অবুঝ_বউ পার্ট: ১৪

1
4708

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি কিছু ভালো লাগছে না খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল তাই সবার চোখের আড়ালে এসে কাঁদছি, একটু পর বর এসে মুমু কে নিয়ে যাবে আমি এখন থেকে কার সাথে ঝগড়া করবো, কে আমাকে সব কিছুতে শাসাবে আমি কাকে ভালোবাসবো, একটু পর পর কে আমাকে ভাইয়া বলে ডেকে উঠবে ওহ আর সহ্য হচ্ছে না বুকের বাম দিকটায় কেমন যেন ব্যাথা করছে, পৃথিবীর নিয়ম এমন অদ্ভুত কেন ছোট থেকে ভালোবাসায় মমতায় বড় করা বোনটা কে ভাইয়ের কাছ থেকে কেড়ে নেয়, আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত ভাইদের কি এমন কষ্ট হয়….?
–নাহিল তুই এখানে আর আমি তোকে সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি (সাজিদের ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ওর দিকে তাকালাম, ও হয়তো বুঝতে পেরেছে তাই আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো)
–বর চলে এসেছে চল
–হুম

বিয়ের কাজ খুব সুন্দর ভাবে হলো এখন বিদায়ের পালা সবাই মুমুকে গাড়িতে তুলে দিতে ব্যস্ত আমি একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছি যেন কেউ আমার কান্না না দেখতে পায় হঠাৎ মুমু আমার দিকে তাকালো তারপর এক দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো পাগলীটার চোখ ফাঁকি দিতে পারলাম না, আমাদের ভাই বোনের কান্না কেউ দেখছে না সবাই অনেক দূর কিন্তু সাজিদ ঠিকি আমাদের খুঁজে বের করে ফেলছে, ও এসে আমাদের সাথে কান্নায় যোগ দিল
মুমুকে বুঝাচ্ছি জিসান উল্টাপাল্টা কিছু বললে যেন কথা না বাড়িয়ে আমাদের বা সজিবকে বলে এমন সময় একটু সামনে চোখ পড়লো সোহাগী কি যেন কাজ করছে হাত উপরে তুলে যার কারনে ওর পেটের শাড়ি সরে গিয়ে পেট দেখা যাচ্ছে আর জিসান সোহাগীর দিকে তাকিয়ে আছে, আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাজিদ আর মুমু ওইদিকে তাকালো, আমরা যা কল্পনাও করতে পারিনি জিসান সেটাই করে বসলো, সোহাগীর পেটে হাত রাখলো আর হাত রাখতেই সোহাগী ঘুরে ওর গালে থাপ্পড় দিয়ে বসলো, অনেক সহ্য করেছি এই জিসানের নষ্টামি আর না
সাজিদ: নাহিল মাথা ঠান্ডা কর
আমি: ওকে আমি আজ মেরেই ফেলবো
মুমু: ভাইয়া তুই থাম আমি দেখছি
সবাই জিসানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর ও মাথা নিচু করে আছে ন্যাকা এখন কিছু চিনেই না মনে হচ্ছে
মুমু: জিসান তুমি জানো ও কে
জিসান: (নিশ্চুপ)
মুমু: ও আমার ভাবি (জিসান অবাক হয়ে মুমুর দিকে তাকালো তারমানে কি জিসান জানতো না সোহাগী যে আমার স্ত্রী)
জিসান: ভাবি আমি জানতাম না উনি কে আমি ভেবেছিলাম তোমাদের কোন গেস্ট প্লিজ ভাবি ভাইয়া বা আব্বুকে বলো না
মুমু: ঠিক আছে আর কখনো যেন এমন ভুল না হয়
জিসান মাথা নিচু করে চলে গেলো, আমরা মুমুকে গাড়িতে তুলে দিলাম

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি সোহাগী এসে পাশে দাঁড়ালো
–কি করছ
–রাতের আকাশ দেখছি
–মিথ্যা তুমি তো আপুকে মিসস করছ
–(নিশ্চুপ)
–আপুকে খুব ভালোবাস তাই না
–হুম
–দুদিন তো অনেক দখল গেছে চলো ঘুমাবে
–তুমি ঘুমাও পরে ঘুমাবো
–আমার বুঝি একা ভয় লাগে না
হেসে দিলাম ওর কথা শুনে পিচ্ছিটা এখনো একা ঘুমাতে ভয় পায়

সকালে আব্বুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো তাড়াতাড়ি উঠে ড্রয়িংরুমে গেলাম, আব্বু সোফায় বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছেন সবাই পাশে দাঁড়ানো
আমি: আব্বু কি হয়েছে
আম্মু: আমাদের কম্পানিতে কি যেন সমস্যা হয়েছে
আমি: কিসের সমস্যা
আব্বু: কিছু ফাইল আছে তুই দেখলেই বুঝতে পারবি আর ম্যানেজার টাকার হিসাবে প্যাচ লাগিয়ে রেখেছে সবকিছু মিলে এখন প্রায় তিন কোটি টাকা লস হবে
আমি: কি বলছ এসব
আব্বু: সবকিছু ঠিক করা যেত বাহিরে যেতে পারলে কিন্তু আমার শরীর তো একটু অসুস্থ কিভাবে যাবো
আমি: কোথায় যেতে হবে
আব্বু: আমেরিকা, সেখানে আমাদের কম্পানির নতুন একটা শাখা হয়েছে ওখানে গেলেই সব সমাধান হবে
সাজিদ: নাহিল তুই চলে যা
আম্মু: নাহিল কি পারবে
সাজিদ: পারবে আর এতো টাকা লস হলে তো…
আমি: ঠিক আছে যাবো, আব্বু কখন যেতে হবে
আব্বু: এই মুহূর্তে গেলে ভালো হয় যতো তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করবি ততোই ভালো
আমি: ঠিক আছে আমি এখনি চলে যাবো

রুমে এসে কাপড়চোপড় গুছাতে শুরু করলাম সাজিদ আমাকে হেল্প করছে
সোহাগী: নাহিল (হঠাৎ সোহাগী এসে পিছন থেকে ডাক দিলো তাকিয়ে দিকে ওর চোখে পানি)
আমি: কাঁদছ কেন খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ফিরে আসবো
সোহাগী: কিন্তু
আমি: কোনো কিন্তু নেই মন খারাপ করোনা আর শুন তোমার বৌভাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই
সাজিদ: সবাই যাবে আর ভাবি যা….
আমি: জিসান দুইবার এমন করেছে আবার যে করবে না বিশ্বাস কিসের
সাজিদ: তাও ঠিক
আমি: হ্যাঁ ওর যাওয়ার প্রয়োজন নেই আম্মুর কাছে থাকুক
সাজিদ: ওকে

রুম থেকে বেড়িয়ে যাবো এমন সময় সোহাগী দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো সাজিদ তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো
–এই পিচ্ছি কাঁদছ কেন
–আমি তো তোমাকে ছাড়া কখনো থাকিনি
–তাতে কি কয়েকটা দিনই তো
–আব্বু নিচে কথা বলছেন এক মাস নাকি লাগবে
–লাগুক রোজ ফোনে কথা বলবো
–আমার তো ফোন নেই
–সাজিদ কে বলে যাবো তোমাকে ফোন কিনে দিতে
–ঠিক আছে
সোহাগীর কপালে একটা মায়া দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম, আমারো তো কষ্ট হচ্ছে ওকে ছাড়া থাকবো কিভাবে আর ও তো রাতে একা ঘুমাতে পারেনা কিন্তু কোনো উপায় যে নেই যেতেই হবে

এয়ারপোর্ট বসে আছি সাজিদ সাথে এসেছে যেতে মন চাইছে না
–নাহিল মন খারাপ করিস না
–হুম
–কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ফোনে বলিস
–যাওয়ার সময় সোহাগীর জন্য একটা ফোন কিনে নিয়ে যাস
–ঠিক আছে

এখানে এসে তো দেখছি অনেক কাজ জমে আছে দুমাসেও শেষ করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে, এতো দেরি হলে তো সোহাগী…. সোহাগীর কথা মনে পড়তেই আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলাম এখানে পৌঁছে বাসায় ফোন দেওয়ার সুযোগও পাইনি
–আম্মু
–হেরে কখন পৌঁছেছিস
–এইতো একটু আগে
–ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে
–আম্মু সোহাগীর কাছে দাও তো
–দাড়া দিচ্ছি
মধ্যে মাত্র কয়েকটা ঘন্টা ওকে দেখিনি তাতেই এতো কষ্ট হচ্ছে প্রায় দুইমাস কিভাবে যে থাকবো বু…..
–হ্যালো (সোহাগীর কন্ঠ শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছি)
–তোমার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন কান্না করেছ
–উহু
–সাজিদ মোবাইল দিয়েছে
–হ্যাঁ
–ঠিক আছে ফোন অন করে আমাকে ফোন দিও
–হুম
–এখন রাখি ফ্রেশ হবো
–আচ্ছা
ফ্রেশ হয়ে অল্প কিছু খেয়েই কাজে লেগে গেলাম যতো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করবো ততো তাড়াতাড়ি সোহাগীর কাছে ফিরে যেতে পারবো

ফাইল দেখতে দেখতে কখন যে রাত দুটু বেজে গেছে বুঝতেই পারিনি, হঠাৎ সোহাগীর কথা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিলাম, একটা অচেনা নাম্বার থেকে অনেকগুলো ফোন এসেছিল নিশ্চয় সোহাগী হবে তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–ফোন দিয়েছ কেন
–রাগ করোনা আমার কথা শুনো আগে
–কি শুনবো তুমি ওখানে গিয়ে আমাকে ভুলে গিয়েছ তাও মাত্র কয়েক ঘন্টায় আর এক মাস থাকলে তো….
–আমি কাজ করছিলাম বুঝনা কেন যতো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে ততো তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসতে পারবো
–(নিশ্চুপ)
–এতো রাত হয়েছে ঘুমাও নি কেন
–জানোনা আমি একা ঘুমাতে ভয় পাই
–ঠিক আছে মোবাইল কানে লাগিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়, তুমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমি ফোন রাখবো না তাহলে মনে হবে আমি তোমার পাশে আছি
–তাই
–জ্বী তাই
পিচ্ছিটা সত্যি সত্যি আমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো, ফোনের দুপ্রান্তে দুজন আছি ও ঘুমাচ্ছে আর আমি নিশ্চুপ হয়ে ওর নিঃশ্বাস শুনছি….

চলবে?

1 মন্তব্য

  1. অনেকটাই আমার মত । আমার পিচ্চি বউটার যখন কথা বলতে ভালো লাগেনা , তখন আমি ওকে বলি তুমি মোবাইলটা কানের উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়ো আমি তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়বো ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে