অবুঝ পাড়ার বাড়ি পর্ব-১১

0
2

#অবুঝ_পাড়ার_বাড়ি
#হুমায়রা
#পর্বঃ১১

অহনা সাদিকের একসাথে সংসার করার বয়স দুই বছর ছিলো। যদিও সেটাকে সংসার না বলে একপাক্ষিক সমঝোতা বললেই বেশি ভালো হয়। সেই এক পাক্ষিক সমঝোতা ছিলো সাদিকের দিক থেকে৷ অহনার দিক থেকে সারাক্ষণ নির্লিপ্ততা আর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। এই নির্লিপ্ততার কারন অনুসন্ধান করলে এক বিরাট কারন খুঁজে পাওয়া যায়। পাওয়া যায় সাদিকের কাজিনদের এক বিরাট ভুমিকা।
শুরু শুরুতে সাদিক নিজেকে অহনার সাথে মানিয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। ভালোবাসা হারিয়ে নতুন করে ভালোবাসতে চেয়েছে। পেরেছেও অনেকটা। অহনাও চেয়েছে, পেরেছেও পুরোপুরি কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। সাদিকের অহনার দিকে এমন ঝুঁকে যাওয়াটা সাদিকের কাজিনরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বাইরের একটা মানুষ তাদের কাজিনকে কাঁদিয়ে তার ভালোবাসা জোর করে কেঁড়ে নেবে, সেটা তেজি মহলের কারোরই সহ্য হয়নি। তাই প্রায় সকলেই অহনাকে খারাপ প্রমান করতে উঠে পরে লেগেছিলো। ফরিদাকে কিছুতেই অহনার দিকে ঝুঁকতে দিতে চায়নি। যতবার ফরিদার মন নরম হয়েছে, ততবার কেউ না কেউ এসেছে কান ভাঙানি দিতে। সাদিক চলে যেতেই প্রায়ই কেউ না কেউ এসে সেখানে থেকেছে। একদিকে ফরিদার মনে বিষ ঢুকিয়েছে আর অন্যদিকে অহনাকে নিচু করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে৷ ততদিনে তারা জেনেছে, অহনাকে মে’রে কুচিকুচি করে ফেললেও টু শব্দটাও করবে না। বিশাল এই দুর্বলতাটা অনেক কাজে লেগেছিলো তাদের। সাদিকের যোগ্য না, জোড় করে এসে ঢুকেছে, সাদিক একমাত্র মৌলিকেই ভালোবাসে, তাকে কাজের লোক ভাবে, সে শুধু সাদিকের টাকা চাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি কথা অহনাকে বুঝানোই ছিলো ওদের একমাত্র কাজ৷

এতো কিছুর পরে যখন সাদিক ছুটিতে বাড়ি ফিরতো তখন মা আর স্ত্রীর মনোভাব বুঝে মাথা খারাপ হয়ে যেতো তার৷ একদিকে যেমন মা অহনাকে দেখতে পারতো না, অন্যদিকে অহনা নিজেকে কাজের মেয়ে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারতো না। এমনও হয়েছে, সাদিক রাতে ঘুম থেকে উঠে অহনাকে খুঁজতে রান্নাঘরে গিয়ে দেখেছে, অহনা রাতের খাবার রান্নাঘরে বসে খাচ্ছে। তাও শুকনো ভাত আর বাসি ডাল। সাদিক রেগে যেতো খুব। মায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে মা আরো বিগড়ে যেতো। একসময় সাদিক আরো আবিষ্কার করলো, একমাত্র সে আসলেই অহনা তার ঘরে আসে। নাহলে ওর অবস্থান হয় সেই পুরোনো স্টোররুমে। অহনার এই দূরত্ব আর বারবার প্রশ্ন করাতেও কিছু না বলায় সাদিক কখনো রেগে যেতো আবার কখনো বুঝাতো। এরপর কিছুদিন সব ঠিক থাকলেও কদিন পর আবার সে কে সেই! অহনাকে কলেজে ভর্তিও করে দিয়েছিলো সাদিক। প্রথমে খুব খুশি থাকলেও কিছুদিন পর আর পড়তে চায়নি। তাকে কিছুতেই রাজি করানো যায়নি। মোটামুটি এভাবেই সাদিকের সংসারজীবন চলছিলো।

কোনভাবেই আর কোনো উপায় না পেয়ে বিশ্বাস করে কাজিনদের সাথে শেয়ার করেছিলো সে। তারা বিশ্বাস লুফে নিয়ে আরো বেশি যাতায়াত শুরু করল। এর ফলে একটা জিনিস হলো। সাদিকের সামনে সব কিছু খুব সতর্কতার সাথে এড়িয়ে গেলো। সামনা-সামনি কিছু না হলেও সাদিকের আড়ালে চললো এই জঘন্য খেলা। যার গুটি হয়েছিলো অহনা, ফরিদা আর সাদিক। সেইসময় নিজের পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলো সে। সংসারের এসব কূটকাচারি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময়টাও ছিলো না। বিশ্বাস মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়। সাদিকের বিশ্বাস ছিলো তার প্রিয় ভাই বোনদের উপর, ফরিদার বিশ্বাস ছিলো ভাতিজা ভাতিজির উপর, অহনার বিশ্বাস ছিলো নিজের ভাবনার উপর আর সাদিকের কাজিনদের বিশ্বাস ছিলো নিজেদের বুদ্ধির উপর। সাদিকের কাজিনরা চেয়েছিলো, অহনাকে সরিয়ে মৌলি আর সাদিকের মিল করাতে। এই করতে চেয়ে এতোগুলো জীবন এলোমেলো করে ফেলেছিলো!

দেশে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলো সাদিক। সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে স্কলারশিপ পেয়ে পড়তে যাওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করেনি। তার উপর দেশের এমবিএ-র ডিগ্রি ওখানে চাকরি পেতেও খুব সাহায্য করেছে। মোটামুটি চাকরি আর স্কলারশিপ একসাথে পেয়ে আর সময় ব্যয় করেনি সে। যাওয়ার মাস তিনেক আগে অনেক দৌঁড়ঝাপ করে অহনার পাসপোর্টও বানিয়েছিলো। স্পাউস ভিসায় নেবে অহনাকে। ঘটনা শুনে সকলে রাগে ফেঁটে পরলো। কারন ফরিদার কান ভাঙাতে সাদিকের কাজিনদের সাথে সাথে তার আত্মীয়স্বজনরাও বিরাট ভুমিকা রেখেছিলো। তাদের কারোরই অহনাকে পছন্দ ছিলো না। তবে সব থেকে বেশি ক্ষেপছিলো সাদিকের সেই কাজিনরা। সাদিকের যাওয়ার দিনই সায়রা এসে থাকতে শুরু করলো। এরপর একপ্রকার ক্ষমতা খাঁটিয়ে অহনার ফোন নিজের কব্জায় রেখে দিলো। শুধু সাদিক কল দিলেই ফোনটা অহনাকে দিতো৷ এরপর দুই চার মিনিট কথা বলার পর আবার ফোন হস্তান্তর হয়ে যেতো৷ সবাই মিলে অহনাকে এতো পরিমাণে ভাঙুর করে ফেলেছিল যে কোনদিন প্রতিবাদ করার কথা কিংবা কারো সাথে শেয়ার করার কথা মাথাতেও আসেনি। সবসময় মনে হতো, তাকে দয়া করে যে থাকতে দিয়েছে এইতো অনেক।
অহনার ভিসার প্রসেসিং শেষেরদিকে ছিলো। ঠিক তক্ষুনি শেষ পেরেক ঠোকা হয়। সবাই মিলে হাজির হয় সাদিকের বাসায়। অভিযোগ তোলে অহনার চরিত্র নিয়ে। প্রমান করে, সে পরকিয়া করে বেড়ায়। মোবাইলে অনেক ছেলেদের সাথে রিলেশন করে বেড়ায়, আজেবাজে কথাবার্তা বলে। এর প্রমাণ তো মোবাইলেই আছে। অহনা তো মোবাইলের তেমন কিছুই জানে না। তাই এসব দেখে, শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। ফরিদা কোমড় ব্যাথায় নিজের ঘর থেকে বেরই হয় না। তাই বাইরের খবর তার জানার কথা নয়৷ আর ভাতিজা ভাতিজির বদলে বাইরের কাউকে বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না। তার উপর সেই মেয়েটা তার মনে এক বিষাক্ত অবস্থানে আছে।

এসব সামনে আসার পর অহনার মাথা ঘুরে উঠলো। বিশ্বাসের আড়ালে থাকা সকলের মুখোশ খুলে গেলো এক লহমাঅ। অবশ্য খুলে গেলেই বা কি লাভ! কি-ই বা করতে পারবে সে! ফরিদা চূড়ান্ত ক্ষেপে গেলো। কাউকে কিছু না জানিয়ে ওখানে, ওই অবস্থাতেই বাড়ি থেকে বের করে দিলো অহনাকে। তবে তার আগে সায়রা অহনার হাতের আংটিটা খুলে নিতে ভোলেনি। ওটার উপর অনেকদিনের নজর তার।
অহনার মাথা পুরো আকাশ ভেঙে পড়ল। কান্নাকাটি করে, অনুরোধ করে, জোর গলায় সত্যিটা বলেও লাভ হলো না। সময়ের কাজ সময়ে না করলে লাভ হবে কিভাবে! বের করার ঠিক আগ মূহুর্তে সায়রা বেশ তাচ্ছিল্য নিয়ে বলেছিলো,
–পুলিশের কাছে গিয়ে লাভ কিন্তু হবে না। সব প্রমাণ তোমার বিরুদ্ধে। সুতরাং, পুলিশে গিয়ে ফেঁসে যাওয়ার থেকে নিজের বাড়ি গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরো।

অহনা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এতো চালাক আর এতো প্যাঁচালো মানুষদের সাথে ওর পেরে ওঠার কথা না। এসবে মিরাজের সামান্য দয়া হলো অহনার উপর। নিজ দ্বায়িত্বে ওকে মামার বাড়ি দিয়ে গেলো। আর এবাড়ির সকলে জানলো, অহনা পালিয়েছে। সাদিক বিশ্বাস করেনি। ওমন চুপচাপ আর ভদ্র মেয়ে এমন করতেই পারে না। ওকে বিশ্বাস করাতে মোবাইলের মেসেজের স্ক্রিনরেকর্ড পাঠানো হলো। তাতেও বিশ্বাস করলো না সাদিক। যে মেয়েটাকে ফোনের সামান্য ফাংশনও দুইদিন আগে নিজে শিখিয়েছে সে এতো তাড়াতাড়ি এতো কিছু কিভাবে করতে পারবে!
অহনা বাড়িতে গিয়ে সেই বেদনাদায়ক ঘটনাটা জানলো। তার ভাই আর নেই। একসাথে এতোগুলো ব্যথা নিয়ে বেঁচে থাকা দুরহ হয়ে উঠলো ওর কাছে৷ আ’ত্মহ’ত্যা করার মতো সাহসী সে না। অন্যদিকে সাদিকের সাথে ভয়ে যোগাযোগ করছে না। অন্তত এই একটা মানুষের থেকে এসব শোনার সাহস তার নেই। অবশ্য যোগাযোগের কোন উপায়ও ছিলো না। আর তাছাড়া ভাই বোনদের বিশ্বাস না করে নিশ্চয় তাকে বিশ্বাস করবে না!
মামা বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। ওর আশ্রয় মা বাতলে দিলো। নিজের কাছে রাখার ক্ষমতা তার নেই। তাই আশ্রয় হিসেবে বলল, তাদের আগের বাড়ির কথা। অহনার বাবা বেঁচে থাকতে মোহাম্মদপুর থাকতো তারা। একই এলাকায় এক বৃদ্ধা ছিলেন। কেক দাদী নাম দিয়েছিলো সব বাচ্চারা। ওনার কেকের বিজনেস ছিলো। অহনা তার কাছে কেক বানানো শিখেছিলো। অনেক আশা নিয়ে সেখানেই গেলো। দাদী তাকে অনেক ভালোবেসে দুই হাতে আগলে ধরলো। সেখানে থাকলেও সে ছিলো প্রাণহীন এক জীবের মতো। যার বাঁচার আর কোন কারন নেই! জীবন চালনার সব আশা যখন শেষ তখন আশার টিমটিমে জ্বলা আলো পূর্ণরূপে জ্বলে উঠলো সুখবর নিয়ে। অহনা মা হতে চলছে। নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য এক বুক আশা নিয়ে শেষবারের মতো শ্বশুরবাড়ির দরজায় আসলো। সেখানে আবারও খুব জঘন্যভাবে বিতারিত হলো। ফরিদা পাঁচশো টাকার চারটা নোট হাতে গুজে দিলো বাচ্চাকে মে’রে ফেলার জন্য। বাচ্চাটা যদি সাদিকেরও হয় তবুও এই নষ্টা মেয়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া কাউকে তার ছেলের সন্তান হিসেবে মেনে নেওয়া অসম্ভব ও চূড়ান্ত অসম্মানের। সব হারিয়ে গর্ভের সন্তান নিয়ে আবার দাদীর কাছে ফিরলো সে। শুরু করলো নতুন জীবন।
যাওয়ার সাথে সাথে সাদিকের আসা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই ইউনিভার্সিটির প্রথম সেমিস্টার শেষ হতেই অনেক কষ্টে এক মাসের ছুটিতে দেশে ফিরেছিলো। এরপর শুরু করেছিলো নিজের উদ্বোগে অহনাকে খুঁজে সত্যিটা জানা। পাগলের মতো খুঁজতে শুরু করলো। ছেলের অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়লো ফরিদা। বিছানায় শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে বলল,
–তোর বউ পালিয়েছে৷ অন্য কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো। বিশ্বাস করছিস না কেন?

সাদিক মূহুর্তকাল চুপ থাকলো। অসুস্থ মায়ের বারংবার করা অনুরোধ ফেলতে পারলো না। মধ্যবিত্ত মানুষের নিজের আগে পরিবারের কথা চিন্তা করতে হয়। বিরহে থাকাটা তাদের মানায় না। বাবা মায়ের আশা ভরসায় আর আঘাত না করে বলল,
–অহনা কোথায় তা আমি জানি না মা৷ অনেক খুঁজেছি ওকে। ওর যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তাও খুঁজেছি। আমি জানি মা তুমি অহনাকে পছন্দ করো না। তাই সব অভিযোগ বিশ্বাস করেছো। প্রমানগুলো এমন যে অবিশ্বাসের জায়গাও রাখে না। তাও আমি অহনার থেকে সত্যিটা জানতে চাই। ওর পয়েন্ট অফ ভিউ আমার জানা প্রয়োজন। এতো অপমান মেনেও যেখানে চুপ করে থেকেছে, সেখানে যখন এসব থেকে বের হওয়ার সময় আসলো তখন এসব হয়ে গেলো! মানা যায় না এগুলো। তবে তোমাকে কথা দিচ্ছি মা, যদি আর কখনও অহনা আমার কাছে আসে তাহলে ফিরিয়ে দেবো না। যখন, যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, ওর সব কথা শুনবোই।

সাদিক অসুস্থ মায়ের হাত ধরে কথা দিলো ফিরে গেলো নিজের কাজে।

***
মাহাদীর ডক্টরের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দুপুর দুইটায় আর সাদিক স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়েছে সকাল এগারোটায়। হাত ধরে ঘুরে ফিরে লাঞ্চ করতে গেলো হসপিটালের কাছেই এক রেস্টুরেন্টে। ওখানেই দেখা হলো মৌলির সাথে৷ তাও শুধুমাত্র অহনার সাথেই দেখা হলো। সাদিক ওদের টেবিলে বসিয়ে কী একটা কাজে বাইরে গেছে৷ মৌলি অহনাকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে আসলো। তার সাথে একজন পুরুষ ছিলো। কাছাকাছি এসে সাথের মানুষটির সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিলো,
–আমার হাজবেন্ড। সাদিকুর রহমান সাদিক।

মৌলি কি জন্য পরিচয় করিয়ে দিলো তা জানে না অহনা। ওতো বিষ্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। সাদিক সাহেব মৃদু হেসে বলল,
–আপনাকে চিনি৷ আপনি তো অহনা। মৌলির কাছে আপনার অনেক গল্প শুনেছি।

নেহায়েতই ফরমালিটি নাকি বোঝা গেলো না। না হলে মৌলি কারো কাছে নিশ্চয় ওর গল্প করবে না। অবশ্য করতেও পারে। তবে সেটা অবশ্যই অসম্মানজনকই হবে। মৌলি মাহাদীকে দেখে মৃদু হেসে বলল,
–এই পিচ্চি কি তোমার?

অহনা নীরবে মাথা নাড়লো। বলতে মন চাইলো,
–হ্যাঁ, আপনাদের ভাষ্যমতে আমার অবৈধ সন্তান।

কিন্তু বলল আর কই! সাদিক ওদের দেখে দ্রুত আসলো। খানিক খোশগল্পও চললো ওদের মাঝে। তারপর বিদায় নিতেই অহনা কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে বলল,
–মৌলি আপুর বিয়ে হয়েছে?

সাদিক তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
— কেনো? বিয়ে কি হওয়ার কথা ছিলো না?

অহনা মাথা নেড়ে বলল,
–ওইদিন আপনাদের এনগেজমেন্ট হলো না? তাহলে এখন অন্য কাউকে বিয়ে করলো কেনো?

সাদিক হো হো করে হেসে উঠলো। অহনা মজার কোনো কৌতুক বলেছে এমন করে হাসতে হাসতে বলল,
–এটা মৌলির পড়ানো আংটি ভেবেছিলে তাই না? জানতাম আমি। এইজন্যই ভুল ভাঙাইনি। এতো বছরে আংটির ডিজাইন কাহিনী তো ভুলেই গেছো।

বলেই আংটি খুলে আংটির পেছন দিকটা দেখালো সাদিক। স্পষ্ট অক্ষরে বাংলায় অহনা লেখা। এরপর পকেট থেকে অহনার আংটি বের করে সেটাও দেখালো। সেখানেও স্পষ্ট অক্ষরে সাদিক লেখা। সাদিক হাসি থামিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল,
–আমি তোমাকে কখনো কাছ ছাড়া করিনি অহনা। অথচ তুমি এটা ফেলে রেখে চলে গেছিলে। অবশ্য, নিয়ে যাওয়াও তো পসিবল ছিলো না। তোমার ততকালীন বয়ফেন্ড জেলাসি ফিল করতো।

আংটি ফেলে রেখে যায়নি সে। হাত থেকে খুলে নিয়েছিলো। কত কথাই তো জমে আছে তার মনে। সেসব কি প্রকাশ করতে পারবে! সব কথা কি প্রকাশ করা যায়! মাহাদী আলোচনায় দারুন বিরক্ত হচ্ছিলো। দুর্বল শরীরে আবার জ্বর এসেছে। মায়ের কোলে শুয়ে বিরক্তিতে কাচুমাচু করে আবার ঘুমিয়ে পরলো। সাদিক আলগোছে অহনার হাত নিজের হাতে নিয়ে দ্বিতীয়বারে মতো আংটি পরিয়ে দিলো। অহনা হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
–তাহলে বাইরে সাদিক আর মৌলির বিয়ে লেখা ছিলো কেন?

সাদিক কাঁধ নাচিয়ে বলল,
–ও নিজের কাছে প্রমিস করেছিলো, সাদিককেই বিয়ে করবে৷ তাই ওর জন্য সাদিক খুঁজে বের করা হয়েছে।

অহনা চাপা গলায় বলল,
–তাহলে আপনাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান হচ্ছিলো কেন?

অহনার প্রশ্নে সাদিক কপাল কুঁচকে বলল,
–এমন কৌতুহল আসল জায়গায় খাটানো যায় না? ওই জায়গাতে যে ফুপুরও ভাগ ছিলো সেটা কি ভুলে গেছো? এখন একটা ফ্ল্যাটে আমরা থাকি আর একটা ফ্ল্যাটে ফুপুরা থাকে।

অহনা চিন্তিত মুখে মাথা নাড়লো। পুরোটা বুঝলেও মাথায় ঢুকতে একটু সময় লাগলো। সাদিক অহনার কপালে টোকা দিয়ে বলল,
–একা একাই চিন্তা ভাবনা করে নিলে এমনই হয়। ছয় বছর আগেও যে কাজ করেছো, ছয় বছর পরও সেই একই কাজটাই করলে। কথা বললে যে অনেক কিছুর সমাধান হয় তা আর কবে বুঝবে? গর্দভ একটা!

বলেই খাবারের কথা বলতে উঠে গেলো৷ অহনা কপালের টোকা দেওয়া জায়গায় হাত ঘষে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে কিই বা বলতো আর! বলার মতো উপায় কি রেখেছিলো কেউ!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে