অবুঝ_বউ
পার্ট: ১
–ভাইয়া তোর হলো আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে তো
–আর একটু
–আমি বুঝতেছি না এতো সাজুগুজু করার কি প্রয়োজন তুই তো আজকে শুধু মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস বিয়ে করতে তো যাচ্ছিস না
–আরে গাদি মেয়ে যদি আজকে আমাকে পছন্দ না করে তাহলে বিয়েটা হবে কি করে
–আমার ভাই দেখতে অনেক সুন্দর মেয়ে পছন্দ না করে পারবেই না
–সাজুগুজু করে আর একটু সুন্দর হলে দোষের কি
–উফফফ জীবনেও দেখি নাই ছেলেরা এতো সাঝে
–হেহ তোরা মেয়েরা যদি কয়েক কেজি আটা ময়দা লাগাতে পারিস তাহলে আমরা ছেলেরা একটুখানি আটা ময়দা লাগাতে পারবো না কেন
–তুই কি ঝগড়া করবি নাকি যাবি
–হ্যাঁ চল শেষ তো আমার
–উফফফ তুই না পারিসও বটে
বিয়ে করবো আমি আর সব জ্বালা আব্বু আম্মুর, আমি রুম থেকে বেরুনোর আগেই উনারা গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে আছেন কেমন লাগে, তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়িতে উঠলাম, উহ আপনাদের পরিচয় দেওয়া হয়নি তাই না দাঁড়ান হবু শশুড় বাড়িতে যেতে যেতে পরিচয়টা দিয়ে দেই, আমি নাহিল আর এতোক্ষণ যার সাথে আটা ময়দা নিয়ে বকবক করলাম সে আমার ছোট বোন মুমু, আব্বু আম্মু মুমু আর আমি যাচ্ছি মেয়ে দেখতে বিয়ে করবো তো তাই, বিয়ের কথা ভাবতেই লজ্জা লাগে হিহিহি
মা: কিরে ভূতের মতো হাসছিস কেন
মুমু: মা বুঝনা ভাইয়া বিয়ে করবে তো তাই খুশিতে হাসছে
আমি: চুপ কর সবকিছুতে বেশি পাকামো
মা: তোর তো বিয়ের বয়স হয়নি ভাবছি মেয়ে দেখে রেখে আসবো আরো কয়েকটা বছর পর বিয়ে করাবো তোকে
আমি: মানে কি আমার বিয়ের বয়স হয়নি কোন যুক্তিতে বললা পড়াশুনা শেষ করেছি ছোটখাটো একটা চাকরি করছি আর তুমি বলছ আমার বিয়ের বয়স হয়নি আম্মু আমি এখনি বিয়ে করবো
আব্বু: দেখেছ তোমার বোকা ছেলের কান্ড বেকুব এর মতো কিভাবে বলছে আম্মু আমি এখনি বিয়ে করবো লজ্জা শরম সব খেয়ে পেলছে
আমি: আচ্ছা আব্বু তুমি যখন আম্মুকে বিয়ে করতে গিয়েছিলে তখন কি লজ্জা পেয়েছিলে (ভুল বলে ফেললাম মনে হয় আব্বু রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে মুমু তো মুখ টিপে হাসছে আর আম্মুর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না রেগে আছে নাকি হাসছে)
উফফফ এতো দূর শশুড় বাড়ি হলে আমি তো বছরেও একবার আসতে পারবো না আর শশুড় বাড়িতে ঘনঘন না আসলে তো মজার মজার খাবার সব মিসস করবো, বন্ধুদের কাছে শুনেছি শশুড় বাড়িতে জামাই আসলে নাকি খুব আদর করে
আমি: আম্মু আর কতো দূর
আম্মু: কেন
মুমু: আম্মু বুঝনা ভাইয়া ভাবিকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে হিহিহি
আমি: বাসায় গিয়ে তোর হিহিহি ছাড়াবো
আব্বু: নাহিল আমরা চলে এসেছি বাসায় ঢুকে ওদের সামনে এতো কথা বলোনা বুঝেছ
আমি: আব্বু কথা না বললে তো ওরা আমাকে বুবা ভাববে তখন তো আমার বিয়ে করা আর হবে না
আব্বু: বিয়ে পাগল ছেলে একটা (মিনমিনিয়ে বললো)
আমি: আব্বু কিছু বললে
আব্বু: মুখটা আপাদত বন্ধ রাখ
গেইটের সামনে নামতেই কয়েকজন এসে আব্বুর সাথে হাত মিলাতে শুরু করলো আমি যে ওদের হবু জামাই এখানে দাড়িয়ে আছি ওরা যেন চোখেই দেখছে না, একজন আমার দিকে আসছে বয়স দেখে তো শশুড় মনে হচ্ছে না তাহলে এইটা আবার কে
–হ্যালো জামাইবাবু কেমন আছেন
–ভালো আপনি
–আমি মেয়ের দুলাভাই
–ওহ
–ভিতরে চলো
বসে বসে ভাবছি মেয়ে যেন বেশি সুন্দরী না হয় আমি এতো সুন্দরী মেয়ে চাই না আমি চাই শ্যামলা রঙের একটি সাধারণ মেয়ে যার চোখ দেখে আমি পাগল হবো যে আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসবে আর তার মনের মতো করে আমাকে গুছিয়ে রাখবে, আমি না সবসময় এলোমেলো ভাবে চলাফেরা করি তাই আম্মু বিয়ে করাতে রাজি হয়েছে নাহলে তো আগামী কয়েক বছরের ভিতরে আমার বিয়ে হতো কিনা সন্দেহ আছে
মুমু: ভাইয়া এতোক্ষণ ধরে কি ভাবছিস তোকে ডাকছে উনারা শুনছিস না
আমি: শুনিনি (আহারে উনাদের কথার উত্তর দেইনি এবার মনে হয় আমার বিয়েটা আর হবে না)
মেয়ের দুলাভাই: নাহিল আপনার কথা তো আমরা সব জানিই তাই আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না মেয়ে দেখুন পছন্দ হলে পর বাকি কথা হবে (আমার সম্পর্কে কি জানে তাহলে কি আম্মু উনাদের বলে দিলো আমি যে বিয়ে পাগল)
মুমু: ভাইয়া বার বার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিস সিড়িতে তাকিয়ে দেখ পরী নেমে আসছে
সিড়ির দিকে তাকিয়ে তো আমি পুরাই টাসকি খাইছি এতো সুন্দর মেয়ে আমার বউ হবে, কালো রঙের একটা শাড়ি পড়েছে চুলগুলো অনেক লম্বা নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসছে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোনো পরী নেমে আসছে, এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে কিনা সন্দেহ আছে আমি তো দেখতে মাশাল্লাহ কয়লার ড্রাম
মুমু: ভাইয়া তোর মনে হয় বিয়েটা আর করা হলোনা
আমি: কেন
মুমু: মেয়ের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস বয়স অল্প মনে হয় ক্লাস এইট/নাইনে পড়ে
মুমুর কথা শুনে আবেগে কান্না চলে আসছে এখন আমার কি হবে, মেয়ে আমার সামনের সোফায় এসে বসলো ভালো ভাবে তাকালাম সত্যিই বয়স কম
আম্মু: তোমার নাম কি মা
–সোহাগী (বাহ্ খুব সুন্দর নাম সাথে কন্ঠটাও খুব মিষ্টি)
আম্মু: তুমি কিসে পড়
সোহাগী: ক্লাস টেনে (হায় আল্লাহ্ বলে কি এই পিচ্ছি মেয়ে টেনে পড়ে আমি তো ভেবেছিলাম এইটে হবে)
আব্বু: তোমাকে দেখে তো বয়স খুব কম মনে হয় মা
— এখন তো এই বয়সের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় আর আমাদের মেয়ে দেখতে সুন্দরী তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছি (একজন বৃদ্ধ লোক বললো)
আব্বু: তা বুঝলাম কিন্তু
মেয়ের দুলাভাই: কিন্তু কিসের বিয়ের বয়স তো হয়েছেই
আম্মু: না না বয়স হয়নি এইটা বাল্য বিবাহ হবে
আব্বু: এতো পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাচ্ছেন কেন
মুমু: ভাইয়া দেখ মেয়েটা কাঁদছে (মুমু আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলাতে সোহাগীর দিকে তাকালাম সত্যিই তো ও কাঁদছে কিন্তু কাঁদছে কেন বিয়ে করতে চায় না নাকি বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে)
আম্মু আব্বু রীতিমতো সবার সাথে তর্ক করা শুরু করেছেন আসলে আম্মু আব্বু সোহাগীর সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাচ্ছেন না, হঠাৎ পরদার আড়ালে চোখ পড়লো একটি মেয়ে কাঁদছে দেখে মনে হচ্ছে সোহাগীর বড় বোন কারন দুজনের চেহারায় মিল আছে এখানে সোহাগি কাঁদছে ওখানে ওর বোন কাঁদছে নিশ্চই এর মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, কি রহস্য তা আমাকে জানতে হবেই……
চলবে?