অবুঝ_বউ পার্ট: ৩

0
5022

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে মুমুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো বাসা তো মাথায় তুলে ফেলছে কি নিয়ে যেন চেঁচামেচি করছে, ড্রয়িংরুমে গেলাম শুনার জন্য
মুমু: আমি মানি না এই বিয়ে
আম্মু: কিন্তু উপায় নেই
আমি: মুমু কি হইছে রে
মুমু: ভাইয়া তুই বল আমার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে নাকি এতো সাধারণ ভাবে হবে আমার ফ্রেন্ডসরা কি বলবে
আমি: কে বলছে সাধারণ ভাবে হবে
আম্মু: সোহাগীর বাড়ির লোকজন বলেছে ওরা অনুষ্ঠান করতে পারবে না বিয়ে আনতে হলে দুদিনের ভিতরে আনতে হবে নাহলে ওরা অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে
আমি: কি বলো এসব
আম্মু: তোর আব্বু তো এই কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে আছে
মুমু: এখানে বিয়ে হবে না অন্য কোথাও মেয়ে দেখো আম্মু
আমি: মুমু আমি সোহাগী কে ভালোবেসে ফেলছি
মুমু: ওই একদম চুপ এক দেখায় আবার ভালোবাসা হয় কিভাবে
আমি: জানিনা কিন্তু সত্যি বলছি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলছি
আম্মু: আচ্ছা তোরা ঝগড়া করিস না ভেবে দেখি কি করা যায়
আমি: আম্মু
আম্মু: আরে বোকা ছেলে মন খারাপ করিস না দেখা যাক কি হয়
আমি: হুম

মনটাই খারাপ হয়ে গেলো নাসতা না করেই রেডি হয়ে অফিসে চলে আসলাম, যাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলছি তাকে নাকি আমার করে নিতে পারবো না এইটা কোনো কথা হলো আর ওরাই বা কেমন কিপটা ছোট করে একটা অনুষ্ঠান করলে কি হয়
–নাহিল কি হয়েছে তোমার (তাকিয়ে দেখি আমার ফ্রেন্ডস মৌরি, আমরা একসাথেই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম আর এখন একসাথেই একি অফিসে চাকরি করছি)
–কি হলো কি ভাবছ
–কিছু না
–কি হয়েছে আসার পর থেকে দেখছি কাজে মন নেই তোমার
–ভাবছি চাকরিটা ছেড়ে দিব
–তোমার বাবার এতো বড় ব্যবসা রেখে কেন যে অন্যের অফিসে কাজ করছ বুঝিনা আমি
–আমার নিজে থেকে কিছু করতে ভালো লাগে
–তাহলে এখন চাকরি ছেড়ে দিতে বলছ কেন
–মন খারাপ তাই
–কি হয়েছে
–আর বলোনা জীবনের প্রথম একটা মেয়েকে ভালোবাসলাম কিন্তু ওকে বিয়ে করে আমার করে নিতে পারছি না
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো তুমি চুপ হয়ে গেলে কেন
–এমনি ভেবো না তোমার ভালোবাসা সত্যি হলে বিয়ে হবে
মৌরি হনহন করে হেটে চলে গেলো বুঝলাম না ও মন খারাপ করলো কেন

অফিসে বসে বসে ঝিমুচ্ছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অচেনা নাম্বার এমনি মন খারাপ আবার অচেনা নাম্বার থেকে ডিস্টার্ব করে ফোনটা কেটে দিলাম, একটু পর আবার বেজে উঠলো বিরক্ত হয়ে রিসিভ করেই রাগ দেখিয়ে বললাম
–হ্যালো কে
–আমি সোহাগী (রাগ তো সব উড়ে গেলো সাথে বুকের ধুকধুকানি বেড়ে গেলো)
–তুমি
–আমার সাথে দেখা করতে পারবেন এক্ষণি
–হ্যাঁ হ্যাঁ পারবো বলো কোথায়
–আমি মেসেজে ঠিকানা বলে দিচ্ছি
–ওকে

সোহাগীর পাঠানো ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম, ড্রাইভ করছি ইচ্ছে হচ্ছে গাড়িটা উড়িয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ওর কাছে পৌঁছে যাই, সোহাগী কে দেখবো ওর খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনবো উফফফ আর তর সইছে না

সোহাগীর সামনে বসে আছি বুকের ধুকধুক শব্দটা বেড়েই চলছে কি বলবো ভাবছি তখনি সোহাগী বলে উঠলো
–আপনার সাথে কি বিয়েটা হচ্ছে না (ওর এমন প্রশ্নে থমথম খেয়ে গেলাম কি বলবো আমি নিজেই তো এই প্রশ্নের উত্তর জানিনা)
–চুপ হয়ে আছেন যে
–আসলে বিয়….
–দেখুন বিয়ে ভালোবাসা এসব আমি বুঝিনা আমার ভালোবাসা বলতে আপুকে বুঝি যে আমাকে পাঁচবছর ধরে লালনপালন করছে, বিয়ে করে এই বাড়ি থেকে বেরুনো ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই আমি ওখান থেকে বেরুতে চাই তাই আপনার সাহায্য প্রয়োজন
–কি সাহায্য
–আপাদত আপনি আমাকে বিয়ে করে ওখান থেকে নিয়ে আসুন তারপর আমাকে ভালো না লাগলে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন
–(এই পিচ্ছি মেয়ে বলে কি যাকে দেখে মনের মধ্যে এতো স্বপ্ন বুনে ফেলছি তাকে নাকি ডিভোর্স দিব)
–প্লিজ কিছু বলুন আমাকে যেতে হবে
–আসলে আম্মুর অনুমতি ছাড়া কি বলবো
–বললাম তো ভালো না লাগলে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন তাও এখন আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ কথা দিচ্ছি আমি সবসময় আপনার বন্ধু হয়ে থাকবো
–ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও আমি দেখছি
–ওকে
সোহাগী চলে যাচ্ছে মন খারাপ করে ওর মলিন মুখ দেখতে একদম ভালো লাগছে না যে করেই হউক ওর মুখে সেই হাসি ফিরিয়ে আনতে হবে যে হাসি দেখে আমি ওকে ভালোবেসেছি

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখছি আর সোহাগীর কথা ভাবছি
মুমু: এই ভাইয়া
আমি: হুম
–কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি শুনছিস না তোর ফোনটা তো সেই কখন থেকে বেজেই চলেছে
–ওহ শুনিনি
–আচ্ছা এই নে ফোন আর এই নে তোর কফি আমি গেলাম

কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম সকালের সেই নাম্বার থেকে ফোন তারমানে সোহাগী ফোন দিয়েছে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আমি সোহাগীর বোন
–কেমন আছেন আপু
–ভালো আপনি
–আমি আপনার ছোট ভাই তুমি করেই বলুন
–ঠিক আছে, আসলে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম
–জ্বী বলুন
–কিভাবে যে বলি না বলেও পারছি না নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে
–আপু কোনো সংকোচ না করে বলুন
–আসলে আজ সোহাগী তোমাকে যা যা বলেছে সব আমার শিখানো কথা
–মানে
–আমিই ওকে এসব বলতে বলেছিলাম যেন বিয়েটা হয় কিন্তু এখন নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে, তুমি কি বুঝনা ওর মতো পিচ্ছি মেয়ে এসব কথা কখনোই বলতে পারবে না
–আপু আমি বুঝতে পেরেছি চিন্তা করবেন না আমি আব্বু আম্মুকে রাজি করাচ্ছি খুব শীঘ্রই আমি সোহাগীকে বিয়ে করবো
–(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনা যাচ্ছে না)
–আপু প্লিজ কাঁদবেন না
–আচ্ছা ভাই রাখি
সোহাগীর বোন তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিল, ওরা দুবোন এতো কাঁদে কেন কোনো জামেলা তো আছেই

সোহাগী কে যে আমি ভালোবেসে ফেলছি এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আব্বুকে বুঝাবো কিভাবে

জানি আব্বু রেগে আছেন তাও যাচ্ছি আব্বুর কাছে সোহাগীর কথা বলতে জানিনা কি হবে, আচ্ছা আব্বু যদি রাজি না হন তাহলে কি সোহাগী আমার হবে না…?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে