অপ্রেমের একাত্তর দিন
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৬.
কায়সার পরিবারের খাবার টেবিলে বহু বছর ধরে একসঙ্গে বসে সকলের ভোজ হয় না। হবেই বা কিভাবে? ঘরে সদস্য সংখ্যা কেবল তিন। তিনজনই পুরুষ। সকাল সকাল একজন হেল্পিং হ্যান্ড এসে ঘরদোর পরিষ্কার করে কেবল রাতের জন্য তরকারি আর ভাত রান্না করে দিয়ে যায়। দুপুরে যে যার কর্মস্থলে খাওয়া দাওয়া করে নেয়। আর সকালে যে যার সুযোগ সুবিধা মতো ঘর থেকে বের হওয়ার আগে পাউরুটিতে অরেঞ্জ জ্যাম কিংবা নিউটেলা মেখে নাস্তা সেড়ে নেয়। কর্ম ব্যস্ততায় কারো সঙ্গেই কারো রুটিন মিলে না।
আজকের সকালটাও সেরকমই। মনন সম্পূর্ণ রেডি হয়ে এসে নাস্তার টেবিলে বসেছে। আরিফ কায়সার একজন সনামধন্য প্রকৌশল। তিনি ইতিমধ্যে নাস্তা সেড়ে কাজে চলে গিয়েছেন। ফলস্বরূপ আজকের নাস্তাটাও মননের একাই করতে হচ্ছে। সে পাউরুটিতে কামড় বসিয়ে তা চিবুতে চিবুতে অপর হাতে ফোন তুলে নেয়। গণমাধ্যমের সবশেষ আপডেট পেতে প্রবেশ করে ফেসবুক এপে। অলস দৃষ্টি মেলে স্ক্রল করতে করতে আচানক তার আঙ্গুল থেমে যায়। চোখ কুচকে বিড়বিড়িয়ে পড়ে নেয় একটি ইংরেজি ক্যাপশন।
“ When life gives you lemon, make lemonade. Enjoying my sweet & sour era. “
ক্যাপশনের সঙ্গে পোস্টে যুক্ত করা হয়েছে একটি ছবি। ছবিটিতে একজন বয়স্ক লোককে রেস্টুরেন্টে লেবুর শরবতের গ্লাস হাতে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। লোকটি আর কেউ নয় বরং মননের দাদু আলী আকবর কায়সার। লোকটার বয়স হয়েছে তবে মন থেকে এখনো রঙের পরিমাণ কমে নি। প্রায়ই এরকম কচি খোকা সেজে অদ্ভুৎ সব ক্যাপশন দিয়ে নিজের ছবি আপ্লোড দেন তিনি। তা দেখে মনন খুব বিব্রতবোধ করে।
সেই বিব্রতবোধ থেকে সে একবার আলী আকবর কায়সারকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছিলো। দু’দিনের মাঝে সে-ই ঘটনা টের পেতেই বুড়োর সে কি রাগ! খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে গাল ফুলিয়ে বসে ছিলো। তার নাতির কাছে না-কি তার গুরুত্ব কমে গিয়েছে। তা-ই তো নিজের দাদুকে আনফ্রেন্ড করে দেওয়ার মতো এতো নিষ্ঠুর একটা কাজ করতে পারলো মনন!
বহুত কসরত করে সেইবার দাদুর রাগ ভাঙাতে হয়েছিলো মননের। তার কাছে মনে হয় দাদু খুব বড়ো একটা ড্রামাবাজ। কথায় কথায় ড্রামা করে। তবে সে-ই ড্রামা গুলো যে নেহাৎই এই নির্জীব ঘরটাকে উজ্জীবিত করে রাখারই উদ্দেশ্যে তা মনন ভালো করেই জানে। তাই সে-ও চুপচাপ এসব দেখে যায়।
ফোনটা টেবিলে রেখে আবার নাস্তায় মনযোগ দেয় মনন। এমন সময়ই তার ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনের পানে তাকাতেই দেখতে পায় দাদু কল করেছে। মনন খেতে খেতে কলটা রিসিভ করে ফোন কানে ধরতেই অপর পাশ হতে রাগী স্বরটা বলে উঠে,
“ দু ঘন্টা হয়েছে একটা ছবি আপলোড দিয়েছি। তুমি কিংবা তোমার বাপ কেউ এখনো আমার ছবিতে রিয়েক্ট কিংবা কমেন্ট করো নি। করছো টা কি তোমরা? খুব ব্যস্ত? আমি তোমাদের বাপ ছেলের চাকরি নট করে দিবো। তারপর সারাদিন ফুরসত পাবে আমার ছবিতে রিয়েক্ট, কমেন্ট করতে। “
মনন হতাশ গলায় বলে,
“ হয়েছে তোমার নাটক? “
“ আমি খুব সিরিয়াস। মোটেও নাটক করছি না। দ্রুত গিয়ে আমার ছবিতে রিয়েক্ট দাও। লাইক দিলে সোজা ব্লক করে দিবো বলে দিলাম। লাভ রিয়েক্ট দিবে। আর কমেন্টে লিখবে ‘মাই এভারগ্রিন বাডি’। বুঝতে পেরেছো? “
মনন প্রশ্ন করে,
“ তুমি আমার বাডি নও। দাদু হও। আমি বাডি কেনো লিখবো? “
“ এটাই সমস্যা তোমাদের জেনারেশনের। অযথা প্রশ্ন বেশি করো। যা বলা হয়েছে চুপচাপ তা করো। আমাকে আর বিরক্ত করবে না। আমি এখন ঘুমাবো। ঘুম থেকে উঠে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। “
গমগমে স্বরে কথা গুলো বলেই আলী আকবর সাহেব কলটা কেটে দেয়। মনন হতবিহ্বল হয়ে কতক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অত:পর কি ভেবে যেনো ফেসবুকে গিয়ে দাদূর আইডি সার্চ করে। একদম রিসেন্ট করা পোস্টটায় লাভ রিয়েক্টের বদলে লাইক দিয়ে সে অফলাইনে চলে যায়। এবার খুব মজা পাচ্ছে সে। বুড়োটা তাকে ব্লক করুক। হুহ, মননের তাতে কি আসে যায়?
__________
নিজ কেবিনের ওয়াশরুমের সিংকের সামনে একটা টুল টেনে বসে আছে মোহ। নির্বিকার ভঙ্গিতে ফোন চালাচ্ছে সে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মনযোগের সহিত ট্রিমার হাতে মোহর মাথার চুলগুলো উচ্ছেদ করছে সে। মাথার ডান পাশটা ইতিমধ্যে কেশহীন হয়ে গিয়েছে।
চুল কাটার মাঝে মায়া আড়চোখে বারবার মোহকে দেখছে। মোহকে দেখতে অত্যন্ত স্বাভাবিকই লাগছে। যেনো এসব কিছুতে তার কিছুই আসে যায় না। মায়া নীরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাকি চুল গুলোও কেটে ফেলে।
অত:পর মোহকে বসিয়ে রেখে সে চলে যায় ওয়াশরুমের বাহিরে। এবার মোহ ফোনের স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকায় আয়নার পানে। দেখে নিজেকে, নিজের নতুন রূপকে। অদ্ভুৎ লাগছে সবটা। গলার কাছে যন্ত্রণা নামক কিছু একটার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে সে। চোখ নামিয়ে টুলের নিচে বিছানো সাদা কাপড়টার দিকে তাকায় সে। গত রাতের ব্যথাটা আবার তড়পে উঠলো বুকের ভেতর।
নারীর সৌন্দর্যের ভূষণ হিসেবে গণ্য করা হয় তার কেশকে। বলা যায় একজন নারীর সৌন্দর্যতার পিছনে অনেকক্ষাণি অবদানই তার চুলের। তাইতো পৃথিবীর সকল মেয়েরা চুলের যত্ন এবং পরিচর্যার ব্যাপারে এতো সচেতন! মোহ সবসময় দেখে এসেছে মায়াও নিজের চুলের প্রতি অনেক যত্নশীল। কিন্তু মোহর মাঝে সেরকম কোনো তৎপরতা কখনো দেখা যায় নি। সে বরাবরই অলস কিসিমে’র মানুষ। চুলের যত্ন করার ব্যাপারে সে ছিলো খুব উদাসীন। এই আলসেমির কারণে সে কখনো চুল তেমন একটা বড়ো হতেও দিতো না। পিঠে নামার আগেই তা কেটে কাধের কাছে তুলে ফেলতো।
অথচ সে-ই মোহরই আজ ইচ্ছে করছে চুল হারানোর বেদনায় কেঁদে কেটে দুনিয়া ভাসিয়ে দিতে। কিন্তু সে কাদবে না। সবাই তাহলে জেনে যাবে মোহ দূর্বল। মোহ নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করে হাসির পাত্র হতে নারাজ। তাকে ড্যাম কেয়ার হিসেবে চিনে আসা সকলকে সে কখনোই নিজের দূর্বল রূপটা দেখাতে রাজি না। সে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকায়।
__________
বিকেলের মিঠা আবহাওয়া তখন। মায়া সবেমাত্র বাড়িতে প্রবেশ করেছে। বাড়িটা কেমন জানি! নিষ্প্রাণ, জনমানবশূন্য মনে হয় তার কাছে। বিশাল বাড়িটার সদস্য সংখ্যা কেবল পাঁচ। শিহান ফেরদৌস, মোহ, মায়া, তাদের বৃদ্ধা দাদী এবং একজন আন্টি। শিহানকে ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই দেশের বাহিরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। বাসায় থাকে না বললেই চলে। মোহটাও এখন হসপিটালে। বাসা থেকে আসা যাওয়া করে ট্রিটমেন্ট চালাতে ইচ্ছুক নয় সে। বাকি রইলো মায়ার দাদী। বৃদ্ধা শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবন পাড় করছেন। ব্রেইনের একটা অপারেশনের পর থেকেই উনার পুরো শরীরটা প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে। বেঁচে তো আছে, তবে তা মৃত্যুর সমতূল্য। মায়ার দাদীর দেখাশোনার জন্য একজন আন্টি সার্বক্ষণিক তার পাশে থাকে। বাসার রান্নাসহ যাবতীয় কাজ গুলোও তিনিই করেন। বিনিময়ে যে-ই মোটা অংকের বেতন পায় তা গ্রামে নিজের পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দেন।
মায়া বাসায় ফিরতেই শায়লা আন্টি এসে জিজ্ঞেস করে,
“ মোহর কি অবস্থা মা? “
মায়া উদাস গলায় জবাব দেয়,
“ আছে, খারাপ না। “
“ ওকে এভাবে একা হসপিটালে রেখে আসাটা কি ঠিক? আমি হসপিটালে গিয়ে ওর সাথে থাকি? “
“ বাদ দাও আন্টি। অযথা রাগারাগি করবে। ভাববে আমরা সবাই মিলে ওর বেবি সিটার হতে চাইছি। তুমি বরং দাদুর কাছেই থাকো। আমি আগামীকাল পরীক্ষা শেষে হসপিটাল যাবো৷ “
কথাটুকু বলে নিজের রুমে প্রবেশ করতে নিয়েও থেমে যায় মায়া। কি মনে করে যেনো বলে,
“ আন্টি, কালকে একটু হালকা মশলা দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে একটু দেশি মুরগী রান্না করবে? দুপুরে তাহলে আমি হসপিটালে যাওয়ার সময় মোহর জন্য নিয়ে যেতাম। ওর ডায়েট চার্টে পনেরো দিনে একবার দেশি মুরগী খাওয়ার অনুমতি দেওয়া আছে। হসপিটালের শাক সবজি বেচারি বাধ্য হয়ে গিলছে। “
শায়লা কিছুক্ষণ মায়াকে দেখে হেসে বলে,
“ তুমি একদম তোমার মা’য়ের মতো হয়েছো। তোমার মা-ও এরকম ছিলো। লক্ষী, বুঝদার, সংসারী। “
মায়া মিষ্টি করে হাসে। এ-ই কথাটা সে প্রায় অনেকের কাছেই শুনেছে। বাবাও একবার অজান্তে তাকে বলে ফেলেছিলো,
“ তুমি একদম বিথীর মতো হয়েছো। “
মায়ার তখন বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো,
“ আর মোহ একদম তোমার মতো হয়েছে বাবা। অশান্ত, একরোখা, জেদি। “
__________
গোধূলি লগ্নের সূচনা ক্ষণ তখন। মোহ সোফায় পা ভাজ করে ডায়েরি হাতে বসে। গভীর মনযোগ দিয়ে হাতের সাহায্যে ডায়েরির পাতায় কিছু একটা লিখছে সে। খাবারের টেবিলটায় কিছুক্ষণ আগে একজন স্টাফ এসে সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে ধোঁয়া উঠা গরম একটা ডালের স্যুপের বাটি রেখে দিয়ে গিয়েছে। মোহর মাঝে সেটা ছুঁয়ে দেখারও কোনো লক্ষ্মণ নেই। সে আপন কাজে মগ্ন।
হঠাৎ কিঞ্চিৎ শব্দ তুলে কেবিনের দরজা খুলে যেতেই মোহ চোখ তুলে তাকায়। নার্সকে দেখে দ্রুত ডায়েরিটা রেখে সোজা হয়ে বসে সে। নার্স মোহকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ হেই হিরোইন, নতুন লুকে সুন্দর লাগছে তোমাকে। “
মোহ প্রশংসাসূচক বাক্যটা খুব একটা গায়ে মাখে না। সে জানে তাকে দেখতে কেমন দেখাচ্ছে। তা-ই সে অন্যের অযথা কম্পলিমেন্টে বিশ্বাস করতে আগ্রহী নয়। উক্ত নার্স টেবিলে স্যুপের বাটি দেখে চিন্তিত গলায় বলে,
“ এখনো খাও নি কেনো? পছন্দ হয় নি? অন্য কোনো নাস্তা দিতে বলবো তোমাকে? “
মোহ অনাগ্রহ দেখিয়ে বলে,
“ খেতে ইচ্ছে করছে না। অযথা জোর করবেন না। খাবার নিয়ে আমাকে জোরাজুরি করলে আমার বমি হয়। “
নার্সটা এগিয়ে আসতে নিলেই মোহ বলে,
“ ট্রে হাতে এসেছেন। কি আছে ট্রে তে? কোনো মেডিসিন ইঞ্জেক্ট করবেন? “
“ না, না। মেডিসিন না। ব্লাড নিতে এসেছি। সিবিসি টেস্টের জন্য। “
মোহ চুপচাপ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বসে থাকে। নার্স এসে তার পাশে বসে ট্রে-টা রাখে। মোহর হাতটা ধরে নাড়াচাড়া করে কিছুক্ষণ রক্ত নেওয়ার জন্য একটা রগ খুঁজে। কিন্তু মোহর হাতে কোনো রগই স্পষ্ট ভেসে নেই। বহু কসরত করে যা একটা স্পষ্ট রগ পায়, সেটাতো সুঁই প্রবেশ করিয়ে দেখে কোনো রক্ত আসছে না। নার্সটা হতাশ গলায় বলে,
“ ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করো না, তাই না? কোনো রগই তো খুঁজে পাচ্ছি না। আমি আবার পরে আসবো ব্লাড নিতে। তুমি ভালো করে খাওয়া দাওয়া করো আর প্রচুর পানি খাও। রগ না পেলে কিন্তু অসুবিধা। “
বলেই নার্সটা ট্রে হাতে বেরিয়ে যায়। মোহ নিশ্চুপ কিছুক্ষণ নিজের দুই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই দুই হাতের উপর দিয়ে বিগত দিন গুলোয় কি নির্মমতা কেটেছে তা একমাত্র মোহই ভালো জানে। কখনো ইঞ্জেকশন, কখনো ব্লাড টেস্ট, কখনো কেমো। সুঁইয়ের খোঁচায় খোঁচায় তার দুই হাত ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই হাতে কি-না তারা দৃশ্যমান রগ খুঁজে বেরায়। ভ্যাম্পায়ারের দল কোথাকার!
__________
দীর্ঘ দিনের ডিউটির অবসান ঘটে রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে। মনন ক্লান্ত ভঙ্গিতে হসপিটাল থেকে বেরিয়েছে কেবল। পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে সোজা নিজের নীল রঙা গাড়িটায় উঠে বসে। স্টিয়ারিং এ হাত রাখতেই তার মনে হয় সে হয়তো কিছু একটা ভুলে যাচ্ছে। কি ভুলে যাচ্ছে?
মনন মনে করার চেষ্টা করে। উঁহু। মনে পড়ছে না। সব কাজই তো সে মিটিয়ে এসেছে আজকের জন্য। মনন ধরে নেয় হয়তো ক্লান্তির কারণে তার এমন মনে হচ্ছে। সে আর কিছু না ভেবে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুদূর যেতেই আটকা পড়ে ঢাকা শহরের সেই চিরচেনা জ্যামে। সকল যানবাহন যখন জ্যামে আটকে আছে, সেই দূর্বিষহ সময়টায় কিছু পথ বিক্রেতারা বিভিন্ন কিছু নিয়ে প্রত্যেক গাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর শুরু করে বিক্রির উদ্দেশ্যে।
মনন বসে নিজের ফোন ঘাটছিলো তখন। আচমকা তার গাড়ির জানালায় মৃদু আওয়াজ পেতেই সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দেখতে পায় একটা পথ শিশুকে। বেলী ফুলের মালা বিক্রি করছে। মননের ফুলের মালা দেওয়ার কোনো মানুষ নেই। তবুও সে একটা ফুলের মালা কিনে নেয়। বাচ্চাটার হাতে চকচকা একটা একশো টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে জানালার কাঁচটা তুলে দেয় সে। বদ্ধ গাড়ির ভেতরটা মুহুর্তেই বেলী ফুলের মোহনীয় সুঘ্রাণে ভরে যায়। ফোন চালাতে ব্যস্ত মনন সেই সুঘ্রাণ টের পেতেই আচমকা তার মনে পড়ে যায় ভুলে যাওয়া ব্যাপারটা। চট করে সে উচ্চারণ করে,
“ মোহ। “
ওই মেয়েটা, ছাদে আছে নিশ্চয়ই? মননের অপেক্ষা করছে? মনন তো এই সময়টাই জানিয়েছিলো। মনন নিশ্চিত নয় মোহ আসলেই ছাদে আছে কি-না কিংবা মোহর অপেক্ষা করছে কি-না। অনিশ্চিত সে কোনোকিছু না ভেবেই বহু কসরত করে দ্রুত গাড়ি ঘুরায়।
চলবে…