অবশেষে পর্ব-০৯

0
1334

#অবশেষে
#written_by_sumaiya_karim
||পর্ব-৯||
রিয়া তার মোবাইল টা বের করে একটা ফটো তুলে নেয়। আদ্র তো এসব দেখে সাথে সাথেই রাগের চোটে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলো। রিয়া ও সায়নের বলা শেষ কথা টার মতো কোনো সিনক্রিয়েট না করে দেখান থেকে প্রস্থান করে।

তন্নি ফিরে আসে আর রাতুলের সাথে কথাবার্তা বলে শেষে আয়রা বলে,
–‘ভাইয়া এবার যেতে হবে বাসায় কেউ নেই আপনি প্লিজ আদ্র কে…

–‘হুম হুম অবশ্যই বলে দিবো। আমি এখনি আদ্রর অফিসে যাচ্ছি হ্যাপি?’

–‘হুম!’

আয়রা আর তন্নি বাসায় ফিরে আসে। আদ্র অফিসেই আবার চলে গিয়েছিলো তবে তার মাথায় কি চলছে নিজেও বুঝতে পারছে না। আয়রা কে সে বউ হিসেবে মানে নি ঠিক ই তবে রাতুলের সাথে এভাবে রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে দেখা টাও ভালো ভাবে হজম করতে পারছে না। তাই সে কাজ ফেলে এক ভাবে দৃষ্টি অনড় করে বসে আছে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। আর সে রাতুল!

–‘আদ্র ভেতরে আসবো?’

রাতুল কে এখানে দেখে বেশ অবাক হয় মানুষ টা। কিঞ্চিত ভ্রুঁ কুঁচকে সেদিকে দৃষ্টি নেয়। উত্তর সে দেয় না চুপ করেই থাকলো দেখে রাতুল ভেতরে চলে আসে। আর এসেই চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

–‘কিরে ভাই কোথায় মনোযোগ তোর? এভাবে স্টাচু হয়ে আছিস কেন?’

–‘তুই এখানে?

–‘এভাবে বলছিস যে? আমার কি অন্য কোথাও থাকার কথা ছিলো?’

আদ্র নিজের ক্ষোভ টা চেপে রাখতে না পেরে প্রকাশ করে ফেললো।

–‘তোর তো রেস্টুরেন্টে থাকার কথা আয়রার সাথে?’

আদ্রর কথা বলার ধরণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কথা টা সহজ স্বাভাবিক ভাবে বলে নি। বরং ত্যাড়া ভাবেই বলেছে।

–‘মানে?’

–‘বুঝিস না নাকি না বুঝার ভং ধরছিস?’

–‘আদ্র কি হলো তোর? তার মানে তুই আমাদের কে রেস্টুরেন্টে দেখেছিস? কেন গিয়েছিলি তুই ওখানে? আমাদের ডাকলেই তো পারতি!’

–‘তোদের প্রেম নষ্ট করি কি করে?’

–‘হোয়াট..? আর ইউ ম্যাড আদ্র?’

–‘আমি পাগল নই একেবারে সুস্থ্য স্বাভাবিক একটা মানুষ!’

–‘এসব কি বললি তুই নিজে বুঝতে পারছিস? কে বলেছে তোকে এসব?’

–‘যেই বলুক না কেন আমি তো নিজ চোখে দেখে আসলাম ই!’

–‘চোখের দেখায় ও ভুল থাকে! আর তুই যা দেখেছিস সেটা হয় ই নি। আয়রা..

–‘ব্যাস আর বলতে হবে না!’

আদ্র কয়েক টা বাজে কথা ও বলে ফেলে আয়রা আর রাতুল কে নিয়ে। অথচ এসব কথা রাতুল এক মুহুর্তের জন্য ও ভাবে নি। লজ্জা লাগছে নিজের কাছেই। সত্যি কথা টা বলার আগেই যে আদ্রর কাছ থেকে এতো গুলো কথা তার শুনতে হবে ভেবে আসে নি। লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষে আর চুপ না থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

–‘আমি বুঝতে পারছি না তুই এসব কি বলছিস। তবে তুই যা দেখেছিস তা সত্যি আর যা ভাবছিস তা ভুল। আর এই ভুল আর ভ্রম নিয়ে যা কথা শুনালি তুই আমাকে তোর সামনে আর দাঁড়ানোর মুখ নাই আমার। তোকে বন্ধু ভাই ভাব ি আর আয়রা কে বোন! এসব কথা ভাবা ও আমার জন্য পাপ। আমি রিয়া কে ভালোবাসি ওর সাথে সামনে আমার এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে যাচ্ছে আর তুই এসব..? ছিহ..!

–‘তোর কথা শেষ হলে তুই আসতে পারিস এখন!’

–‘যাচ্ছি তবে যেজন্য এখানে এসেছি তা বলে নিই।’

–‘আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না। জাস্ট গেট লস্ট!’

–‘তোকে শুনতে হবে। এসব জানা জরুরী তোর জন্য। আমাকে আটকাস না লস্ট আমার কথা গুলো শুন। কথা দিচ্ছি আর কখনো তোর সাথে আসবো না।’

–‘বল!’

–‘আয়রা আমাকে রেস্টুরেন্টে ডেকেছিলো এটা বলতে যে তুই জিসানের সুইসাইড টা নিয়ে ওকে দোষ দিচ্ছিস। বিয়ের প্রথম থেকে এই একমাসে সব বলেছে ও আমাকে। আসলে তুই দুবাই চলে যাওয়ার পর থেকে জিসান উগ্র হয়ে যায়। গুন্ডামি করে বেড়াতো ভার্সিটি তে। আমরা না পারতে ওর সঙ্গ দিতাম। আর তার এই গুন্ডামি স্বভাবের জন্য ই আয়রা তাকে খুব অপছন্দ করতো। প্রপোজ এক্সেপ্ট করার জন্য জিসান আয়রা কে তিন দিন সময় দিয়েছিলো। যেখানে একজন একটা মানুষ কে পছন্দ ই করে না সেখানে প্রপোজ এক্সেপ্ট করবে কিভাবে। জোড় করে আর যাই হোক এটলিস্ট ভালোবাসা তো আর হয় না। ঐ তিন সময় শেষ হয়ে চতুর্থ দিন পড়ে জিসান মারা যাওয়ার আগের দিন। ঐ দিন সে আয়রার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করেছিলো তাও জারিফার বার্থডে তে গিয়ে। জারিফা আয়রার ফ্রেন্ড ছিলো আমরা চিনতাম। আমি আর সায়ন কে মিথ্যা বলে নিয়ে গিয়েছিলো ও। সেদিন ধরা পড়ায় জিসানের সব ফাঁস হয়ে যায়। অনেক অপমানিত হয় ও। আর আংকেল আন্টি ভার্সিটি তে গুন্ডামি করার কথা জানতে পারায় ওকে বকেছিলো। এই গোটা বিষয় টা জিসানের ইগো তে লাগে সহজে নিতে না পারায় সে সুইসাইড করে ফেলে। এই ঘটনার সাক্ষী আমি আর সায়ন ছিলাম। আয়রা এটাই বলতে গিয়েছিলো আমি যাতে তোকে সত্যি টা বলি আর তুই ওর পরিবারের ক্ষতি না করিস ব্যাস আর কিছু না!’

–‘এতো সুন্দর গল্প সাজিয়েছিস? সত্যি ই প্রসংসনীয়!’

–‘এটা গল্প নয় বাস্তব। বিশ্বাস করাটা তোর উপর!’

রাতুলের কথার মাঝখানে হঠাৎ তার ফোন টা বেজে উঠে আর সে দেখে রিয়ার ফ্রেন্ড দিয়া ফোন দিয়েছে। চট করে ফোন টা রিসিভ করল সে। ওপাশ থেকে যা বললো তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে। দিয়া বললো,

–‘রাতুল ভাই আপনার থেকে এটা আশা করিনি! আপনি কিনা শেষে আমার ফ্রেন্ড টা কে ঠকালেন? আমার ফ্রেন্ড খুব কষ্ট পেয়েছে। আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসতো রিয়া। আপনি ওকে ঠকিয়েছেব এটা মানতে না পেরে হাত কেটে ফেলেছে। শেষে ওকে বেহুঁশ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আংকেল আন্টি ওকে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। এসব করার আগে ও বাড়ির সবাই কে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে আপনি ওকে ঠকিয়েছেন আর তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসব করলো। আপনি কাজ টা ঠিক করেন নি রাতুল ভাই! ঠিক করেন নি!’

রাতুলের হাত থেকে ফোন টা পড়ে যেতে নিলেও সে সামলে নেয় আর হন্তদন্ত হয়ে আদ্রর অফিসে থেকে বেরিয়ে যায়। আদ্র অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো। যাওয়ার আগে রাতুল যা বলে গেলো তা কি সত্যি নাকি মিথ্যা? আর এভাবে হঠাৎ করেই বা কোথায় ছুটে চলে গেলো ও? আদ্র রাগ কমলো না বরং বাড়লো আরো। সে নিজেও জানে না কেন সে আয়রা কে রাতুলের সাথে দেখা টা মানতে পারছে না। নাহ আয়রার সাথে কথা বলা দরকার তাই আদ্র অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে যায়।

আদ্র বাসায় আসে। দেখে সব নরমাল। আয়রা সম্ভবত রান্না ঘরে। নিজের রাগ এতো টাই বেড়ে গেছে যে কিছু তেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না দেখে সে রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। অনেক্ষণ পরে বের হয়। আর আয়রা কে ডাকে। ডাক টা অস্বাভাবিক লাগলো আয়রার কাছে। বুঝতেই পারছে কিছু গোলমাল আছে। রান্না ঘরের কাজ শেষ করে গোছগাছ করে আসতে একটু লেট হয়। রুমে ঠুকেই দেখে আদ্র নেই। তাকে ডেকে গেলোই বা কোথায়? হঠাৎ করে পেছন থেকে দরজা আটকানোর শব্দ পায় সে। আর সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে তাকায়।

–‘আরে দরজা বন্ধ করলেন কেন?’

–‘খুব সমস্যা হচ্ছে বুঝি?’

–‘মানে কি?’

–‘রেস্টুরেন্টে রাতুলের সঙ্গে কি করতে গিয়েছিলে তুমি?’

–‘আপনি আনার কথা তো বিশ্বাস করেন নি রাতুল ভাইয়ার কথা বিশ্বাস করবেন তাই উনাকে জিসান সম্পর্কে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কারণ ঐ দিন সাক্ষী ছিলো উনারা দুজন!’

–‘শ্যাট আপ! প্রেম করছিলে হ্যাঁ? লজ্জা করলো না তোমার এসব করতে?’

আদ্র রাগের মাথায় যা নয় তা বলে গেলো। আয়রা সব চুপচাপ শুনে নিয়ে বললো,

–‘ভাই বোনের সম্পর্ক কোথায় নিয়ে গেলেন আপনি ছিহ! ভাবতেও ঘৃণায় গা রিরি করছে! আমি এই জন্যই গিয়েছিলাম যাতে আপনার ভুল ভাঙ্গে আর আপনি? আমার সাথে তন্নি ও গিয়েছিলো ও জানে সত্যি টা। তন্নি তো আপনার বোন ওকেই নাহয় জিঙ্গেস করে নিবেন কেন আমরা ওখানে গিয়েছিলাম! আপনার মতো মানুষের সঙ্গে আর যাই হোক আমি সংসার করতে পারবো না। আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন ঠিক ই তবে বউ হিসেবে মানেন নি কখনো। প্রতিশোধ নিতেই এসব করেছেন! আপনার জানায় ভুল ছিলো। কিসের জন্য আমার সাথে এমন করছিলেন তা জানতেই আমি একমাস আপনার যা নয় তা সহ্য করে গেছি আর না। আমি আজ ই বাবার বাসায় চলে যাবো। আমার শেষ ঠাই টুকু ওখানে অবশ্যই মিলবে! না মিললে রাস্তায় পড়ে থাকবো তাও আপনার মতো চিফ ম্যান্টালিটির মানুষের সাথে থাকার কোনো মানে হয় না! ডিভোর্স পেপার টা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন মিস্টার আদ্র! ভালো থাকবেন আসি আমি!’

আয়রার এতো খারাপ লাগছিলো যে তৎক্ষণাৎ ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায় সে। তন্নি সেখানে উপস্থিত ছিলো না বলে কিছুই জানতে পারলো না।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে