অপ্রাপ্তি পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
1830

#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ২৫ [অন্তিম প্রহর]

সব ঝামেলা শেষ! আমার কালো জীবন থেকে দু’টো আপদ বিদায় নিয়েছে। ইশির তিন বছরের জেল হয়েছে। কোন বাঁধা নেই আমার জীবনে। কেউ পারবে না আর এই জীবনটাকে তীলে তীলে শেষ করতে। সেই আমি কী করে পারলাম এত কিছু করতে? কী হয়ে গেল এই কয়েক বছরে আমার জীবন টা? কেন আমি তখন বাবা মায়ের অবাধ্য হলাম? কেন? তাহলে আজ আমার আর তাহসিনের সুন্দর একটা জীবন থাকত। যদি রিশানের সাথে সম্পর্কে না জড়াতাম, তাহলে এত বড় দূর্বিষহ আমার জীবনে আসত না।

নাহ্! আর এসব বিষয়ে ভাববো না। আজ তাহসিনকে বলব আমার সকল মনের কথা। বলব তাকে যে, তার সাথে বাকি নদীটা নৌকায় চড়ে পাড় হতে চাই। হ্যাঁ! আজ কোন বাঁধা আমায় আটকাতে পারবে না। না ইশি, না রিশান আর না ওই পরিবারের কেউ।

কালো শাড়ি পড়লাম। এটা তাহসিনের প্রিয় রঙ। যদিও আমার প্রিয় রঙ বেবি ইয়েলো। কিন্তু তার পছন্দকেও তো প্রাধান্য দিতে হবে। কৃত্রিম কিছুই মুখে মাখলাম না। কারণ আমি জানি, তাকে আমার আসল রূপেই মুগ্ধ হতে হবে। নকল সুন্দর রূপে নয়। সাইড বেণি করলাম। বাড়িতে বাগান ছিল। সেখান থেকে বিকেলে জুঁই ফুল সংগ্রহ করেছি। দু’টি ছোট্ট জুঁই ফুল বেণির মাঝে কানের হালকা উপরে গুঁজে দিলাম। সেই দিনের ফুল গুলো কোথায় তা আমি জানি না। তবে এটা কী যথেষ্ঠ নয়?

নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছি। আজ এত সুন্দর লাগছে কেন আমাকে? তাহসিন আমায় দেখবে বলে? নিজের কাজে নিজেই হাসলাম। টাইম দেখলাম। তার আসার সময় হয়েছে। বাসায় আম্মু আর আব্বু নেই। তারা দু’জন তাহসিনের ফুঁপ্পির বাসায় গেছে। হঠাৎ দরজায় টোকা দিল কেউ। বললাম, ‘কে?’

‘আমি ভাবী।’

‘ওহ্ মিহির?’

গিয়ে দরজা খোলে দিলাম। সে আমায় এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘বাপরে ভাবী! ইউ লুক সো বিউটিফুল!’

‘হাহা। থ্যাংকস ভাবী জি।’

‘কিন্তু এতসব? [অতঃপর এক ভ্রু উঁচিয়ে] কিসের জন্য?’

‘আরে না এমনি।’

‘আরে ভাবী বলো না।’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘এতদিন উনাকে মনের কথা বলিনি। তাই ভাবলাম আজ বলব।’

মিহিরের মলিন মুখখানা নজরে এলো। ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘কী হয়েছে মিহির? মন খারাপ নাকি?’

মিহির মাথা নিচু করে বলল, ‘উনি আমাকে কিছুদিন যাবৎ ইগনোর করছেন। কথা বলছেন না। মাঝে মধ্যে রূঢ বিহেভও করছেন।’

‘কেন? কী হয়েছে?’

‘জানি না। কিছুদিন ধরে আমার সঙ্গে কথাই বলছেন না।’

‘কিছু কী হয়েছে তোমাদের মাঝে? তাহলে মিটিয়ে নাও। সেজে গুজে বসে থাকো। আর তাকে নিজের মনের কথা টা শেয়ার করো। তাহলেই তার অভিমান ভেঙে যাবে।’

‘সত্যি এতে কাজ হবে?’

‘নাইনটি নাইন পার্সেন্ট হবে বনু। যাও।’

‘সত্যি? থ্যাংক ইউ ভাবী। আমি যাচ্ছি তাহলে।’

হাসলাম। মেয়েটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেল। টাইম দেখলাম। এই রে তার আসার সময় হয়েছে। তাড়াতাড়ি ছাদে উঠে রেলিং ঘেষে দাঁড়ালাম।

.

ইবনাতের বলা মতে মিহির সবুজ রঙা শাড়ি পড়ল। হালকা কাজল দিতেই নেত্রপল্লব টানা টানা হয়ে এলো। এ যেন অপরূপা! তানসীবের আসার সময় হয়েছে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। প্রায় কিয়ৎক্ষণ পর গাড়ির শব্দ পেল। গেট দিয়ে তানসীব প্রবেশ করছে। মিহির নিজেকে সামলাল। আজ যে বলতেই হবে তাকে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর কলিং বেল বাজল। দরজা খোলাই রেখেছে। দু’বার বাজানোর পর নিজেই তানসীব দরজা খুলল। অবাক হলো। দরজা খোলা কেন? সে উপরে উঠে এলো। রুমে এসে হালকা চেঁচিয়ে বলল, ‘সমস্যা কী মিহির? দরজা খোলা রেখেছ কেন? ঘরে কেউ আসলে? আমাকে মেরে ফেলার ধান্দায় আছো? পাগল করে দেবে মনে হচ্ছে আমায়।’

মিহির বারান্দা থেকে সব শুনতে পেল। তাচ্ছিল্য হেসে বলল, ‘পাগল কেন হবেন? পাগল তো আপনি আমায় বানাচ্ছেন। এত কেয়ার কেন? ঠিক’ই তো ইগনোর করে যাচ্ছেন। কষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে? এত চিন্তা কিসের?’

তানসীব চুপ মেরে গেল। পরণের কোর্ট খুলে বিলিয়ে দিল। ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল। শান্ত গলায় বলল, ‘আমায় যেমন কষ্ট দাও? তার বেলায় কী?’

মিহির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশপানে চেয়ে বলল, ‘সত্যি কষ্ট দেই? তবে আজ.. আজ না হয় দিচ্ছি না।’

তানসীব চমকাল। মিহির এমনিতে সুন্দরী তার উপর সবুজ রঙা শাড়ি তে তাকে দেখে সে যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। কিন্তু মনে চাঁপা অভিমান তাড়া করে বেড়ালো। মুখ ফিরিয়ে যেতে নিলেই মিহির তার দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে অকপটে বলে উঠল, ‘আমার কী দো’ষ বলবেন? কেন আমায় এত কষ্ট দিচ্ছেন? আমার দ্বারা কী কোন ভুল হয়েছে?’

তানসীব কিছু বলে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মিহির বলল, ‘কী হয়েছে? বলবেন না?’

তানসীব চলে যেতে যেতে বলল, ‘কী দো’ষ তা তুমি নিজেই বুঝে নাও।’

তানসীব যাওয়ার আগেই মিহির হঠাৎই.. দৌড়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তানসীবকে। তানসীব আবারো চমকাল। মিহির বলল, ‘ভালোবাসি আপনাকে। হ্যাঁ ঠিক তেমন ভাবে ভালোবাসি যেমন একজন স্ত্রীর একজন স্বামীকে বাসা উচিত। আমি আপনার অবহেলা নিতে পারছি না। প্লীজ আমায় আর কষ্ট দেবেন না। আমায় আপন করে নিন।’

তানসীব হঠাৎ চমকে বলল, ‘কীহ্? তুমি? সত্যি? বলেছ আমায়? স্বীকার করেছ? সত্যি মিহুপরি? রিয়েলি?’

বলেই তাকে ছাড়িয়ে মিহিরকে কোলে নিয়ে ঘুরতে শুরু করল। মিহির বলল, ‘আরে আরে কী করছেন? পড়ে যাব তো! আরে নামান আমাকে। হাহা! নামান।’

তানসীব নামিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল, ‘জানো? তোমাকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে গেছিলাম। যা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। ভালোবাসি তোমায় মিহুপাখি। খুব ভালোবাসি।’

মিহিরের চোখ বেয়ে অশ্রুপাত হলো। আজ যে তার জীবনে সবচেয়ে সেরা দিন ❤️

.

ছাদে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি। এইতো তিনি এসেছেন। গেট দিয়ে প্রবেশ করছেন। সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। যদিও দরজা খোলা ছিল। প্রায় কিছুক্ষণ পর তাকে মেসেজ দিলাম, ‘এই যে ড. সাহেব! ছাদে আসুন ফ্রেশ হয়ে। বিছানায় একটা কালো পাঞ্জাবী আছে৷ ওটা পড়ে আসবেন।’

হেসে ছাদে সাজানো টেবিলের বসে পড়লাম। আমাদের বিল্ডিং টা কিছু টা নির্জনে। গাছ পালা দিয়ে ঘেরা। তেমন কিছু দেখা যায় না। তাই রিল্যাক্স হয়ে বসতে পারছি।
প্রায় বিশ মিনিট কাঁটল। টেক্সট এলো, ‘আসব?’

রিপ্লাই করলাম, ‘হ্যাঁ আসুন।’

দরজা ঠেলে ছাদে প্রবেশ করলেন তাহসিন। আমি মুগ্ধান্বিত! এ যেন এক সুদর্শন শঙ্খচিল। কালো পাঞ্জাবীতে তাকে আরো অপরূপ দেখাচ্ছে। চোখ যেন সরাতে পারছি না। এর মধ্যেই তিনি আমার সামনে এসে পৌছেছেন। তুরি বাজিয়ে বললেন, ‘কী? কী দেখছ এত? দেখার অনেক সময় পাবে।’

হুশে ফিরলাম, ‘আব.. স্যরি।’

‘স্যরির কী আছে গো বউ? দেখা কী দো’ষ নাকি?’

হাসলাম। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আওড়ালাম, ‘দেখতে দিবেন? সারাজীবন? চড়তে দিবেন আপনার সঙ্গে জীবনের নৌকায়? থাকতে দিবেন নিজের মনের ঘরে? ঠাঁই দিবেন বুকে? বাঁধতে দিবেন একসাথে ঘর? ভালোবাসতে দিবেন আপনাকে?’

তিনি অপলক চেয়ে থাকেন। হঠাৎ.. হাত ধরে হেঁচকা টান দিতেই তার বুকে ঠাঁই পেলাম আমি। তিনি আমার ডান হস্ত তার বক্ষে রেখে বললেন, ‘শুনতে পাচ্ছ এই হৃৎস্পন্দন? অনুভব করতে পারছ? এই সবই তোমার নামে। সেই ছ’বছর আগে থেকেই। তাই তো তোমার নাম দিয়েছিলাম হৃদরাণী। প্রতিটা নিঃশ্বাসে ছিলে শুধু তুমি। প্রতিটা সুপ্ত বাসনায় তোমাকে রেখেছিলাম। পেলাম তোমায় নিজের করে কিন্তু কখনো বলার সুযোগ হয় নি এই ছয় বছরে বক্ষ পিঞ্জরে লুকিয়ে থাকা কথা গুলো। কখনো বলা হয় নি ভালোবাসি। তবে না বলে যে মাতৃভূমি ত্যাগ করব না আমি। ভালোবাসি তোমায় হৃদরাণী। সেই ছয় বছর আগে থেকেই। খুব ভালোবাসি। দিবে কী পূর্ণতা এই খালি তৃষ্ণার্ত বুকে?’

চোখ বেয়ে নোনাজল গড়ালো। তার বুকে মাথা রাখলাম। বললাম, ‘হুম। প্রতিটা মুহুর্তেই আপনার মনের মধ্যেই থাকব ইন শা আল্লাহ্। কথা দিলাম।’

নেত্রপল্লব গ্রথন করে তার হৃৎস্পন্দন অনুভব করলাম। আমার মাঝে কোন অপ্রাপ্তি নেই। রয়েছে এক রাশ প্রাপ্তি। আর সেই প্রাপ্তির মাঝেই রয়েছেন আমার সুদর্শন! হ্যাঁ আমারই তাহসিন। সেই আমার একমাত্র ভরসা। একমাত্র জীবনের অংশ। সেই আমার প্রাপ্তি ❤️

.

৬ বছর পর…

রহমান আইডিয়্যাল স্কুল,
স্কুল ছুটি হতেই এক এক করে বেরুতে লাগল। হাস্যজ্বল এক রমণী বেরিয়ে আসতেই দুই নবজাতক বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে তার হাত ধরল। রমণী হেসে মেয়ে দু’জনের দিকে ঝুঁকে বলল, ‘ক্লাস কেমন হলো আম্মুরা?’

বড় মেয়ে হেসে জবাব দিল, ‘খুব খুব ভালো আম্মু। আজ স্যার আমাদের অনেক হাসিয়েছে হিহি।’

‘আচ্ছা চলো এখন।’

রমণী তাদের নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো। দেখা মিলল এক সুদর্শনের। হাসিমুখে রমণী তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘এই যে ড. সাহেব। আপনি আজ হসপিটালে যান নি?’

সে হেসে জবাব দেয়, ‘না বিবি ইবনাত। আজ অফ ডে জানো না?’

‘ওহ্ আচ্ছা আমি তো বেমালুম ভুলেই গেছি।’

‘হুম। এই যে ইশরা আর বুশরা মনি। ক্লাস কেমন গেল আজ আম্মু?’

‘আজ খুব ভাল হয়েছে। চলো বাসায় চলো সব বলব।’

‘আচ্ছা।’

বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো দু’জন। মিহির খাবার দাবার রেডি করে টেবিলে ডাকল সবাইকে। ইবনাত, তাহসিন, তাহসিন তানসীবের বাবা মা, তানসীব, ইশরা আর বুশরা একসঙ্গে বসল। জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে আহার করল সবাই।

ইশরা তাহসিন আর ইবনাতের সন্তান। আর বুশরা মিহির আর তানসীবের সন্তান। দু’জনের বয়সে ডিফারেন্স এক বছর। ইশরার বয়স পাঁচ আর বুশরার চার।
নাতনি, বাবা মা, দুই জা আর দুই ভাই মিলে খুব সুখেই আছে এই ফ্যামিলি। এর মাঝে ছ’বছরের সকল স্মৃতি প্রায় ধূসর রাঙা হয়ে এসেছে ইবনাতের। তেমন কিছুই সে মনে রাখেনি। রেখেই বা কী লাভ?

বিকেলে ইশরাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো তাহসিন আর ইবনাত। বহুদিন পর বের হওয়া। পার্কে গিয়ে এদিক সেদিক ঘুরল কিছুক্ষণ। এর মাঝেই আইসক্রিম দেখে ইশরা বায়না ধরল আইসক্রিম খাবে। তাহসিন গেল আইসক্রিম আনতে। ইশরা এবার বায়না ধরল ফুল গাছের ওদিকে যাবে। অনেক বিরক্ত করায় ইবনাত শেষে তাকে নিয়ে সেদিকে গেল। হঠাৎ পরিচিত কারো গলা পেল সে। পেছনে তাকিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ টিকে দেখতে পেয়ে থমকাল সে। রিশান!! সে ছাড়া পেয়েছে? কবে? হালকা খারাপ লাগা কাজ করল তার এমন হাল দেখে। চেহারা একদম শুকিয়ে গেছে। রিশান বলল, ‘কেমন আছো ইবনাত?’

‘ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন?’

‘তোমাকে কষ্ট দিয়ে কী ভালো থাকতে পারছি? দেখো আমার অবস্থা! কী ছিলাম আর কী হয়ে গেলাম?’

‘এটাই পাপের পরিণতি মি. রিশান।’

‘আ’ম স্যরি ইবনাত ওই দিন যা হয়েছে তার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। জানি না আমার মাথায় কী চেঁপে বসেছিল। প্লীজ আমায় মাফ করে দাও।’

‘প্রয়োজন নেই রিশান। আমি আপনাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি।’

‘সত্যি দিয়েছ?’

‘জ্বি।’

‘ধন্যবাদ। এটা কে?’

‘এটা? আমার মেয়ে। ইশরা। ইশরা আঙ্কেলকে সালাম দাও।’

ইশরা একটু দুষ্টু। তাই না দিয়ে উল্টো বাবার দিকে দৌড়ে গেল। ইবনাত হেসে বলল, ‘বাবার মতো হয়েছে। একদম দুষ্ট।’

‘তাহসিনকে খুব ভালোবাসো তাই না?’

‘হ্যাঁ। খুব।’

‘হুম। আচ্ছা..’

‘আর কিছু বলবেন?’

‘নাহ্ কী বলব? তুমি সুখে আছো এটাই কামনা।’

‘ধন্যবাদ।’

ততক্ষণে তাহসিন এসে পৌছাল। রিশানকে দেখে হেসে বলল, ‘আরে আরে রিশান সাহেব? কেমন আছেন?’

‘এইতো ভালো। আপনি?’

‘আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। কী অবস্থা আপনার? কী হাল হয়ে গেল?’

‘তা আর বলবেন না।’

‘তা আপনার বাবা মা, আর ভাই কেমন আছে?’

কথা টা বলতেই রিশানের চোখ মুখে আঁধার নেমে এলো। মাথা নিচু করে বলল, ‘আমার মা মারা গেছে।’

সঙ্গে সঙ্গে ইবনাত বলে উঠল, ‘কীহ্? কবে? আর কীভাবে?’

‘ক্যান্সার হয়েছিল। আমি জেলে থাকাকালীন তিন বছরের দিকে মারা গেছিলো। বাবাও এক বছর আগে মারা গেছে স্ট্রোক করে। ইশান আর রুমি আলাদা ফ্ল্যাট বাড়িতে চলে গেছে।’

‘আর নিশাত আপু?’

‘নিশাত.. ও একজনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে চলে গেছিলো। একটা সময় তার একটা আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়। আর সমাজের কুদৃষ্টি আর কটু কথা নিতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে।’

না চাইতেও আঁখিকোণ ভিজে উঠল ইবনাতের। রিশান বলল, ‘ইবনাত! মা তোমার সাথে মারা যাওয়ার আগে অনেক দেখা করতে চেয়েছিল। তিনি তার ব্যবহারে অনুতপ্ত। অনেক মাফ চেয়েছেন। আর কেঁদেছেনও।’

তাহসিন বলল, ‘ইশি? ও কোথায়?’

‘ও মারা গেছে। জানেন না?’

‘কীহ্? কীভাবে?’

‘ওকে জেলে নেওয়ার ছ’মাসের মধ্যেই ডিপ্রেশনে ও পাগল হয়ে গেছিলো। তাই তাকে পাগলা গারদে দেওয়া হয়। কিন্তু দু’বছরের মধ্যে একদিন সে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। যেহেতু সে মানসিক রোগী ছিল।’

কিছুক্ষণ নিরবতা। রিশান বলল, ‘ঠিক আছে। ভালো থেকো ইবনাত। আর তাহসিন ভাইয়া আপনিও। আর.. মিহিরকে বলবেন মায়ের জন্য আর বাবার জন্য একটু দোয়া করতে। আর আমাকেও মাফ করে দিতে বলবেন।’

‘হ্যাঁ।’

ইবনাত আর তাহসিন ইশরাকে নিয়ে রিশানকে বিদায় দিয়ে পথ চলতে শুরু করল। রিশান এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল তাদের পানে। তখন যদি ইশির সাথে সম্পর্কে না জড়াত, ইবনাতকে মনে প্রাণে ভালোবাসত, তাহলে আজ তাহসিনের জায়গায় সে থাকত। ইবনাতের সঙ্গে সুন্দর একটা জীবন পার করত। কিন্তু.. সে যে ভুল করে ফেলেছে। তার একটা ভুলই আজ এত সব ঘটনার মূল কারণ। ইবনাতকেও সে পেল না। হারালো অজস্র সুখ, মা বাবা বোন ভাই সবাইকেই। এটাই যে তার অপ্রাপ্তি 💔

~ সমাপ্ত… 🌸

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে