অবুঝ_বউ
পার্ট: ৪
আব্বুর সামনে বসে আছি আর মনে মনে দোয়া পড়তেছি আব্বু যে রাগি কি থেকে কি করে ফেলবে তার নিশ্চয়তা নেই
আম্মু: কিরে কি জন্য এসেছিস বল এভাবে বসে আছিস কেন
আমি: আম্মু তুমি বলনা
আব্বু: কি হয়েছে
আম্মু: বিয়ের ব্যাপারে
আব্বু: এখানে বিয়ে হবে না
আমি: কিন্তু কেন
আব্বু: আমার ছেলে কি এতোই সস্তা নাকি কোনো অনুষ্ঠান করবে না ওরা আর আমার বন্ধুরা কি ভাববে তাছাড়া তোমার বন্ধুদের কি বলবে হ্যাঁ (আব্বু রেগে গেছে এখন কি করবো আম্মু ছাড়া উপায় নেই তাই আম্মুর দিকে অসহায়ের মতো তাকালাম)
আম্মু: তোমার মান সম্মানের জন্য আমার ছেলে কষ্ট পাবে নাকি আমি এই মেয়েকেই আনবো আর সাধারণ ভাবেই
আব্বু: যাও নিজের বৌমাকে নিজেই গিয়ে নিয়ে আস
আমি: আচ্ছা আম্মু বিয়ের পরে আমাদের বাসায় অনুষ্ঠান করলেই তো হয় তাই না
আম্মু: হ্যাঁ হয় তো শুধু শুধু এতো জামেলা করার কি প্রয়োজন
আব্বু: কিন্তু
আম্মু: আর কোনো কিন্তু নয় এখানেই বিয়ে হবে আর পরে তুমি অনুষ্ঠান করবা
আব্বু: ঠিক আছে
আর কোনো কথা না শুনে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম পিচ্চিটাকে বিয়ে করতে পারবো এই খুশিতে তো একটু ডান্স করতেই হয়, মনের সুখে গান গাইছি আর ডান্স করছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আমার পিচ্ছি বউয়ের ফোন তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–(নিশ্চুপ)
–কথা বলছ না কেন
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
–কেন
–আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবেন তাই
–পাগলী চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো
–পরশুদিন-ই তো আমাদের বিয়ে তাই না
–মানে
–হ্যাঁ আপনি জানেন না
–না তো, ভালো হয়েছে আর মাত্র একদিন তারপর তুমি এখানে চলে আসবে
–হুম
–আচ্ছা আজকেও কি তুমি তোমার আপুর শিখানো কথা বলছ
–(নিশ্চুপ)
–বুঝেছি, শুনো সোহাগী তুমি এখন আমার পিচ্ছি বউ হয়ে যাবে তাই তোমার মন যা চায় তাই আমার সাথে বলতে পারো তোমার আপুর শিখানো কথা বলতে হবে না
–সত্যি তাহলে আমার বিয়ের শাড়ি কেমন আনবেন বলে দেই
–হাহাহাহা আচ্ছা
–আমি যখন ছোট বেলায় পুতুল বিয়ে দিতাম কনে কে কালো শাড়ি পড়াতাম দেখতে খুব সুন্দর লাগতো অবশ্য এখনো আমি মাঝে মাঝে পুতুল বিয়ে দেই (এই মেয়ে বলে কি এখনো পুতুল বিয়ে দেয় আমি এতো পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছি)
–তারমানে তুমি কালো শাড়ি চাও
–হ্যাঁ
–কিন্তু কেউ মানবে না তো বিয়ের বেনারসি কালো দিতে নেই
–আমি জানিনা (বলেই কাঁদতে শুরু করে দিল কোন জ্বালায় পড়লামরে বাবা)
–আরে কান্না করোনা কালো শাড়িই দিব
–আচ্ছা কথা দাও আমার সাথে মাঝে মাঝে পুতুল বিয়ে দিবে
–আরে কি বল এসব আমি ছোট নাকি
–হ্যাঁ ছোটই দিবা বল নাহলে আবার কান্না করবো
–আচ্ছা দিব
–হিহিহি
–(উফফফ কি সুন্দর হাসি, এই হাসির প্রেমে বার বার পড়া যায়, এই পিচ্ছি মেয়ের মুখে হাসি রাখতে হলে এসব তো আমাকে করতেই হবে)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ যে
–তোমার হাসি শুনছি
–আমার হাসি খুব সুন্দর তাই না এই কথাটা পিয়ালও বলে
–পিয়াল কে
–আমার বন্ধু আমরা একসাথে পড়ি (বুকের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করছি তাহলে কি সোহাগী পিয়াল কে ভালোবাসে)
–পিয়ালকে কি তুমি ভালোবাস
–ভালোবাসা আবার কি ও আমার বন্ধু আমরা একসাথে স্কুলে যাই
–সত্যি তুমি ভালোবাসা কি জাননা
–নাতো এইটা কি
–পরে শিখাবো কেমন এখন রাখি
–আচ্ছা
ফোন রেখে একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যাক সোহাগী তো ভালোবাসা কি এটাই বুঝেনা তাহলে পিয়ালকে আবার ভালোবাসবে কিভাবে, সোহাগীকে ভালোবাসা শিখাবো আমি তারপর আমার পিচ্ছি বউ শুধু আমাকে ভালোবাসবে, সোহাগীর সাথে কথা বলতে এতোটাই বিভোর ছিলাম যে ও আমাকে সেই কখন থেকে তুমি করে বলছে খেয়ালি করিনি হাহাহা পিচ্ছি বউ আমার
–কিরে ভাইয়া একা একা হাসছিস কেন (মুমুর ডাকে ভাবনা জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম)
–এমনি হাসছি
–বেশি করে হাস দুদিন পর তো তোর বিয়ে হাসির সাথে ডান্সও কর হিহিহি
–তোর হাসি শুনলে পেত্নীরাও ভয় পাবে হুহুহুহুহু
–তোর বউয়ের হাসি সুন্দর হলেই হবে
–না না তোর হাসি কতো মিষ্টি শুনলে শুধু শুনতেই মন চায়
–তাই
–হ্যাঁ শুননা একটা কথা ছিল
–বল
–সোহাগীর বিয়ের বেনারসি কালো রঙের কিনবো প্লিজ তুই আম্মুকে রাজি করা
–তাই তো বলি আমার হাসির এতো প্রশংসা করছিলি কেন
–প্লিজ
–কিন্তু ভাইয়া বিয়েতে তো কালো রঙ কে অশুভ ধরা হয় বেনারসি কি ক…..
–প্লিজ লক্ষী বোন আমার যে করেই হউক আম্মুকে রাজি করা
–ঠিক আছে আমার হাসির যেহেতু প্রশংসা করছিস চেষ্টা করে দেখি
–ওকে
রাতে সোহাগীর কথা ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়ছিলাম মনে নেই সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–আম্মু আর একটু ঘুমাই প্লিজ
–শপিং করতে যেতে হবে উঠে পর
–এখন আবার কিসের শপিং
–তোর বিয়ের
লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলাম আমার যে আগামীকাল বিয়ে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, শপিং করতে যেতে হবে সোহাগীর জন্য কালো বেনারসি কিনতে হবে তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম
গাড়িতে বসে আছি মুমু আম্মুকে বলেছে কিনা বুঝতে পারছি না সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু কিছু বুঝা যাচ্ছে না
আম্মু: কি বলবি আমি জানি
আমি: কি
আম্মু: কালো বেনারসি লাগবে
আমি: হুম
আম্মু: তুই আমার একমাত্র ছেলে বলে শুধু রাজি হয়েছি নাহলে তোর এই অবুঝ পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করার সখ ছাড়াতাম (মুখ গোমরা করে বসে আছি ভাবখানা এমন যেন আম্মুর কথায় আমি কষ্ট পাইছি কিন্তু মনে মনে তো আমি ডান্স করছি হিহিহি)
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে কফি হাতে নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের ব্যস্ত শহর দেখছি মাঝে মাঝে কফির মগে চুমুক দিচ্ছি আর সোহাগীর খিলখিল করে হাসিটা অনুভব করছি, আগামীকাল সোহাগীর সাথে আমার বিয়ে আমি ওর স্বপ্ন পূরন করবো ওর সব আবদার পূরন করবো মোট কথা সোহাগীকে অনেক ভালোবাসবো, সোহাগী আগামীকাল আমার হয়ে যাবে সারাজীবনের জন্য কিন্তু কোথাও যেন একটু ভয় হচ্ছে আম্মুর কথাটা যদি কখনো সত্যি হয়ে যায়…..
চলবে?