অপ্রেমের একাত্তর দিন পর্ব-১৪

0
3

অপ্রেমের একাত্তর দিন
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১৪.

মোহর বাড়ি ফেরার ঠিক ছয়দিন পরের সন্ধ্যার ঘটনা। মোহ তখন গভীর ঘুমে তলিয়ে। আচমকা মায়া হুড়মুড়িয়ে তার রুমে ঢুকে গেলো। প্রবল উচ্ছাস নিয়ে মোহকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। মোহ বিরক্ত হয়। কপাল কুচকে উঠে বসে। আচমকা ডাকে ঘুম ভাঙায় মাথা কেমন চিনচিন করে ব্যথা করছে তার। বিরক্তি নিয়ে বলে,

“ তোকে না এভাবে আমাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলতে নিষেধ করেছি? মাথা ব্যথা করছে এখন। উফ! “

বলেই মোহ আবার শুয়ে পরতে নেয়। মায়া বাধা দিয়ে দ্রুত বলে উঠে,

“ সরি, সরি। আর এভাবে ডাকবো না কখনো ঘুমের মাঝে। কিন্তু এখন নিচে চল তাড়াতাড়ি। সারপ্রাইজ আছে। দেখবি মাথা ব্যথা ফট করে গায়েব হয়ে যাবে। “

সারপ্রাইজের কথা শুনেও মোহর মাঝে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ পেলো না। বরং সে নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলো,

“ কি সারপ্রাইজ? বাবা গরু নিয়ে এসেছে হাঁট থেকে? এই তো? “

মায়া বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,

“ তুই কিভাবে বুঝলি? “

মোহ বিরক্তি নিয়ে বলে,

“ দুইদিন পর ঈদ। প্রত্যেক বাসার বাবাদের এখন কুরবানির হাঁট থেকে গরু নিয়ে আসাটাই একটা সারপ্রাইজ তুল্য ব্যাপার। বেসিক কমন সেন্স এটা। এখন যা রুম থেকে। ঘুমাতে দে। “

মায়া যায় না। বরং মোহকে আলতো ভঙ্গিতেই টেনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,

“ চল না প্লিজ। বাবা কিছুক্ষণের জন্য গরুকে নিয়ে এসেছে। দূর থেকে শুধু দেখে চলে আসবি। কাছে যেতে হবে না। একবার নিয়ে গেলে কিন্তু আমরা পরে আর দেখার সুযোগ পাবো না। “

মায়ার জোরাজুরিতে অবশেষে বাধ্য হয়ে মোহ মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে নিচে নামে। দরজার কাছে যেতেই দেখতে পায় শায়লা আন্টিও দাঁড়ানো। শায়লা মোহকে দেখিয়ে বলে,

“ দেখো আম্মু। ওই-যে গরু। সুন্দর না? তোমার বাবা এবার তোমার পছন্দের রঙের গরু কিনেছে। তুমি না সবসময় বলো, লাল গরু বেশি সুন্দর হয়? “

মোহ দেখে দৃশ্যটা। সুন্দর করে সাজানো লাল গরুর পাশে দাঁড়ানো নিজের বাবাকেও দেখে। হাঁট ঘুরে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাওয়া শিহান আর ঘাম আর জীবাণু যুক্ত শরীরে মেয়ের কাছে যায় না। দূর থেকেই জিজ্ঞেস করে,

“ সুন্দর হয়েছে? “

মোহ আপ্লুত হলো কি-না বুঝা গেলো না। সে কেবল হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। অর্থাৎ সুন্দর হয়েছে।

__________

কায়সার পরিবারের তিন পুরুষকে আজ একত্রে খাবার টেবিলে দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেকের গায়ে জড়ানো পরিপাটি নতুন পাঞ্জাবি। দেখে মনে হচ্ছে ভিন্ন তিন বয়সের ব্যাচেলর তিনজন। ঈদের সকালটায় পায়েশ দিয়ে মিষ্টি মুখ করে নিতে ব্যস্ত প্রত্যেকে। সবেমাত্র ঈদের নামাজ শেষ করে ফিরেছেন তারা। চটজলদি নাস্তা সেড়ে, পাঞ্জাবি বদলে তাদের নিচে যেতে হবে পশু কুরবানীর কাজটুকু সম্পন্ন করতে।

মননের খাওয়া শেষ হলো সবার আগে। পাঁচ চামচে সে সবটুকু পায়েস খেয়ে নিয়ে দ্রুত উঠে নিজ রুমে চলে যায়। আলী আকবর সাহেব নাতির প্রস্থানের পানে তাকিয়ে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

“ হতচ্ছাড়াটা বউয়ের কদর বুঝলো না! ঈদের মতো পবিত্র একটা দিনে কি-না ঘরে কোনো বউ নেই, যে গোস্ত ভাগ করে পাঠাতেই চুলায় রান্না বসাবে। আজকেও ওই টুনির মা’র হাতের রান্নাই খেতে হবে আমার। “

আরিফ কায়সার আড়চোখে নিজের পিতাকে দেখে নিয়ে বোকার ন্যায় বলে উঠে,

“ কিন্তু আব্বা টুনির মা’র হাতের রান্না তো খারাপ না। বেশ ভালোই তো রান্না করে! “

আলী আকবর সাহেব খেকিয়ে উঠে ছেলের উদ্দেশ্যে,

“ আহাম্মক! টুনির মা আর ঘরের বউ কি এক হলো? টুনির মা যে-ই রান্না করে দিয়ে যায় সেটা টাকার বিনিময়ে দায়বদ্ধতা থেকে। কিন্তু ঘরের বউ থাকলে সেই রান্নায় দায়বদ্ধতার স্বাদ থাকতো না। বরং সংসারের প্রতি পরম স্নেহ, মায়া, মমতা নিয়ে করা রান্নার স্বাদ পাওয়া যেতো। “

আরিফ কায়সার এবার কিছুটা মিইয়ে যায়। তবুও বলেন,

“ আব্বা, মননের বয়স তো এখনো কম। ওকে আপাতত বিয়ের প্রেশার দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? হসপিটালের প্রেশারেই ছেলেটা দম ফেলার সুযোগ পায় না। ও যেহেতু এখন চাচ্ছে না, সেহেতু আমরা অপেক্ষা করি। সঠিক সময় এলে অবশ্যই বিয়ে হবে। “

আলী আকবর সাহেব আর কথা বাড়ান না। নিজের ছেলে এবং নাতিকে ঘরে সংসারের জন্য একটা বউয়ের তাৎপর্য বুঝাতে বুঝাতে তিনি ক্লান্ত। আজ প্রায় এক দশকের অধিক সময় ধরে এই সংসারের হাল ধরার জন্য বাড়িতে কোনো নারী নেই। অথচ একটা সংসার এবং পরিবারকে বেঁধে রাখার কলাকাঠি থাকে ঘরের বউয়ের হাতে। আলী আকবর সাহেব এবার ক্লান্ত গলায় বলে উঠে,

“ যা ভালো মনে হয় করো তোমরা। কিন্তু মনে রেখো সময় কারো জন্য বসে থাকে না। দেখা গেলো এই ব্যস্ততার অযুহাত দিতে দিতে একটা সময় গিয়ে তোমার ছেলে বিয়ের জন্য আর ভালো পাত্রী খুঁজে পাবে না। “

__________

ধূসর রঙের টি শার্ট এবং কালো রঙের ট্রাউজার পরিহিত মননকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। নিজ রুমে প্রবেশ করেই দরজা চাপিয়ে এসি অন করে দেয় সে। আর দশটা সাধারণ বাঙালি ছেলের ন্যায় সকলের সাথে মিলে এতক্ষণ কসাইয়ের কাজ করেছে সে। যদিও গোস্ত কাটাকাটির কাজটা ফ্ল্যাটের পার্কিং এরিয়াতেই সম্পাদিত হয়েছে। তবে সরাসরি রোদের নিচে না থাকলেও, ভ্যাপসা গরমের উত্তাপে ঘেমে নেয়ে তার বিশ্রী অবস্থা হয়ে গিয়েছে।

মনন বিছানায় বসে চোখ থেকে চশমা খুলে সেটার গ্লাস পরিষ্কার করতে করতে জিড়িয়ে নিচ্ছিলো। গায়ের ঘামটা শুকিয়ে গেলেই সে আরেক দফা গোসলের জন্য যাবে। আচমকাই মননের কিছু একটা মনে পরলো। মনে পরতেই সে চমকালো।

ওই মেয়েটা, মোহ! মননের কি উচিত হবে মোহকে কল করে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো? এইটা সত্য যে মনন গুড ম্যানার্স মেনে চলা পুরুষ মানুষ। তবে ওই মেয়ের সাথে এই গুড ম্যানার্স পালন করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি-না সেটা নিয়ে মনন দ্বিধাগ্রস্ত। সে চাইলেই পারে মোহকে ঈদ মোবারক জানানোর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করতে। কিন্তু মোহ যদি ওদিকে অপেক্ষা করে বসে থাকে?

ঈদের দিন একটা মানুষের অপেক্ষা দীর্ঘ করা অনুচিত বলে মনে হয় মননের। তাই সে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কন্ট্যাক্ট লিস্টে যায়। মোহর ওদিন লিখে দিয়ে যাওয়া নাম্বারটা মনন অজানা কারণে নিজের ফোনে সেভ করে রেখেছে। ইংরেজিতে M O H O লেখা নাম্বারটাতে মনন কল করে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে।

বেশ কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর কলটা রিসিভ হয়। ঘুম জড়ানো একটা মেয়ে স্বর বলে উঠে,

“ ঈদ মোবারক ডক্টর। “

মনন চমকায়। মোহর কাছে তো তার নাম্বার নেই। তাহলে ওই মেয়ে কিভাবে বুঝলো যে মনন কল করেছে? মনন কিছু জানতে চাইবে তার পূর্বেই মোহ বলে উঠে,

“ আমার ব্যক্তিগত নাম্বার খালি তেরো জন মানুষের কাছে আছে। ওই তেরো জন বাদে আর কখনো কোথাও নিজের নাম্বার শেয়ার করা হয় নি। তাই আননোন নাম্বারটা যে আপনার এটা বুঝতে রকেট সাইন্সের প্রয়োজন পরে নি। “

মনন আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ায় না। বরং যেই উদ্দেশ্যে কল দিয়েছিলো ছোট করে সেটা জানায়,

“ ঈদ মোবারক। আপনি ঘুমান তবে। আল্লাহ হাফেজ। “

“ আরে! আরে! আমি তো করার মতো কিছু পাচ্ছিলাম না দেখে রুমে মরার মতো পরেছিলাম। এখন তো আপনি আছেন। বলেন তারপর কি করলেন সকাল থেকে? “

মনন আরেকবার দ্বিধায় পরে যায়। সকাল থেকে সে কি কি করেছে সেসব জানানোর মতো সম্পর্ক তো তাদের মাঝে নেই। তাদের মাঝে অবশ্য কিছুই নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই মেয়ে এতো প্রশ্ন করছে? মনন উত্তর খুঁজে পায় না। নিজের মনের উত্তর খুঁজে পেতে অপারগ হয়ে সে মোহর প্রশ্নেরই উত্তর দেয় ধীর ভঙ্গিতে।

“ ঘুম থেকে উঠলাম, নামাজে গেলাম, বাড়ি ফিরে নাস্তা খেলাম, এতক্ষণ নিচে কুরবানির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মাত্র রুমে ফিরলাম। এই আরকি। “

মোহ আগ্রহী গলায় বলে,

“ ওয়াও! আপনিও কতকিছু করলেন সারাদিন। আমি জানেন কি করেছি? ঘুম থেকে উঠেছি, মশলা কম দিয়ে পাকানো ডিমের ঝুরা ভাজি দিয়ে রুটি খেয়েছি আর তারপর সোজা রুমে এসে দরজা লাগিয়ে শুয়ে আছি। নিচে আন্টি চুলায় মাংস বসিয়েছে। দরজা লাগিয়ে রাখা সত্ত্বেও মাংসের গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে। আমি এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম কোনটা বেটার অপশন? পছন্দের খাবার না খেয়ে বেঁচে থাকা না-কি তৃপ্তি নিয়ে পছন্দের খাবার খেয়ে মরে যাওয়া? কারণ দিনশেষে তো সবারই মরতে হয়। “

মনন আঁতকে উঠে ব্যস্ত গলায় বলে,

“ ভুলেও না। মোহ লুকিয়ে ওসব খাবেন না ভুলেও। ক্ষতি হবে আপনার। প্লিজ রিমেম্বার, রেড মিট আপনার জন্য বিষ। “

মোহ মুখ ভেংচি কেটে বলে,

“ বিষ যদি মজার হয় সেটা কি আমার দোষ? মূলা, পটল, কাকড়ল এসব যদি বিষ হতো তাহলে আমার কোনো অসুবিধাই ছিলো না। খুশি খুশি আমি ওইসব সবজিকে তালাক দিয়ে দিতাম। কিন্তু গরুর গোস্তকেই কেন হানিকারক হতে হবে? এসব নিষ্ঠুর নিয়ম কে আবিষ্কার করেছে? “

“ যেই আবিষ্কার করুক না কেন সেটা জরুরী নয়। জরুরী হচ্ছে আপনার ডায়েটেশনের কথা মেনে চলা। ডু ইউ গেট দ্যাট? “

মোহ মুখ লটকে বলে,

“ আপনি আমাকে যা কিছু বলছেন এগুলো কি ফ্রি তে বিলানো জ্ঞান নাকি এর জন্য ফি রাখবেন আলাদা করে? ফি লাগলে আব্বুর সাথে যোগাযোগ করুন। আমি গরীব। টাকা পয়সা নেই। আর থাকলেও সেটা আপনার এমন অসহ্যকর জ্ঞানের পিছনে খরচ করতে রাজি না। “

মনন লজ্জায় পরে যায়। মাথা নেড়ে বলে উঠে,

“ আমি জাস্ট এভাবেই বলছিলাম। আপনার কথা ভেবে। ফি এর প্রয়োজন নেই। “

মোহ কথার প্রসঙ্গ বদলে বলে,

“ জানেন, আপনার ওই টোটোস্কোপ আছে না? ওটা আমি সামলে রেখেছি। কাউকে এখনো দেখাই নি। হাজারটা প্রশ্ন করবে। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে ওই টোটোস্কোপ নিয়ে গিয়ে দাদুর হার্টবিট চেক করি। এত্তো ইন্টারেস্টিং লাগে ব্যাপারটা! আপনি কি টোটোস্কোপ দিয়ে সবার হার্টবিট শুনতেই ডক্টর হয়েছেন? আমিও কি চাইলে হতে পারবো? আমি সব সাবজেক্টে খারাপ হলেও ইংরেজি আর আইসিটি ভালো পারি। ওই দুটো এনাফ হবে না? “

মনন কিছু বলতে নিবে ঠিক সেই মুহুর্তে তার রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে আলী আকবর কায়সার। নাতিকে দেখে নাক মুখ কুচকে তিনি বলে উঠেন,

“ রুমে এসে গোসল না করে বসে আছো কেনো? গা থেকে গোবরের গন্ধ আসছে তোমার। ওয়াক! আমার পেট গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। দেখতেও তো এলাকার গরু চোরের মতো লাগছে। তাড়াতাড়ি যাও। গোসল করে আসো। টুনির মা’য়ের রান্না প্রায় শেষ। একসঙ্গে খেতে বসবো। “

কথাটুকু বলেই আলী আকবর সাহেব ঠিক যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই হনহনিয়ে চলে যায়। মনন থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে। দাদুর এরকম বিব্রতকর কথাবার্তা শুনে সে অভ্যস্ত। কিন্তু দাদু কি একবারও খেয়াল করলো না যে মনন কানে ফোন চেপে রেখেছে? মোহ? ওই মেয়ে কি দাদুর বলা কথাগুলো শুনে নিলো? মনন আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই ফোনের অপর পাশ হতে মোহ মুখ বিকৃত করে বলে,

“ ছিইইইইই! গোবর? আপনি গোসল না করে গোবরের গন্ধ গায়ে মেখে ঘুরছেন? এই হলো আপনার রিয়েলিটি? ডক্টররা এতো খাচ্চোরও হয়? “

মননের আর কিছু বলার থাকে না। পবিত্র ঈদের দুপুরে তার পবিত্র ইজ্জতের গায়ে চুনকালি মেখে দিয়ে গিয়েছে তার দাদু। আর এই নাক ছিটকানো মেয়েটা এখন ঢাকে ঢোলে বারি দিয়ে সেই চুনকালির খবর পারলে নিউজ চ্যানেলে টেলিকাস্ট করবে। মনন কলটা কাটার আগে কেবল দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“ নাম্বার সেভ করার হলে ঠিকঠাক নাম লিখে সেভ করবেন। M O N O N ওকে? মদন কিংবা মরণ লিখবেন না। আর যদি এন এর জায়গায় ডি কিংবা আর বসানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে নাম্বারই সেভ করার প্রয়োজন নেই আপনার। “

কথাটুকু শেষ হতেই ফোনটা কেটে গেলো। মোহ বালিশ থেকে মাথা তুলে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আজব তো! লোকটা রেগে গেলো কেন? মোহ চুপচাপ নাম্বারটা সেভ করে ফোনটা ফেলে রাখে। মনন লিখে নি সে। মদনই লিখেছে। এই নামটাই ওই লোকের জন্য উপযুক্ত। মদনা কোথাকার!

__________

গোসল সেড়ে দুপুরের খাবার খেতে বসতে বসতে মননের প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেলো। খাবার টেবিলে আলী আকবর কায়সার এবং আরিফ কায়সারও উপস্থিত আছেন। উনারা ইতিমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। খাওয়ার মাঝে মাঝে টুকটাক বিভিন্ন ব্যাপারে আলাপও সাড়ছেন।

মনন প্লেট নিয়ে টেবিলে বসতেই দেখলো ঈদের দিনের দুপুরের খাবার হিসেবে টুনির মা বেশ কিছু আইটেমই রেধে রেখে গিয়েছেন। যেমন – পোলাও, গরুর গোস্ত, গরুর কলিজা ভুনা, সালাদ, চিংড়ি মাছ ভুনা। মনন নিজের প্লেটে পোলাও এবং সালাদ তুলে নিয়ে যে-ই না গরুর গোস্ত নিতে নিবে ঠিক সেই মুহুর্তে তার মনে পরে যায় মোহর কথা। না চাইতেও তার মন ভেবে বসে ওই মেয়েটার বাসায়ও এসব কিছু রান্না হয়েছে আজ। খাবারগুলো মোহর পছন্দের। কিন্তু খেতে পারছে না। আর না কখনো খেতে পারবে। যতই বুঝ দেক না কেনো মনন, ওই মেয়ে নিশ্চয়ই মন খারাপ করে বসে আছে? এই সামান্য বিষয়টা মননেরও আচমকা মন খারাপ করে তুলে। হুট করেই তার মাংস দিয়ে পোলাও খাওয়ার ইচ্ছেটা মরে গেলো। সে চুপচাপ শুধু চিংড়ি তুলে নেয় নিজের প্লেটে। সেটা দিয়েই মেখে পুরোটা পোলাও খেয়ে নেয়। আরিফ কায়সার ব্যাপারটা লক্ষ্য করতেই ছেলেকে প্রশ্ন করে,

“ মাংস নিচ্ছো না কেন? “

মনন প্লেট হাতে উঠে যেতে যেতে জবাব দেয়,

“ ইচ্ছে করছে না খেতে। “

আলী আকবর কায়সার এবং আরিফ কায়সার দু’জনই চমকায়। কুরবানীর রান্না করা গোস্ত তো মনন খুব তৃপ্তি নিয়ে খায়। আজ হঠাৎ কি হলো?

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে