অপ্রাপ্তি পর্ব-১৯

0
1110

#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৯

দ্বিপ্রহরের মধ্যভাগ। ঘর গোছানোর কাজ করছিল মিহির। পাশ থেকে কেউ বলে উঠে, ‘মিহির!’

মিহির পাশ ফিরে দেখে রিশান। এই মুহুর্তে তাহসিন তানসীব কেউ নেই। মিহির পূণরায় কাজে মন দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ ভাইয়া কিছু বলবে?’

‘হুম। এদিকে আয়।’

‘কোথায়?’

রিশান মিহিরের হাত ধরে টেনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। মিহির বলল, ‘আরে ভাইয়া কী করছ?’

‘তুই চল আমার সঙ্গে। কথা আছে।’

‘আরে..’

রিশান ছাদে গিয়ে মিহিরকে ছেড়ে দাঁড়াল। মিহির বলল, ‘কী হয়েছে? এভাবে নিয়ে এলে কেন?’

রিশান প্রশ্ন করল, ‘ইবনাত এই বাড়িতে কী করছে?’

‘এই বাড়িতে কী করছে মানে?’

‘মানে ইবনাত এই বাড়িতে কী করছে?’

‘মানে কী কিছু বুঝলাম না ভাইয়া। তাহলে আমি এই বাড়িতে কী করছি?’

‘তুই এই বাড়িতে কী করছিস মানে? তুই এই বাড়ির বউ। এটা তোর জায়গা।’

‘আমি যেমন এই বাড়ির বউ তেমনি ইবনাত ভাবীও এই বাড়ির বউ। এটা যেমন আমার জায়গা তেমনি ইবনাত ভাবীরও জায়গা।’

‘মানে? আর তুই ওকে ভাবী বলছিস কেন? ও এখন আমার বউ নেই।’

‘হাহাহা! তুমি কী ভেবেছ তোমার বউ হিসেবে ভাবী ডাকছি হাস্যকর! ইবনাত ভাবী আমার জা হয়।’

‘কীহ্? কী বলছিস এসব তুই?’

‘হ্যাঁ।’

‘মানে? কার বউ ও?’

‘কার আবার। বড় ভাইয়ার।’

‘বড় ভাইয়ার মানে? বড় ভাইয়া কে?’

‘আমার বরের বড় ভাই।’

‘কীহ্?! এসব কী বলছিস মিহির মাথা খারাপ নাকি তোর?’

‘না ভাইয়া আমার মাথা একদম ঠিক আছে। তাহসিন ভাইয়ার বউ এখন ভাবী।’

‘ওহ্ আচ্ছা? তাহলে বিয়ে করে নিয়েছে? হাহ্! এর কারণে এত তা’মাশা করে আমায় ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছে। দু’দিন পেরুতে না পেরুতেই বিয়ে করে নিয়েছে। তলে তলে এত কিছু চলছে আর আমি টের’ই পাই নি?’

মিহির এবার ধমকে উঠল, ‘ভাইয়া!!! খবরদার আর একটা বা’জে কথা বলবে না তুমি। ছিঃ তোমাকে ভাইয়া বলতেই লজ্জা করছে আমার। এতটা নিচ তুমি? আমি কী না এমন ফ্যামিলিতে জন্ম নিলাম যাদের মনমানসিকতা এত নিচ! ছিঃ! একে তো নিজের বউ থাকা সত্ত্বেও অন্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছ। তাকে নিয়ে খালপাড়ে বাদাম খেতে যাচ্ছ। তার সঙ্গে খুনসুটি করছ। আর দিন শেষে এসব সহ্য করেও ভাবী দু’বছর তোমার দিকে তাকিয়ে ওই ঘরে ছিল যা আমার জন্যেও নরকের মতো। আর সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দিল এটা ভাবীর দো’ষ? তুমি ভাবীকে ডিভোর্স দেওয়ার দু’দিন পরেই ধুমধাম বিয়ে করে নিয়েছ। আর এখন ভাবী বিয়ে করেছে তাই ভাবীর দো’ষ? তুমি কী করেছ তার কোন বিচার নেই? নির্লজ্জ তুমি একটা! কেন তোমার নিজের বউ নেই? অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিচ্ছ কেন? সে থাক। যেখানেই থাকুক থাক। তোমার কী? তুমি কেন এত নাক গলাচ্ছ? নিজের বউ নিয়ে সুখে থাকো না। ভাবীর সঙ্গে এখন তোমার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। তোমাদের ডিভোর্স হয়েছে এখন প্রায় পাঁচ থেকে সাত মাস হতে চলেছে। আর তুমি এখন আসছ সে এখানে কী করছে না করছে তা নিয়ে? বোনকে দেখতে এসেছ অন্যকে নয়। তাই বোনকে দেখেই স্ব-সম্মানে বিদেয় হও। অন্যের দিকে দেখার প্রয়োজন নেই। আর হা তোমার এই অন্যের দিকে নজর দেওয়ার লুচ্চামি স্বভাব টা চেইঞ্জ করো। আর হা! ভাবীর কাছে যাওয়ার একদম চেষ্টা করবে না। এই ঘরে তার স্বামী আছে। সে পরপুরুষের সঙ্গে নিজের বউকে সহ্য করতে পারবে না। পারলে নিজের বউকে কীভাবে সামলাবে তার চেষ্টা করো।’

‘মিহির!!!’

‘চিল্লাবে না ভাইয়া। এটা তোমার বাড়ি নয়। এটা আমার শশুড় বাড়ী। বুঝেছ?’

বলেই মিহির আর এক লহমাও অপেক্ষা করল না মিহির। হনহন করে নিচে নেমে এলো। রাগে মাথার তার ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে। তার ভাই এতটা নির্লজ্জ কবে হলো?

.

দুপুরের খাবারও নিজের রুমে খেয়েছি। আমার কোন ইচ্ছে নেই ওই বে-আদবটার মুখোমুখি হওয়ার। কতটা বেহায়া হলে মানুষ এসব করতে পারে ছিঃ! প্রায় বিকেল ঘনিয়ে এসেছে। মিহির জানাল তারা চলে গেছে৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক আপদ বিদেয় হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে তাহসিন ফিরে এলেন। পরণে ডক্টরি অ্যাপ্রোন। আর ভেতরে টাই সহ সাদা শার্ট। ঘর্মাক্ত শরীরে শার্ট টি লেপ্টে আছে৷ আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে অ্যাপ্রোন খুলে রাখলেন। আমি টেবিলে তার জন্য বানিয়ে রাখা লেবুর শরবত এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘নিন আগে খেয়ে নিন। খেয়ে একটু ঠান্ডা হোন।’

তাহসিন হেসে জবাব দিলেন, ‘হুম।’ শরবতে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘শুনেছিলাম আজ নাকি মিহিরের ফ্যামিলি এসেছে?’

‘হুম।’

‘রিশান এসেছিল?’

‘হ-হ্যাঁ।’

‘কিছু করেছে তোমাকে?’

‘ক-কই না তো।’

‘ইবনাত সত্যি করে বলো।’

‘সত্যি বলছি।’

‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। মিহির আমাকে ফোন দিয়েছিল। আর বলেছে তাড়াতাড়ি আসতে ওর ভাইয়ের লক্ষণ নাকি ভালো না। আর ও নাকি তোমাকে স্টোর রুমের দিকে নিয়ে যেতে দেখেছে রিশানকে।’

‘কীহ্? মিহির?’

‘হ্যাঁ।’

মাথা নিচু করে বললাম, ‘আসলে.. আমি এখানে কী করছি সেটাই সে জানতে এসেছিল। আমি এই বাড়ির বউ শোনার পর বা’জে কথা বলেছিল।’

‘ড্যাম ইট কী বলেছিল?’

‘আব.. বলছিল যে আমি আপনার সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্কে জড়িয়েছি। নোং’রা’মি করেছি।’

‘হোয়াট! এই রিশানকে তো ছাড়ব না আমি।’

‘প্লীজ প্লীজ! ঝামেলায় জড়াবেন না। আমি অনুরোধ করছি প্লীজ।’

‘কেন এমন করছ বলো তো?’

‘আমি চাই না ঝামেলা করতে। যদি কিছু করতে হয়, তো আমিই করব।’

তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।

.

স্কুল থেকে বেরিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম। কিছু খেতে মন চাইছে। টেবিলে বসে খাবার অর্ডার দিয়ে মোবাইল টেপাটেপি করতে লাগলাম। হঠাৎ টেবিলে একটু আওয়াজ হলো। চোখ তুলে তাকাতেই মুহুর্তে মাথা টা গরম হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেঁপে বললাম, ‘মি. রিশান! আপনি এখানে কী করছেন?’

রিশান ভাবলেশহীন ভাবে বলল, ‘এটা তোমার বাপের রেস্টুরেন্ট না মিস. ইবনাত।’

‘মিস. নয় মিসেস.। আর হা এখানে টেবিলের অভাব নেই যে আপনি শুধু এই টেবিল টাই পেলেন। দয়া করে অন্য টেবিলে যান।’

‘এই টেবিল গুলো তুমি কিনে নাও নি। সো এখানে বসার অধিকার আমার আছে।’

‘আচ্ছা? ঠিক আছে।’

আমি ব্যাগ নিয়ে উঠে অন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ বাদে রিশানও এসে আমার সোজাসুজি চেয়ারে বসে পড়ল। মাথায় রক্ত উঠে গেল। রেগে বললাম, ‘হাউ ডেয়ার ইউ? আমি আপনার বসার জন্য ওই টেবিল ছেড়ে এলাম আবার আপনি এখানে এসেছেন? কেউ তো তুলে দেয় নি আপনাকে।’

‘শুনো! আমার সাথে বসলে এমন কিছু হয়ে যাবে না। একসময় আমি তোমার স্বামী ছিলাম। সো একসাথে বসার অধিকার আমার আছে।’

‘হ্যাঁ ছিলেন কিন্তু এখন নেই। আপনি আমার প্রাক্তন। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। ভুলে গেছেন? নিজেকে আমার স্বামী বলছেন? নির্লজ্জ! স্ত্রী থাকতে পরনারীর সঙ্গে অসভ্যতামি করছেন।’

‘ইবনাত!!’

‘শাট আপ! অনেক হয়েছে। যান এখান থেকে। নয়তো আমি ম্যানেজার কে ডেকে আপনাকে ঘাড় ধা’ক্কা দিয়ে বের করব।’

‘আচ্ছা? খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়ে উড়াল দিতে মন চাইছে? সাথী পেয়েছ? জীবন চলার সাথী? এতদিন তেজ গুলো কই ছিল? মুক্তি পেয়ে তেজ বেড়েছে? নাগর পেয়েছ না? এখন তো পাবেই। এসব করতেই সোনালী সংসার ছেড়ে এসেছ।’

কান লাল হয়ে গেল তার এমন কথা শুনে। আর অপেক্ষা করলাম না, ‘ঠাস’ করে চড় বসিয়ে দিলাম তার বাঁ গালে। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই আমাদের দিকে দৃষ্টি মেলে তাকাল। চেঁচিয়ে বললাম, ‘শ্যামলেস! এতদিন স্ত্রী থাকতে পরকীয়া করেছেন। এখন আমি ছেড়ে এসে বিয়ে করেছি তাই আমি নোংরা। আর আপনি কী? খুব পবিত্র! আজ ছে’ড়ে দিলাম। অন্য দিন যদি এমন অসভ্যের মতো আচরণ করেন তাহলে এর উচিত জবাব আর শিক্ষা আমি দিয়ে ছাড়ব মি. রিশান। কথা টা মাথায় রাখবেন।’

সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এলাম অর্ডার ক্যান্সেল করে। কত বড় সাহস! নিজে দো’ষ করে বা’জে কথা শুনাবে আমাকে? নাহ্ কিছু তো করতেই হবে। হ্যাঁ কিছু তো করতেই হবে। কিন্তু কী? ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে এসে পৌছালাম। গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই হঠাৎ মাথায় কিছু খেলে গেল। এই তো পেয়েছি! পেয়েছি! হ্যাঁ এটাই কাজে লাগাতে হবে। মি. রিশান। আপনার শেষ দিন ঘনিয়ে আসছে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে