#অবহেলার সংসার
#Imran_Khan
#পর্ব_০৩
মা প্রতিটি মেয়ে দুইটা জিনিস সবচেয়ে বেশি চেয়ে থাকে একটা হচ্ছে তার সম্মান, অন্যটি হচ্ছে মনের মতো একটা জীবন সঙ্গী।কিন্তু মা , আমার দুইবছরের সংসারে দুইটোর মধ্যে একটাও পাই নি আমি ! আমার স্বামী না দিয়েছে স্ত্রীর অধিকার , না দিয়েছে সস্মান। ভেবছিলাম আল্লাহ্ আমার মনের মতো জীবন সঙ্গী দিয়েছে কিন্তু মা আমি ভূলেই গেছিলাম উপরের সাদা চামড়া দেখে ভালো মন্দ যাচায় করা যায় না কখনো।ব্যবহারে বুঝা যায় মানুষটা ভালো কি মন্দ?তবুও স্বামী’র অবহেলার সংসারে পড়ে আছি শত অবহেলা আর অত্যাচারে এই আশায় যে,ঠিক একদিন আমার স্বামী এসে বলবে জান্নাতুন শুনো আগে যা হয়েছে সব ভূল করেছি আমি, চলো আবার নতুন করে সংসার তৈরি করি।কিন্তু না মা , ওনার দিন দিন পশুর চেয়েও খারাপ ব্যবহার হচ্ছে।যার মনে একটুও দয়া,মায়া নেই নিজের সন্তানের জন্য সে কখনো একজন আদর্শ স্বামী হতে পারে না ।
বউ মা তুমি এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিও না।এমন ভাবে বলতেছো কেনো এমন মাঝ পথে আমার ছেলেটাকে ছেড়ে গেলো ও আরো পাষাণ হয়ে যাবে।আমি জানি আমার ছেলেটা একটু বেশি রাগি।রাগলে ও পশুর মতো ব্যবহার করে কিন্তু মা একটা মেয়েই পারে তার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরে আনতে।যতো স্বামী তার খারাপ পথে থাকুক,স্ত্রীর ভালোবাসার কারনে ঠিক একদিন ভালোর পথে পা দিবে।আমি ওর চোখে দেখেছি তোর জন্য ভালোবাসা।তাই বলি কি মা ছেড়ে যেতে তুই সংসারে আসিস নাই তুই নিজের অধিকার-সম্মান নিজেই তৈরি করে নে আমি আছি তোর পাশে সব সময়।
আপনি দেখেছেন ওনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা, মা আপনি আমাকে হাসালেন ওটা ভালোবাসা না,ওটা হচ্ছে আমাকে ভোগ করার আশা।যে স্বামী তার নতুন স্ত্রীকে বাসর রাতে বলে,আমি গ্রামের মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারবো না।বাসর রাতে স্বামীর মুখে যেকোন মেয়ে এই কথা শুনলে তার মনে কেমন কষ্ট আর ঝড় বইবে সেটা একমাত্র সেই বুঝবে।আচ্ছা মা বলেন তো গ্রামের মেয়েরা কি ভালো না,আমরাও তো আপনাদের মতো রক্তে মাংসে তৈরি।নাকি গ্রামের মেয়েদের বাবার টাকা পয়সা কম দেখে আপনাদের কোর্ট টাই পড়া মানুষগুলো মেনে নিতে অসুবিধা হয়।আমরাও তো মানুষ আমাদের তো আশা- স্বপ্ন থাকতে পারে না, স্বামী সংসার করতে,এটাই কি চাওয়া আমার দোষ? আর বললেন কি মা, আমি ওনাকে ভালোর পথে আনতে চেষ্ট করি নি,অনেক চেষ্ট করেছি কিন্তু এর ফল ভালো আসে না।মা আপনাদের ছেড়ে যেতে চাইলে সেই কবেই চলে যেতাম অবহেলার সংসার থেকে কিন্তু যেথে পারি না ওনাকে ভালোবাসি দেখে।
বউমা তুমি এতো কষ্ট সর্য্য করেছো।এতো কিছু করেছে আমার ছেলে আগে বলবে না আমাকে।আর একবার চেষ্টা করে দেখো বউ মা।সন্তান হারানো কষ্ট আমি বুঝতে পারি কারন আমিও তো একজন মা।যা হবার হয়েছে এখন আল্লাহ্ কাছে দোয়া করো আবার যেনো বউমা তোমার পেটে বাচ্চা আসে।
মা কিছু কিছু কষ্ট আছে সবার মাঝে প্রকাশ করতে নেই।আর আল্লাহ্ মেয়েদের এমন একটা শক্তি দিয়েছে যে শত কষ্ট বুকে চাপা রেখে হাসি মুখে সবার মাঝে বেঁচে থাকে।এটাই হচ্ছে মেয়েদের জীবন।
বউমা তোমাকে একটা কথা বলি কথায় আছে না,
একবার না পাড়িলে,
দেখো শতবার!
তেমনি বউমা তুমি বারবার চেষ্টা করো ঠিক একদিন তোমার স্বামী তোমার মনের মতো হবে।দেখবে সেদিন স্বামীর থেকে পাবে তোমার সম্মান আর একজন পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী।
মা দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা শোভা পায় না, সেটা রাতের বেলায় দেখলে শোভা পায়।আর মা মিথ্যে আশা দিয়েন না তো আপনি!
এটা মিথ্যাে আশা না রে মা।একজন মা হয়ে,তার মেয়ের জন্য দোয়া করতেছি।
ভাবি এখন কেমন আছো তুমি।আর তোমার এমন অবস্হা কেমন করে হয়েছে।
এই কথা শুনে পিছনে ঘুরে দেখি আমার ননোনী এশা এসেছে।ও খবর পেলো কেমন করে ওতো এখানে আশার কথা না।আমার দেখা দেখে আমার শাশুড়ি মাও অবাক হয়েছে।
তোমরা দুইজনে এমন ভাবে দেখতেছো কেনো আমাকে।কখনো কি আমাকে দেখো নাই?
তেমন না কিন্তু এশা তুই এখানে কিভাবে আসলি।তুই তো মেসে ছিলি আর তোকে খবর কে দিলো?
আমি মেসে থাকি দেখে কি পরিবারের খবর পাবো না?আজকে সকালে ভাইয়া ফোন করে বলেছে ভাবি তুমি নাকি অসুস্হ তাই দেখতে চলে আসলাম।ভাবি আমি এখন এসেছি তাই তোমার কোন সমস্যা নাই অল্প দিনে তোমাকে সুস্হ করে তুলবো ওকে।
তাই,
হুম ভাবি।ও আপনাদের পরিচয় দেওয়া হয় নাই এতোক্ষন যার সাথে কথা বললাম তার নাম এশা নামটা বলেছি তাও বললাম।সে হচ্ছে আমার স্বামী একটি মাত্র বোন।দেখতে মাসআল্লাহ্ অনেক সুন্দর।আর ও মেসে থেকে পড়াশুনা করতেছে।এতোটুকু থাক পরে আরো পরিচয় পাবেন গল্পের মাঝে।
ভাবি তুমি অসুস্হ হলে কেমন করে।
এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম কারন যে, এমন আমার ক্ষতি করেছে সেই তার বোনকে খবর দিয়ে এখানে এনেছে কিন্তু এটা বলে নাই আমি কেমন করে অসুস্হ হলাম।
কি হলো ভাবি বলো,কেমন করে অসুস্হ হলে?
আসলে,
তোর ভাবি ঠিক মতো খাওয়া করে না আর কি যেনো চিন্তা করে সব সময় আমি নিজেই জানি না সেই জন্য আজকে তোর ভাবি অসুস্থ।
আরো অবাক হলাম আমার স্বামী এতো সুন্দর ভাবে মিথ্যাও বলতে পারে।দোষ করলো কে শেষে দোষি হলাম আমি।সত্যিটা বললে কি সমস্যা ছিলো?ওনাকে দেখে আমার ঘৃণা হচ্ছে।ওনার জন্য আর বিন্দুমাত্র ভালোবাসা আমার মনে নেই আছে শুধু ঘৃণা।
ভাবি তুমি কিন্তু এটা ঠিক করো নাই।তুমি এতো কিসের টেনশন করো আর ঠিক ভাবে খাওয়া করো না কেনো।
আচ্ছা তোমরা আমার অসুস্হ মেয়েটাকে এতো প্রশ্ন করতেছিস কেনো।ওকে কি আরো,শান্তনা দিবি তা না করে শুধু প্রশ্ন করতেছিস দুইজনাই ।
আচ্ছা মা আমার ভূল হয়েছে।ভাবি তোমার থেকেও ক্ষমা চাই।আর ভাইয়া তোর বউএর জন্য টেনশন করতে হবে না আমি যখন এসেছি তখন দুইদিনের ভিতরে ভাবিকে সুস্হ করে তুলবো।
আমার বোনটা দেখতেছি অনেক বড় হয়েছে। বড়ভাইয়ের দুঃখ বুঝতে শিখেছে আর তোর ভাবিকে সুস্হ করার জন্যই তো তোকে ফোন করে এখানে এনেছি।
হুম আমি তো বড় হয়েছি আরো ছোট আছি নাকি।
তাহলে তো আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে হয় যখন মেয়েই নিজেই বলে ও বড় হয়েছে।
মা তুমি কি যে বলো না?আমার লজ্জা করে না বুঝি।
এশার এমন কথা শুনে শত কষ্টের মাঝে হাসিটা চেপে রাখতে পারলাম না,শেষে হেসেই ফেললাম।আমার হাসা দেখে আমার শাশুড়ি মা আর আমার স্বামী দুইজনে হাসতে শুরু করলো ।লজ্জা নারীর ভুষণ।একটা ভালো মানুষ মধ্যে প্রথমতো তার লজ্জা থাকতে হবে।
ওরে আমার লজ্জা বতি মেয়ে।
আচ্ছা মা অনেক কথা বলেছো এখন একটু ভাইয়া আর ভাবিকে একা ছেড়ে দেও তাড়া একটু মনে কথা বলুক।
কিন্তু,
কোন কিন্তু নয় মা চলো,
শেষে এশা আমার শাশুড়ি মাকে জোড় করে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে গেলো।এশা আর মা চলে যাওয়ার পরে আমি আমার চোখ দুটো বন্ধ করে চূপ করে সুয়ে আছি।ওনার সাথে কথা বলতে ঘৃণা লাগতেছে।
জান্নাতুন এখন কেমন লাগতেছে তোমার।
আমার এমন অবস্হা করে এখন বলতেছেন কেমন লাগতেছে।আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না,আপনাকে দেখলে এখন ঘৃণা হয় আমার। আপনি একটা পাষাণ মনের মানুষ যে কিনা মনে একটুও দয়া মায়া নাই।বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করেছেন।আচ্ছা এতো করে বললাম আমাদের বাচ্চাটাকে নষ্ট করিয়েন না তবুও আমার কথা শুনলেন না।এই দুই বছরে আপনি না হয় আমাকে স্ত্রী হিসাবে মানেন নাই।আমি শুনেছিলাম যে একজন মানুষ তার সত্রুর সাথে একসাথে বাস করলে নাকি একসময় সত্রু থেকে বন্ধু হয়ে যায়।তাহলে আপনার সাথে তো দুইটা বছর এক ঘরে থেকেও কি একটু মায়া হলো না আপনার আমার জন্য? আজকে আপনাকে বললাম একদিন আসবে সেদিন শতো কষ্টে আপনি বাবা হতে পারবেন না।সেদিন শুধু বাবা ডাক শুনার জন্য ছটপট করবেন কিন্তু কখনো বাবা ডাক শুনতে পারবেন না।
আমি পাষাণ হাসালে তুমি।আমাকে শাষাণ বললে আমি পাষাণ ওকে।বাচ্চাটা নষ্ট করেছি শুধু তোমার জন্য কারন বাচ্চাটা প্রয়োজন না আমার,প্রয়োজন তোমার সেই রক্তে মাংসের শরীলটা।
আপনার এতো শরীলের নেশা।আপনাকে একদিন পস্তাতে হবে সেদিন কোন কূলে ঠাই পাবেন না।
সেদিন কখনো আসবে না।
#চলবে,,,, কী ?