অপ্রেমের একাত্তর দিন
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৫.
আকাশটা আরো একবার গর্জন করে উঠতেই মননের হুশ ফিরে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আবহাওয়ার আন্দাজ করে। দমকা হাওয়া ও বজ্রধ্বনি জানান দিচ্ছে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে। মনন ফের মোহর দিকে তাকায়। এখনো জবাবের অপেক্ষায় তার দিকে তাকিয়ে আছে সে। মনন কোনো জবাব দেয় না। বরং বেশ সূক্ষ্ণ ভাবে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়ে বলে,
“ বৃষ্টি শুরু হবে। দ্রুত চলুন। বৃষ্টিতে ভেজা আপনার জন্য ঠিক নয়। “
নিজের করা প্রশ্নের কোনো জবাব মিলবে না বুঝতে পেরে মোহ দৃষ্টি নামায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবে বসে রয়। আবারও তার চোখ গড়িয়ে জল পরে। ভেতরটা হাসফাস করছে তার। মনন বুঝে তা। নিজের পকেট হাতড়ে একটা পরিষ্কার রুমাল বের করে। রুমালটা মূলত সে নিজের চশমার ফ্রেম মুছতে ব্যবহার করে প্রায়ই। মনন মার্জিত ভঙ্গিতে ছাদের মেঝেতে পড়ে থাকা কালো কেশগুচ্ছ নিজের রুমালে তুলে নেয়। মোহর হাতের মুঠোয়ও বেশ খানিক চুল ছিলো। মনন নিজেই সেগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে রুমালে তুলে রাখে। অত:পর রুমালটা ভাজ করে বেঁধে মোহর কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ রেখে দিন। “
মোহ একবার রুমালটা দেখে। অত:পর মলিন গলায় বলে,
“ এগুলো দিয়ে কি করবো? ফেলে দিন। ঝরে যাওয়া জিনিসের কোনো মূল্য নেই। “
মনন আর জোর করে না। বরং রুমালটা নিজের পকেটে ভরে বলে,
“ আচ্ছা। ফেলে দিবো। এখন প্লিজ চলুন। আপনার ফ্যামিলি কোথায়? তাদের ইনফর্ম করে ছাদে এসেছেন? “
মোহ জবাব দেয় না। নির্লিপ্ত রয়। তার মাঝে কোনো হেলদোল না দেখে এবার মনন বাধ্য হয়ে তার বাম হাত ধরে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে দেয়। তার খেয়াল ছিলো মোহর ডান হাতে ক্যানেলা লাগানো দেখেছিল সে, আবার সেই হাতেই ওদিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। তাই ইচ্ছাকৃতভাবেই বাম হাত ধরেছে সে। তবে তা-ও বেশ আলতো ভাবে।
মোহ বিরক্ত হয়। একটু কি শান্তিতে দুঃখবিলাসও তার কপালে নেই? মোহর বিরক্তি বুঝতে পেরে মনন নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। ব্যস্ত গলায় বলে,
“ এখন ফিরে যান। প্রতিদিন না-হয় ছাদে এসে আধ ঘন্টা কেঁদে দুঃখবিলাস করবেন। এখন অযথা বৃষ্টিতে ভিজে নিজের কেসটা আর জটিল করবেন না। “
মোহ প্রশ্ন করে বসে,
“ আপনি ছাদে থাকবেন? “
মনন অবাক হয়। পরপর পাল্টা প্রশ্ন করে,
“ আপনি চান আপনার দুঃখবিলাসের সময়টায় আমি ছাদে থাকি? আমার সামনে কান্নাকাটি করবেন? আপনার ইমেজ, প্রেস্টিজ চলে যাবে না? না-কি সেটা শুধু নিজের পরিবারের সামনেই ধরে রাখাটা জরুরী? “
মোহ জবাব দেয় না কোনো। তার মুখ ফস্কে প্রশ্নটা বেরিয়ে গিয়েছে। লোকটা কি ভাবছে? মোহ তার ব্যাপারে কিংবা তার সান্নিধ্যের প্রতি আগ্রহী? উহু। মোটেও না। মোহ কথা না বাড়িয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়। মনন তার পিছু আসতে আসতে বলে,
“ রাত আটটা কিংবা সাড়ে আটটা পর্যন্ত আমার ডিউটি থাকে। ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার আগে ছাদে আসি কিছু সময়ের জন্য। রাতের মুক্ত আকাশ বাতাস দুটোই সারাদিনের স্ট্রেস রিলিফের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। “
মোহ শুনে সবটা। কোনো প্রতুত্তর না করে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। মননও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে লিফটের অপেক্ষা করে। মনে মনে ভেবে রেখেছে মোহকে একদম তার কেবিন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তারপর বাসায় ফিরবে। দশ তলায় এসে লিফট থামতেই মোহ লিফট থেকে নেমে যায়। মননও নামে তার পিছু পিছু। মোহ পা থামিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
“ আপনি আমার পিছু পিছু আসছেন কেন? “
“ আপনার পিছু পিছু আসছি কেনো মনে হলো? আমার পেশেন্ট এডমিট আছে এই ফ্লোরে। ওদের সাথে দেখা করতেও আসতে পারি। “
মোহ কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই একটা নারী স্বর চেঁচিয়ে উঠে,
“ মোহ! “
মোহ আর মনন সঙ্গে সঙ্গে পাশ ফিরে তাকায়। বিদ্যুৎ বেগে একটা মেয়ে ছুটে এসে মোহকে জড়িয়ে ধরে। উদ্বেগ মিশ্রিত স্বরে বলতে থাকে,
“ কোথায় গিয়েছিলি তুই না বলে? ফোনও সাথে করে নিস নি। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে টেনশন দিয়ে কি মজা পাস তুই? আমি এতক্ষণ ধরে খুঁজে তোকে না পেয়ে বাবাকেও কল করে ইনফর্ম করে দিয়েছি। “
মনন বিস্মিত নয়নে দেখছে মোহকে জড়িয়ে ধরে রাখা মেয়েটাকে। সালোয়ার কামিজ পরিহিত মার্জিত ধরনের মেয়েটি দেখতে অবিকল প্রায় মোহর মতো। একই নাক, একই চোখ। উপরওয়ালা যেনো একই চেহারার আরেকটা মানুষকে কপি পেস্ট করে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মনন অবাক নয়নে ফের মোহর দিকে তাকায়। কিছু কি পার্থক্য আছে দু’জনের মাঝে? হ্যাঁ আছে। মোহর চুল গুলো খুব একটা লম্বা নয়। কাঁধের কিছুটা নিচ সমান। কিন্তু মোহ রূপী মেয়েটার চুলগুলো তুলনামূলক আরেকটু লম্বা। পিঠ সমান প্রায়।
মোহ বিরক্তি নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে,
“ অনেক উপকার করেছিস। আমি কি মরে গিয়েছি? বাবাকে ইনফর্ম করতে কে বলসে তোকে? “
সামনের মেয়েটা কিছু বলবে তার আগেই সে মননকে খেয়াল করে। অবাক নয়নে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে। মনে পড়তেই বলে,
“ আপনি ওই পাগল ছাগল লোকটা না? ওই যে ক্যান্টিনে আমাকে অযথা জ্ঞান দিয়ে গিয়েছিলেন? “
মোহ অবাক গলায় বলে,
“ এটাই ওই লোক? তোকে খাবার নিয়ে জ্ঞান ঝেড়েছিল যে? “
“ হ্যাঁ। আমি পুরোই বলদ হয়েছিলাম। তুই এই লোককে কিভাবে চিনিস? “
“ আরে এই লোক বাচ্চাদের ডক্টর। মানে পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টের অনকোলজিস্ট। উনার নাম ডক্টর মরণ… থুক্কু মদন। ধ্যাৎ! কি যেনো নাম? এই আপনার নামটা যেনো কি? “
মনন এতক্ষণে নীরবে সবটা শুনছিলো। কি সুন্দর তাকে কখনো পাগল ছাগল বলছে, তো কখনো মরণ মদন। রাগে মননের গা জ্বলছে। নাম বিকৃত জিনিসটা তার খুব অপছন্দের। কোন কুক্ষণে যে সে মোহকে নিজের আসল নাম ছেড়ে নিজের ডাকনাম বলেছিল! মনন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ ডক্টর ওয়াসিফ কায়সার মনন। আপনারা বরং আমাকে ডক্টর ওয়াসিফই বলুন। “
কথাটুকু উচ্চারণ করে মনন সোজা অপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,
“ আই এম এক্সট্রিমলি সরি। আমি ওদিন আপনাকে দেখে মোহ ভেবেছিলাম। তাই ওসব বলেছিলাম। সরি ফর দ্যাট এগেইন। “
মেয়েটি বোকার মতো প্রশ্ন করে,
“ আপনি মোহকে কিভাবে চিনেন? আপনি না পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টের? মোহ তো বাচ্চা না! “
মোহ মেয়েটিকে থামিয়ে দিয়ে মননকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ এটা আমার ছোট বোন মায়া। বয়সেও পাঁচ মিনিটের ছোট, বুদ্ধিতেও ছোট। আমার মতো এতো স্মার্ট না। “
মনন অনুভব করে তার মাথা সামান্য ব্যথা করছে। এখানে থাকলে তার মাথা ব্যথা কমার বদলে উল্টো আরো বেড়ে যাবে। তাই সে দ্রুত তাড়া দেখিয়ে বলে,
“ আমার কাজ আছে। পরে দেখা হবে। টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফেজ। “
__________
মলিন মুখ করে কাঁচের জানালাটার কাছে বসে আছে মোহ। দৃষ্টি বৃষ্টিস্নাত শহরের পানে নিবদ্ধ। সোফায় বসে ভিডিও কলে শিহান ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত মায়া। কথাগুলো স্পষ্ট মোহর কানে ভেসে আসছে। শিহান রাগী গলায় শুধায়,
“ কোথায় ও? ওকে ফোনটা দাও। আমি ওর সাথে কথা বলবো। “
মায়া চাপা স্বরে বলে,
“ রেগে আছো অযথা। এখন ওর সাথে কথা বলার জায়গায় উল্টো ধমকা ধমকি করবে তুমি। রাগ কমলে কল দিও। “
শিহান ফেরদৌস বলে,
“ রেগে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? ও না জানিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যাবে কেনো? ও কি কোনো বাচ্চা? চব্বিশ ঘণ্টা ওর আগে পিছে সবাইকে বেবি সিটিং করে বেড়াতে হবে সবার? “
মায়া নিজেও এবার রেগে যায়। রাগী গলায় বলে,
“ আমার তোমাকে কল করে জানানোটা ভুল হয়েছে। আর কল করবো না আমি। আমার বোনের জন্য আমি যথেষ্ট। তুমি তো অলরেডি আমাদের প্রয়োজনীয় খরচ প্রোভাইড করছো। এর থেকে বেশি কিছু এক্সপেক্ট করাটা আমাদের জন্য বোকামি। “
কথাটা বলেই মায়া কল কেটে দেয়। রাগে তার শরীর মৃদু কাঁপছে। মনে মনে বাবার প্রতি তীব্র ক্ষোভ পুষে রেখেছে সে। মা’য়ের খুব অভাব বোধ করছে। তাদের মা থাকলে নিশ্চয়ই আজ মোহর এই কঠিন সময়টায় মোহকে খুব আগলে রাখতো? মায়া চেষ্টা করে। ছোট হওয়া সত্ত্বেও মা-বাবার মতো মোহকে আগলে রাখার চেষ্টা করে। যদিও মোহ এতে বিরক্ত হয়, রাগ দেখায়। তবুও মায়া নিজের জায়গায় অনড় রয়।
ফোন রেখে চোখ তুলে মোহর দিকে তাকায় মায়া। প্রশ্ন করে,
“ এই? মুভি দেখবি? “
মোহ না তাকিয়ে উত্তর দেয়,
“ পরীক্ষা না চলে তোর? বাসায় যাস না কেন? পরীক্ষায় ফেল করে যাতে আমার নাম নিয়ে বেঁচে যেতে পারিস? “
“ আমার পরীক্ষা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। আগামীকাল কোনো পরীক্ষা নেই। তাই চিল মুডে এখন আমরা মুভি দেখতে পারবো। কোনটা দেখবি বল। ল্যাপটপে ডাউনলোড দেই আমি। “
“ বেবিজ ডে আউট দেখা যায়। “
মায়া ল্যাপটপ নিয়ে বসে মুভি ডাউনলোড দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। মোহ আচমকা বলে উঠে,
“ আন্টিকে বলিস কালকে কাউকে দিয়ে ট্রিমার পাঠিয়ে দিতে। “
মায়া চমকায়। পরপর প্রশ্ন করে,
“ চুল কেটে ফেলবি? “
“ ধরে রাখার উপায় তো দেখছি না। “
মায়া কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে মোহকে দেখে। পরক্ষণে ল্যাপটপ সহ অন্যদিকে ঘুরে বসে। চোখ টলমল করছে তার। সে জানে মোহ যতটা সহজে কথাটা বলেছে, ততটা সহজ নয় সবকিছু। তার বোনের মাঝে কি ঝড় চলছে তা কিছুটা হলেও টের পাচ্ছে মায়া।
__________
সদ্য বাসায় ফিরেছে মনন। ক্লান্ত ভঙ্গিতে রুমে প্রবেশ করে পকেট হতে ফোন, ওয়ালেট বের করতে থাকে সে। এক এক করে সব বের করে রাখতেই তার খেয়াল হয় রুমালটার কথা। রুমালটা বের করে হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকে সে। বুঝতে পারছে না কি করা উচিত। বলেছিলো তো ফেলে দিবে সে। কিন্তু কেন যেনো ইচ্ছে করছে না।
অতর্কিত বৃষ্টির পানে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে মনন। রুমালের ভাজটা আর খুলে না। বরং সে-ই অবস্থাতেই টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। সোজা চলে যায় গোসল করতে। গোসল সেড়ে বের হতেই দেখতে পায় তার টেবিলের উপর ধোঁয়া উঠা এক কাপ গরম কফি রাখা। মনন বুঝতে পারে কাজটা আর কারো নয় বরং তার আব্বু আরিফ কায়সারের।
মনন ভেজা চুল মুছে কফির কাপ হাতে বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। খোলা দরজা দিয়ে বৃষ্টি ছিটে আসছে। মনন মনযোগ দিয়ে তা দেখছে। বৃষ্টির ঝমঝম ধ্বনি চিরে আচমকা একটা করুণ স্বর তার কানে ভেসে আসে।
“ আপনার কি মনে হয় ডক্টর? আমি বাঁচবো? রিপোর্টের সার্ভাইভাল রেট জানতে চাচ্ছি না, আপনার কি মনে হয় তা জানতে চাচ্ছি। “
মনন অবাক হয়। মনে পড়ে যায় মোহর জিজ্ঞেস করা প্রশ্নের কথা। যে-ই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারে নি সে। কি ভেবে যেনো মনন দ্রুত নিজের টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। কফি মগটা হাত থেকে রেখে ল্যাপটপ খুলে বসে চেয়ারে। হসপিটালের ওয়েবসাইটে লগইন করে পেশেন্ট ডিটেইলস সাইটে চলে যায় সে। পেশেন্টের ফাইল নম্বর জরুরী তার হোম পেজে যেতে। মনন মনে করার চেষ্টা করে। কি ছিলো মোহর ফাইল নম্বর? বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর তার মনে পড়ে।
কি বোর্ড চেপে টাইপ করে সি আর সিক্স জিরো নাইন সেভেন। মোহর সম্পূর্ণ ডিটেইলস স্ক্রিনে ভেসে উঠে। মনন মনযোগ দিয়ে পুরোটা স্ক্রিনে চোখ বুলায়। মেহনামা ফেরদৌস মোহ। বয়স সতেরো বছর এগারো মাস। পিতার নাম শিহান ফেরদৌস। মাতার নাম বিথী আফরোজ।
মনন এবার কিছুটা নিচে গিয়ে রিপোর্টসে ক্লিক করে। সঙ্গে সঙ্গে মোহর সকল রিপোর্ট ক্রমানুসারে স্ক্রিনে ভেসে উঠে। মনন মনযোগ দিয়ে এক এক করে সবগুলো রিপোর্টস দেখে। বিশেষ করে এফএনএসি এবং বায়োপসি টেস্টের রিপোর্ট। জেনে নেয় ফিমার অস্থিতে বেড়ে উঠা টিউমারের আকার এবং আকৃতি সম্পর্কে।
টিউমারের অবস্থা অনুযায়ী রেকমেন্ডেশনে লেখা আছে যে কেমোথেরাপির মাধ্যমে আগে টিউমারটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। তারপর ডক্টররা মোহর পায়ে সার্জারি পারফর্ম করবে। উক্ত সার্জারিতে ফিমার নামক হাড়টা কেটে সেখানে ইম্পল্যান্টও প্রতিস্থাপন করা হতে পারে। তবে থার্ড স্টেজ হওয়ায় সার্জারি সফল হওয়ার চান্স খুব একটা হাই না। আর সৌভাগ্যক্রমে সার্জারি সফল হলে তাহলে বাকি চিকিৎসাটা কেমো এবং রেডিওথেরাপির মাধ্যমে বহাল থাকবে।
মনন নির্বিকার ভঙ্গিতে ল্যাপটপের মনিটর নামিয়ে ফেলে। এতক্ষণ শরীরে কাজ করা সতেজতাটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো তার। প্রশস্ত বুকটা ক্লান্তিতে উঠানামা করছে। চোখ আর মাথাও ব্যথা করছে। মনন আলতো হাতে চোখের চশমাটা খুলে ফেলে। ক্লান্ত মাথাটা পিছন দিকে এলিয়ে দেয়। মনে প্রশ্ন জাগে। মোহ কি জানে সবটা? প্রশ্নটা মস্তিষ্কে উদয় হতেই বদ্ধ চোখের সামনে মোহর কান্নারত মুখটা ভেসে উঠে। চুল হারানোর যন্ত্রণায় যেই মেয়ে এতটা কাতর, সে নিজের শরীরের একটা আস্ত হাড় হারিয়ে শক্ত থাকতে পারবে তো? নাকি বিষাদ সাগরে হারিয়ে যাবে?
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]