থাকতো না! তবে সেদিনের পর তুলি নার্সিং হোমে খোঁজ নিয়ে জেনেছে ওই অচেনা মানুষটার ব্যাপারে। ওই শান্ত চেহারার বছর বত্রিশ এর ছেলেটার নাম ডক্টর রঙ্গন চ্যাটার্জি। বেশ নাম হয়েছে এই বয়সেই হার্ট সার্জেন হিসেবে কলকাতায়। তবে মানুষ হিসেবেও খুব হেল্পফুল। অনেক গ্রামে গিয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা, বেশ কিছু দাতব্য চিকিৎসালয় এ নিয়মিত ভিজিট করে পেশেন্ট দেখেন উনি। কথাগুলো নার্সের মুখে জেনে তুলির বেশ ভালো লেগেছিল সেদিন। এই হিসেবি পৃথিবীতে এরকম মানুষ তো আসলে খুব একটা দেখা যায় না!
যাইহোক এই ভাবনার দুটো দিন পর তুলি সেদিন সন্ধ্যেবেলা বাবাকে দেখে ফিরছিল নার্সিং হোম থেকে, কিন্তু তখনই দোতলার করিডোরে হঠাৎ তুলি দেখেছিল রঙ্গন কে। অন্য কোন একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলছিল এক মনে ছেলেটা। তবে তুলি আর সেদিন এই মানুষটাকে অদেখা করে চলে যায়নি। ও নিজে থেকে গিয়েছিল আজ রঙ্গনের কাছে। তারপর পিছন থেকে ডেকে উঠেছিল, —–” এক্সকিউজ মি.. ডক্টর রঙ্গন!”
কথাটা শুনে রঙ্গন আনমনে পিছনে ফিরে তাকিয়েছিল, তখন তুলি বেশ হাসি মুখেই বলেছিল, —–” নমস্কার। আপনার আমাকে মনে আছে কি না জানি না, কিন্তু সেদিন আপনি হেল্প করেছিলেন বলেই আমার বাবাকে এই নার্সিং হোম এ এডমিট করতে পেরেছিলাম! কাল পরশুর মধ্যে বাবাকে ডিসচার্জ করে দেবে। আপনি যদি সেদিন হেল্প না করতেন, তাহলে বাবাকে হয়তো ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম না! সিরিয়াসলি, থ্যাঙ্ক ইউ..”
কথাটা সেই মুহূর্তে শেষ হতেই রঙ্গন বললো অল্প কথায়,
—-” বার বার থ্যাঙ্কস দেওয়ার দরকার নেই। আগেও বলেছি, এটা আমার ডিউটি.. যাইহোক, একটু দরকারি কথা বলছিলাম, সো প্লিজ এক্সকিউজ আস..”
কথাটা বলেই রঙ্গন আবার উল্টো দিকে ফিরে কথা বলতে শুরু করলো সেই ডাক্তারটার সাথে, তুলি কে প্রায় অদেখা করে। তুলির তবে একটু খারাপ লাগলো যেন! ডাক্তাররা খুব প্রফেশনাল এটা জানে। কিন্তু তুলি তো কৃতজ্ঞ বলেই কথা বলতে এসেছিল! তবে মনে হয় এদের সময় খুব দামী! এপোয়মেন্ট ছাড়া দরকারের বাইরে এক দুটো কথাও বলা উচিত না এরকম ব্যাস্ত ডাক্তারের সাথে! তুলি তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে পা বাড়ালো। সত্যি, যেচে পড়ে কথা বলতে আসাটা ঠিক হয়নি ওর।
যাইহোক, এরপর দুটো দিন কেটে গেছে শহরের ক্যালেন্ডার থেকে। আজ শুক্রবার। রঙ্গন এর আজ বেশ কাজের চাপ। তিনটে জায়গায় চেম্বারের ডেট আজ। তার মধ্যে সকালে একটা ও.টি ও আছে টিউলিপ এ। তাই বেশ তাড়াহুড়ো করেই গাড়িটা পার্ক করলো ও নার্সিং হোমের পার্কিং এরিয়ায়। তারপর বেশ জোরে পা চালিয়ে নার্সিং হোমের দিকে এগিয়ে গেল। যদিও মুডটা আজ খুব একটা ভালো নেই রঙ্গন এর! সকাল সকালই বেরোনোর আগে মায়ের সাথে এক চোট অশান্তি হয়ে গেছে! আসলে মা কদিন ধরে বিয়ে বিয়ে করে মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে ওর! এক্ষুণি বাড়িতে একটা বৌমা জোগাড় করে না দিতে পারলে শান্তি হচ্ছে না মায়ের! তার ওপর আজ তো আবার দুটো তিনটে মেয়ের ফটো নিয়ে হাজির হয়েছে রঙ্গন এর কাছে। রঙ্গন এর তো এসব দেখেই মাথা গরম! কিছুতেই বোঝাতে পারেনি মা কে যে একসাথে থাকার জন্য একজন ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব দরকার। আর সেটা এইভাবে ফটো দেখে বিচার করা যায় না! কিন্তু এত গভীর কথা মা কিছুতেই মাথায় ঢোকাতে চায়নি। উল্টে হুমকি দিয়েছে যদি ছ মাসে রঙ্গন বিয়ের জন্য হ্যাঁ না বলে তাহলে মা না কি হরিদ্বারে কোন একটা আশ্রমে চলে যাবে কলকাতা ছেড়ে! এইসব শুনে রঙ্গন এর রাগের পারদ আরো চড়েছে। তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে কিছু না খেয়েই বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে আজ। এইসব এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতে একটু অন্য মনস্ক হয়েই এগোচ্ছিল নার্সিং হোমের গেটের দিকে, কিন্তু হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো উল্টো দিকের একটা দৃশ্য দেখে। আসলে এই টিউলিপ নার্সিং হোমের গেটের বাইরে একজন বয়স্ক মহিলা বসে থাকে চুপচাপ, ভিক্ষার ঝুলি হাতে। রঙ্গন ওকে যখনি দেখতে পায়, কিছু টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু আজ দেখলো একটা মেয়ে দুটো টিফিন কৌটো নিয়ে হাজির এই মহিলার কাছে। তারপর হাসি মুখে সেই কৌটোতে রাখা খাবার গুলো একটা কাগজের প্লেটে সাজিয়ে দিল ওনাকে। তারপর বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো মেয়েটা ওনার সাথে। এমনকি এরপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা চাদর বার করে হাতে দিল ঐ বয়স্ক মহিলার। এসব পেয়ে তো ওই মহিলা ভীষণ খুশি। মেয়েটাকে গালে হাত দিয়ে আদর করলো হাসি মুখে। তারপর মেয়েটা ধীরে ধীরে উঠে টিউলিপের ভিতরে চলে গেল নিজের মনে। কিন্তু এই মুহূর্তে রঙ্গন যেন কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো এক জায়গায়! আসলে এসব দৃশ্য তো রাস্তা ঘাটে খুব কম দেখা যায়! কারণ বেশির ভাগ মানুষই এরকম কাউকে দেখলে অদেখা করে চলে যায়! সেখানে যেভাবে মেয়েটা আন্তরিকতা দেখালো ওই বয়স্ক মহিলাকে, তাতে রঙ্গন এর মনে দাগ কাটলো হঠাৎ! আচ্ছা, এই মেয়েটাকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে না ওর! কথাটা হঠাৎ মনে হতেই মনে পড়লো সেদিনের ঘটনাটা। এই মেয়েটারই তো বাবার এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল কদিন আগে! রঙ্গনই তখন এডমিট করিয়ে দিয়েছিল ওনাকে টিউলিপে! আর এই মেয়েটা তো সেদিন করিডোরে কথাও বলতে এসেছিল নিজে থেকে ওর কাছে! কিন্তু রঙ্গন একটা খুব ইম্পর্টেন্ট কেস নিয়ে আলোচনা করছিল সেই সময় ডক্টর সামন্তর সাথে। তাই আর খুব একটা রেসপন্স করেনি মেয়েটাকে! কথাগুলো এক নিমেষে মনে পড়ে গেল রঙ্গন এর, আর এই মেয়েটার সাথে আর একবার, আরেকটু ভালোভাবে কথা বলার ইচ্ছে হলো মনে হঠাৎ।
যাইহোক, এরপর ও.টি শেষ করে রঙ্গন নিজে এসেছিল রিসেপশনে। কেন জানে না সকালের ওই দৃশ্যটার জন্যই মেয়েটার সাথে আলাপ করার কথা মনে হচ্ছিল ওর! তাই এসে সোজাসুজিই জিজ্ঞেস করেছিল রিসেপশনিস্টকে,
—–” আচ্ছা, আমি চার পাঁচ দিন আগে একজন এক্সিডেন্ট পেশেন্ট কে এখানে এডমিট করিয়েছিলাম! নামটা ওনার ঠিক মনে নেই আমার! আপনি কি বলতে পারবেন একটু চেক করে উনি এখন কোন কেবিনে আছে!”
কথাটা শুনে রিসেপশনিস্ট সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল,
—–” হ্যাঁ স্যার, মনে আছে। আপনি তো নিজে ওনার ফ্রম ফিল আপ করে এডমিট করেছিলেন! তারপর পুলিশেও খবরও দিয়েছিলেন; এক্সিডেন্ট কেস বলে! যাইহোক, ওই পেশেন্টের নাম ছিল অশোক বোস। কিন্তু স্যার, আজ সকালেই তো ওনার ছুটি হয়ে গেছে। ওনার মেয়ে এসে সব ফরমালিটিজ কমপ্লিট করে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে গেছেন পেশেন্টকে।”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল মেয়েটা। কিন্তু রঙ্গন এরপর আর কোন কথা বাড়ালো না! তার মানে ওই মেয়েটার সাথে আর কোনদিনই আলাপ হওয়ার না! কথাটা মনে হতেই রঙ্গন রিসেপশন রুম থেকে বেরিয়ে এলো বাইরে। তারপর হালকা একটা খারাপ লাগা নিয়েই বাকি দিনের ব্যস্ততায় হারিয়ে গেল রোজের মতন!

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে