অবুঝ_বউ
পার্ট: ১৩
আব্বু: নাহিল কাজ কতদূর হলো
আমি: আব্বু সব কাজ শেষ তুমি টেনশন না করে যাও তো মেহমানরা আসছে কিনা দেখ
সাজিদ: নাহিল মুমু কে স্টেজে আনতে বল
আমি: হ্যাঁ বলছি
আজ আমার ছোট বোনটার গায়ে হলুদ ভাবতেই ভালো লাগছে কাল ও চলে যাবে এইটা ভেবে কান্নাও পাচ্ছে, খুব অদ্ভুত নিয়ম ছোট থেকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করে অন্যের হাতে তুলে দিতে হয়, ভাবতে ভাবতে মুমুর রুমের সামনে চলে আসলাম, ছেলের পক্ষ থেকে হলুদ লাগাতে এক্ষণি চলে আসবে
আমি: মুমু তোর হলো ছেলের পক্ষ তো চলে আসবে এক্ষণি
মুমু: আমার শেষ তোমার বউ এখনো সাজছে
সোহাগী: আমারো শেষ তুমি যাও আমি আপুকে নিয়ে আসছি
সাজিদ: নাহিল তাড়াতাড়ি চল ছেলের বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে
তাড়াতাড়ি চলে আসলাম মেহমানদের আপ্যায়ন করছি হঠাৎ সাজিদের দিকে লক্ষ হলো সামনে তাকিয়ে আছে দেখে আমিও তাকালাম
সাজিদ: মাশাল্লাহ্ আমাদের বোনটা কে একদম হলুদ পরীর মতো লাগছে
আমি: (কিছু বলতে পারলাম না মুমুকে দেখে যতোটা না ভালো লাগছে তারচেয়ে বেশি বুকের ভিতর ব্যাথা হচ্ছে কাল ও এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এইটা ভাবতেই)
সাজিদ: দুর পাগল কাঁদিস না তো মুমু সুখেই থাকবে সজিব ওকে অনেক ভালোবাসে
আমি: হুম
সাজিদ: মুমুর পিছনে একবার থাকা তো আমি নিশ্চিত তুই আজ আবার প্রেমে পড়বি হাহাহা (ওর কথা শুনে মুমুর পিছনে তাকালাম কে যেন মুমুকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে একবার শুধু হাত দেখা যাচ্ছে আবার শুধু চুল দেখা যাচ্ছে হঠাৎ সোহাগী মুমুর পাশে এসে দাঁড়ালো, আমি হা করে তাকিয়ে আছি এইটা আমার পিচ্ছি বউ নাকি অন্য কেউ)
সাজিদ: কিরে বলছিলাম না আবার প্রেমে পড়বি
আমি: সত্যিই আমি আবার আমার অবুঝ বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছি
সাজিদ: তুই হা করে দেখ আমি যাচ্ছি
আমি এখনো হা করে তাকিয়ে আছি পিচ্ছির দিকে, লাল পারের হলুদ শাড়িতে ওকে দেখতে খুব বেশি সুন্দর লাগছে সাথে লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে
সোহাগী: এই যে এভাবে হা করে কি দেখছ
আমি: পেত্নী
সোহাগী: কি, পেত্নী মানে
আমি: তোমাকে আজ পুরাই পেত্নীর মতো লাগতেছে
সোহাগী: কান্না করে দিব কিন্তু
আমি: পিচ্ছিরা এটাই ভালো পারে (সোহাগী মুখ গোমরা করে ফেললো আর কিছু বললে এখনি ওর চোখ থেকে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যাবে)
আমি: আরে পাগলী আমি তো মজা করেছি সত্যি তো এটাই আজ তোমাকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে
সোহাগী: তাই (খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরলো ইসসসসস রে মান সম্মান আজ সব গেলো সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, তাড়াতাড়ি ওকে ছাড়িয়ে ওর থেকে দূরে চলে আসলাম, পাগলী একটা)
সাজিদ: সবকিছু তো সুন্দরভাবে হয়ে গেলো বিয়েটা সুন্দরভাবে হলেই হয়
আমি: হ্যাঁ
সাজিদ: হলুদ দেওয়া তো শেষ মেহমানরা চলে যাবে চল
আমি: হ্যাঁ চল
সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিছনে সোহাগীর কন্ঠ শুনে থেমে গেলাম, পিছনে তাকিয়ে দেখি জিসান সোহাগীর গালে হলুদ লাগানোর চেষ্টা করছে আর সোহাগী ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি করছে, আমি এগিয়ে যেতে চাইলাম সাজিদ আমাকে বাদা দিল
সাজিদ: মাথা গরম করিস না কাল মুমুর বিয়ে
আমি: তাই বলে এইটাও সহ্য করবো
সাজিদ: মুমুর কথা ভাব জামেলা করলে যদি বিয়েটা ভেঙে যায়
তাকিয়ে দেখি জিসান জোর করে সোহাগীর গালে হলুদ লাগিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে আর সোহাগী আমার দিকে তাকিয়ে আছে
সব জামেলা শেষ করে ভোরের দিকে রুমে আসলাম সোহাগীকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, হঠাৎ দেখলাম বারান্দার দরজা খুলা আস্তে আস্তে গিয়ে সোহাগীর পাশে দাঁড়ালাম
–মন খারাপ
–না
–সত্যি
–তুমি ওই ছেলেটা কে কিছু বলনি কেন
–ও কে যানো
–কে
–মুমুর দেবর
–ওহ
–ও এমনিতেই খারাপ ছেলে তখন যদি আমি জামেলা করতাম তাহলে মুমুর বিয়েটা ভেঙে যেতো আর তাতে আমাদের মান সম্মান যেতো সাথে মুমু খুব কষ্ট পেতো কারন সজিব আর মুমু ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে
–আপুর বিয়েটা ভেঙে যাক বা আপু কোনো কারনে কষ্ট পাক তা আমি চাই না বাদ দাও
–তুমি না আস্তে আস্তে অবুঝ থেকে বুঝদার হচ্ছ এখন যা বলি অল্পতেই বুঝে যাও
–তাই
–জ্বী তাই (সোহাগীকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম ঘাড়ে মুখ ঘষতে ঘষতে ওর পেটে হাত রেখে হালকা চাপ দিলাম পাগলীটা দৌড়ে পালিয়ে গেলো)
আজ মুমুর বিয়ে বাড়ি ভরতি মেহমান, আমার একমাত্র বোনের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি রাখিনি, সবকিছু সুন্দর ভাবে হচ্ছে
সাজিদ: নাহিল একবার আন্টির রুমে যা তো
আমি: কেন কি হয়েছে
সাজিদ: আন্টি কাঁদছেন তুই যা উনার পাশে এদিক আমি দেখছি
আমি: ঠিক আছে
তাড়াতাড়ি আম্মুর রুমে আসলাম, এসে দেখি আম্মু বসে বসে কাঁদছেন পাশে সোহাগী আর কাজের বুয়া বসা
আমি: আম্মু তুমি কাঁদছ কেন
আম্মু: আমার একমাত্র মেয়েটা একটু পর চলে যাবে আমার ঘর অন্ধকার হয়ে যাবে
আমি: কি আবোলতাবোল বলছ….
সোহাগী: আম্মু তুমি এই কথা বললা কেন আমি বুঝি তোমার মেয়ে না আর আমি বুঝি তোমার ঘর আলো করে রাখিনা
আম্মু: হ্যাঁ তুই তো আমার আরেক মেয়ে আমি আর কাঁদবো না (বাহ্ ওর কথায় বেশ কাজ হয়েছে আম্মু ওকে জরিয়ে ধরে কান্না থামালেন, আমার অবুঝ বউ আস্তে আস্তে বুঝতে শিখছে)
আমি: সোহাগী মুমু কি পার্লার থেকে এসেছে
সোহাগী: না এসে পড়বে চিন্তা করোনা
আম্মু: কতো করে বললাম তুমি যাও গেলে না আজকে একটু পার্লার থেকে সাজলে কি হতো
সোহাগী: আম্মু আমার পার্লারের সাজ ভালো লাগে না
আম্মু: ঠিক আছে যাও নিজে নিজেই গিয়ে রেডি হয়ে নাও বরযাত্রী চলে আসবে তো
সোহাগী: ঠিক আছে
সোহাগী রুমে চলে গেলো রেডি হবার জন্য আমি সাজিদের কাছে এসে দেখছি কোনো কিছু প্রয়োজন নাকি, হঠাৎ শাড়ির কথা মনে পড়লো তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম কিন্তু সোহাগী রুমে নেই, বাতরুমের দরজা বন্ধ দেখে বুঝতে পারলাম সোহাগী গোসলে আছে তাই শাড়িটা বের করে বিছানায় রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, একটু পর দরজা খুলার শব্দ শুনে রুমের ভিতরে গেলাম, সোহাগী শাড়ি হাতে নিয়ে অবাক হয়ে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
–এইটা কি
–শাড়ি
–তা তো দেখতেই পারছি কিন্তু কিনলে কখন
–সেদিন রাতে, তুমি তো ঝিমুচ্ছিলে তাই টের পাওনি, পছন্দ হয়েছে
–হ্যাঁ শাড়িটা খুব সুন্দর কিন্তু
–আবার কিন্তু কি পড়ে নাও
–বাসায় তো কোনো মেয়ে নেই সবাই পার্লারে কে পড়িয়ে দিবে আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা
–তুমি পারোনা কিন্তু আমি তো পারি
–তুমি পারো
–হ্যাঁ অবাক হচ্ছ কেন
–আচ্ছা পড়িয়ে দাও
–ওকে
শাড়িটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে সোহাগীকে পড়িয়ে দিতে শুরু করলাম, পিচ্ছিটা এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়ানো দেখে আমার দিকে বার বার অবাক হয়ে তাকাচ্ছে, শাড়ির কুচি ঠিক করে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে ওর পেটে হাত দিয়ে কুচিগুলো গেতে দিলাম হাহাহাহা পাগলীটা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, চোখ বন্ধ আর ভেজা এলোমেলো চুলে ওকে খুব মায়াবী লাগছে, ওর এই মায়াবী চেহারা আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছি…..
চলবে?