অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব-০৫

0
1705

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_৫
#লেখিকা_N_K_Orni

— বৃষ্টিকে আমি আমার ওখানে রেখে পড়াতে চাই?

— কিন্তু?

রাদিব সাহেবকে বলতে না দিয়ে মিসেস রায়া বলে উঠলেন,

— ভাইয়া তুমি প্লিজ না করো না। বৃষ্টি আমাকে বলল ও নাকি ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু ও তো কোনো জায়গায় এডমিশন দেয়নি। আর আমার বাড়ির কাছেই একটা মেডিকেল কলেজ আছে। ওখানে বৃষ্টিকে ভর্তি করিয়ে দিলেই হয়। আমি চাই বৃষ্টিকে আমার কাছে নিয়ে পড়াতে। এমনিতেও ও এখানে খুব একটা ভালো থাকবে না।

রাদিব সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,

— আচ্ছা। তাই কর। তা তুই কবে নিয়ে যাবি ওকে?

— আমি তো কালই চলে যাচ্ছি। তখনই ওকে নিয়ে যাব।

— সে কি কালই?

— হ্যাঁ। নাহলে বেশি দেরী হয়ে যাবে।

— ঠিকই বলেছিস। ওর এই বিয়ের জন্য সব নষ্ট হয়ে গেছে। তুই বরং ওকে তোর সাথে নিয়ে যা।

— আচ্ছা তাহলে আমি আসি।

বলেই মিসেস রায়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাদিব সাহেব সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

—————-

বৃষ্টি তার রুমে বসে আছে। চাইলেও সে এসব কিছু ভুলতে পারছে না। সে আজ বিকালে সবার সামনে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে এখন আর পারছে না। সে কাল কি করবে তাই ভাবছে? কাল যে তার বোন সানিয়া আর আসিফের বিয়ে। তখন সে কিভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখবে? না তাকে স্বাভাবিক থাকতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে আটটা বাজে। বাসায় ওলরেডি বিয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রান্নাঘরে চলে যায়। মিসেস সানিয়া রান্নাঘরেই ছিলেন। বাসা যেহেতু নানারকম আত্মীয় স্বজনে ভর্তি, তাই অনেক আগেই সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করা হয়ে গেছে। বৃষ্টি রান্নাঘরে গিয়ে মিসেস সানিয়াকে দেখেও না দেখার ভান করে নিজের জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে রুমে চলে এলো। বৃষ্টিকে এভাবে চলে আসতে দেখে মিসেস সানিয়া তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তবে কিছু মানুষ দূর থেকে তার সমালোচনা করছিল। কিন্তু তাতে বৃষ্টির কিছু যায় আসে না।

বৃষ্টি ব্রেকফাস্ট করা শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। তারপর একটা লম্বা শাওয়ার নিল। শাওয়ার নিয়ে এসে বৃষ্টি দেখল সাড়ে দশটা বেজে গেছে। বৃষ্টি ঠিক করল সে সুন্দর করে সেজে বিয়েতে উপস্থিত থাকবে। সে আসিফকে দেখাতে চায় যে সে না থাকলেও বৃষ্টি ভালো আছে। বৃষ্টি দ্রুত তৈরি হয়ে নিল। সে সুন্দর করে সেজে সায়েরার কাছে গেল। সায়েরাকে সাজানোর জন্য বাসায়ই লোক আনা হয়েছে। সায়েরা তাদের কাছেই সাজছিল। তখনই রুমে বৃষ্টি উপস্থিত হলো। সায়েরা তাকে তখনও খেয়াল করেনি। বৃষ্টি সায়েরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— দেখ তো সায়েরা আমাকে কেমন লাগছে?

হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে সায়েরা সেদিকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে দেখতে পেল। বৃষ্টিকে দেখে সে অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেল। তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। সে বৃষ্টিকে এভাবে আসা করেনি। সে তো বৃষ্টিকেই আসা করেনি। সে ভাবতেই পারেনি যে বৃষ্টি এভাবে সেজে তার সামনে আসবে। সে অবাক হয়ে বলল,

— তুই এখানে?

— কেন আমাকে দেখে অবাক হচ্ছিস? অবাক হওয়ার কি আছে? তোর বিয়ে আর আমি থাকব না? আচ্ছা আমি বরং যাই। একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

বারোটার দিকে আসিফ ও তার পরিবার চলে এলো। বৃষ্টিকে ওভাবে দেখে আসিফ বেশ অবাক হলো। মিসেস আয়েশা বিয়েতে আসেননি। নাহলে তিনি বৃষ্টিকে নিশ্চয়ই নির্লজ্জ্ব বলতেন। সে কথা ভেবেই বৃষ্টি মনে মনে হাসল। বৃষ্টি পুরোটা সময় ওখানে উপস্থিত থাকলেও কাজি সাহেব যখন বিয়ে পড়াতে এলো তখন বৃষ্টি রুমে চলে এলো। কারণ বৃষ্টি আর যাই করুক আসিফের কবুল বলাটা দেখতে পারত না।

বৃষ্টি রুমে আসার কিছুক্ষণ পর মিসেস রায়া তার কাছে এলো। তিনি বৃষ্টিকে তৈরি হয়ে নিতে বললেন। আর জামাকাপড়ও গুছিয়ে নিতে বললেন। সায়েরারা বের হওয়ার পর পরই তারা বের হবে বলে তিনি চলে গেলেন। বৃষ্টি ওনার কথা মতো জামাকাপড় বদলে তৈরি হয়ে নিল। তারপর জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল।

আসিফ সায়েরাকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর মিসেস রায়া বৃষ্টিকে নিয়ে রাদিব সাহেবের রুমে এলেন।

— ভাইয়া তাহলে আমরা আসি।

— আচ্ছা আয়।

বলেই রাদিব সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। বৃষ্টির মাথায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

— ভালো থাকিস মা।

মিসেস রায়া বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— আমি বাইরে যাচ্ছি। তুই ভাইয়ার সাথে কথা বলে আয়।

বৃষ্টি কথা উত্তরে মাথা নাড়ায়। মিসেস রায়া রুম থেকে বেরিয়ে যান। রাদিব সাহেব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— ওখানে গিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করিস। আর পারলে তোর এই অধম বাবাটাকে একটু কল দিস।

— বাবা তুমি এভাবে বলো না।

— আচ্ছা তুই যা। দেরী হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা পথ যেতে হবে তো।

বলেই তিনি বৃষ্টির হাতে তার একটা ক্রেডিট কার্ড আর কিছু টাকা তুলে দিলেন।

— এগুলো রাখ। কাজে লাগবে।

— আচ্ছা বাবা তাহলে আসি।

বলেই বৃষ্টি রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বৃষ্টির যাওয়াটা মিসেস সানিয়া খেয়াল করলেন। তিনি রাদিব সাহেবের কাছে এসে বললেন,

— কই যাচ্ছে ও?

— রায়া সাথে। বৃষ্টি এখন থেকে ওর কাছেই থাকবে। আর ওখানে থেকে লেখাপড়া করবে।

— কি বলছ এসব?

— ঠিকই বলছি।

— বৃষ্টি ওখানে যাবে না। তুমি ওকে আটকাও।

— না আমি আটকাব না।

— তুমি ভালো করেই জান আমি কি করতে পারি?

— যা খুশি করো।

বলেই রাদিব সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। মিসেস সানিয়া রাগে দেওয়ালে হাত দিয়ে বাড়ি দিল।

————–

এদিকে বৃষ্টিকে নিয়ে মিসেস রায়ার তার বাড়িতে আসতে রাত আটটা বেজে যায়। মিসেস রায়া বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই মিসেস রায়ার মেয়ে আয়না ছুটে আসে।

— মামনি তুমি চলে এসেছ।

বলেই আয়না মিসেস রায়াকে জড়িয়ে ধরে। বৃষ্টি ভালো করে আয়নাকে দেখতে থাকে। আয়না এবার মিসেস রায়াকে ছেড়ে বৃষ্টির দিকে তাকায়।

— তুমি বৃষ্টি আপু তাই না? মামনি কালকে রাতে আমাকে ফোনে বলেছিল যে তুমি আসছ।

বলেই আয়না বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টিকে ছেড়ে দিল। তারপর মিষ্টি হেসে বলে উঠল,

— আপু তুমি খুব কিউট।

বৃষ্টি হালকা হেসে বলল,

— তুমিও খুব কিউট।

মিসেস রায়া এবার আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল,

— আয়না তোর ভাইয়া ফিরেছে?

— হ্যাঁ আম্মু একটু আগেই এসেছে। ভাইয়া তার রুমেই আছে।

— আচ্ছা ঠিকাছে।

তখনই ওখানে রায়হান সাহেব উপস্থিত হলেন।

— তোমরা এসে গেছ। আয়না এখন বৃষ্টি আপুকে ছাড়। আপু বাইরে থেকে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। তুমি তাকে বিরক্ত করো না।

— আচ্ছা বাবা।

— বৃষ্টি মামনি ভালো আছো?

— হ্যাঁ ফুপা। আপনি কেমন আছেন?

— এইতো আলহামদুলিল্লাহ্। আয়না তুমি আপুকে তার রুম দেখিয়ে দেও। আর আমি রুবিকে বলছি বৃষ্টির জিনিসপত্র যেন ওই রুমে দিয়ে আসে।

— আচ্ছা বাবা।

আয়না এবার বৃষ্টিকে তার রুমে দিয়ে গেল।

— আপু তাহলে তুমি ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে নেও। আর কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।

— আচ্ছা।

আয়না রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর রুবি এসে বৃষ্টির জিনিসপত্র দিয়ে যায়। বৃষ্টি একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে জামা বদলে বৃষ্টি চুল আচড়াতে যায়। তখন দেখে চুল জামার পেছনের চেনের সাথে বেধে গেছে। বৃষ্টি অনেক খোলার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। বৃষ্টি ভাবে একবার আয়নার কাছে যাই। সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সে তো আয়নার রুম চেনে না। তাই সে চারপাশ দেখতে থাকে। সে দেখে একটা রুমে আলো জলছে আর দরজাও খোলা। বৃষ্টি ওই রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই। সে আয়নার নাম ধরে ডাকে কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। সে আরও কিছু বলতে যাবে তখনই ওয়াশরুম থেকে একটা ছেলে বের হয়ে আসে। তার পরণে শুধু টাওয়েল। বৃষ্টি তাকে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। সে মনে মনে বলে,

— বৃষ্টি এ কার রুমে চলে এলি?

সে বের হতে যাবে তার আগেই ছেলেটা বলে ওঠে,

— এই মেয়ে তুমি কে? আর আমার রুমেই বা কি করছো?

ছেলেটার মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে ওঠে।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে