#অপ্রেমের_প্রিয়_অধ্যায়
#পর্ব_৮ (জেনে যাওয়া!)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
তনুজা জানালার বাইরে উঁকি দিলো। কিচ্ছুটি দেখতে পেল না। তবে খুঁজল কিছু একটা। আনমনেই একজনকে খুঁজে গেল; যাকে মনের ভেতরে.. তার জানামতে, মনের ভেতরে একটুকুও জায়গা দেয়নি। কিংবা আদৌও দিয়েছে, তার জানা নেই।
বৃদ্ধা তনুজার এহেন কাণ্ডে শুধালেন, “কী হলো? ওমন অস্থির হচ্ছ কেন?”
তনুজা এদিকে তাকাল। মস্তিষ্কে বিষয়টা খেলতেই শান্ত হয়ে গেল। ভালো মতো সিটে মাথার ভর রেখে বলল, “কান বাজছিল। ও কিছু না।”
বৃদ্ধা তাল মিলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, জার্নির সময় ওমন একটু-আধটু হয়-ই। আমাদের অবচেতন মস্তিষ্ক যার খেয়ালে ডুবে আছে, তার কথাগুলো এই এত্ত আওয়াজের মাঝে কানে আসে। আবার দেখবে, ভীড়ের মাঝেও দেখা যায়। কিন্তু তারা সেখানে থাকে না। সেবার কী হয়েছে জানো?”
“কী?”
“আমার বিয়ের আগের ঘটনা। তখন আমার নাঈমের আব্বার সাথে আমার লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম চলে। সে-সময়ে, বাড়ির কলিং বেল বাজলেও বুকটা কেঁপে উঠত। মনে হতো, এই সে এলো। অথচ, তখন খেয়ালেই আসত না—সেই লোকটা আমার বাসাই চেনে না। আবার ধরো, দিনের বেলায় ল্যান্ডলাইনে কল এলো। ধুরু ধুরু বুক নিয়ে কল রিসিভ করতাম। সে কিন্তু রাতে ছাড়া কলই দিত না! তা বোঝো কান্ড! সারাদিন ওই একজনকে ভেবে গেলে কী কী হয়।”
বৃদ্ধার পুরোনো দিনের কথায় তনুজা মুচকি হাসল শুধু। এরকমটা তার সাথেও কত্ত ঘটল। বিয়ের ক’মাস পর তনুজা পুরোপুরি সিদ্দিকের প্রেমে মজে গেল। সপ্তাদশীর প্রেম মোটেও সহজ কিছু নয়! যেখানে সেখানে সিদ্দিকের আভাস পেত। বৃদ্ধার উপর্যুক্ত কথাগুলো তো তার সাথেই কত ঘটল! কিন্তু হুট করে হওয়া প্রেম টেকে না, হুট করেই নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রেম তো তা-ই, যা ধীরে ধীরে জাল বুনে অনেক গভীর ভাবে প্রেমে পড়া মানুষটিকে ফাঁদে ফেলে দেয়; সে ফাঁদ থেকে বের হওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
হঠাৎ হওয়া প্রেমটাকে নিজ-চোখের সামনে কর্পূরের মতো উড়ে যেতে দেখার দিনগুলো ভাবতেই তনুজার খুব করে সে-কথাগুলো মনে পড়ে গেল। সেবার সিদ্দিককে সে বলল, “সিদ্দিক, কলেজের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে, ভর্তি করাবেন কবে?”
সিদ্দিক প্রথমে ব্যাপারটায় মাথা গলায়নি। কেবল হেসে বুঝিয়েছে, “শিগগিরই।”
অন্তত তনুজা তো তাই বুঝেছে। সিদ্দিক কী বুঝিয়েছে, কে জানে! এরপর তো সারাদিন অফিস নিয়ে ব্যস্তই থাকত। রাতে যখন তনুজা এই নিয়ে কথা ওঠায়, সিদ্দিক তখন তাকে কাছে টেনে বলে, “ওসব পরে ভাবব। এখন একটু আদর করতে দিন। খুব টায়ার্ড আমি।”
অতঃপর সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠতায় তনুজা আর কিছু বলার সুযোগ পেত না। শাশুড়িকে বলেও লাভ হচ্ছিল না। তার মতে—বাড়িতে বউ এনেছে, মেয়ে নয়! এভাবেই যাচ্ছিল। সময় আরও কিছুটা যেতেই তনুজা ব্যাপারটা বুঝল। বুঝতে পারল, এভাবে হলে চলবে না। তারপর এক প্রকার জোর দিয়ে বসে বলে ওঠে, “আশ্চর্য! আপনি কি আমাকে পড়তে দেবেন না?”
সিদ্দিক কিছুটা বিরক্ত হলো। তনুজার এই একঘেয়ে কথাটিতে ক্লান্ত হয়ে বলল, “পড়াশোনা তো ভীষণ বোরিং একটা জিনিস! তাও কেন পড়বেন?”
প্রিয় প্রসঙ্গটিতে অবশেষে সিদ্দিককে আনতে পেরে তনুজা হাফ ছেড়ে বলল, “বাবা বলেছিল, লাইফের শেষ অবধি এই পড়াশোনাটা থেকে যাবে। আর যাই হয়ে যাক না কেন, এটা যেন না ছাড়ি। এজন্য চাচির বাড়িতে অত কষ্টেও পড়ে গিয়েছি। তাছাড়া, আমি স্ট্যাবল হতে চাই। নিজে ইনকাম করতে চাই।”
“দেখুন! আচ্ছা, আপনার বরের টাকার অভাব আছে নাকি? আপনাকে কেন টাকা কামাতে হবে? অনেক পেইন, ভাই। বাদ দিন এসব।”
“পেইন না কি কী—সেটা আমি দেখে নেব। আপনি আমাকে ভর্তি করাবেন কী না, বলুন।”
তনুজাকে এভাবে চেতে যেতে সিদ্দিক প্রথমবার দেখল। হার মেনে নেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, “না করলে কি শুনবেন? সামনের সপ্তাহে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসব। ঠিক আছে?”
“মনে থাকে যেন!”
“মনে থাকবে। এবার হাতের কাজ সেরে রুমে আসুন, অপেক্ষা করছি।”
“একটু দেরি হবে তো! আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন।”
“উফফ, মেয়ে! আপনি জানেন না? আপনি বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম হয় না। ঘুম পাচ্ছে, তনু। কাম ফাস্ট।”
এরপর পড়াশোনাতে কেউ আর কিছু বলল না ঠিকই; অথচ, বাড়ির কাজগুলোর চাপ তনুজার উপর বাড়িয়ে দেওয়া হলো। তিনবেলার রান্নাটার পুরো দায়িত্ব তনুজাকে দেওয়া হলো। সাথে বাকি কাজ কম নাকি! বাড়িতে অবিবাহিত এক ননদ থাকে, সে খারাপ না। আবার সেরকম ভালোও না। বলা যায় নিরপেক্ষ। বয়সে তনুজার বছর খানেকের বড়ো। কখনই বাকিদের মতো তনুজাকে দিয়ে এটা-সেটা করায় না, করতে বলেও না। আবার তনুজা নিজ থেকে করে দিলে সে, না-ও করে না; খুশি তো হয়-ই না।
অতঃপর এই তো! পড়াশোনা, বাড়ির কাজ আর পুরো সংসারের দায়িত্ব গুছিয়ে নিয়ে সে দিব্যি পড়ে রইল। ছোট্টো তনুজার এত কষ্টের মাঝেও, ভালো থাকার একমাত্র কারণ ছিল সিদ্দিক; যে তাকে ভালোবাসত। এত্ত এত্ত ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখত। মাঝে মাঝে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেত। বর্ষায় ছাদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাসটা দুজনের দারুণ ভাবেই হতো! মাঝরাতে বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে চাঁদ দেখত। তনুজা বরাবরই এই সময়টায় সিদ্দিকের বুকে মিশে থাকত। আর সিদ্দিক! সে তনুজার সর্বপ্রিয় কাজটি করত। আলতো হাতে তনুজার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত; তার ঘন-লম্বা চুলগুলোর সাথে খেলা জুড়ত। তনুজা তখন মুচকি মুচকি হাসত।
সংসারে ঝামেলা আসেনি, এমন না। ঝগড়া হতো! কিন্তু তনুজা এখানে নিরব থাকত। সমস্ত দোষ সিদ্দিকের থাকলেও, সে চুপটি করে সবটা মেনে নিত। কখনই সিদ্দিকের সাথে উঁচু-স্বরে কথা বলেনি। সিদ্দিক বললে, সে আগুনে ঘি না ঢেলে মাথা নিচু করে থাকত। একজন আগুন হলে, অবশ্যই অন্যজনকে পানি হতে হবে। এটাই তো নিয়ম! সাংসারিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম। আর ঠিক এভাবেই তাদের দেড় বছরের সুখের সংসার চলল। তনুজার উচ্চ মাধ্যমিক সামনে। আর ঠিক সেই সময় গিয়ে তনুজা খেয়াল করল, সিদ্দিক আর তাকে প্রতি রাতে বুকে নিয়ে ঘুমায় না। অন্যদিকে ঘুরে ঘুমায়। তনুজা কাছে এলেও, সে ফেরে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় জানালার বাইরে তাকাল তনুজা। রাস্তার পাশের মাইলফলক দেখে বুঝতে পারল—সে তার শহরে এসেছে। সামনের বাস স্টপেজেই তনুজা নেমে পড়ল। একটা অটো ডেকে বলল, “ভাই, ডি-ব্লকে যাবেন?”
সে রাজি হতেই তনুজা অটোতে চেপে বসল। সাঁই সাঁই করে যাওয়া বাতাসটার মতোই তনুজার হৃৎপিণ্ডটা চলছে। সে বাইরে তাকাল। সেই রাস্তা, সেই পরিবেশ, সেই দোকান-পাটগুলোই! কেবল পরিবর্তন শুধু সময়ের। এই রাস্তা দিয়ে সিদ্দিকের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যে কতই না খুঁনসুটিতে ব্যস্ত হতো! আহা! তার জন্য রইল কেবল এই অন্তরীক্ষ সমান দীর্ঘশ্বাস!
ঘড়িতে বাজে আড়াইটা। অটো থেকে নেমে তনুজা এক নামি কোম্পানির অপজিটে গিয়ে দাঁড়াল। কোম্পানির এই সামনের বিল্ডিংয়ের ৩য় ফ্লোরের জানালা দিয়ে একটা কেবিন দেখা যায়। এই জানালাটা সবসময় খোলাই থাকে। তনুজা জানালার ওপাশে তার চিরপরিচিত মানবকে দেখল—বসে বসে সামনেটা গোছাতে। অবয়ব তো তা-ই বোঝাল।
মিনিট তিনেক পর তনুজা রোড ক্রস করে ওই বিল্ডিংয়ের ভেতরে গেল। রিসিপশনিস্টকে গিয়ে একটা ডকুমেন্ট টাইপের এনভেলপ দিয়ে বলল, “হেলো, মিস..” কিছুটা থেমে সামনে রাখা নেমপ্লেটটা দেখে বলল, “মিস রুকমা!”
রুকমা মিহি হেসে বলল, “ইয়েস, ম্যাম! হাও ক্যান আই হেল্প ইউ?”
“উড ইউ ডু মি অ্যা ফেবার, মিস?”
“ইয়েস, শ্যিওর!”
“ওহ ওকে! দেন গিফ দিস টু মি. আজওয়াদ আবরার সিদ্দিক, প্লিজ।”
“ওকে, ম্যাম। ওয়ান্ট টু মিট হিম?”
“নোপ.. থ্যাংক ইউ।”
তখনই রুকমা পেছন দিয়ে সিদ্দিককে যেতে দেখে বলল, “ম্যাম, ওই তো স্যার! ইউ ক্যান টক টু হিম অ্যান্ড গিভ ইট ঠু।”
এরপর সিদ্দিককে ডাকতে উদ্যত হতেই তনুজা ভয়ে সিটিয়ে গিয়ে বলল, “প্লিজ, ডোন্ট কল হিম।”
“বাট, ম্যাম..”
“কাল এটা দিয়ে দেবেন, প্লিজ।”
“ওকেই.. থ্যাংক ইউ, ম্যাম।”
“ইউ ঠু।”
এতক্ষণে তনুজা পিছে মুড়ে দেখল, সিদ্দিক বেরিয়ে গিয়েছে। পেছনের অবয়বটা দেখল, আগের মতোই কী পরিপাটি দেখাচ্ছে! সিদ্দিক গাড়ি নিয়ে বেরোতেই তনুজা একটা অটো ডেকে বলল, এই গাড়ির পিছু নিতে।
সিদ্দিক গাড়ি থামাল এক রেস্টুরেন্টের সামনে। তনুজা অটোর ভাড়া মিটিয়ে সিদ্দিকের পিছু নিল। কয়েক কদম এগোতেই সিদ্দিককে একদম শেষের দিকের কর্নার টেবিলে বসা এক মহিলা আর বাচ্চার দিকে যেতে দেখে তনুজার পা ওখানেই থেমে গেল। মহিলাটি একটা নীল সালওয়ার-স্যুট পড়ে আছে। পাশে এক ৫-৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে, একদম সিদ্দিকের চেহারা পেয়েছে। সিদ্দিক এগিয়ে গিয়েই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নিল। তনুজা একে চেনে। মহিলাটি সিদ্দিকের কলিগ ছিল, নাম আশা। আর বাচ্চাটির নাম অর্ষা। অর্ষা আবরার সিদ্দিক।
তনুজার হুট করে মাথা ঘোরানো শুরু হলো। কোনোমতে পিছু ঘুরে এক প্রকার দৌড়েই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোল। শরীরটা দূর্বল লাগছে খুব। সে কেবল মানসিক নয়, শারীরিক ভাবেও ভীষণ দূর্বল। কারণ হিসেবে উপরে আছে, কাল রাত থেকে না খাওয়াটা। এভাবে উপোসে গেলে কি শরীর ঠিক থাকে?
যাক! যার জন্য এসেছিল। সেটা তো হলোই। রোড ক্রস করে ওপাশে যেতে হবে। ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করার নূন্যতম শক্তি আর তার মধ্যে নেই। রাস্তা হালকা পেয়ে এগোতেই মাঝ রাস্তায় পা থেমে গেল। চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। ঠিক সেই মুহূর্তে অনুভব করল—তার বাহুতে এক স্পর্শ। খুবই আলতো ভাবে, খুবই শ্লীল ভাবে কেউ একজন তাকে ধরে রাস্তার ওপাশে নিয়ে গেল। অন্য হাত দিয়ে তনুজার কাঁধের ব্যাগটাও নিল। তনুজা অত কিছু বুঝল না। সদ্য আগত মানব, হয়তো-বা আগে থেকেই পিছু পিছু থাকা মানবটা তনুজাকে রোড সাইড বেঞ্চে বসিয়ে পাশের দোকান থেকে এক বোতল পানি এনে তনুজার সামনে ধরল। তনুজা কোনোদিকে তাকাল না।
সে তখন বলল, “খেয়ে নিন, ফাস্ট।”
তনুজা তখন পানিটা নিল। কিছুটা খেয়ে সামনে তাকাতেই, শুদ্ধকে দেখতে পেল। অবাক হয়ে বলল, “তুমি!”
শুদ্ধ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে ছিল। তনুজার করা এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বলল, “ময়মনসিংহ এসেছিলাম একটু কাজে। হঠাৎ আপনাকে দেখে থেমে গেলাম। কথা বলতে এগিয়ে এসে দেখি আপনি ফিট খাচ্ছিলেন!”
“শুদ্ধ! ব্যাপারটা কি আদতেই কাকতালীয়?”
শুদ্ধ তৎক্ষণাৎ তাড়া দিয়ে দোকান থেকে কিছু ড্রাই-ফ্রুটস এনে বলল, “একটু খেয়ে নিন। এরপর আমার সাথে চলুন।”
তনুজা নাকচ করে বলল, “না, প্রয়োজন নেই।”
“কোনটা? খাবারের না কি আমার সাথে যাওয়ার?”
“দুটোরই!”
“ম্যাম, আপনাকে বোঝানো আমার কম্ম নহে। বোঝাতে চাইছিও না। তাই এত কথা বলবেন না, খেয়ে নিন।”
“শুদ্ধ, তুমি কি জোর করছ?”
“করছি।”
“কেন?”
“কারণ, এই মাঝ রাস্তায় কোনো ভদ্র মহিলা আমার চোখের সামনে ফিট খাবে, সেটা আমি এক সচেতন নাগরিক হয়ে কীভাবে দেখি, বলুন? আমি চাইলেই তো সাহায্য করতে পারি। তাই না? এতে কী হবে জানেন? আমার দেখাদেখি লক্ষ লক্ষ যুবক সচেতন হবে। যুবক সমাজের উন্নতি হবে। আপনি একজন শিক্ষিকা হয়ে, এটা কি চান না?”
“শুদ্ধ, তুমি আমাকে এসব ভংচং বোঝাচ্ছ!”
“জি, ম্যাম। বোঝাচ্ছি। আপনি বুঝেছেন? তাহলে খেয়ে নিন!”
“আব্…”
“প্লিইইইইজ!”
শুদ্ধর এমন নিষ্পাপ মুখশ্রী দেখে তনুজা না চাইতেও খাবারগুলো খেয়ে নিল। এরপর আবার পানি খাওয়া শেষ করতেই শুদ্ধ বলে উঠল, “ম্যাম, এখানে কেন এসেছিলেন?”
তনুজার মুখটায় আঁধার নেমে এলো। মিনমিনে স্বরে বলল, “তোমাকে বলতে বাধ্য নই।”
“আচ্ছা আচ্ছা, আমাকে বলতে হবে না। এখন ফিরবেন তো? নাকি কাজ আছে?”
“ফিরব।”
“আমিও ফিরছি, আমার সাথেই চলুন।”
“নো নিড, শুদ্ধ। একা এসেছিলাম, একাই যেতে পারব।”
“আমার সাথে যেতে কি খুব সমস্যা?”
“অবশ্যই সমস্যা। সবটা ভুলে যাচ্ছ?”
“ভুলতেই তো চাইছিলাম, ম্যাম। কিন্তু আপনিই তো বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন।”
“দেখো, এটুকুর জন্য থ্যাংক্স। বাট, আর লাগবে না।”
“ম্যাম, আপনি উইক খুব। আপনাকে এভাবে একা ছাড়তে আমার ভালো লাগবে না।”
“কেন?”
“কারণ—আপনি জানেন না?”
“কোনটা?”
“এ-ই যে, আপনাকে ভালোবাসি।”
“শুদ্ধ, তুমি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছ। তোমার সাথে চাইলেও কম্ফোর্ট জোনে আসতে পারছি না। এরকম কেন করছ?”
“কারণ ম্যাম, আপনি নিজেই চাইছেন না। আমি কি ওসব কিছু বলেছি? শুধু বলেছি, আপনাকে এভাবে একা যেতে দিতে মন চাইছে না। আচ্ছা, আপনিই একটু ভাবুন। আপনি যাকে ভালোবাসেন, সে অসুস্থ থাকলে কি তাকে একা ছাড়তেন?”
“আমি অসুস্থ নই।”
“আচ্ছা, আমাকে দেখে কি আপনার খারাপ ছেলে মনে হয়?”
“না, কেন?”
“তাহলে যেতে সমস্যা কী?”
শুদ্ধর এরকম আরও হাজারটা কথা শুনে শেষমেশ তনুজা রাজি হলো শুদ্ধর সাথে ফিরতে। তবে শর্ত রাখল একটা, ‘পুরোটা পথ শুদ্ধ কোনো কথা বলবে না।’
শুদ্ধ মুচকি হেসে মেনে নিল। আজ সকালেই বলেছিল, দূরে দূরে থাকবে। কিন্তু চেয়েও দূরে দূরে থাকাটা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই তো..
শুদ্ধ বাইকে উঠে, তনুজাকে বলল, “ম্যাম, আসুন।”
প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও, পরে তনুজা নিজেকে সামলে শুদ্ধর বাইকে উঠে বসল। তনুজা মনে করেছিল, শুদ্ধ কেবল তাকে সাথে রাখার জন্য ওই শর্তে রাজি হয়েছে। কিন্তু বোঝেনি, শুদ্ধ সত্যি সত্যিই এমনটা করবে। পুরোটা পথ কোনো কথা বলল না। তনুজাও বলল না। এই যে, সারাদিনের এত ঘটনার ভীড়ে শুদ্ধর এখানটায় এসে তনুজার সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার বিষয়টা মোটেও কাকতালীয় নয়। শুদ্ধ জেনে-বুঝেই তনুজার পিছে এসেছে। এই কথাটা আপাতত তনুজার কাছ থেকে গোপন থাক। গোপন থাক এটা—শুদ্ধ ইতোমধ্যে অনেকটাই জেনে গিয়েছে। আংশিক আজ, বাকিটা ক’দিন আগেই। এখন দেখার বিষয়, শুদ্ধ ব্যাপারটা কীভাবে হ্যান্ডেল করে। তনুজার পিছু ছাড়বে কি? নাকি যে করেই হোক, তনুজাকে নিজের করে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে?
চলবে..