অবেলায় তুমিআমি পর্ব-০১

0
3237

#অবেলায়_তুমিআমি
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া

আমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে অথচ আমি কিছু জানি না।এটা কেমন কথা।

— আরে, রাগ করছিস কেন। ছেলেটা বেশ ভালো। তোর বাবার বন্ধু মাহিম ভাইয়ের ছেলে।তাছাড়া ছেলেও ডাক্তার।

— আম্মু শোনো,আমি বিয়ে করবনা মানে করবোনা বুঝোছো।

— আরে শ্রীয়া কথাটা তো শোন।

— আম্মু, প্লিজ যাও এখান থেকে। আমি ঘুমাবো।

আম্মুকে একপ্রকার ঠেলে বের করে দিলাম ঘর থেকে।

(উফ, আপনাদেরকে তো বলাই হলোনা আমি শ্রীয়া।একটা পাবলিক ভার্সিটি তে পড়ি।অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।আমার বাবা নেই। মা অন্য একটা ভার্সিটির টিচার।
আপাতত বিয়ের কোনো ইচ্ছেই নেই আমার।অথচ আমার মা আমার বিয়ে ঠিক করে বসে আছে তাও এমন একজনের সাথে যাকে কোনজন্মে দেখেছি তাই মনে নেই)

যাই হোক আপাতত আমার একটা লম্বা ঘুম দরকার।

—————

— বাবা, প্লিজ আমি ঐ মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবনা।

— কারণ?

— যাকে চিনিনা, জানিনা, এভাবে হুট করে কীভাবে বিয়ে করে নিবো।

— রুদ্র, ভুলে যাসনা তোদের বিয়ে ছোটোবেলা থেকেই ঠিক হয়ে আছে। তোর দাদুর এটাই ইচ্ছে ছিল।

— দাদি প্লিজ।আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করবনা। মানে না।আমি রুমে যাচ্ছি, কেউ আর ডিস্টার্ব করবে না।

” কথাগুলো বলেই চলে গেলো রুদ্র।ও একজন হার্ট সার্জন। বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে সবে দেশে এসে নিজেদের হসপিটালে জয়েন করেছে। দেখতে মাশাল্লাহ সাথে তো রাগ আর জেদ ফ্রি।”

,,,,,,,,,,

— ভাইয়া আসব?

— তুই আবার আমার ঘরে আসার জন্য পার্মিশান নিস কবে থেকে

— তাও ঠিক।তবুও এখন তো তোর বউ আসবে তাই আরকি।

— কিছু বলবি, রিদি।

— আচ্ছা, ভাইয়া।তুই শুধু চিনিস না বলে ঐ আপুটাকে বিয়ে করবিনা।

— হুম।

— মিথ্যে বলিসনা, প্লিজ।তবে আপুটা কিন্ত একদম হুর পরীর মতো।একবার দেখতে পারিস কিন্তু।

— তবে আমার তো অন্য কাউকে পছন্দ।

” রুদ্রর কথাশুনো লাফিয়ে উঠে ওর বোন রিদিতা”

— সিরিয়াসলি ভাইয়া, তুই আর প্রেম।

— না প্রেম না।

— তাহলে।মেয়েটার নাম কী? কোথায় থাকে?

— জানিনা রে। মেয়েটাকে আমি একদিন ই দেখেছি।তারপর অনেক খুঁজেও আর ঐ মায়াবতীর দেখা পায়নি।

— তুই মেয়েটাকে কোথায় দেখেছিলি?

— আরে সেদিন—

“হঠাতই রুদ্রর ফোন বেজে উঠল।রুদ্র কথা বলে ফোনটা রেখেদিল।”

— রিদি শোন, হসপিটালে একটা ইমার্জেন্সি এসে গেছে। আমাকে যেতে হবে।

–এত রাতে।

–হুম।

–আচ্ছা ভাইয়া তুই যা।

—————

শ্রীয়া, এই শ্রীয়া দুপুর হতে চলল, আর তুই এখনো উঠিস নি।

–ধুর আম্মু যাওতো। আজ তো শুক্রবার, এত সকালে উঠে কাজ কী আমার।

— কাজ আছে। তুই উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।তখন বলব।

–ধুররর।

— আম্মু, এই আম্মু।

— সকালবেলা গলা ফাটাচ্ছিস কেন?

