অপ্রাপ্তি পর্ব-১৮

0
1152

#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৮

‘একি ভাবী? স্কুলে যাচ্ছ?’

‘হ্যাঁ মিহির। আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট গার্জিয়ান দের আর টিচার্স দের মিটিং আছে তাই জরুরি যেতে হবে।’

‘কিন্তু ভাবী তোমাকে তো একটু আগেই বললাম আজ ভাইয়ারা আসবে।’

‘হ্যাঁ আমি জানি কিন্তু এখনই প্রিন্সিপাল ম্যাম আমায় ফোন করে এই ব্যাপারে জানিয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে স্কুলে প্রেজেন্ট থাকতে বলেছেন।’

‘আচ্ছা। কবে আসবে?’

‘এই দশটা ত্রিশে শুরু হবে। বারো টায় শেষ হবে। চিন্তা করো না আমি চলে আসব।’

‘আচ্ছা ভাবী।’

তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ ম্যাম বলল যে আজ অভিভাবক আর টিচার্সদের সমাবেশ আছে তাই আর কী।

.

স্কুলের কার্য শেষ বেরিয়ে এলাম। নিধি ম্যাম বললেন, ‘এই যে ইবনাত ম্যাম। তোমার নাকি বিবাহ্ হয়েছে আবার?’

হেসে বললাম, ‘জ্বী ম্যাম।’

‘আগের টার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে?’

‘হুম।’

‘তা সেও কী বিয়ে করে নিয়েছে?’

‘জ্বী ম্যাম। ও তো করবেই। এটা তো ওর রক্তে বইছে তাই না?’

‘বুঝলাম না। কিন্তু কেন হয়েছিল আজও বললে না?’

যেতে যেতে তাকে দু’বছরে হওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম। নিধি ম্যাম শেষে বললেন, ‘তোমার ওদের শুরুতেই পুলিশে দেওয়া উচিত ছিল ইবনাত। কিন্তু তুমি দাওনি এটাই তোমার ভুল।’

‘হুম আমি বুঝতে পারছি। তবে যদি কোন কারণ পাই তাহলে অবশ্যই পুলিশে দিতে দু’বার ভাববো না।’

‘হুম। ওকে বেস্ট অফ লাক।’

‘থ্যাংক ইউ ম্যাম।’

‘ইট’স ওকে ম্যাম।’

নিধি ম্যামকে বিদায় দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

.

ঘরে প্রবেশ করতেই থমকে গেলাম এক শুকিয়ে যাওয়া চিরচেনা মুখ দেখে। রিশান!! বসে আছে সোফায়। আর তার সাথে মা.. মানে তার মা, ইশি, ইশান আর রুমি। ঘরে কিছু ঘনিষ্ঠ মেহমান এখনো রয়ে গেছে। তারাও আজ চলে যাবে। আমি আস্তে করে তাদের সামনে দিয়েই উপরে চলে আসলাম। আমাকে দেখে সবাই বড় ধরণের শক খায়। তাদের ধারণা আমি এখানে কী করছি? যাক তাতে আমার কী? আমি কখনো তাদের বুঝতে দেব না যে আমি কী ছিলাম আর এখন কী আছি।

ফ্রেশ হয়ে নিজেকে শক্ত করে নিচে নেমে এলাম। এসে দেখি মিহির তাদের খাতির যত্ন করছে। আমাকে দেখে মিহির বলল, ‘এসে গেছ ভাবী?’

‘হ্যাঁ এসেছি। আচ্ছা তুমি উনাদের সার্ভ করো আমি কিচেনে যাচ্ছি।’

‘ওকে ভাবী।’

রিশান কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার মায়ের চেহারা টা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে। কিছু টা মায়া লাগল। একটু পর মিহির এসে বলল, ‘ভাবী। দেখেছ ওদের হাল? ইশান ভাইয়া আর ছোট ভাবী তো এখন একে অপরের দিকে তাকায়ও না।’

‘আচ্ছা সেসব বাদ দাও। আমি গোসলে যাচ্ছি তুমি একটু খেয়াল রেখো ঠিক আছে?’

‘আচ্ছা ভাবী।’

আবারো তাদের সামনে দিয়ে রুমে চলে আসলাম। গোসল সেরে নিচে নেমে এলাম। এই মুহুর্তে রিশান সেখানে নেই। শুধু ইশি, ইশান আর রুমি বসে আছে। আর রাহেলা বেগম আম্মুর সঙ্গে কথা বলছেন। ভ্রু কুঁচকালাম। ও আবার কোথায় গেল? এদিকে আম্মু আমাকে দেখতে পেয়ে কাছে ডেকে বলল, ‘মা ইবনাত স্টোর রুমে গিয়ে কাঁচের সেট টা নিয়ে এসো তো।’

‘জ্বী আম্মু।’

মায়ের কথা মতো সিড়ি বেয়ে নিচের গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামলাম। কিন্তু স্টোর রুমে ঢুকার পূর্বেই কেউ যেন টান দিয়ে সেখানে নিয়ে দেওয়ালের সঙ্গে চেঁপে ধরল। ভয়ে চিৎকার দেওয়ার পূর্বেই সে আমার মুখ চেঁপে ধরে বলল, ‘চুপ করো। আমি রিশান।’

মুখ থেকে তার হাত ছাড়িয়ে শক্তমুখে বললাম, ‘আপনি এখানে কী করছেন? আর আমার হাত ধরার সাহস আপনাকে কে দিল? আর আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? ছাড়ুন। ছাড়ুন বলছি।’

‘উহু উহু দাঁড়াও দাঁড়াও। কিছু প্রশ্ন করি।’

‘আমি আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই। ছাড়ুন বলছি।’

‘আরে ইবনাত কী করছ কী? শান্ত হও। আচ্ছা এটা বলো। তুমি এখানে কী করছ?’

‘যাই করি আপনার কী?’

‘আরে আমার বোনের শশুরবাড়ীতে তুমি কী করছ তা আমার দেখতে হবে না?’

‘আমি আপনার কে হ্যাঁ? কেউ নই যে আমি কী করছি না করছি তা আপনি দেখবেন। ছাড়ুন বলছি। পরনারীকে স্পর্শ করতে খুব ভালো লাগে তাই না?’

‘তুমি আমার পরনারী?’

‘এক্সকিউজ মি, মি. রিশান। আমি আপনার পরনারী নই?’

‘কেন হবে? এক সময় তো আমার বউ ছিলে।’

‘শাট আপ! আমাকে নিজের বউ দাবী করার দুঃসাহস টা আপনি করবেন না। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে প্রায় পাঁচ থেকে ছ’মাস হচ্ছে। আর এখন আসছেন বউ নিয়ে? নো ওয়ে। ছাড়ুন।’

‘স্টপ! আমার প্রশ্নের জবাব দাও। এখানে কী করছ তুমি? কেন আছো এখানে?’

‘তাতে আপনার কী? আমি আমার ইচ্ছে মতো যেখানে খুশি যাব যেখানে খুশি থাকব আপনার কী?’

‘ইবনাত যেটা বলেছি সেটার উওর দাও।’

‘নাহ্ দিব না। ছাড়ুন আমাকে।’

‘ইবনাত!! তুমি না বলা অবদি ছাড়ছি না।’

‘ঠিক আছে। জানতে চান আমি এখানে কী করছি? জানতে চান আমি এখানকার কে? তবে শুনে রাখুন। আমি এখানকার বউ। এই বাড়ির বড় ছেলের বউ। শুনেছেন আপনি? আপনার বোনের জা আমি।’

‘কীহ্?’

রিশান চমকে গেল। মুখ বিবর্ণ ধারণ করল। কিছুক্ষণ শূণ্যভাবে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। হঠাৎ গম্ভীর গলায় রিশান বলে উঠল, ‘ও আচ্ছা? এসব করতে আমায় ডিভোর্স দিয়ে এসেছ? কখন থেকে চলছিল এসব? ক’মাস ধরে?’

অধর দু’টো আপনা-আপনি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। শক্ত মুখে বললাম, ‘ইউ রাবিশ ম্যান। লিভ মি জাস্ট লিভ মি। আপনার মতো নোংরা লোক আমি জীবনে দু’টো দেখিনি। ছিঃ নির্লজ্জ। নিজে তো বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও অন্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর এখন আমাকে? ছিঃ! শেইমলেস!’

দ্রুত ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে পাশে থাকা কাঁচের সেট টা নিয়ে উপরের দিকে ছুটলাম। ওর মন মানসিকতা এতটা নিচ ধারণাই ছিল না। এদিকে দিয়ে আসার সময় কেউ সিড়ির পাশের রুমে টান দিয়ে নিয়ে গেল। ইশিকে দেখে মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল। হালকা চেঁচিয়ে বললাম, ‘কী সমস্যা কী? এভাবে টেনে আনার মানে টা কী?’

ইশি বলল, ‘ওমা! ভীতু বুড়ির তেজ দেখো! এই! আমার সঙ্গে চিল্লানোর সাহস কী করে হলো তোমার? আর তুমি এখনো এই বাড়িতে কী করছ?’

‘এই! আমাকে সাহস শিখানোর কে তুমি? বেড়াতে এসেছ গেস্ট হিসেবে। গেস্টের মতো থাক। খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করো না মাইন্ড ইট।’

‘তোমার সাহস তো কম নয় তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ?’

‘আর তোমার সাহস তো কম নয় আমার বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ?’

‘তোমার বাড়ি মানে? আর তুমি এখনো এখানে কী করছ?’

‘তোমাকে বলতে হবে নাকি? তাহলে তুমি বলো তুমি এখানে কী করছ মিসেস. রিশান?’

‘শাট আপ। দেখতে পাচ্ছ না বেড়াতে এসেছি।’

‘তো তুমি দেখতে পাচ্ছ আমি এখানে থাকি?’

‘মানে?’

‘শাট আপ অনেক কথা হয়েছে। নিজের লিমিটে থাকো মিসেস. ইশি৷ নয়তো খুব খারাপ হবে কিন্তু।’

বলেই আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালাম না। চলে এলাম সেখান থেকে। সাহস কত বড়! আমার শশুর বাড়ি এসে আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার? এক এক টাকে শিক্ষা করে ছাড়ব। আমার সঙ্গে করা প্রতিটা অন্যায়ের হিসাব আমি নিয়ে ছাড়ব। আর নাহলে আমি ইবনাত নই!!!

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে