#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ২১
পিটপিট করে নেত্রপল্লব একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করলাম। সে যেন খুলতেই চাইছে না। আপ্রাণ প্রয়াস করলাম খোলার। অবশেষে একটু খুলতে সক্ষম হলাম। আমি চেয়ারে বসে আছি। উঠতে নিলেই অনুভব করলাম আমার হাত পা বাঁধা। একি! কোথায় আমি? আমি তো.. বাসায় যাচ্ছিলাম। ফুল কিনেছিলাম। আজ তাহসিনকে আমার মনের কথা বলার ছিল। কিন্তু.. বলা হলো না? এ কোথায় আমি? হ্যাঁ হ্যাঁ আমায় এক লোক রুমাল চেঁপে নিয়ে এসেছে। কে সে? এখন আমি কী করব? এভাবে বসে থাকব? না আগে তার উদ্দেশ্য তো জানতে হবে। চেঁচিয়ে বললাম, ‘ক-কেউ কী আছেন? প্লীজ আমার সামনে আসুন। আমার সঙ্গে আপনার কী শত্রুতা? কেন এভাবে তুলে নিয়ে এসেছেন আমাকে?’
খট করে দরজা খোলার শব্দ পেলাম। প্রবেশরত ব্যক্তি টা কে দেখে থমকে গেলাম। মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে রাগ। প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে এই মুহুর্তে তাকে একটা কষিয়ে চড় মারতে। দাঁতে দাঁত চেঁপে স্বাভাবিক স্বরে বললাম, ‘আপনি? কেন এনেছেন এভাবে আমায়? কী চান আমার থেকে?’
রিশান হেসে সামনে থাকা চেয়ার টায় বসে পড়ল। বলল, ‘কী চাই? তোমাকে চাই।’
‘হোয়াট ননসেন্স? যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।’
‘এত তাড়া কিসের মিস. ওহ্ স্যরি মিসেস. ইবনাত?’
‘লিসেন! প্রথমত একজন পরনারীকে তুলে নিয়ে আসার সাহস করেছেন, দ্বিতীয়ত ফালতু কথা বলছেন আমার সাথে? হাউ ডেয়ার ইউ?’
‘ওহ্ আচ্ছা? তোমাকে তুলে আনতে আমার সাহসের প্রয়োজন পড়বে না ইবুপরি।’
সেই আগের নামটা। মাথা যেন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, ‘ডোন’ট কল মি লাইক দ্যাট! এই নামে আমায় ডাকবেন না। আপনার কোন অধিকার নেই আমায় এই নামে ডাকার। নাও লেট মি গো। লিভ মি!!’
‘নো নো ইবুপরি। এত সহজে তো ছাড়ছি না। একটা সুযোগ পেয়েছি। এটা কেন হাত ছাড়া করব?’
‘প্লীজ যেতে দিন নয়তো আপনার অবস্থা খুব খারাপ হবে।’
‘হাহাহা! কী করবে তুমি আমার?’
‘দেখুন ভালোই ভালোই বলছি যেতে দিন।’
রিশান দাঁড়িয়ে পড়ল। এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘দেখ ইবনাত! আমি হয়তো একটা ভুল করেছি। কিন্তু তার জন্য এত বড় শাস্তি দিবে আমায়? কেন? বেশি বড় ভুল করে ফেলেছি? ক্ষমা করা যায় না? নতুন করে সব শুরু করা যায় না?’
হেসে ফেললাম, ‘হাহাহা! ক্ষমা? তা নাহয় করলাম কিন্তু নতুন করে শুরু করব? ভাবলেন কী করে? আপনার মতো ধোঁকাবাজকে আবার মেনে নেব? শুনে রাখুন মি. আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। চাইলেও নতুন করে শুরু করতে পারব না।
আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আপনার উপর থেকে সকল বিশ্বাস আমার হারিয়ে গেছে। শুনেছেন আপনি? আমি আপনাকে ভালোবাসি না।’
‘সত্যি আমায় ভালোবাসো না?’
‘না না না।’
‘তাহলে দু’বছর যে আমার সাথে ছিলে, তা কী সব মিথ্যে ছিল? সত্যি কী ভালোবেসেছিলে এই দুই বছর আমাকে? যে কিছুদিনের ব্যবধানে নতুন কাউকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছ?’
‘অ্যানাফ! জাস্ট অ্যানাফ! কী শুরু করলেন আপনি? দু’দিনের নতুন প্রেমিকা পেয়ে দু’বছরের সংসার তিন বছরের ভালোবাসাকে মাটিচাঁপা দিয়ে তাকে বিয়ে করে নিয়েছেন। আর এখন? ভালো সাজা হচ্ছে?’
‘দেখ ইবনাত আমি এত কিছু শুনতে চাই না। তুমি আমাকে বিয়ে করবে ব্যস!’
‘হোয়াট? আর ইউ মেড রিশান? আপনি ঠিক আছেন? আমাদের ডিভোর্স হয়েছে৷ আর আপনি বিয়ে করবেন তাও আমাকে মানে? লিসেন আমি বিবাহিতা। প্রায় পাঁচ মাসের উপর হচ্ছে আমার বিয়ে হয়েছে। আর আপনি আসছেন বিয়ে করতে হাউ ফানি! তা ছাড়া, আপনার স্ত্রী কোথায়? কোথায় মিস. ইশি? সে জানে না আপনি কী করছেন?’
রিশান নিশ্চুপ হয়ে গেল। মাথা নিচু করে একটু পর বলল, ‘ও.. ওর আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে ইবনাত।’
‘হোয়াট? লাইক সিরিয়াসলি?’
‘আমি মিথ্যে বলছি তোমাকে?’
‘হ্যাঁ আপনি তো মিথ্যুক অবশ্যই মিথ্যে বলতে পারেন।’
‘আমি মিথ্যে বলছি না ইবনাত। ও আমায় দু’মাস আগেই ডিভোর্স দিয়ে ফেলেছে।’
‘এটা ওর নয়, আপনার দো’ষ। আপনিই তো শুরু করেছিলেন এই মোহের আর এই বিনষ্টের খেলা। এখন আপনিই ভোগ করুন।
তখন যদি আমায় সত্যিই ভালোবাসতেন, কারো মোহে না পড়তেন তাহলে সুন্দর জীবন থাকত আমাদের। কিন্তু আর সম্ভব নয়। আপনি ভুল করে ফেলেছেন। ভুল নয় অপরাধ করেছেন আপনি। ভোগ করুন এবার।’
রিশান করুণ দৃষ্টি মেলে তাকায়, ‘ইবনাত!!’
বেশ শান্তস্বরেই বললাম, ‘নাহ্! আপনার প্রতি আমার কোন মায়া, অনুশোচনা কাজ করে না মি. রিশান। কোন ভালোবাসা কাজ করে না। আমি এখন শুধুই তাহসিন কে ভালোবাসি। শুধুই তাহসিনকে। আর সেই আমার একমাত্র শেষ ভালোবাসা।’
রিশান কঠোর ভাবে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কী আমায় বিয়ে করবে নাকি না? কাজী সাহেবকে ফোন করে দিয়েছি আমি।’
‘কীহ্? পাগল নাকি আপনি?’
‘হ্যাঁ আমি পাগল। তোমার নেশায় পাগল।’
‘দেখুন এসব ফালতু কথা ছাড়ুন আমায় যেতে দিন আমার দেরি হচ্ছে উনি চিন্তা করবেন।’
‘করুক তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। তুই আমায় বিয়ে করবি এটাই ফাইনাল কথা।’
‘রিশান!! আমি বিবাহিতা আর কোন বিবাহিতা মেয়ে স্বামী থাকা সত্ত্বেও কাউকে বিয়ে করলে সেটা বিয়ে নয় নষ্টামো শুনেছ তুমি? মেয়েদের একসাথে দু’টো বিয়ে হয় না।’
‘ঠিক আছে। তোকে নষ্ট করব আমি। তারপর তোর তাহসিন তো তোকে ডিভোর্স দিবেই। তখন তুই আমার হবি।’
‘না না রিশান না বলছি।’
‘তুই আমারই হবি। কোন তাহসিনের না। তুই আমার ছিলি আমারই থাকবি।’
‘রিশান না!!’
.
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তাহসিন কড়া নাড়তেই মিহির এসে দরজা খোলে দেয়। অন্যদিন হলে তো ইবনাতই দরজা খুলত। কিন্তু আজ.. তাহসিন ভাবল সে হয়তো কোন কাজে আছে। মিহির কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। তাহসিন রুমে গিয়েও ইবনাতকে দেখতে পেল না। গেল কই মেয়েটা? হয়তো কিচেনে। তাহসিন চেঞ্জ করে গোসল করে বেরিয়ে এলো। বিছানায় শুয়ে পড়ল। একটু পর কেউ দরজায় কড়া নাড়ল। মিহিরের গলা শুনতে পেল তাহসিন, ‘আসব ভাইয়া?’
তাহসিন সেভাবে থেকেই বলল, ‘আসো মিহির।’
দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল মিহির। তাকে বিষন্ন লাগছে। ইতস্তত বোধ করছে। তাহসিন তা লক্ষ করে বলল, ‘কী হয়েছে মিহির? কিছু বলবে?’
‘আহ্.. হ্যাঁ ভাইয়া।’
‘বলো।’
‘ভাইয়া আসলে.. ভাবী.. এখনো অবদি বাসায় ফেরেনি।’
‘হোয়াট!’
সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসল তাহসিন। বিচলিত হয়ে বলল, ‘কী বলছ এসব? ও বাসায় ফেরে নি?’
মিহির প্রায় কেঁদে দিল, ‘হ্যাঁ ভাইয়া! স্কুলে গিয়েছিল সেখান থেকে আর আসেনি।’
‘হোয়াট দ্যা.. তুমি আমায় আগে বলো নি কেন মিহির?’
‘কীভাবে বলতাম ভাইয়া? আমি জানতাম না যে ভাবী এখনো আসেনি। আমি কলেজে ছিলাম। ফিরে এসে আম্মু বলল ভাবী আসেনি। আমি ভাবলাম কাজ পড়েছে তাই আসেনি। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার পরও আসছে না। আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি রিসিভ করেন নি।’
তাহসিন উঠে দাঁড়াল। পরনে টি শার্ট আর ট্রাউজার। এই অবস্থায়ই বেরিয়ে গেল সে।
স্কুলে গিয়ে যখন জানতে পারল ইবনাত অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে। তা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।
কোথায় যেতে পারে? ভাগ্যিস মোবাইল নিয়ে বেরিয়েছে। সবাইকে ইবনাতের ছবি দেখিয়ে জানতে পারল সে সেই গলিটা দিয়ে গেছে। সেখানে গিয়ে দেখল পুরোটা নির্জন। কেউ নেই। সেই ফুলওয়ালা গুলোও নেই। তাহসিন এগিয়ে গেল খানিকটা। থমকে গেল। সেখানে ইবনাতের ব্যাগ টা পড়ে আছে। সাথে পড়ে আছে একটি বেলি ফুলের মালা আর জুঁই ফুলের গাজরা। সে বুঝতে পারল এগুলো ইবনাত কিনেছে। তাহসিন বসে পড়ল মাটিতে। তার ব্যাগ আর ফুল দু’টো তুলে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ গগন ফাঁটানো চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল তাহসিন।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]