— তুমি আগে বলো কী কাজ আছে আমার।

— আজ তুই দশটার দিকে রুদ্রর সাথে দেখা করতে যাবি।

— এই রুদ্রটা আবার কে?

— তোর মাহিম আংকেলের ছেলে।

” উফফ,দেখেছেন অবস্হা যার সাথে বিয়ে তার নাম টাই জানতাম না।”

–নো ওয়ে, আম্মু।আমি যাবনা।

— তোকে যেতেই হবে। না গেলে ওরা কী ভাববে বল তো।আর দেখিস ছেলেটাকেও তোর পছন্দ হবে।

“অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম ছেলেটাকে যা একটা বুঝিয়ে বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার একটা চান্স আছে।”

— আচ্ছা আম্মু আমি যাবো।

— ওখানে গিয়ে কিন্তু একদম উল্টা পাল্টা কিছু করবিনা।

–ধুর।

—————

সকালবেলা রুদ্রদের বাড়ির সবাই একসাথে নাস্তা করছিলো।এটাই তাদের বাড়ির নিয়ম।

— রুদ্র!

— জ্বী, দাদী।

— তুমি দশটার দিকে শ্রীয়ার সাথে দেখা করতে যাবো।

— দাদী,আমি বলছি তো যে ঐ মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।

— আমি আদ্রিতাকে বলে দিয়েছি। তুমি যাবে।তার তাছাড়া গেলেই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।

— কিন্তু দাদী।

— রুদ্র!আমি তোমার কোনো কিন্তু শুনতে চায়না।

— কোথায় যেতে হবে।

— আমি ঠিকানা দিয়ে দেবো তোমায়।রিদিও যাবে তোমার সাথে।

— আচ্ছা।

—————

প্রায় বিশ মিনিট ধরে রেস্টুরেন্টে বসে এসছি। অথচ কারো আসার নামই নেই।
পুরো রেস্টুরেন্টটা ওরা বুক করেছে বলে লোকটা চিনতে অসুবিধা হবেনা।বড়লোকদের বড় বড় কারবার আরকি।

বসে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম বলে রেস্টুরেন্টের সামনের বাগানে হাটছিলাম।তখনই দেখলাম একটা লোক আমার দিকেই আসছিল।মনে হলো হয়ত এটাই রুদ্র।
পরক্ষণেই মনে হলো এই লোকটাকে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নই আসে না।আর যাইহোক এমন একটা রোবটের সাথে আমি থাকতে পারবনা।

উনি আমার দিকে এগিয়ে এসেই বলতে লাগলেন

— হে ইউ! মানে অবশেষে তোমার দেখা পেলাম। সেদিনের পর তো উধাও হয়ে গেলে। কত খুঁজেছি তোমায় জানো।তা এখানে কী কর তুমি?

” উনার কথার ধরন দেখে বুঝলাম উনি সেদিনের জন্য আমায় চিনলেও আমার সাথেই যে উনার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা ধরতে পারেনি।হঠাৎ ই উনি জিঙ্গেস করলেন”

— এই যে, চিন্তামনি কই হারালে।

আমি কোনো কথা না বলে হাতটা উনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম

— আমি, শ্রীয়া।

” আমার কথাশুনে মনেহয় উনি বড়সড় একটা শক খেলেন।খানিকখন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন

— ভেতরে গিয়ে বসে কথা বলি।

–হুম।

অসহ্য লোক একটা। বলল বসে কথাবলি অথচ এখন কিছু বলছেই না।কী আর করার আমি কথা শুরু করলাম।

— আপনার সাথে তো আপনার বোনেরও আসার কথা ছিল।

— হুম ওর কিছু সমস্যা থাকায় ও আসেনি।

— আচ্ছা।আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।

–বলো।

— আমি এই বিয়েটা করতে চাই না।

— আমাকে বিয়ে না করার কারন?

— আমি তো আপনাকে চিনিও না ঠিকমতো।

— কিন্তু আমি তো বিয়েটা তোমাকেই করব।

— কীইইই।একদমই না, যাকে চিনিনা, যানিনা তাকে এভাবে কী করে বিয়ে করে নিবো।

— যেভাবে আমি তোমাকে বিয়ে করব ঠিক সেভাবেই।

— মানে টা কী,এসবের।

— কিন্তু তুমি তো আমাকে আগে থেকেই চিনো।

— What.আপনার সাথে আমার একদিন ই দেখা হয়েছিল তাও দশ মিনিটের মতো। আর এই দশ মিনিটে আপনি যা করেছিলেন।সারাজীবন পেলে তো মনে হয় আমার জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়ে দিবেন।

— ওকে, ডিয়ার। তেজপাতা হওয়ার জন্য রেডি থেকো।

“কথাটা বলেই উনি বেরিয়ে গেলেন।আমার এখন কচুগাছের সাথে গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছে করছে।
কেন যে উনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”

—————-
রুদ্র বাড়ি ঢুকেই দেখে ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে।
রুদ্র তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।তখনই ওর দাদী বলে উঠল-

— রুদ্র,আমরা ঠিক করেছি শ্রীয়ার সাথে তোমার বিয়েটা দিবো না।

— মানে, কেন?

— তুমি তো বললে তুমি ওকে বিয়ে করতে চাও না।

— কিন্তু দাদি আমি ওকে বিয়ে করব।

— মানে কী এসবের রুদ্র।কখনো বলছো বিয়ে করবেনা, আবার বলছ বিয়ে করবে।

— মা আমার কথাটা—-

— শোনো, রুদ্র বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা না। এটা সারা জীবনের ব্যাপার।বিয়ের পর ঝামেলা হওয়ার চেয়ে ভালো বিয়েটাই না হওয়া।

— কিন্তু দাদী।

— রুদ্র, শোন। তুই নিজের যদি কাউকে পছন্দ করিস তো বলতো পারিস।আর তুই বা শ্রীয়া কেউ একে অপরকে চিনিসনা। বিয়ের পর তোদের বনিবনা নাও হতে পারে, তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

” রুদ্র কোনো কথা না বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো,ও ভালো করেই জানে এখানে কথা বলে কোনো লাভ নেই।ওর পিছনে রিদিতাও গেল।”

————-

ভাইয়া।

— হুম।

— তুই খুশি হসনি বিয়েটা ভেঙে যাওয়ায়।আর তুই ঐ আপুটার কথা কেন বললি না নিচে?

— নারে, আমি একদম খুশি হইনি।আর ওর কথা নিচে বলো কী হতো।

–সবাই ওর সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিত।

— সেটা হতো না।কারন, শ্রীয়াই আমার মায়াবতী ছিল।
— কীহহহহ!

— হুম।
–oh my god.তাহলে এখন কী হবে। দাদি যখন একবার না করে দিয়েছে তখন এটা আর হ্যা হবেনা।

— এখন কী করব।আর শ্রীয়াও এই বিয়েতে রাজি না।

— মাথা খাটা, ভাইয়া।

—————-

বিকেলে নিজের রুমে শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে স্যাড সং শুনছিলাম, তখনই আম্মু এসে বলল ওরা নাকি বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে।

আমার তো লুঙ্গি ড্যান্স দিতো মন চাচ্ছে।

কিন্তু এরপর আম্মু যা বলল এতে আমার মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে গেলো।আম্মু বলল—
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে