#অবশেষে
#Written_by_Sumaiya_Karim
||পর্ব-৪||
আদ্রর হুমকি মূলক কথা টা শুনে আয়রা বলে,
–‘আপনার যদি মনে হয় আপনি হুমকি দিয়ে আমাকে চুপ করাতে পারবেন তাহলে সেটা ভুল!আমি এক্ষুনি নিচে গিয়ে সবাই কে বলে দিবো আপনাকে আমি চিনি না। আর আমি এই বিয়ে ও মানি না!’
আদ্র পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য স্ব-গৌরবে নিজেকে তৈরি করে একটা ডেভিল স্মাইল দেয়। আর সেটা দেখে আয়রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নেয়। ওমনি আদ্র নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এক পা এক পা করে আয়রার দিকে এগোতে থাকে। এটা দেখে আয়রার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বুঝতে পারলো রাতের ঘটনা যেহুতু এই মানুষ টা ঘটাতে পেরেছে তাহলে এখনো যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। এর কোনো বিশ্বাস নেই! উপায়ান্তর না পেয়ে আয়রা নিজেই আমতা আমতা করে বলে,
–‘আ্ আমি্ কি্ কিন্তু চেঁচাবো!’
আদ্র তার এই কথার ও মুখে কোনো উত্তর দিলো না। উল্টো এমন ভাব করলো যেনো সে এই কথা কে গায়ে মাখলো না। আদ্র আর তার মাঝে দূরত্ব টা খুব বেশি নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে আয়রা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
–‘আ্ আমি আপনার সব কথা শুনবো! আপনি যা বলবেন তাই হবে! প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন! আমার সাথে কিছু করবেন না!’
আয়রা নিজেই লাগাতার চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলতে থাকে সে আদ্রর সব কথা মানবে। নিজেই নিজের কথা থেকে নড়ে যায়। আর ভয়ে ভীত হয়ে থাকে। আর আদ্র শার্ট টা খুলে ফ্যান টা জোড়ে ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়ে আয়রা কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
–‘যা গরম পড়েছে না একেবারে অসহ্য!’
আয়রা এক চোখ মিটমিট করে খুলে দেখে তার চোখ ছানাবড়া। মানুষ টা আয়েশ করে সোফায় বসে আছে। এই মুহূর্তে তার ঠিক কেমন রিয়েক্ট করা উচিত নিজেই বুঝতে পারলো না। আর রাগ টা মুখে প্রকাশ করতে না পেরে মনে মনেই বললো,
–‘তোর হুমকি তে আমি ভয় পেয়েছি মনে করিস! মোটেও না। তোকে তো আমি ছাড়বোই না! আগে আমি নিজে ছাড়া পাই একবার! তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা আছে তোকে বুঝিয়ে দিবো! বজ্জাত লোক কোথাকার!’
হুট করে আদ্র উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আয়রা শুধু তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে! তার যাওয়ার পর পর ই রুমে ঢুকে তন্নি আর বলে,
–‘ভাবী কি হয়েছে জানো?’
–‘কি?’
–‘তোমারা আর ভাইয়ার বিয়ে!’
–‘মানে?’
–‘তোমাদের বিয়ে টা তো একটা এক্সিডেন্ট! লোক জানাজানি হলে খারাপ দেখাবে বিষয় টা তাই সবাই একত্রে ডিসিশন নিয়েছে আজ থেকে দুদিন পর খুব ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে হবে!’
–‘কিহহ!’ খুব চমকালো আয়রা!
–‘আরে হ্যাঁ।’
আয়রা কি করবে বুঝতে পারছে না। তার কাছে মনে হলো কোনো এক মাইনকার চিপায় সে ভালো ভাবেই পড়ে গেছে। তার আগে এটাও তাকে ভাবাচ্ছে যে পরিবারের লোকজন তাকে রাতেই ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো সকালেই আবার তারা কিভাবে এই লোকটার ঘরে উনারা আসলো? তন্নি আয়রার শুকনো মুখে দেখে নিজেই মন খারাপ করে বলে,
–‘ভাবী তুমি খুশি হও নি?’
–‘হ্ মানে ন্.. আচ্ছা তোমার নাম কি?’
–‘এটাও ভুলে গেলে?’ চোখ ইয়া বড় বড় করে!
আয়রা মনে কখন রেখেছিলো সেটাই ভেবে পেলো না।
–‘আরে আমি তন্নি। তোমার সাথে আজ থেকে প্রায় ৮ মাস আগে আদ্র ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো তোমার মনে নেই?’
আদ্র নাম টা শুনে ভড়কে গেলো আয়রা। ভ্রুঁ কুঁচকে নিজেকে তন্নির থেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে নিয়ে বলে,
–‘তুমি এখানে কি করে?’
তন্নি হাসতে হাসতে বললো,
–‘ভাবী তোমার মাথা টা একেবারেই গেছে। নাহ তোমার দোষ ই বা কোথায় এতোগুলো মাস গেছে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আরে এটা তো আমাদের ই ঘর। আর তুমি এখন আদ্র ভাইয়ার ই বউ!’
–‘কি বললে? এটা সত্যি? তোমার ভাইয়া তো বিয়ে টা ক্যান্সেল করে দিয়েছিলো তাহলে আমি উনার বউ কিভাবে হলাম? মজা করছি না তো তুমি আমার সাথে? ঐ লম্বা হাতির মতো লোকটা তোমার ভাই হতেই পারে না!’
তন্নি কিছু বলতে যাবে ওমনি রুমে ঢুকলো আয়রার মা আর চাচি। উনারা এক গাল হেসে বলে,
–‘তোকে আমরা দুপুরে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। আর তার ঠিক দুদিন পরে তুই খুব সুন্দর করে বউ হয়ে আসবি এই বাড়ি তে বুঝলি মেয়ে?’
চাচির কথা শুনে তন্নি বললো,
–‘হুম সেটাই তো বলছিলাম আমি ভাবী কে! আর দেখুন না ভাবী আমার ভাই কেই চিনতে পারছে না পোড়া কপাল আমার ভাইয়ের!’
তন্নি কপাল চাপড়ে এমন ভং ধরে কথা টা বললো যে সবাই হেসে দিলো। তখনি রুমে কেউ নেই ভেবে আদ্র ঠুকে পরে সবাই কে দেখে বলে,
–‘আব্..
–‘আরে ভাইয়া এদিকে আয় এই দেখ তোর বউ তোকেই চিনতে পারছে না! একটু তোর ইনট্রুডিউস টা ভাবী কে দে তো!’
আদ্র প্রতি উত্তরে মুচকি হাসলো। অন্যদিকে আয়রা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পোঁছালো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখে। চোখ দুটো যেনো এমার সত্যি সত্যি কোটর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে! এটা যে আদ্র কল্পনায় ও ছিলো না তার!
_______________★
দুপুরে খাবার দাবার শেষে আয়রা কে নিয়ে নিজ বাড়ি তে চলে যায় উনারা। এর মাঝেই তন্নির সাথে খুব ভাব জমে গেছে আয়রার। এতো মিশুক মেয়ে টা। চলে আসার আগে বলে দিয়েছে,
–‘খুব মিস করবো তোমাকে ভাবী।’
কথা বলার ফাঁকে তন্নির থেকে জেনে নিয়েছে যে তার বাবা মা রা এখানে কিভাবে এলো! সব শুনে শক্ড হয়ে যায় সে। বিশ্বাস ই করতে পারছে না যে এসব সত্য আর বাস্তব। তবে আদ্রর দু রূপের মধ্যে কোনটা আসল কোনটা নকল নিজেই কনফিউশনে ডুবে যায়। এই আদ্রর সাথে ৮ মাস আগের তার সেই আদ্রর একদমি মিল পাচ্ছে না সে।
সন্ধ্যায় নিজের রুমের মধ্যে পায়চারী করতে থাকে আয়রা। সব কিছু শুনার পর সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বেশি। তার কোনটা করণীয় উচিত নিজেও বুঝতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে এই বিয়ে ভেঙ্গে দিবে কিন্তু সেটা কিভাবে? আদ্র যেভাবে সকল কে বুঝ দিয়েছে এতে করে কেউ এই বিয়ে টা না করবে না এতে সে নিশ্চিত। তার উপর আদ্র যে রাতে তাকে কিসব যেনো বলছিলি সেটাও মনে করতে পারছিলো না! একবার মনে হচ্ছে আদ্র ভালো তো আবার মনে হচ্ছে খারাপ! নিজের একটা ব্যক্তিগত ডায়রি টা হাতে নেয় সে। আর ওমনি হাত ফসকে ডায়রি টা নিচে পড়ে যায়।
সঙ্গে দুটো ছবি ও। ছবি দুটো তে থাকা স্থির মানুষ টা কে আট মাস আগে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছিলো সে। যখন শুনে বিয়ে টা ক্যান্সেল তো মন ভেঙ্গে যায়। জীবনের প্রথম কাউকে ভালো লেগেছিলো তার। আর সেই মানুষ টাই এই আদ্র! যখন বিয়ে টা হবে না জানলো সব কিছু শেষ হয়ে যায়। আর মনের উপর জোড় খাটিয়ে মাটি চাপা দিতে থাকে নিজের অপ্রকাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা কে! এতো গুলো মাসে ডায়রি টা খুলে ও দেখা হয় নি! ধুলো জমে একাকার হয়ে মিশে আছে ডায়রিতে উল্লেখ্য প্রত্যেক টা শব্দের সাথে!
কিভাবে আদ্র কে মন থেকে মুছে ফেলেছিলো সে জানে। কিন্তু পুরোনো ক্ষত টা আবার ঝকঝকে করে দিতে আসলো কেন আদ্র? আর আসলোই যখন তখন এমন করে কেন? তখন বিয়ে না করে দিয়ে এখন এই বিয়ে টা কেন? এই সব কেন এর উত্তর গুলো খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে যায় আয়রা। মানুষ টা কে একটু জিঙ্গেস করবে তার সময় ও হয়ে উঠে নি! চলে আসার আগে আদ্র কে হন্ন হয়ে খুঁজেছিলো সে তবে পায় নি সে! দেখা মিলে নি মানুষটার!
সায়ন আর রাতুল আজ আদ্র কে একটু বেশি ড্রিঙ্কস করতে দেখে বলে,
–‘ভাই তুই ঠিক আছিস?’
–‘হ্যাঁ একদম!’
–‘এতো ড্রিঙ্কস তো তুই করিস না। কি ব্যাপার বলতো?’
–‘ঐ মেয়েটা কে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারি না রে! খুব রাগ হয়! খুব!’
বলতে বলতে টেবিলের উপর ঢলে পড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আদ্র। রাতুল আদ্রর গালে হাত দিয়ে বলে,
–‘এই ভাই কোন মেয়ের কথা বলছিস? আদ্র এই আদ্র কথা বল! কে আবার কি করলো তোকে? এই মেয়ে গুলা সব এক! সব কটা খারাপ!’
সায়ন বললো,
–‘ছেড়ে দে এ তো আজ গেছে। দুদিন পর এর বিয়ে আর ও কোন মেয়ের কথা বলছে এখানে?’
–‘আমি যদি জানতাম তাহলে তো বলেই দিতাম ওকে জিঙ্গেস করতাম না কি?’
–‘রাগ করছিস কেন? রিয়ার সাথে আবার ব্রেকআপ হলো নাকি?’
–‘হ্যাঁ!’
এমনিতে তো মেয়েদের খুব বড় ভক্ত রাতুল। তার মুখে আজ বেসুরে গান বাজতে দেখেই সায়ন বুঝে গেছে যে আবার ব্রেকআপ হয়েছে।
–‘ভাই তোদের রিলেশন টা কেমন একটু বল তো? দিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ১৬ ঘন্টাই তোরা ব্রেকআপ ব্রেকআপ খেলিস। ভালো না লাগলে ছেড়ে দে দুনিয়ায় আরো জোস জোস মেয়ে আছে মামা!’
সায়মনের এই কথা টা একদম পছন্দ হলো না রাতুলের। হুট করে তাদের কথা গুলো মধ্যে আদ্র নেশার ঘোরে বললো,
–‘মেয়ে রা হচ্ছে ছলনাময়ী!’
সায়ন আর রাতুল দুজন ই দুজনার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
–‘আদ্রর মুখে তো শ্যামল দার ডায়লগ ডাউনলোড হয়ে গেছে রে!’
–‘হ্যাভ এ রিল্যাক্স সি ইউ নট ফর মাইন্ড হাহাহা!’
মূলত এই বিয়ে টা কে মন থেকে মানতে পারছে না আদ্র। সে যে কেন এসব করছে নিজেই জানে!
একটা চাপা কষ্ট সর্বদা বিদ্যমান তার মধ্যে! কিন্তু কি সেটা..?
____________★
এভাবে তিনদিন কেটে যায়। কেন যেনো বিয়ে টা কে না করতে পারলো না আয়রা। গায়ে হলুদ ও হয়ে যায়। এর মাঝে আদ্রর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা সে করেছে কিন্তু আদ্র কোনো রেসপন্স নেই! এক পর্যায়ে বিয়ে টা নিয়ে প্রচন্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় আয়রা। দোটানার মধ্যে দিতে যাচ্ছে দিন আর আজ তার বিয়ে! সামনে কি হবে বা হতে যাচ্ছে তার কিছুই জানা নেই! বাহিরে থেকে শোনা যাচ্ছে বর যাত্রী এসেছে। ওমনি হুরমুড় করে সবাই বেরিয়ে যায়। আর রুমের মধ্যে একলা ভাবনায় বিভোর হয়ে পড়ে রইল আয়রা! তার ভাবনায় ছেদ পড়ে রুমে কারো উপস্থিতি তে! সেই মানুষ টি কে দেখে একটু অবাক হলো আয়রা। আর সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। মানুষ টি আয়রার দু গালে হাত রেখে বলে,
–‘তুই এই বিয়ে টা করিস না আয়রা! ভেঙ্গে দে বিয়ে টা!’
চলবে?