অবুঝ_বউ
পার্ট: ১২
–নাহিল উঠো আব্বু রেডি হয়ে গেছেন (সোহাগীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো আজ যে সজিবদের বাসায় যাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম)
–আগে জাগাবা না
–সেই কখন থেকে তোমাকে ডেকে যাচ্ছি শুনছই না
–ওহ (পাশ ফিরে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো ভাবলাম ঘুমের ঘোরে বুঝি ভুল দেখছি তাই চোখ দুইটা কচলে আবার ভালো ভাবে তাকালাম বাহ্ আমার পিচ্ছি বউ আজ শাড়ি পড়েছে)
–হা করে কি দেখছ
–আমার পিচ্ছি বউটাকে
–কেন নতুন দেখছ নাকি
–শাড়িতে তোমাকে খুব বেশি সুন্দর লাগে
–বুঝেছি অন্য সময় খারাপ লাগে (বলেই অভিমান করে আমার পাশে বিছানায় বসে পড়লো, হাতের কাছে পেয়েছি আমাকে আর পায় কে টান দিয়ে ওকে আমার বুকে শুয়ে দিলাম, গারো করে কাজল দেওয়া চোখ দুইটার দিকে তাকিয়ে আছি ইচ্ছে হচ্ছে এই চোখ জুরার গভীরতায় ডুব দিয়ে কাটিয়ে দেই সহস্র বছর)
–নাহিল ছাড় রেডি হয়ে নাও
–উহু পরে তুমি আরো কিছুক্ষণ আমার বুকে থাকো
–আব্বু রেডি হয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন
–ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম
তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম, রুম থেকে বেরুনোর আগে পিচ্ছির কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে ভুললাম না
ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আব্বু রেডি তাই আর দেরি না করে বেড়িয়ে পড়লাম, গাড়িতে বসে বসে ভাবছি আব্বুকে জিসানের কথা বলবো কিনা, না বললেও সমস্যা জিসান যদি হুট করে সেদিনের মতো কিছু বলে ফেলে তাহলে তো আব্বু বিয়েই ঠিক করবেন না, বিয়েটা সেদিন আমিই বাদ দিয়ে দিতাম শুধু মুমু সজিবকে ভালবাসে বলে চুপ করে সহ্য করেছি
–আব্বু
–কিছু বলবি
–সজিবের ছোট ভাই জিসান মাথাটা একটু গরম হুট করে কি বলে ফেলে নিজেই বুঝে না তাই ও কিছু বললে কান দিও না
–অন্যায় কিছু বললে অবশ্যই কান দিবো
–না আব্বু প্লিজ শুভ কাজে খারাপ কিছু হউক আমি তা চাইনা
–ঠিক আছে
সজিবদের বাসায় এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় হলো, সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছি, আমার চোখ দুটি জিসানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ভাবছি ও আজ বাসায় না থাকলেই ভালো সেদিন যা বলেছিল আজ এমন কিছু বললে বিয়েটা ভেঙে যাবে আর বিয়ে ভেঙে গেলে মুমু কষ্ট পাবে, আমি মুমুর চোখে পানি দেখতে চাই না
আঙ্কেল: তাহলে বেয়াই সাহেব বিয়ের দিনটা খুব শীঘ্রই ঠিক করে ফেলি
আব্বু: হ্যাঁ কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি
আন্টি: আমি আর দেরি করতে চাই না, আমার মেয়ে নেই তাই খুব তাড়াতাড়ি মেয়ে ঘরে আনতে চাই
আব্বু: ঠিক আছে
আঙ্কেল: তাহলে আগামী শুক্রবার বিয়ে
আমি: আব্বু মাত্র দুদিন মধ্যে
আঙ্কেল: সমস্যা কি শুভ কাজে দেরি করতে নেই
আব্বু: হ্যাঁ এই তারিখই থাকুক
আমি: ঠিক আছে
আরো কিছুক্ষণ বসে সজিবদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম, আব্বুকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি কাজে লেগে গেলাম, পরশু দিন গায়ে হলুদ সবকিছু আজ আর কালকের মধ্যে করতে হবে তাই সাজিদকে ফোন করে আমাদের বাসায় চলে আসতে বললাম
সারাদিন কাজ করে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে সন্ধ্যার দিকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম, ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সোহাগী গাল ফুলিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, রাগ করার কারন বুঝতে পারছি না তাই আস্তে করে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম ও আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে
–আমার পিচ্ছিটা রাগ করেছে কেন
–এমনি
–এমনি তো কারন হতে পারেনা বলো কেন
–সেই সকাল বেলা বেড়িয়েছিলে সারাদিনের ভিতরে একবারো বাসায় আসো নি জানো আমি তোমাকে কতোটা মিসস করেছি
–ওহ এই কথা আজ খুব বেশি ব্যস্ত ছিলাম আর এই কয়টা দিন অনেক ব্যস্ত থাকবো তাই তোমাকে বেশি সময় দিতে পারবো না
–দিতে হবে না
–রাগ করোনা মুমুর বিয়ের পর আমরা হানিমোনে যাবো
–সত্যি তো
–জ্বী সত্যি (সোহাগী ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, সোহাগী আমাকে আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শুরু করেছে সেটা ওর কথাতেই বুঝা যায়, কবে যে ও সবটুকু দিয়ে আমাকে ভালোবাসবে)
খেতে বসেছি তখন আব্বু বললেন
আব্বু: নাহিল আমি ভাবছি এখন শপিং করে ফেললে কেমন হয়
আমি: এখন এই রাতের বেলা
আব্বু: মাত্র আটটা বেজেছে সুন্দর ভাবেই শপিং করা যাবে
সাজিদ: হ্যাঁ এখন করাই ভালো মধ্যে তো কালকের দিনটাই শুধু পরশু তো গায়ে হলুদ (সাজিদ দরজায় দাঁড়িয়ে বললো)
আমি: দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন এসে খাবার নিয়ে বসে যা
সাজিদ: না এখন খাবো না তুই সারাদিন অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছিস শান্তি মতে খাঁ
আম্মু: তাহলে কি আমরা রেডি হবো
আব্বু: হ্যাঁ রেডি হয়ে যাও মুমু আর বউমাকে বলো রেডি হতে একটু পর আমরা বের হবো
সবাইকে নিয়ে বের হলাম সাজিদ ড্রাইভ করছে আর আমি সোহাগীর পাশে পিছনে বসেছি ওকে নিয়ে রাতে কখনো বেরোই নি তাই
আব্বু: নাহিল দুদিনে সব করতে পারবি তো
আমি: আব্বু পার….
সাজিদ: আঙ্কেল আপনি একদম টেনশন করবেন না নাহিল আর আমি সবকিছু দেখবো (সাজিদকে এজন্যই ভালো লাগে যেকোনো কাজে আমার ভাইয়ের মতো হেল্প করে)
আমি: সাজিদ থ্যাংকস এভা….
সাজিদ: থ্যাংকস দিচ্ছিস কেন মুমু কি তোর একা বোন, কিরে মুমু তুই কি শুধু নাহিল এর বোন
মুমু: না ভাইয়া আমি তোমাদের দুজনের বোন
সবাই কথা বলছে আর সোহাগী আমার কাধে মাথা রেখে ঝিমুচ্ছে হাহাহাহা আসলেই ও পিচ্ছি এই সন্ধ্যার সময় ঘুম পাচ্ছে ওর
সব কেনাকাটা প্রায় শেষ হঠাৎ গোলাপি রঙের একটা শাড়িতে চোখ পড়লো আমার, একবার শাড়ির দিকে তাকাচ্ছি আবার সোহাগীর দিকে তাকাচ্ছি ওকে এই শাড়িতে খুব সুন্দর মানাবে, ভাবছি সোহাগীকে জিজ্ঞেস করে কিনবো কিনা ও যেভাবে বসে বসে ঝিমুচ্ছে বিরক্ত না করাই ভালো তাই সবার চোখের আড়ালে শাড়িটা কিনে নিলাম মুমুর বিয়ের দিন পিচ্ছিটাকে পড়াবো
আম্মু: নাহিল কোথায় গেলি
আমি: এইতো আম্মু বলো
আম্মু: বউমা তো ঝিমুচ্ছে এই অবস্থায় কি কিনবে তুই বউমার জন্য শাড়ি পছন্দ করতো
কি আর করার এই শাড়ির কথা না বলে আরেকটা শাড়ি পছন্দ করে কিনে নিলাম, সবার জন্য শপিং করা শেষ রাত এগারোটা বেজে গেছে তাই সবাইকে নিয়ে ডিনার করতে রেস্টুরেন্টে গেলাম, সোহাগীকে বকাঝকা দিয়ে খাওয়ালাম ঘুমের গাদি একটা
আসার সময় তো সোহাগী ঝিমুচ্ছিল এখন আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে, আম্মু আর মুমুর সামনে কিছুটা লজ্জাও লাগছে এই পাগলীকে নিয়ে আর পারলাম না
বাসার সামনে এসে সবাই নেমে পড়লো কিন্তু সোহাগী ঘুমাচ্ছে ডেকেও তুলতে পারতেছি না
মুমু: ভাইয়া আমি বুঝতেছি না এভাবে ডাকছিস কেন ভাবিকে
আমি: ও কি গাড়িতে ঘুমাবে নাকি সারা রাত
সাজিদ: কেন আপনি কোলে করে রুমে নিয়ে যেতে পারেন না
মুমু: হ্যাঁ কোলে করে নিয়ে যা
পাশে তাকিয়ে দেখি আম্মু আব্বু নেই তাই দেরি না করে সোহাগীকে কোলে তুলে নিলাম
সোহাগীকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, আজ ওর খুব কাছ থেকে ওকে দেখছি, একটা মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় এতোটা মায়াবী লাগতে পারে এই পিচ্ছিকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না, ওর কপালে একটা মায়া দিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠতে চাইলাম সোহাগী ঘুমের ঘোরে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, কি আর করা ফ্রেশ হওয়া বাদ দিয়ে আমিও ওকে জরিয়ে ধরে আমার ঘুমন্ত পরীটা কে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম….
চলবে?