#অবশেষে_বসন্ত
#মুন্নি_অারা_সাফিয়া
#অনুগল্প
__’শুনুন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।’
__’তাহলে বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছি।’
কন্ঠটা পরিচিত মনে হতেই তাকিয়ে দেখি আমার ওয়ান এন্ড অনলি ক্রাশ।এর জন্যেই তো গুণে গুণে ছাব্বিশ টা সমন্ধ ভেঙে দিয়েছি।আমার সেই আকাঙ্ক্ষিত মানুষটা আমার সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে!বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আমি বিস্ফারিত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি।আজ অনেক জোর জবরদস্তি করে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে গিয়েছিল মা।রাগে পাত্রসহ কারো মুখ দর্শন করিনি।দাঁত কিড়মিড় করে তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমাকে আর পাত্রকে ছাদে পাঠালো আলাদা করে কথা বলার জন্য।
ছাদে আসার পরো ছেলের মুখ দেখিনি।কন্ঠ শোনার পর দেখি এটা তো আমার ক্রাশ।ঘোর কাটতেই কিছু বলার চেষ্টা করলাম। ততক্ষণে আমার ক্রাশ উঠে দাঁড়িয়েছে।কয়েক পা এগুতেই পেছন থেকে হাত টেনে ধরলাম।সে অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকালো।একটু অপ্রস্তুত হয়ে হাত ছেড়ে দিলাম।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
__’আমি রাজি মি. ধইঞ্চা।থুড়ি মি. তাজবীর আজমাইন তিহাম।’
তিহাম ভ্রু কুঁচকে বললো,
__’হোয়াট? কি বলতে চাইছো?’
__’এটাই বলতে চাইছি যে আমি এই বিয়েতে রাজি।আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে?’
__’তোমাকে তো আমি অনেক আগে থেকে চিনি।রাস্তায় প্রায়ই দেখা হতো।পছন্দ হয়েছে বলেই তো বাসায় প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।’
আমি খুশি হয়ে বললাম,
__’আল্লাহ আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।চলুন,নিচে গিয়ে সবাইকে বলি যে আমাদের দুজনের দুজনকে দারুণ পছন্দ হয়েছে।’
__’ওয়েট!তুমি তো মাত্র বললে তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।হঠাৎ মত চেঞ্জ? নাহ, তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।তুমি মানুষ সুবিধার না।আসি!’
উনি চলে যেতে নিতেই শার্ট টেনে ধরলাম।উনি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
__’আর ইউ ম্যাড?শার্ট ধরে টানাটানি করছো কেন?ছিঁড়ে যাবে।’
__’যাক ছিঁড়ে। আমি একটার বদলে একশ টা কিনে দিবো।প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দিবেন না।আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নেই।মিথ্যে বলেছি।আমি আপনাকে ভালোবাসি।’
__’মাই গড!কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা!কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো?এই,ছাড়ো ছাড়ো বলছি আমাকে।পৃথিবী উল্টে গেলেও তোমাকে আমি বিয়ে করবো না।ছাড়ো!’
__’ছাড়বো না।দেখুন,যদি বিয়ে করতে রাজি না হন,তাহলে নিচে গিয়ে বলবো যে আমি আপনার সন্তানের মা হতে চলেছি।’
তিহাম ছিটকে একটু পিছনে সরে গেল।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
__’ক-কি বললে তুমি?আমার সন্তানের মা হতে চলেছো?তোমাকে তো আমি স্পর্শই করিনি।মাত্র একটু হাত ধরেছি জাস্ট।তাও সেটা তুমি আগে ধরেছো।আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি।নাহ,আমি যাই।পাগল হয়ে যাবো।ছাড়ো আমায়!’
উনি চলে যাওয়ার আগে আবার দুহাতে ওনার শার্ট আরো শক্ত করে টেনে ধরলাম।বললাম,
__’ছাড়বো না মানে ছাড়বো না।বিয়ে করবেন কি না সেটা বলুন।আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি।ভার্সিটি যাওয়ার পথে বাইকে আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম।প্রথম দিন দেখেই একদম ফিদা।আপনি আমার ফরএভার ক্রাশ।আপনার জন্য ছাব্বিশ টা বিয়ে ভেঙেছি।এই নিজ হাতে ভেঙেছি।অবশ্য হাতে নয়।মস্তিষ্ক খাটিয়ে ভেঙেছি।এখন সেই আপনি আমাকে যদি বিয়ে না করেন তাহলে আমার কি হবে বলুনতো?আমি আপনাকে ভালোবাসি।’
বলেই কান্না শুরু করলাম।এতে কাজ হলো মনে হচ্ছে।তিহাম কিছুটা চিন্তিত হয়ে তড়িঘড়ি করে বলল,
__’এই, এই একদম কান্না করবে না।স্টপ ক্রাইং!তুমি যা বলছো তা কি সত্য?তোমার মা কিন্তু আমাকে আগেই বলেছে তুমি অতি গুছিয়ে সত্যের মতো করে মিথ্যে বলো।তোমার কথা যেনো বিশ্বাস না করি।’
হায় আল্লাহ!মা তো মিথ্যে বলেনি।কিন্তু সে তো আর জানে না তার এই গুনধর জামাইয়ের জন্যই এত এত মিথ্যে বলেছি।আমি কান্না থামিয়ে দ্রুত বললাম,
__’আমি যা বলছি তা সত্যি! আলবাত সত্যি।তিন সত্যি!আসলে মা এমনি এমনি বলেছে ওসব।এতদিন বিয়ে ভাঙার জন্য একটু আধটু মিথ্যে বলতাম।ওই আর কি!বিশ্বাস করুন,আমার হৃদপিণ্ড, ফুসফুস,কিডনি, যকৃত, পাকস্থলীসহ সব অর্গান আপনার নামে চলে।সবকিছুতে শুধু তিহাম আর তিহাম লেখা।আমার মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থির প্রতিটি শি………..’
__’হেই স্টপ দিয়ানা।বুঝতে পেরেছি।আর বলতে হবে না।কিন্তু খবরদার,আজকের পর থেকে আর কোনো ছেলের দিকে কু নজর দিবে না।এবার শার্ট ছাড়ো।’
আমি শার্ট ছেড়ে লজ্জা মিশ্রিত মুখে নিচে তাকালাম।হঠাৎই চোখ তুলে তাকিয়ে বললাম,
__’জানেন,আজ রাতে স্বপ্নে দেখেছি পানির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নদী পাড়ি দিচ্ছি।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো পানিতে ডুবে যাওয়া তো দূরে থাক,পায়ের পাতা পর্যন্ত ভিজে নাই।আজব না?’
তিহাম হেসে বলল,
__’হু একদম আজব। তুমি তো মহামানবী পর্যায়ে চলে গেছো।এবার হিমুর মতো উদ্ভট কাজ না করেই, শুধু মাত্র তোমাকে বিয়ে করে মহাপুরুষ হয়ে যাবো আমি!চলো নিচে যাই এখন।’
আমি তিহামের হাত ধরে খুশিতে সারা ছাদে কয়েকটা চক্কর দিলাম।ইশ!কি যে খুশি লাগছে!!
*সমাপ্ত*