অবুঝ_বউ পার্ট: ৬

0
5002

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে হাতের আঙ্গুলে গরম অনুভব করে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম, রাতে অবুঝ বউয়ের অবুঝ প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কখন ঘুমাইছিলাম মনে নেই, হাত পুরার যন্ত্রণায় চিল্লানী দিয়ে যখন সামনে তাকালাম দেখি আমার পিচ্ছি বউ কফির মগ হাতে নিয়ে হাসছে, তারমানে সোহাগী আমার আঙ্গুল কফির মগে….
–সেই কখন থেকে ডাকছি ঘুম আর শেষ হয় না তাই এই কাজ করেছি
–তাই বলে হাত পুরিয়ে দিবা
ব্যস করেছে তোর জন্য এটাই প্রাপ্য (কথাটা শুনে দরজায় তাকালাম আম্মু এসে সোহাগীর পক্ষ নিয়েছে মা আর বউ যেহেতু এক পক্ষে আমি আর কি করবো একবার সোহাগীর দিকে তাকাচ্ছি একবার আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি)
আম্মু: ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় নাশতা করবো (আম্মু হাসতে হাসতে চলে গেলো এখন উনার আদরের বউমা কে শাস্তি দেওয়া যায় তবে কঠিক কোনো শাস্তি না রোমান্টিক শাস্তি দিব)
আমি: ও মাগো
সোহাগী: এই কি হইছে
–হাতটা মনে হয় বেশি পুরে গেছে খুব যন্ত্রণা করছে
–আমি তো ফাজলামো করে দিয়েছিলাম এতো লেগে যাবে বুঝিনি আচ্ছা দাঁড়াও আমি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি

বিছানায় চুপ করে বসে আছি দেখি পিচ্ছি মেয়ে কি করে, একটু পর সোহাগী মলম হাতে নিয়ে এসে আমার পাশে বসলো তারপর আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিতে শুরু করলো, সোহাগী মলম দিয়ে দিচ্ছে আর ওর চুল বার বার চোখের সামনে এসে পরছে ও বিরক্ত হয়ে বার বার চুল সরাচ্ছে দৃশ্যটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে হাহাহাহা আমার হাত পুরানো এবার বুঝ মজা
–হয়ে গেছে এখন কমে যাবে
–আচ্ছা সোহাগী এই মলম কি খাওয়া যায়
–মলম খেতে যাবে কেন
–আমার খুব খিদে লেগেছে হাতে মলম নিয়ে নাশতা খেলে তো মলম পেটে চলে যাবে
–ওহ আচ্ছা দাড়াও আমি নাশতা নিয়ে আসছি
–ওকে

সোহাগী আমাকে নাশতা খাইয়ে দিচ্ছে, প্রথম দিনেই বউকে বোকা বানিয়ে বউয়ের হাতে নাশতা খাওয়ার মজাই আলাদা পিচ্ছি বুঝতেও পারেনি আমি যে অভিনয় করছি, ফোন বেজে উঠলো সোহাগীর আপু তাই ওর কাছে ফোনটা দিয়ে দিলাম, সোহাগী ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো আর আমি বাকি নাশতা গুলো ফটাফট খেয়ে নিলাম
–সরি আপুর জন্য তোমার নাশতা….. ওমা নাশতা কোথায়
–খেয়ে নিছি
–কিন্তু
–আমার হাত সামান্য পুরেছে তো তোমাকে বোকা বানিয়ে তোমার হাতে খেলাম
বউ কিছু না বলে আমার গলা চেপে ধরলো আমি আস্তে করে ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, সোহাগী কিছুক্ষণ আমার চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো কি সুন্দর চোখ দুইটা ইচ্ছে করছে এই চোখের গভীরে ডুব দেই হঠাৎ সোহাগী আমাকে ধাক্কা দিয়ে হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো হাহাহাহা পাগলী বউ আমার

বিছানায় বসে গুনগুন করে গান গাইছি তখন মুমু এসে ডাক দিলো ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য, ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু সবাই বসা
আমি: আব্বু কিছু বলবে
আব্বু: হ্যাঁ ভাবছি অনুষ্ঠানটা করে ফেলবো
আমি: ঠিক আছে
আব্বু: তাহলে আগামীকালই ভালো তোমার সব বন্ধুদের ইনভাইট করো
আমি: আচ্ছা

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছি বের হবো একটু ঘোরাঘুরি হবে সাথে বন্ধুদের ইনভাইট করা হবে
–নাহিল একটা কথা বলি (পিছনে তাকিয়ে দেখি সোহাগী)
–হ্যাঁ বলো
–আমার বন্ধুদের ইনভাইট করি
–করো সমস্যা কি
–আচ্ছা
পাগলীটা খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো, ফোনটা হাতে নিয়ে সাজিদকে ফোন দিলাম গ্রামে গিয়েছিল এসেছে কিনা দেখি
–হ্যালো
–কিরে ঢাকায় ফিরেছিস
–হ্যাঁ গতকাল সন্ধ্যায় আসলাম
–তাহলে দেখা কর এখনি অনেক কথা আছে তোর সাথে
–কি হইছে বলতো
–ফোনে বললে রাগ করতে পারিস সামনে বলাই ভালো
–ঠিক আছে বাসায় আয়
–ওকে
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হলাম সাজিদের বাসার উদ্দেশ্যে, আমার বন্ধু বলতে মৌরি আর সাজিদই আছে তিনজন একসাথে পড়েছি বাকি সব অফিসের কলিগদের ইনভাইট করতে হবে

সাজিদের বাসায় বসে আছি বিয়ের কথা কিভাবে যে বলি ও তো অনেক রাগ করবে
–কিরে কি হয়েছে বল
–আসলে তুই গ্রামে ছিলি তাই জানাতে পারিনি আর কাজটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হয়েছে
–কি কাজ
–বিয়ে করে ফেলছি
–আমাকে না জানিয়ে
–আমার সব কথা শুন তারপর রাগ করিস
–ওকে বল (সবকিছু সাজিদকে বুঝিয়ে বললাম)
–ঠিক আছে এখন কোথায় যাবি
–মৌরির বাসায়
–ওকে চল

মৌরির সামনে বসে আছি ও মুখ গোমরা করে বসে আছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারতেছি না ও আমার ফ্রেন্ড হয়ে আমার বিয়েতে খুশি না
সাজিদ: মৌরি কাল নাহিলের বাসায় যাচ্ছিস তো
মৌরি: অবশ্যই নাহিলের পিচ্ছি বউ কতটা সুন্দর সেটা তো আমাকে দেখতে হবে
আমি: এভাবে কথা বলছ কেন
মৌরি: খারাপ কি বললাম
সাজিদ: নাহিল চল আজ উঠি আমার কাজ আছে
আমি: হুম চল

বাসা থেকে বেরুতেই সাজিদ আমার হাত ধরে টান দিয়ে দাড় করালো
–কি হলো
–কিছু বুঝেছিস
–কি বুঝবো
–মৌরি তোকে ভালোবাসে
–কি বলছিস
–হ্যাঁ আর তুই সোহাগীকে বিয়ে করাতে ও এভাবে প্যাচিয়ে কথা বলেছে
–ও আমাকে ভালোবাসলেই কি আমি সোহাগীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি
–কিন্তু নাহিল তুই মৌরিকে এখনো চিন্তে পারিসনি ও খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে যেকোনো কিছু করতে পারে
–দূর ও কি করবে অজতা ভাবিস না
–তাও ওর থেকে সাবধান
–ঠিক আছে

রাতে বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম খুব ক্লান্ত লাগছে সারাদিন মৌরির কথা মাথা থেকে যায়নি আমি ওকে ভালো ফ্রেন্ড ভাবি আর ও কিনা আমাকে….
–নাহিল খাবে না (সোহাগী মুখ মলিন করে এসে বললো আজ ওকে একদম সময় দিতে পারিনি এজন্য মনে হয়)
–তোমার মন খারাপ
–হুম
–কেন
–আর বলোনা পিয়ালকে বলছিলাম কাল যেন আসে ও না করে দিয়েছে (এমনি মৌরির চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছে না আবার পিয়াল, সোহাগী কি পিয়ালকে ভালোবাসে নাকি)
–মন খারাপ করোনা আবার বলে দেখ আসবে
–হুম

বিছানার একপাশে শুয়ে আছি সোহাগী এসে অন্যপাশে শুয়ে পড়লো আমি ওর দিকে থাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমি কি বোকা অজতা ভয় পাচ্ছি সোহাগী পিয়ালকে ভালোবাসে ভেবে, সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমিও সোহাগীকে জরিয়ে ধরলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে