অপ্রেমের একাত্তর দিন
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৪.
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আজ সকাল থেকে। আবহাওয়াটায় কেমন শীতল ভাব বিরাজ করছে। গরম কফির মগে চুমুক দিয়ে পরবর্তী পেশেন্টের জন্য অপেক্ষা করছে মনন। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাত বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে নিজের মা বাবা সহ কেবিনে প্রবেশ করে। বাচ্চাটাকে দেখতেই মননের ঠোঁটের কোণে প্রসস্থ হাসি ফুঁটে উঠে। এক গাল হেসে শুধায়,
“ হ্যালো আয়েশা! কেমন আছো তুমি? “
আয়েশা নিজের মা বাবার সঙ্গে মননের মুখোমুখি বসে প্রফুল্ল গলায় বলে,
“ অনেক ভালো। “
মনন হাসি মুখে বাচ্চাটাকে একবার ভালো করে দেখে নেয়। তার পোস্ট গ্রেজুয়েট লাইফের প্রথম পেশেন্ট এই মেয়েটা। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে মেয়েটার ট্রিটমেন্ট চলেছে। পুরোটা জার্নি মনন নিজ চোখে দেখেছে। আজ যখন বাচ্চা মেয়েটা নিজের ভয়ংকর রোগটাকে হারিয়ে দিয়ে বিজয়িনীর বেশে তার সামনে এসে হাজির হয়েছে তখন গর্বে মননের নিজের বুকেই প্রশান্তির হাওয়া বইছে। সে শেষবারের মতো আয়েশার সকল রিপোর্ট গুলো দেখে নিয়ে বলে,
“ কংগ্রেচুলেশন। আয়েশা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আর কোনো ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই। রিপোর্ট গুলো আমি স্যারকে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছিলাম। উনি লিভ দেওয়ার এপ্রুভাল দিয়েছেন। “
আয়েশার বাবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“ এখন আর কোনো রিস্ক নেই তো, ডক্টর? “
মনন চশমাটা ঠিক করে বলে,
“ রিস্ক তো সবসময়ই থেকে যাবে স্যার। এজন্যই আয়েশার লাইফস্টাইলটা বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ওর ডায়েট চার্টটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ব্যাপারে সবসময় কড়া নজর রাখতে হবে। তাছাড়া ওকে সবসময় একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখাটাও জরুরী। ও সুস্থ হয়েছে, তবে ওর ইমিউনিটি সিস্টেম এখনো খুব দূর্বল। কেমোতে শুধুমাত্র আক্রান্ত কোষগুলো ধ্বংস হয় না। পাশাপাশি সুস্থ কোষও বিলীন হয়ে যায়। সেই সেল গুলো রিডেভেলোপ হতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। আর ওকে রেগুলার ফলোআপের মাঝে থাকতে হবে। জাস্ট টু মেক শিওর যে রোগটাকে যেনো আমরা মনিটরিং এর উপর রাখতে পারি। ট্রিটমেন্ট শেষে প্রথম ৫ বছর কিন্তু খুব সেন্সিটিভ একটা পিরিয়ড। এই সময়ের মাঝে রোগটার কামব্যাক করার হাই চান্স থাকে। আশা করি বুঝতে পারছেন। “
আয়েশার মা বাবার কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। কি অদ্ভুৎ একটা রোগ! সুস্থ হয়েও একটা মানুষ পুরোপুরি আশংকা মুক্ত হতে পারে না। আবার তার ফিরে আসার ভয় মনে পুষে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। মনন তাদের আশ্বস্ত করে বলে,
“ আয়েশা তো খুব ব্রেভ গার্ল। আপনারা চিন্তা করবেন না। ও সবসময় নিয়ম গুলো মেনে চলবে। তাই না আয়েশা? “
আয়েশা হেসে বলে,
“ হ্যাঁ। আমার তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে এখন। আমার অসুবিধা নেই। “
মনন হেসে কম্পিউটার স্ক্রিনে দৃষ্টি স্থির করে দ্রুত হাতে কি বোর্ড ইউজ করতে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সম্পাদন করে আয়েশার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ হসপিটাল থেকে লিভ লেটার আমি লিখে দিয়েছি। আপনারা বাহিরে ওপিডি ডেস্ক থেকে লেটারটা কালেক্ট করে নিবেন। উনারা বলে দিবে কত নাম্বার রুম থেকে সিগনেচার নিতে হবে। “
বেরিয়ে যাওয়ার আগে আয়েশা দ্রুত নিজের হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা মননের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ এটা আপনার জন্য ডক্টর। “
মনন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ এটা কি? “
আয়েশা কিছু না বলে হাসে। মনন ব্যাগ খুলতেই ভেতর থেকে একটা ফ্রেম করা বিভিন্ন রঙের সাহায্যে আঁকা থ্যাঙ্কিউ কার্ড বেরিয়ে আসে। সেই সঙ্গে এক বক্স চকলেট। আয়েশার মা বলে উঠে,
“ আয়েশা আপনাকে থ্যাঙ্কিউ বলতে চাইছিলো। তাই নিজ হাতে আপনার জন্য এই ড্রয়িংটা করেছে। “
মনন হেসে হাত বাড়িয়ে আয়েশাকে কাছে ডাকে। আয়েশা দৌড়ে তার কাছে আসতেই মনন ছোট বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ তুমি অলয়েজ আমার কাছে স্পেশাল থাকবে। ইউ নো দ্যাট? “
আয়েশা হেসে বলে,
“ আপনিও আমার কাছে স্পেশাল থাকবেন। আমিও বড়ো হয়ে আপনার মতো ডক্টর হবো। অনকোলজিস্ট হবো। “
“ ইন শা আল্লাহ। “
__________
মোহর প্রথম সাইকেল কেমোটা ছিলো ৫ দিনের। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লম্বা সময় ধরে কেমোর ডোজ নিতে হয়েছে তার। ব্যাপারটা মোহর কাছে বিরক্তিকর হলেও সে তা খুব একটা প্রকাশ করে নি। এই পাঁচ দিন এক চাপে হাতে ক্যানেলা পড়ে থাকাটাও খুব বিরক্তিকর লেগেছে তার কাছে। রাতে ঘুমের মাঝে বারবার ক্যানেলার দিকে খেয়াল রাখতে হতো। ভুল করে ক্যানেলায় চাপ পড়লেই সুঁইয়ে লেগে হাত কেটে যাওয়ার আশংকা তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এক প্রকার। তার উপর হসপিটাল বেডটায় ঘুমাতেও খুব অস্বস্তি লাগে তার।
ওই ডক্টরটা, কি যেনো নাম? মোহ মনে করার চেষ্টা করে। তবে মরণ কিংবা মদন ব্যতীত অন্য কোনো শব্দ তার মনে পড়ে না। ওই ডক্টরটা ওদিন তাকে গ্রাফিলের ডোজ দিয়ে যাওয়ার পর সেদিন রাতে কি ভয়ংকর জ্বর এসেছিলো মোহর! সারারাত জ্বরে কাতরেছে সে। যদিও নার্সরা খুব ভালো খেয়াল রেখেছে তার। তবে আপন কারো সান্নিধ্য খুঁজছিলো তার অবচেতন মন। মোহ জানে সকলের পরিস্থিতি। বুঝতে পারে সে সব। তাই তো এই ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করে না সে। উল্টো ট্রিটমেন্ট চলাকালীন পুরোটা সময় নিজের মনের বিরুদ্ধেও হসপিটালে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেনো কারো অযথা তাকে নিয়ে কষ্ট না করতে হয়।
সদ্য ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়ে এসবই ভাবছিলো মোহ। আজ সারা বিকেল ও সন্ধ্যা ঘুমিয়ে এই রাত নয়টার দিকে ঘুম ভেঙেছে তার। বেডের ডান পাশে বিশাল দেয়াল জুড়ে কাঁচের জানালাটা দিয়ে বাহিরের শহরটা দেখছে সে। কানে ভেসে আসছে ওয়াশরুম থেকে আগত পানির শব্দ। ওই মেয়ে এখনো বাসায় ফিরে নি? আজও হসপিটাল থাকবে না-কি?
মোহর তেষ্টা পায়। সে পানি খাওয়ার জন্য আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। ঘাড় ঘুরিয়ে বেড সাইড টেবিল হতে পানির বোতলটা নিতে নিলেই তার দৃষ্টি আটকায় আচমকা সফেদ রঙা বালিশের দিকে। মোহ বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ বালিশের দিকে তাকিয়ে রয়। পরপর দ্রুত পায়ে বেড ছেড়ে নেমে কাবার্ডের সাথে সংযুক্ত আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। দৃষ্টিতে পরিবর্তন আসে তার। বিস্ময়তা উবে গিয়ে মলিন ভাব উদয় হয়। মন চায় আয়নাটা ভেঙে ফেলতে। কিন্তু সে সেরকম কিছুই করে না। উল্টো এই আয়না থেকে দূরে পালাতে ওই অবস্থায়ই কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে।
__________
পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টের সকল অনকোলজিস্টদের আজ রাত ৭ টা ৩০ থেকে একটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দুই ঘন্টার এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে হসপিটালের অডিটোরিয়ামে। সেমিনার শেষ করে কেবল মাত্র বেরিয়েছে মনন। ক্লান্ত মস্তিষ্কটা কিছুক্ষণ মুক্ত আবহাওয়ার সান্নিধ্য চাইছে। তা-ই আর কেবিনের দিকে পা না বাড়িয়ে মনন সোজা লিফটে করে ১৪ তম তলায় চলে যায়। ১৪ তলায় পৌঁছে বাকি একটা ফ্লোর সে ইমারজেন্সি সিঁড়ি ধরে পায়ে হেঁটেই উঠে।
ছাদের দরজার কাছাকাছি যেতেই মনন অবাক হয়। ছাদের দরজা খোলা। কিন্তু সে ব্যতীত তেমন কেউ একটা তো কখনো ছাদের এদিকে আসে না। তাহলে? সিকিউরিটির কেউ এসেছে নাকি? মনে প্রশ্ন নিয়েই মনন ছাদে পা রাখে। সঙ্গে সঙ্গে তার কানে ভেসে আসে কারো ফোপাঁনোর শব্দ। কেউ কাঁদছে? মনন অপ্রত্যাশিত শব্দের উৎস খুঁজতে ছাদের বাম দিকে পা বাড়ায়। আলো আঁধারের মিলনমেলায় একটা নারী ছায়ামূর্তিকে সে ছাদের এককোণে বসে থাকতে দেখে। হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদছে। কান্নার দমকে তার পুরো শরীরটাও মৃদু কাঁপছে।
মনন বুঝতে পারে না তার কি করা উচিত। এগিয়ে গিয়ে মানুষটাকে শান্তনা দেওয়া উচিত? নাকি তার প্রাইভেসির প্রতি সম্মান রেখে এখান থেকে প্রস্থান করা উচিত? কিন্তু মনন এখান থেকে চলে গেলে যদি এই মানুষটা কষ্টের সাগরে গা ভাসিয়ে কোনো ভুলভাল স্টেপ নেয়? সেটাও তো আরেক ঝামেলা।
মনন নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। সেই আলো নারী ছায়ামূর্তিটার দিকে তাক করে ডাকে,
“ এক্সকিউজ মি? “
সঙ্গে সঙ্গে এক জোড়া অপ্রস্তুত নারী দৃষ্টি চোখ তুলে তাকায় তার দিকে। অপ্রস্তুত মননও হয়, যখন সে দেখে সেই মেয়েটা মোহ। কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধের ন্যায় তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে,
“ আপনি? ছাদে একা কি করছেন? কাঁদছেন কেনো? “
মোহ উত্তর দেওয়াটা প্রয়োজনীয় মনে করে না। সে আবার হাঁটুতে মুখ গুজে। এহেন কাণ্ডে মনন অবাক হয়। পরিবেশটা কিছুটা স্বাভাবিক করতে সে হেসে বলে,
“ আপনি কি নিজের ইমেজ বাঁচাতে লোকচক্ষুর আড়ালে এসে কাঁদছেন? চিন্তা করবেন না। আমি কাউকে বলবো না। “
মোহ রাগী গলায় শুধায়,
“ গেট লস্ট। “
মননের হাসি উবে যায়। সে তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইছিলো। আর এই মেয়ে কি-না তার সাথেই বেয়াদবের মতো কথা বলছে। গেট লস্ট মানে কি? নিজের থেকে বয়সে বড়ো কারো সাথে কথা বলার আদব নেই নাকি এই মেয়ের মাঝে? মনন গলার স্বর গম্ভীর করে বিরক্তি নিয়ে শুধায়,
“ যাচ্ছি। কান্নাকাটি যা ইচ্ছা করুন, কিন্তু ভুলেও ছাদ থেকে লাফ দিবেন না। অযথা কারো সুইসাইড কেসে হেনস্থা হতে রাজি নই আমি। “
বলে মনন যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিয়েই হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ে। কি ভেবে যেনো ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা মোহর পায়ের কাছে মেঝের দিকে ধরে। মুহুর্তেই তার দৃষ্টি শীতল হয়। এগিয়ে যায় মোহর দিকে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মোহর সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে। আরেকটু মনযোগ দিয়ে মোহর পায়ের কাছে পড়ে থাকা বস্তুটা দেখে। পরপর কণ্ঠে যথাসম্ভব কোমলতা মিশিয়ে ডাকে,
“ মোহ? আপনি হেয়ার ফলের কারণে কাঁদছেন? “
মোহ যেনো আশকারা পেলো। নিজের ব্যক্তিসত্তা চিরে করে বসে এক নিষিদ্ধ কাজ। নিজের দুঃখটা মেলে ধরে অপরিচিত মানুষটার কাছে। ভুলে বসে নিজের তেজ। হাঁটু থেকে মুখ তুলে কান্না মিশ্রিত করুণ স্বরে বলে,
“ এইটা থামানোর কোনো উপায় নেই? “
বলতে বলতে মোহ নিজের হাত চুলের ভাজে বুলিয়ে সামনে এনে ধরে। মনন স্পষ্ট দেখে শুভ্র রঙা হাতের আজলে বেশ কিছু চুল এসে পড়েছে। কেমোথেরাপির অন্যতম সাইড ইফেক্ট এটা। যেই সাইড ইফেক্টটা সাধারণ দৃষ্টিতে একটা মেয়ের জন্য খুবই ভয়ংকর। মনন বেশ সাবলীল গলায় বলে,
“ উপায় নেই। “
সামান্য কিছু মাথার চুল হারানোর কষ্টে মোহ বয়ে গেলো। কাতর ভঙ্গিতে নিজের মাথায় বারবার হাত বুলিয়ে যাচ্ছে সে। প্রতিবারই তার হাতের মুঠোয় কালো চুল গুলো উঠে আসছে। তা দেখে মোহর কান্না আরও বেড়ে যায়। সে বলতে থাকে,
“ আর কি কি কেড়ে নেয় ক্যান্সার? আর কি কি হারাতে হবে? এতো ভয়ংকর কেনো? “
যন্ত্রণা কাতর মুখটা দেখে মননের মন আরো কোমল হয়ে আসে। সে হাতের ফোনটা মেঝেতে রেখে মোহর সামনে মেঝেতে বসে পড়ে। চুল হারানোর বিরহে মেয়েটা অবিরত কেঁদেই চলে। মনন নীরবে চেয়ে রয়। অযথা শান্তনা দিতে ইচ্ছে হয় না তার। শান্তনা কখনো দুঃখ ভুলানোর ওষুধ হতে পারে না। কিছু কিছু দুঃখ আছে যা শান্তনা বাক্যে বিন্দুমাত্র ঘুচে না, উল্টো তা দ্বারা সেই দুঃখটাকে আরো উপহাস করা হয়।
দক্ষিণের হাওয়া এসে ছুঁয়ে যায় মোহকে। ছুঁয়ে যায় তার মনের বিষণ্নতাকে। সেই বিষাদমাখা হাওয়া মননকেও ছুঁয়ে দেয়। মোহ তখনো বারবার নিজের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো। মনন এবার না চাইতেও এগিয়ে গিয়ে মোহর দুই হাত ধরে তাকে থামায়। মৃদু গলায় বলে,
“ থামুন। “
মোহ শূন্য দৃষ্টি মেলে তাকায় মননের দিকে। বলে,
“ আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এই অবস্থায় মরে গেলে আমাকে দেখতে বিশ্রী লাগবে না। দু’দিন পর আমি দেখতে বিশ্রী হয়ে যাবো। আমি ওই অবস্থায় নিজেকে দেখতে চাই না। আমি ওই রূপটা নিয়ে কারো সামনে দাঁড়াতে চাই না। “
মনন একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বলে,
“ যুদ্ধ দেখেছেন কখনো? যুদ্ধ করার সময় কিন্তু একজন যোদ্ধা নিজের বাহ্যিক রূপের কথা ভাবে না। তার গায়ে ময়লা লাগে, আঘাতে শরীর চিরে রক্ত বেরিয়ে আসে। তবুও তারা যুদ্ধ থামায় না, বরং চালিয়ে যায়। আপনিও সেরকম। একটা রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। এতে আপনার বাহ্যিক রূপ নিয়ে আফসোস করে লাভ আছে বলুন? মাঝপথে পালাতে চাইলে সবাই আপনাকে ভীরু হিসেবে চিনবে। “
মোহ আনমনে বলে বসে,
“ নিজের চোখের সামনে নিজেকে নিঃশেষ হতে দেখবো তাই বলে? “
“ একবার নিঃশেষ হতে অসুবিধা কোথায়? নিজেকে ফিনিক্স পাখি ভাবুন। অগ্নিপাখির মতো ধ্বংসস্তুপ থেকে নতুন জীবনের সন্ধান করুন। একবার ক্যান্সারকে হারিয়ে দেখুন। আয়নার সামনে দাঁড়ালে তখন নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সাহসী নারী মনে হবে আপনার। “
নির্বাক, নীরব মোহ মননের মুখপানে তাকিয়ে রয়। সময় গড়ায় কিন্তু দৃষ্টি ফেরায় না। অজানা কারণে এই মুহুর্তে মননের অস্বস্তি লাগছে না। বরং সে-ও মোহর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার চোখে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। আচমকা নীরবতা ভেঙে মোহ প্রশ্ন করে,
“ আপনার কি মনে হয় ডক্টর? আমি বাঁচবো? রিপোর্টের সার্ভাইভাল রেট জানতে চাচ্ছি না, আপনার কি মনে হয় তা জানতে চাচ্ছি। “
আকস্মিক প্রশ্নে মনন ভড়কে যায়। কি উত্তর দিবে সে? নিজের মনকে প্রশ্ন করে। উত্তর খুঁজে পায় না কোনো। কালো আকাশ ফেটেও তখন বিদ্যুৎ চমকে উঠে। সেই আলোয় মনন নীরবে মোহর শান্ত অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে। আচমকা তার বুক ধ্বক করে উঠে। তার সামনে বসে থাকা এই মেয়েটা মারা যেতে পারে। এই অদ্ভুৎ সত্যটা তাকে ক্ষণিকের জন্য নাড়িয়ে তুলে। কি কারণে কে জানে!
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]