#অবেলায়_তুমিআমি
লেখিকা-#খেয়া
পর্ব-০৩(শেষ)
হসপিটালের করিডোরে পাইচারি করছি।
পায় দুঘন্টা হলো ফারান ভাইয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
,,
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে এসে বললেন
— পেসেন্ট ভালো আছে, ঘন্টাখানেকের মধ্যে বেডে শিফট করা হবে।
—————
যেমনটা ভেবেছিলাম তেমন কিছু হয়নি, একটা বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে ভাইয়ার একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগেছিল।
ভাইয়াকে বেডে শিফট করা হয়েছে।তখনই একটা মেয়ে এলো হসপিটালে।মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচুর কান্নাকাটি করছে।মামি বলল মেয়েটা নাকি ভাইয়ার ফ্রেন্ড।আমার অবশ্য অন্য কিছু মনে হলো।
————
হসপিটাল থেকে আসতে রাত সন্ধ্যা হয়ে গেছিল।। ফ্রেশ হয়ে এসে মাত্র ফোনটা হাতে নিয়েছি।দেখি ১৭৭ টা মিসডকল।তাও রুদ্রর নাম্বার থেকে।
“আমি কল ব্যাক করা মাত্র ফোনটা ধরলেন।যেন আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন।”
— হ্যালো।
— কোথায় ছিলে এতক্ষণ।কতবার ফোন করছি।
— আপনি না আমায় ফলো করেন তাহলে আপনি কেন জানেন না যে কোথায় ছিলাম।
— শ্রীয়া,প্লিজ। তুমি যানো কত টেনশনে ছিলাম আমি।
— আমায় নিয়ে এত টেনশনের কারন?
— জানি না।
— আপনাকে একটা কথা বলব।
— বলো।
— আপনার কী আমাকে শুধুই ভালোলাগে নাকি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
— আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা।তবে তোমার জন্য আমার ফিলিংস টা ভালোলাগার চেয়েও অনেক বেশি।জানোতো,ভালোবাসা কখনো কাউকে বলে হয়না।এটা এমন একটা অনুভুতি যা তোমাকে মরতেও দেবেনা আবার শান্তিতে বাচতেও দেবেনা।
————
আমি আর ঝামেলা না করে বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছি।আর যাই হোক এই লোকটা আমায় খারাপ রাখবেনা।
আজ রুদ্রর বাড়ির লোকেরা আসবে বিয়ের ডেট ফিক্স করতে।এবার অবশ্য রুদ্রর দাদীকে রাজি করাতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ওকে।
আমার তো প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে এটা ভেবে যে একসময় এই বিয়েটা না করার জন্য কত বাহানা দিয়েছেন উনি।আর এখন বিয়েটা করার বাহানা খুজছেন।
— এই মেয়ে, এখনি কী বাচ্চাকাচ্চার ফিউচার প্লান করছিস নাকি।
“রাহার কথা শুনে বড্ড রাগ হলো।”
— এই মেয়ে এগুলো কোন লেভেলের কথা।আর তুই এখানে কী করছিস।
— তোকে নিতে এসছি। তোকে দেখার জন্য তো আমার দুলাভাইটা ছটফট করছে।
— আহারে।
,,,,,,,
আমি আজ একটা নীল শাড়ি পড়েছি।আমি অবশ্য শাড়ি মোটামুটি কন্ট্রোল করতে পারি।
————
বড়রা সবাই নিচে বিয়ের ডেট ঠিক করছে।আমার দাদা এবং নানা বাড়ির লোকেরা এসেছে।আাপাতত রুদ্রকে আমার ঘরে পাঠানো হয়েছে কথা বলার জন্য।
অথচ এই লোক না নিজে কথা বলছে না আমাকো বলতে দিচ্ছে। সে নাকি আমাকে আগে মন ভরে দেখবে।এমন করছেন যেন আগে কখনো দেখেননি।
–তুমি এত নিলজ্জ কেন, বলোতো।অন্য কেউ হলে তো লজ্জায় লাল হয়ে যেত আর তুমি বিরক্ত হচ্ছো
— হুম। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছি।
— রাগ করেনা,বউ।
— বউ,,,,,
— আমার ফিউচার বউ।আচ্ছা তুমি কী কখনো কাউকে ভালোবেসেছো,শ্রীয়া।
— হুম।একজনকে ভালোবেসেছিলাম তবে সেটা আড়ালে।যদিও সময়ের সাথে সাথে বুঝেছি যে সেটা শুধুই মোহ ছিল। আর কিছুনা।
— তোমার অতীত নিয়ে কিছু আমি জানতে চায়না,শ্রীয়া।আমি শুধু তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ জুড়ে থাকতে চায়।
— আপনি কী কোনো জন্মে সাহিত্যিক ছিলেন।
— সিরিয়াসলি, তুমি এতটাই আনরোমান্টিক।
————-
অনেকখন ধরে সবাই বসে আছি।আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করছে।
অবশেষে একমাস পরের একটা তারিখ ঠিক হলো।তখনই পেছোন থেকে কেউ একজন বলে উঠল
— মোটেও না।আমি এতদিন ছুটি নিতে পারবনা।সামনের সপ্তায় ডেট ফিক্সড কর।
“মানুষটিকে দেখা মাত্র অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেলাম।আদ্রিয়ান, এই মানুষটার ওপরই যে আমার প্রচন্ড মোহ ছিল,তবে সেটা শুধুই একতরফা।”
— আরে, তুই কোথা থেকে এলি।
— আর দাদী, আকাশ থেকে পরিনি হেটে হেটেই এসেছি।
“উনি আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন”
— আমাকে তো তুমি চিনোই।তবে নতুন পরিচয়টা দিয়ে দেয়। আমি আদ্র তোমার একমাত্র দেবর।
— তোরা একে অপরকে চিনিস।
— হুম।আমি যখন চট্টগ্রাম থাকতাম তখন পরিচয় হয়েছিল।
— ওহ।
—————-
রুদ্ররা চলে যাওয়ার পর থেকেই মাথায় একটাই কথা ঘুরছে আদ্রর কারনে কী আমার আর রুদ্রর সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে।
তখনই রুদ্ররর ফোন এলো।
— হ্যালো।
— শোনো তোমার জন্য একটা পার্সেল পাঠিয়েছি নিয়ে নিও আর বিকেলে তৈরি থেকো একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।
————-
অনেকক্ষণ ধরে তৈরি হয়ে বসে আছি কিন্তু উনার আসার নামই নেই।
তখন উনি একটা নীল শাড়ি আর চুরি পাঠিয়েছিলেন।ওগুলো পড়েই বসে আছি।
কেন যানি আমার মনে হয় এই মানুষ টাকে আমার প্রচন্ড দরকার।
আবার ভয় ও হয়।ছোটোবেলা থেকেই যেই জিনিসটাকে প্রচন্ড ভাবে চেয়েছি সেটা কখনোই আমার হয়ন।রুদ্রকে কি আমি সারাজীবনের মতো আমার করে পাবো নাকি তার আগেই হারিয়ে ফেলবো।
একটা মাঠে খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে আছি।সবে সন্ধা নেমেছে। চারিদিকে সূ্র্যে লালআভা ছড়িয়ে- ছিটয়ে আছে।আকাশে ফানুষ উড়ছে।
আমি মুগ্ধ নয়নে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎই রুদ্র আমার কানেকানে বলল
— শুভজন্মদিন,মিষ্টিমেয়ে।
” আজ আমার জন্মদিন অথচ আমি ভুলে গেছিলাম।বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে সেভাবে কোনো জন্মদিন পালন করা হয়নি।খুশিতে কেঁদেই দিলাম”.
— আরে আরে ভাবি কাঁদছ কেন।
“দেখলাম রিদিতা আর আদ্রও আছে।”
আদ্র আমাকে বলল–
— একদম কেঁদোনা, ভাবি। তোমার কান্না দেখে আমার ভাইয়া না পাগল হয়ে যায়।এমনিতেই যা বউ পাগল হয়ে গেছে।
আদ্রর কথা শুনে আমি হেসে দিলাম।
রুদ্র এবার বলল
— দেখো শ্রীয়া, বার্থডে তোমার হলেও গিফট কিন্তু আমার চাই।
— কী গিফট চায়।
— তোমাকে।আমি বাবা আর পাচজনের মতো হাটুগেড়ে প্রপোজ করতে পারবনা।আমি সরাসরি বলছি যে তুমি সারাজীবন শুধু আমার থাকবে আর আমাকেই ভালোবাসবে।
রুদ্রর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে উঠলাম।এই লোকটা সত্যি বউ পাগলা হয়ে গেছে।
—————-
দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেছে। রুদ্রর সাথে আমার বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।এই লোকটাকে ছাড়া বেচে থাকাও আমার জন্য কঠিন
কাল আমাদের বিয়ে। এখন শুধু কাবিন করে রাখবে।আমার অনার্স শেষ হলে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।
আদ্রর ব্যাপারে সবটাই রুদ্রকে খুলে বলেছি। সে সব ঠিকঠাক মতো বুঝেছে।
এই মানুষটা আমাকে খুব ভালোমতো বুঝে।আমার ভালোলাগা খারাপ লাগা গুলো বুঝে।
এই মানুষটাকে সত্যি আমার খুব প্রয়োজন।
————–
সকাল সকাল রুদ্রর ফোন।
— এত সকালে কেন ফোন করছো।
— তোমাকে ভিডিও কল দিয়েছিলাম ধরো নাই কেন।
— ঘুমাচ্ছিলাম।আর কাল থেকে তো রোজই দেখতে পাবেন তাহলে? শুধু আজকের দিনটাই তো।
— তোমাকে ছাড়া যে আমার দিনটা কাটেনা,মায়াবতী।যেদিন থেকে তোমার মায়ায় পড়েছি, সেদিন থেকে যে আমার পুরো দুনিয়াটাই উল্টে-পাল্টে গেছে।
— তাই নাকি।
— হুম।
— আজকাল খুব সিনেমা দেখছেন মনে হয়।
— ধুর।তুমি সবসময় আমার মুডের বারোটা বাজিয়ে দাও।
— ধুর, আপনার কী হসপিটালে কোন কাজ নেই।
— আচ্ছা শোন,,,, না কিছুনা।কথাটা না হয় বাসর ঘরেই বলব।
— আপনি ফোন রাখবেন কিনা।
— হুম।রাখছি।
——————-
বিকেল বেলা সব কাজিনরা বসে আছি। সন্ধায় কাবিন। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
ঘন্টাদুয়েক আড্ডা দিয়ে সবাই চলে গেলো।
খানিকক্ষণ পর ফারান ভাইয়া এসে বলল
— অনেক ভালো থাকিস, শ্রীয়া।
— একটা কথা বলল, ভাইয়া।
— বল।
— সেদিন হাসপাতলে এসেছিল না তোমার বেস্টফ্রেন্ড, ঐ মেয়েটা তোমাকে খুব ভালোবাসে।ওর ব্যাপারে একটু ভেবে দেখতে পারো তো।
” ভাইয়া আমার কথার জবাব না দিয়েই চলে গেলো।
,,,,,,,,,,
একটু পরে আমাদের কাজিন সম্প্রদায়ের মেকাপ আর্টিস্টরা এলো আমায় সাজাতে।
————-
ঘরোয়া ভাবে সব হলেও আমাদের দুই পরিবারের সবাই এখানে আছে।
কাজী সাহেব রুদ্রকে কবুল বলতে বলা মাত্রই সে কবুল বলে দিলো।যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলো
আমি তো ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে কবুল বললাম।
অবশেষে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।
মনের ভেতর অসম্ভব সুন্দর একটা অনুভূতি হচ্ছে।এটাই বুঝি এই পবিত্র বন্ধনের ক্ষমতা।
বিদায়ের সময় মা এবং বাকিদের জড়িয়ে প্রচুর কাঁদলাম।
—————-
বেলকনিতে দাড়িয়ে ভাবছিলাম–
সেদিন যদি প্রথমেই বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিতাম তাহলে এতকিছু হতোই না।পরে অবশ্য জেনেছিলাম যে দাদী জেনেশুনে বিয়েতে না করেছিলো।সেও দেখতে চেয়েছিল রুদ্র কতদূর যায়।
এসব ভাবছিলাম আর মুচকি মুচকি হাসছিলাম।তখনই পেছন থেকে রুদ্র আমায় জড়িয়ে ধরল।
— একা একা কী ভাবছ, বউ।
লোকটা সত্যি বউ পাগল।
— শুভ বিবাহবার্ষিকী, বউ।
— বিবাহবার্ষিকী?
— হুম,একসপ্তাহের।
— তাহলে আমার গিফট?
” উনি আমার গালে একটা কিস করে বলল”–
এটাই গিফট।
“বলেই উনি চলে গেলেন।আমি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি।”
এই লোকটা সত্যি পাগল।আমাকেও পাগল বানিয়ে দিবে।তবুও আমার এই লোকটাকেই দরকার।
শুধু এই লোকটাকেই লাগবে আমার।
— শ্রীয়া, চলো ছাদে যাই।
— এত রাতে।এই অবেলায়?
— হুম, এই অবেলায় শুধু তুমি আর আমি।
সমাপ্ত।