#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ২৪
কলিং বেল বাজলে মিহির গিয়ে হাসিমুখে দরজা খুলে দিল। তানসীব তাকে দেখেও না দেখার ভান করে উপরে উঠে গেল। মিহির অবাক হলো। তানসীব এমন কেন করল? সে তো প্রতিদিন দরজা খোলার পর বলত, ‘মিহুপাখি দিন কেমন কাঁটল? আমায় মিস করোনি? আমি তো তোমায় মিস করেছি।’ কথা টা প্রতিদিনই বলত। কিন্তু আজ কী হলো? এভাবে চলে গেল কেন? মিহির ভাবল হয়তো খারাপ লাগছে। বিষন্ন মনে রান্নাঘরে চলে গেল। শরবত বানিয়ে উপরে। তানসীব ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে শুয়েছে। সে তার দিকে শরবত এগিয়ে বলল, ‘নিন খেয়ে নিন। দিন কেমন কাঁটল?’
তানসীব না উঠে বলল, ‘খাব না রেখে এসো।’
‘কেন?’
‘আমার ইচ্ছে তাই। তোমাকে বলতে হবে নাকি?’
মিহির কষ্ট পেল। সে এভাবে কথা কেন বলছে? তার দ্বারা কী কোন ভুল হয়েছে? মিহির নিচে চলে গেল। তানসীব মনে মনে বলল, ‘বুঝো এবার কেমন লাগে।’
.
রাতে রুমে যেতেই তাহসিন বললেন, ‘এই মিহিরের ভাবী.. মানে ইশি কবে যাবে?’
‘কেন বলছেন?’
‘কেন মানে? ওর ব্যবহার আচার-আচরণ ভালো ঠেকছে না। ওকে যত তাড়াতাড়ি পারো বিদেয় করো। কেমন গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে। আর কমন সেন্স কী নেই? এভাবে বলা নেই কওয়া নেই হুটহাট স্বল্প পরিচিত কারো বাড়িতে এসে থাকতে লেগেছে?’
‘আপনাকে কী কিছু করেছে?’
‘তুমি সেসব প্রশ্ন করো না। কোনমতে ওকে বিদায় করো। আর ভালো লাগছে না।’
‘আ-আচ্ছা ঠিক আছে।’
.
আজ তাহসিনের অফ ডে। তাই রুমে বসেই সময় কাঁটাচ্ছেন তিনি। কাজ কর্ম সেরে আমি সোফায় বসলাম। এদিকে তাহসিন নিচে নেমে এলেন রেডি হয়ে। আমি জিজ্ঞেস করার পূর্বেই হঠাৎ কোত্থেকে ইশি এসে প্রশ্ন করল, ‘তাহসিন সাহেব কোথাও যাচ্ছেন?’
তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন। হাসলাম আমি। কিন্তু.. সে তাহলে.. তাহসিনকে পটানোর ধান্দা করে এসেছে নাকি? ছিঃ কী নির্লজ্জ মেয়ে! তুই আমার হাসবেন্ড কে পটাবি? এই মেয়ে সত্যি একটা চরিত্রহীনা। প্রথমে আমার থেকে রিশানকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন তাহসিনকে? না না এটা তো আমি হতে দেব না। ইশি আবারো বলল, ‘এই মি. তাহসিন আপনাকে বলেছি। কোথায় যাচ্ছেন?’
‘কোথায় যাই না যাই এতে আপনার কী? আপনাকে বলতে হবে আমি কোথায় যাচ্ছি কী করছি?’
আমি বললাম, ‘মিস. ইশি! অন্যের প্রতি নজর না দিয়ে নিজেকে গোছাও৷ যাও নিজের কাজে যাও। গায়ে পড়ে কারো সাথে কথা বলতে এসো না।’
ইশি মুখ কুঁচকে রাগী ভাব নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেল। আমি বললাম, ‘কোথায় যাচ্ছেন ড. সাহেব?’
‘ফ্রেন্ডস দের কাছে যাচ্ছি ইবনাত।’
‘মানে আদিল ভাইয়াদের কাছে?’
‘হ্যাঁ। চিন্তা করো না তাড়াতাড়িই ফিরে আসব।’
‘শুনুন!’
‘হ্যাঁ বলো।’
‘একটা.. আবদার ছিল আমার।’
‘কী?’
‘আজ বিকেলে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবেন?’
‘সত্যি তুমি যাবে? তাহলে কেন নয়? অবশ্যই তুমি চাইলে যাব।’
‘সত্যি? থ্যাংক ইউ ড.!’
তিনি হেসে বেরিয়ে গেলেন। আমি কিচেনে যাওয়ার পূর্বেই ইশি এসে বলল, ‘কী ব্যাপার? আমার আগেই পটিয়ে নিয়েছ মিহিরের ভাসুর দা কে?’
‘মানে? কী বলছ এসব?’
‘মানে কী বুঝতে পারছ না? আমি কত সুন্দর তাহসিনকে প্রশ্ন করলাম সে কই যাচ্ছে। সে বিরক্ত হলো। অথচ তুমি প্রশ্ন করলে তো ভালোই ভালোই বলে দিল? আবার তোমাকে ঘুরতেও নিয়ে যাবে? বাহ্ বাহ্! এভাবেই রিশানকে পটিয়েছিলে তাই না?’
‘ঠাস’ করে লাগিয়ে দিলাম তার গালে। সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে সে। দাঁতে দাঁত চেঁপে বললাম, ‘এসবের জন্য এখানে এসেছ? তাহসিনকে পটাতে? তবে শুনে রাখো! ও তোমার রিশানের মতো নয়। আর না তোমার মতো। বেহায়া! পরিচয় বিহীন এখানে যে এক রাত থেকেছ এটাই অনেক বুঝতে পেরেছ? এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাট্টি গুট্টা বেঁধে বেরিয়ে যাও ঘর থেকে। নয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব। মাইন্ড ইট!’
কিচেনে চলে এলাম। নাহ্ এভাবে হতে দেওয়া যায় না। ওকে বিদেয় করতেই হবে। কিন্তু.. একটু ভিন্নভাবে।
.
আপনমনে শরবত বানাচ্ছে মিহির। ইবনাত বলে গেছে তাকে। শরবত বানানো শেষ হলে তা টেবিলে রেখে এলো। তারপর নিজ কাজে মন দিল। কিন্তু মাথায় একটাই চিন্তা, কেন তানসীব এমন রিয়েক্ট করল? এটা মেনে নিতে পারছে না মিহির। না চাইতেও আঁখিকোণ ভিজে উঠছে।
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেতেই ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরল মিহির। দেখল ইশি ডাইনিং রুমে আসছে। ওর উদ্দেশ্য ভালো ঠেকছে না। মিহির রান্নাঘরে লুকিয়ে তার কার্যকলাপ লক্ষ করতে লাগল। ইশি চোরের মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে জিন্সের পকেট থেকে একটা ছোট্ট বোতল বের করল। মিহির চমকাল। কী করছে সে? ইশি আবারো চোরের মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে বোতল খুলে ঢেকে রাখা শরবতে তরল পদার্থ গুলো ঢেলে দিল। বোতলের নাম টা অস্পষ্ট হলেও মিহির দূর থেকে বুঝতে পারল সেখানে লেখা ছিল, ইঁদুর মারার বিষ। মিহিরের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এই মেয়েটাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়াই ঠিক হয়নি। শেষে কিনা… ইশি শরবতে সব মিশিয়ে চলে গেল হাসতে হাসতে। আসলে ইবনাত যখন শরবত খুঁজেছিল মিহিরের কাছে তখন সে শুনেছিল।
রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম। তাহসিনও ততক্ষণে রেডি হয়ে নেমে এসেছেন আমার সাথে। মিহিরকে বললাম, ‘শরবত দিয়েছ মিহির?’
মিহির উত্তর দেয় না। এদিকে আমি টেবিলে ঢেকে রাখা গ্লাস দেখে বুঝলাম সে দিয়েছে। নিয়ে যেই খেতে যাব অমনি কেউ হেঁচকা টান দিয়ে তা কেড়ে নিল। ততক্ষণে গ্লাস টা নিচে পড়ে ভেঙে গেছে। গ্লাস ভাঙার শব্দে ইতোমধ্যে সবাই জড়ো হয়ে গেছে। ইশি আর আম্মুও চলে এসেছে। মিহিরের দিকে তাকিয়ে চমকে বললাম, ‘কী হয়েছে মিহির? তুমি এমন করছ কেন?’
মিহির বলল, ‘তুমি এটা কেন খাচ্ছ ভাবী?’
‘কেন মানে?’
‘জানো এতে কী আছে?’
‘কী?’
‘বিষ আছে বিষ।’
‘কী? কী যাতা বলছ বলো তো?’
‘ঠিক’ই বলছি ভাবী। এই ইশি এতে ইঁদুরের বিষ মিশিয়েছে।’
উপস্থিত সবাই হতভম্ব, ‘কীহ্!?’
ইশি চমকে বলল, ‘এ-সব ক-কী বলছ মিহির? আমি কে-ন বিষ মে-শা-তে যা-ব?’
‘তাহলে তুঁতলাচ্ছ কেন ভাবী জি?’
‘আব.. না এমনি। আর এতে বিষ আছে কে বলল? খেয়ে দেখেছ?’
‘না তা দেখিনি তবে তোমাকে মেশাতে দেখেছি। কী ভেবেছ কিছুই দেখিনি? কিচেন থেকে সব দেখেছি আমি। ইঁদুরের বিষ এনে ঢেলে দিয়েছিলে শরবতের গ্লাসে। কী ঠিক বলছি আমি?’
আমি অবাকেত চরম সীমানায় পৌছে গেলাম। এও? না না এভাবে আর থাকা যায় না। এগিয়ে গেলাম তার দিকে। ঠাঁটিয়ে ‘ঠাস’ করে চড় বসালাম তার গালে। ছি’টকে দূরে গিয়ে পড়ে গেল ইশি। তাকে তুলে আবারো চড় মারলাম। চেঁচিয়ে বললাম, ‘তুই? প্রথমত পরিচয় বিহীন বেহায়ার মতো এখানে এসে থাকছিস, তার উপর এসব? খুনি! ওই পরিবারের মতো খুনি হয়েছিস? ন’ষ্টা মেয়ে। আগে আমার থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে সুখে ছিলি না? এখন অন্যজনের সংসারে নজর দিচ্ছিস? এই তোর লজ্জা করে না এভাবে সম্পর্কহীন ফ্যামিলিতে এসে থাকতে? কেন রে তোর কী ঘর বাড়ী নেই? টাকা লোভী তুই? তোর কী বাবা মা নেই? তাদের কাছে গিয়ে থাক না। বেহায়া নির্লজ্জের মতো এখানে কেন পড়ে আছিস? আবার ন’ষ্টা’মো করছিস আমার হাসবেন্ডের সাথে? লজ্জা করছে না ডিভোর্স দেওয়ার পর এখানে এসে পড়ে থাকতে? খুনি! তোকে তো জেলে দিলেও কম হবে।’
এদিকে তাহসিন আমায় টেনে বললেন, ‘ইবনাত ইবনাত কী করছ? শান্ত হও। শান্ত হও!’
‘না তাহসিন আমায় ছাড়ুন। ও আমার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, শেষ পর্যন্ত দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছে। ওকে তো আমি ছাড়ব না।’
‘না ইবনাত এভাবে করলে কিছু হবে না।’
মিহির বলল, ‘ভাইয়া ভাবীকে ছেঁ’ড়ে দিন। এই মেয়ের শিক্ষা হওয়া উচিত।’
ইশি চেঁচিয়ে বলল, ‘এসব কী বলছ মিহির? এই মেয়ে কে হয় তোমার যে তার জন্য তোমার ভাবীকে অপমান করছ?’
কীহ্? কী নির্লজ্জ! সত্যি এই মেয়ে বেহায়া! ডিভোর্স নিজেই দিয়ে নিজেই বলছে ভাবী? চেঁচিয়ে বললাম, ‘আরেক বার তুই এই কথা বললে তোর জিভ টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলবো আমি। কী বললি? তুই ওর ভাবী? কোন অ্যাঙ্গেল দিয়ে তুই ওর ভাবী হোস বল! তুই নিজেই ওকে ডিভোর্স দিয়েছিস। আরেকজনের সাথে ন’ষ্টা’মো করতি। এসব জেনে যাওয়ায় তাকে ডিভোর্স দিয়েছিস। এখন আরেকজনকে ফাঁসাতে মিহিরের ভাবী হয়ে এই বাড়িতে থাকছিস? কেন রে তোর কী আত্মসম্মানবোধ নেই? নির্লজ্জ ন’ষ্টা মেয়ে কোথাকার!’
মিহির দূরে সরে গেল, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ! ওর মনে এসব ছিল? তাহলে তোদের ডিভোর্স হয়েছে? আর তুই পরিচয় দিচ্ছিস আমি তোর ননদ! বেয়াদব মেয়ে! ভাইয়া। পুলিশে ফোন দিন। একে জেলে দিন।’
ইশি ভয় পেয়ে গেল, ‘কী করছ মিহির? প্লীজ এমন করো না৷ আমি কী করেছি আমায় পুলিশে দেবে?’
‘কী করেছিস তুই? কেন তুই শরবতে ইঁদুরের বিষ মিশিয়ে ভাবীকে মারতে চাস নি?’
‘সব মিথ্যা তুমি কী দেখেছ বিষ আছে এতে?’
‘না আমার চোখ মিথ্যে বলছে আমাকে।’
এতসবের মাঝে আম্মু বললেন, ‘এভাবে করলে হবে না। পুলিশ স্টেশনে চলো। এই মেয়েকে এভাবে ছেঁ’ড়ে দিলে হবে না।’
‘নাহ্! প্লীজ এমন করবেন না। আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি।’
‘তোর না শশুড় বাড়ী চাই? যা একেবারে শশুড় বাড়ীতেই যা।’
‘ইবনাত প্লীজ এমন করো না। আমি সত্যি চলে যাব আর জীবনেও ফিরে আসব না।’
‘তোর আর ফিরে আসতে হবে না। আমার লাইফ হেল করে তুই চলে যাবি? তা আমি ইবনাত হতে দেব না।’
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]
কী? এখন খুশি তো? আপদ দু’টোই বিদায় করলাম। আর আপনাদের কালকের এমন রিয়েক্টের জন্য সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছি। আল্লাহ্ আপনাদের হায়াত বাড়িয়ে দিক নিজের টা না দেখে অন্যের অন্যায় সমালোচনা করতে।
যাক আর এক নয়তো দুই পর্বের মধ্যেই শেষ করে দেব। আর গল্পটা অগোছালো হয়ে গেছে। কারণ আমার আজ হতে মাসিক পরীক্ষা। যা বার্ষিক পরীক্ষার’ই অংশ। তাই বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। আর যার কারণে প্লট মাথায় আসছে না। তাই ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।