#অবুঝ_পাড়ার_বাড়ি
#হুমায়রা
#পর্বঃ০৮
সাদিক আবার আসলো মাস দুয়েক পর তাও মায়ের জোরাজুরিতে। অহনা সাদিকের ঘরেই থাকে এখন। সেদিন স্টোররুমে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ফরিদা মুখ বেকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলেছিলো,
–প্রতিদিনের ঢং ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখো। বাইরের লোকের সামনে অপমান করার দরকার নাই।
আসল কথা ছিলো অন্যকিছু। খলিল সাহেব বোনের কথায় এক বড়সড় তালা স্টোররুমে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো। সাথে কথা শুনিয়েছিলো ফরিদাকে। তাই এই রাগ। অহনা বেশ বুঝেছিলো, তার ফুপু শাশুড়ির বেশ প্রভাব আছে এই বাড়িতে।
সেবার সাদিক আসলো সকাল সকাল। সারা সকাল ঘুমিয়ে বিকালে সেই যে বাইরে গেলো, ফিরলো গভীর রাতে। তারপর ড্রয়িংরুমে খেলা দেখার অযুহাতে বাকি রাতটুকু কাটিয়ে দেয়। একদিন, দুইদিন, তিনদিন এমনই গেলো। অহনার সাথে খারাপ ব্যবহার কি, কোন ব্যবহারই করে না। ডাকা তো দূর, নজর তুলে দেখে না পর্যন্ত। অহনা বেশ বোঝে, রাতে যতক্ষণ সে ঘরে থাকে ততক্ষণ তার স্বামী ফেলে না। ভোরবেলা সেও ঘর ছাড়ে আর সাদিকও ঘরে ঢোকে। অহনার আর কি! হয়ে গেছে আগাছা। শিকড় গভীর জন্য তুলে ফেলতেও পারছে না। তবে চতুর্থ দিনের দিন একটা ঘটনা ঘটে গেলো। ফরিদা সাদিকের এক গাদা কাপড় ওর হাতে তুলে দিলো। সবগুলো ধুতে হবে। অহনার কাপড় ধোয়ার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। ফরিদা অন্য কারো কাপড় ধোয়া পছন্দ করে না জন্য নিজের কাপড় নিজেই ধুয়ে ফেলে। আর খলিল সাহেব কোনদিনও ময়লা কাপড় বাড়ি আনেননি। তাই অন্য সব কাজে বেশ পটু হলেও এই কাজে সে আনাড়িই থেকে গেছে। আজ ফরিদার কোমড়ে আর পিঠে দারুন ব্যাথা হচ্ছিলো। বলা চলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অহনার হাতে কাজটা তুলে দিলো। সাদিকের ফিরে যাওয়ার সময়ও হয়ে এসেছে।
অহনা ভয়ে ভয়ে সব ধুলেও সাংঘাতিক ভুল করে ফেললো। সাদা আর রঙিন টি-শার্ট একসাথে ভিজালো। আরেকদিকে একসাথে ভিজিয়েছে প্যান্ট আর শার্ট। সেখানে সাদিকের শখের সাদা প্যান্ট আর ফরমাল সাদা শার্ট ছিলো। আর ছিলো মৌলির নিজের হাতে ডিজাইন করে দেওয়া সাদা পাঞ্জাবি। সবগুলো সাদা কাপড়েরই বেহাল দশা হয়ে গেলো। কোনোটা নীল রঙের ছোপ দাগ পরলো তো কোনটায় লাল রঙের। আর মৌলির দেওয়া পাঞ্জাবিতে তো একেক জায়গায় একেক কালার বসে গেলো। অহনা অতোসব বুঝলো না। রঙ যে হতে পারে কিংবা ওগুলো যে প্লেন সাদা ছিলো সেটাও বুঝলো না। ও তো সরাসরি পানিতে ডিটার্জেন্ট গুলিয়ে ভিজিয়ে রেখেছিলো৷ ঘন্টাখানেক পর হালকা কেচে ধুয়ে ফেলেছিলো।
কড়া রোদে কড়কড়া শুকে যাওয়ার পর বিকালে তুলে আনলো৷ এরপর আয়রন করে বিছানায় সুন্দর করে ভাজ করে রেখে রাতের রান্না করতে গেলো। ফরিদার শরীর খারাপ জন্য আবারও রান্নার দ্বায়িত্ব পেয়েছে সে। না হলে সাদিক আসলে সে রান্নাঘরের কাজ থেকে ছুটি পেয়ে যায়।
সাদিক আসলো নয়টার দিকে। ফরিদা খাবার খেয়ে শুয়ে পরেছে। অহনা রান্নাঘর থেকে দেখলো, সাদিক হাতে পাঞ্জাবি নিয়ে বড় বড় পা ফেলে মায়ের ঘরের দিকে যাচ্ছে। মিনিটের মধ্যে আবার চলেও এলো। অহনার চোখ সরাতে না সরাতেই সাদিক রান্নাঘরে এসে হাজির। চোখ সেদিনের মতোই লাল হয়ে আছে। আবার কি সেদিনের মতো কিছু করবে! ঢোক গিললো অহনা। গতবারের মতো এবারেও ধারনা ভুল প্রমানিত হলো৷ সাদিক অহনার হাত মুচড়ে ক্রোধে জর্জরিত ভয়ংকর স্বরে বলল,
–যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেনো? মানুষের ইমোশনের কোন মূল্য নেই? বিয়ে হয়েছে জন্য যা খুশি তাই? খবরদার যদি আর কোনদিন আমার আমার জিনিসে হাত দিয়েছো তাহলে হাত কেঁ’টে ফেলে দেবো।
অহনা চোখ খিঁচে বুজে রইলো। ব্যাথায় টু শব্দটাও করলো না। কথা শেষে সাদিক ওর মুখের উপর পাঞ্জাবি ছুড়ে চলে গেলো। কি হলো কিছুই বুঝলো না অহনা। মেঝে থেকে পাঞ্জাবি তুলে দেখতে লাগলো। কান্না আটকানোয় চোখ জ্বলছে। ফরিদা কাতরাতে কাতরাতে এসে বলল,
–সাদা জামা যে আলাদা ধোয়া লাগে তা জানো না? বাপের বাড়িতে কি খালি ছেলে ফাঁসানো শিখে এসেছো?
অহনা সাদিকের পাঞ্জাবি হাতে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। সে রাতে সাদিক বাড়ি ফিরলো না। অহনা অনেকরাত পর্যন্ত পাঞ্জাবির রঙ উঠানোর চেষ্টা চালালো। কিন্তু কাজ হলো না। উলটে কাপড় পাতলা হয়ে গেলো।
সাদিক ফিরলো ভোরের দিকে। অহনা পাঞ্জাবি শুকাতে দিয়ে খাটে বসে বসেই ঘুমিয়ে গেছে৷ ইচ্ছা ছিলো, পাঞ্জাবি শুকানোর পর লেবু দিয়ে ঘষে আবার চেষ্টা করা। তার আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। সাদিক ঘুমন্ত অহনার দিকে একপলক তাকালো শুধু৷ প্রথমবারের মতো, অন্য নজরে। না রাগ, না ক্ষোভ আর না কামনা। সেই দৃষ্টিতে পরিচিত হবার ভাব ছিলো। সারারাত যে কেমন ছটফট করে কাটিয়েছে তা একমাত্র সেই জানে৷ মৌলি! ওর জীবনে আসা প্রথম নারী, প্রথন ভালোবাসা৷ যখন ভালোবাসাটাই বুঝতো না তখন থেকেই টান অনুভব করতো। সময়ের সাথে সাথে সেই টান ভালো লাগা, এরপর ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে৷ কোনদিন অন্য কাউকে জীবনে আশাও করেনি৷ অপরদিকেরও সেই হাল৷ তার বিয়ের কথা শুনে হসপিটালে ভর্তি ছিলো মৌলি। এরপর একদম চুপচাপ হয়ে গেছে৷ কাজিনদের মধ্যে আর কেউ-ই ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলে না। এই একটা মানুষের জন্য সে সব হারিয়েছে, সব! সারারাত মসজিদে কাটিয়েছে সাদিক। নামাজ পরে প্রার্থনা করেছে নিজের অশান্ত মনের শান্তির জন্য। এরপর ফরজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবন থেকে পুরোনো স্মৃতি সব মুছে ফেলবে। পাঞ্জাবিটাই হয়তো সুচনা ছিলো। নাহলে এতো বছর কাঁদার ছিটা পর্যন্ত যে পাঞ্জাবিতে লাগেনি সেই পাঞ্জাবি হুট করে ধুতেই বা কেন যাবে আর এই অবস্থাই বা কেন হবে! অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো আগে থেকেই। এখন বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্ততি নিলো। বিছানায় বসে চুল খামছে অনেকক্ষণ ভাবলো। এরপর মৌলির দেওয়া সমস্ত জিনিস ছাদে নিয়ে পুড়িয়ে ফেললো। এরপরের শেষকাজ হিসেবে ঘরে ফিরে অহনাকে ডেকে তুললো। প্রথমবারের মতো নরম গলায় বলল,
–সরি…
অহনা ভয়ার্ত মুখে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। সাদিক ওর দিকে তাকাতে পারলো না। চোখ নিচের দিকে রেখে ছোট করে বলল,
–গতরাতের জন্য আর…
অহনা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইলো। সাদিক বার কয়েক পলক ফেলে বলল,
–বাকি সব কিছুর জন্য৷
বলেই আর থাকলো না। অহনা বুঝতে চেষ্টা করলো অনেক। ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলো কি? কিন্তু কেনো? ও তো এসব চায় না। আসলে কি চায় তা ও নিজেই জানে না। শুধু চায় ঘুমাতে৷ হ্যাঁ, ঘুমাতে চায় অনেকক্ষণ। অনেকদিন হলো ঠিকমতো ঘুমায় না। ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে আবার ঘুমিয়ে পরলো। সাদিক আবার ডেকে তুললো। একদম রেডি হয়েই এসেছে। অহনা চোখ কচলে উঠে বসলো। ওর মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। ঘুমের রেশ কিছুতেই কাটছে না৷ সাদিক মৃদু গলায় বলল,
–আমি চলে যাচ্ছি। মাকে বলে দিও। আর এটা তোমার হাত খরচের জন্য।
অহনার হাতে কিছু টাকা জুয়ে দিয়ে ভারী কদমের চাপ ফেলে চলে গেলো। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো সে। কখনও তো এটা কল্পনাই করেনি তাহলে এমন স্বপ্ন কেনো দেখছে! যদি স্বপ্ন না হয় তাহলে কি? রাতেই না মারতে আসলো। এখন আবার এতো ভালো করে কথা! জ্বীন ভুতের আছরও হতে পারে। অহনার জানার কথা নয়, সাদিক এই সম্পর্ক মানতে নিজেকে ঠিক কতবার ভেঙেছে আর এখনও ভেঙে চলেছে।
****
সারা সকাল টিভিতে আর্ট বিষয়ে ডকুমেন্টারি দেখেছে মাহাদী। সাদিক বাইরে ছিলো আর অহনা নিজের কাজে ডুবে ছিলো। ছেলের এতোক্ষণ ডকুমেন্টারি দেখার ফলাফল পেতে হতো ছেলের বাবাকে। নিজের প্রিয় টি-শার্টের বেহাল দশা দেখে সাদিক রাগ নিয়ে অহনার সামনে হাজির হলো৷ টি-শার্ট অহনার মুখের সামনে ধরে বলল,
–দেখো তোমার ছেলে কি করেছে?
হকচকিয়ে গেলো অহনা। টি-শার্ট হাতে নিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
–মাহাদী তো দুষ্টু না। কোনদিন এমন করেনি।
–তো কি আমি মিথ্যে বলছি?
সাদিক চেঁচিয়ে উঠলো। অহনা থতমত খেয়ে গেলো। পুরো টি-শার্ট জুড়ে রঙের কাজ দেখা যাচ্ছে। বোধহয় কিছু আঁকানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু আঁকাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই টি-শার্ট হাতছাড়া হয়ে গেছে। অহনা আমতা-আমতা করে বলল,
–আচ্ছা, আমি এটার দাম দিয়ে দেবো।
ভয়ংকর রাগলো সাদিক। অহনার হাত মুচড়ে গর্জে উঠে বলল,
–আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছো?
অহনা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠতেই কোথা থেকে মাহাদী ছুটে আসলো। কাঁদতে কাঁদতে সাদিকের পায়ে ছোট ছোট হাত দিয়ে মারতে মারতে বলতে লাগলো,
–আম্মুকে ছাড়ো, আম্মুকে ছাড়ো।
কান্নার বেগ বাড়তেই লাগলো। সাদিক বিষ্মিত হয়ে ছেড়ে দিতেই অহনা ছেলেকে কোলে তুলে কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। বিষ্মিত সাদিক এইটুকু ছেলের কাছে অপরাধী হয়ে জায়গা ত্যাগ করলো।
রাতে শোয়ার পর মাহাদী সাদিকের ঘরে আসলো। ছোট হাতের মুঠ খুলে দশ টাকার দুটো নোট বাড়িয়ে দিয়ে রাগী গলায় বলল,
–এই নাও লাল টাকা। তোমার জামার দাম। আম্মুকে যদি আবার ব্যাথা দিয়েছো তাহলে তোমাকে আবার মারবো।
সাদিক বিষ্ময়ে টাকা দুটো হাতে তুলতেই মাহাদী যেপথে এসেছিল সেই পথেই চলে গেল। তাকে আর কোন কথাই বলতে দিলো না।
পরেরদিন আবার সবুজ টাকা নিয়ে হাজির। সদ্য জেনেছে, লাল টাকার থেকে সবুজ টাকার মান বড়। সাদিকের সামনে সবুজ টাকা ধরে বলল,
–এই নাও টাকা। এবারে তোমার বড় জামা দাও। আমি টাইগার আঁকবো।
সাদিক চোখ ছোট ছোট করে বিশ টাকার নোট হাতে তুলে বলল,
–এই বিশ টাকায় আমার জামা কিনবে?
মাহাদী মাথা উপর নিচ করে সায় জানালো। সাদিক হেসে ফেলে নিজের প্লেন হোয়াইট টি-শার্ট ছেলের হাতে তুলে দিতেই নাচতে নাচতে মাহাদী চলে গেলো।
বিকালের দিকে টি-শার্টে টাইগার এঁকে সাদিকের সামনে হাজির। কাঁচা হাতের আঁকানো বাচ্চা টাইগারের টি-শার্ট ওর সামনে রেখে হাত পাতলো। ভ্রু বাঁকালো সাদিক। ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলো আবার কি। মাহাদীও ওর মতো ইশারায় টিশার্ট দেখিয়ে বুঝালো, ওর আঁকানো টি-শার্টের মজুরি চাচ্ছে। সাদিক হাসি চেপে বলল,
–এটা তো তুমি কিনে নিলে।
মাহাদী উপর নিচ করে মাথা নাড়িয়ে বলল,
–হ্যাঁ। এখন তোমার কাছে সেল করবো।
সাদিক আগেই দেখেছে, বয়স কম হলেও মাহাদীর উচ্চারণ অনেক স্পষ্ট। আবার কথায় কথায় স্পষ্ট ভাষায় ইংরেজি উচ্চারণও বলে। সাদিক টিশার্ট খুলে ডিজাইন দেখে বলল,
–আমি এটা কিনবো না। পছন্দ হয়নি।
মাহাদীর মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। সাদিকের টি-শার্টে এর আগে রঙবেরঙের আর্ট দেখেছিলো। তাই এঁকে দিয়েছে। ভেবেছে পছন্দ করে কিনে নেবে। কিন্তু তা হলো না। সাদিকের হাত থেকে টি-শার্ট নিতে নিলেই সাদিক হাত সরিয়ে ফেলে বলল,
–এটা বিক্রি করবে কেন?
–আম্মুর জন্য টাকা ইনকাম করবো। যাতে আম্মুর আর কষ্ট না হয়।
মাহাদী ছোট কিন্তু অনেক বুঝদার। পুরো সকাল ডকুমেন্টারিতে আর্ট করে যে ইনকাম করা যায় তা দেখেছে। দেখেছে, বুঝেছে আবার কাজে করে দেখিয়েছে। বড় মানুষরাও যা বোঝে না, এই ছোট বাচ্চাটা তা বুঝে ফেলেছে অতি দ্রুত। এটা বলাই যায়, সব হারিয়েও অহনা একটা খাঁটি সোনা পেয়েছে।
সাদিক বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
–কত টাকায় বিক্রি করবে?
–নীল টাকায়।
উচ্ছ্বাসিত হলো মাহাদী। সাদিক ভ্রু বেঁকিয়ে বলল,
–বিশ টাকায় কিনে একশো টাকায় বিক্রি। ভালোই তো বিজনেস বোঝো।
বলেই পকেট থেকে একশ টাকার নোট বের করে ছেলের হাতে তুলে দিলো। মাহাদী খুশি মনে চলে গেলেও কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে আবার আসলো। সাদিকের হাত টেনে বলল,
–কালার কিনবো, চলো।
সাদিক হেসে ফেলে গেলো সাথে। একশো টাকা ইনকাম করলেও কালার কিনলো হাজার টাকার। অহনা ফিরে এসব দেখে মাহাদীকে কাছে টেনে কোলে বসিয়ে বলল,
–কারো থেকে কিছু নিতে হয় না বাবা। তোমাকে তো আম্মু কালার কিনে দেয়।
মাহাদী মাথা নেড়ে নেড়ে বুঝালো, ও একটা নীল টাকা ইনকাম করেছে। সেই টাকাতেই এসব কিনেছে। অহনা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
–এগুলো কিনতে ওই নীল টাকা অনেকগুলো দরকার। তুমি আর নিও না। ঠিক আছে?
মাহাদী বুঝে মাথা নাড়লো। তারপর অহনা যেতেই কালার উঠিয়ে সাদিকের ঘরে গেলো। সাদিক দরকারী মিটিং করছিলো। মাহাদীকে দেখে বসতে বলে দ্রুত মিটিং শেষ হেসে বলল,
–কি ব্যাপার? কালার নিয়ে ঘুরছো কেন? আরো টি-শার্ট লাগবে?
মাহাদী মাথা নেড়ে বলল,
–তোমাকে কালার ফেরত দিয়ে দেব। আম্মু বলেছে, এগুলো কিনতে অনেক নীল টাকা লাগে। আমার অতো নাই। পরে নেবো তোমার থেকে।
সাদিকের মুখ থমথমে হয়ে গেলো। চোয়াল শক্ত করে বলল,
–তোমার আম্মু মিথ্যে বলেছে। একটা নীল টাকা দিয়েই কেনা যায়।
মাহাদী সজোরে মাথা নাড়লো,
–না। আম্মু মিথ্যা বলে না।
বলেই কালার ফেলে এক দৌঁড়ে চলে গেলো। সাদিকের ইচ্ছে হলো সবগুলো রঙ বাইরে ফেলে দিক। কিন্তু রাগ সংবরণ করলো। দ্রুত পায়ে অহনার কাছে গিয়ে চাপা গলায় চোটপাট করলো অনেকক্ষণ। অহনা মাথা নিচু করে সব শুনলো চুপ করে। সাদিক চুপ থাকল না। অহনাকে টেনে নিয়ে তাকে দিয়েই মাহাদীর হাতে রঙ তুলে দেওয়ালো। মাহাদী খুব খুশি হয়ে কালার করতে বসে গেলো। পরেরদিন লোকাল বাজার থেকে অনেকগুলো কমদামী সাদা গেঞ্জি কিনে ছেলের হাতে তুলে দিলো সাদিক। এরপরের কয়েকদিন বাবা ছেলের টিশার্ট বিক্রির বিজনেস চললো। যেখানে ক্রেতা হলো বাবা আর বিক্রেতা হলো ছেলে।
চলবে…