#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৭
‘উহুম! আসতে পারি?’
কারো কোমল কন্ঠস্বর শুনে কিছুটা কেঁপে উঠল মিহির। মাথা নিচু করে বলল, ‘জ-জ্বী আসুন।’
মিহির কিছুটা অবাক হলো। বাসর ঘরে আসতে কেউ অনুমতি নেয়? তানসীব এসে মিহিরের পাশে বসল। মিহির এখনো মাথা নিচু করে আছে। তানসীব বলল, ‘এই যে! শান্ত হোন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখানে সব নরমাল। আর এভাবে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবেন না। দিল এ লাগে।’
মিহির লজ্জায় নুইয়ে গেল। তানসীব হেসে বলল, ‘লজ্জাবতী! জানেন? আমার না লজ্জাবতী ফুল খুব ভালো লাগে। খুব প্রিয়।’
মিহির কিছু না বলে তা শ্রবণ করতে লাগল। তানসীব আবারো বলল, ‘আপনার নাম কী যেন? মিহু?’
মিহির এবার আস্তে করে বলল, ‘ন-না। মিহির।’
‘সে যাইহোক। আমি কিন্তু মিহুই ডাকব।’
হঠাৎ মিহিরের অধরের কোণে মুচকি হাসির রেখা দেখা গেল। এখন অবদি মানুষ টাকে সে দেখেনি। তানসীব বলল, ‘এই যে মিস. ওহ্ স্যরি মিসেস. মিহু। আপনি শান্ত হয়ে বসতে পারেন। এত লজ্জা, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি কোন বাঘ, ভাল্লুক বা হায়েনা না। আমি মানুষ। আপনার মতোই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।’
মিহির বলল, ‘জ-জ্বী আমি.. জানি।’
‘তাহলে? এত নার্ভাস ফিল করছেন কেন?’
‘ক-কই?’
‘এই তো এখনো কাঁপছেন।’
‘না না আমি ঠিক আছি।’
‘আচ্ছা?’
কিছুক্ষণ নিরবতা। মিহির এবার বলল, ‘আপনি সেই কবে থেকেই আমায় আপনি আপনি করে যাচ্ছেন। আমি আপনার ছোট। দয়া করে আপনি বলবেন না।’
তানসীব হেসে বলল, ‘আচ্ছা? ঠিক আছে বললাম না হয়। কিন্তু প্লীজ এভাবে গুটিয়ে শুটিয়ে বসে থেকো না।’
‘জ্বী।’
কিছুক্ষণ পর তানসীব বলল, ‘আচ্ছা আমরা কী বন্ধু হতে পারি?’
মিহির অবাক হয়ে চেয়ে রইল। তানসীব তা দেখে বলল, ‘আরে এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। শুধু বন্ধু হতেই তো বললাম। হবে বন্ধু?’
হাত বাড়িয়ে উওরের আশায় মিহিরের দিকে চেয়ে রয় তানসীব। আকুল তার মন। মিহির তার হাতের দিকে চেয়ে রইল। এই হাতকে যে সে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। কাঁপা হাতটি তার হাতের উপর রেখে বলল, ‘হ্যাঁ হবো।’
‘আমার নাম তো বোধহয় শুনেছ? আমি তানসীব।’
‘জ্বীহ্ শুনেছি।’
‘তা তোমার বিষয়ে কিছু বললে না।’
‘আমি..’
‘তুমি মিহির আমি জানি।’
‘আমি..’
‘তুমি এস’এস’সি দিয়েছ তাও জানি।’
‘মানে? আপনি তো আমায় বলতেও দিচ্ছেন না।’
‘হাহাহা! আসলে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে আমার খুব ভালো লাগে। যেমন তোমাকে। শুনো মিহু। আমরা হয়তো স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু আমি চাচ্ছি না আগেই এমন কোন সম্পর্ক তৈরি করতে। আগে আমরা বন্ধু হবো। একে অপরকে জানব। একে অপরের ভালো লাগা মন্দ লাগার বিষয়ে জানব। একে অপরের খেয়াল রাখব। আর ভালো বন্ধু হবো। আমি চাই আমার স্ত্রী যেন অলওয়েজ আমার সঙ্গে ফ্রি থাকে।’
মিহির অপলক চেয়ে রয় তার দিকে। কে এই লোক? কেন এত মুগ্ধতা তার মাঝে। সে স্বামী তাই? কিন্তু তাকে তো সে চেনে না। এটাই হয়তো সৃষ্টি কর্তা এমন ভাবে করে রেখেছেন।
.
সকালের স্লান আলো চোখে পড়তেই ঘুম চোখ থেকে নামিয়ে চারদিকে পলক ফেলে উঠে বসলাম। তাহসিন এখনো ঘুমিয়ে আছেন। অনেক ধকল গেছে তার উপর তাই ক্লান্ত হয়ে আছেন। আর ডাকলাম না। এক পলক তার দিকে তাকিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম। নিচে নেমে মিহিরকে নাস্তা বানাতে দেখে দ্রুত গিয়ে থামিয়ে বললাম, ‘এই মেয়ে এই! তোমাকে কাজ করতে বলেছে কে?’
‘ওমা কাজ করতে আবার বলতে হয় নাকি? আমার ইচ্ছে হলো তাই করছি।’
‘উহু। কোন ইচ্ছে চলবে না। যাও রুমে যাও।’
‘ভাবী!’
‘উহু নো ভাবী। নো অজুহাত। যাও।’
‘প্লীজ প্লীজ করতে দাও। আচ্ছা তুমি করো আমি হেল্প করছি।’
‘মিহির!’
‘প্লীজ!’
‘আহ্!! আচ্ছা।’
রুটি বেলতে বেলতে মিহিরকে বললাম, ‘তোমাদের ঘরের কী অবস্থা?’
‘আর বলো না ভাবী। ওই ইশি টা আসার পর থেকে তো জানোই সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ওর আর ভাইয়ার সম্পর্কও তেমন ঠিক না। ছোট ভাবী আর ছোট ভাইয়া আছে সারাদিন ঝগড়াতে।’
‘অন্যের ক্ষ’তি করলে নিজেরই ক্ষ’তি হয়।’
‘হুম। আচ্ছা তুমি কী ভাবছ? কী করবে? প্রথমে তো বলেছিলাম ওদের পুলিশে দিতে। কিন্তু তুমি দাও নি।’
‘বলেছিলাম তো পুলিশের উপর আমার বিশ্বাস নেই।’
‘ছাড়ানোর কোন উপায় নেই ভাবী। যেহেতু ইবনান আঙ্কেল কে সবাই বড় সার্জন হিসেবে চেনে। আর তোমার বড় মামাও তো পুলিশ ভুলে গেলে?’
‘ভালো কথা বললে তো মিহির। এটা তো ভেবে দেখিনি।’
‘হ্যাঁ এখন এটাই কাজে লাগাও ভাবী।’
‘কিন্তু কোন কারণ তো নেই। এখন ওসবের অনেক দিন পেরিয়ে গেছে। যদি নতুন কোন কারণ পাই, আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করব না। জাস্ট একটা সুযোগ!’
‘হুম।’
.
বিয়ের প্রায় তিন দিন কেঁটে গেছে। মেহমানের ঝামেলা কিছুটা কমে এসেছে। রুমে বসে স্কুলের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা করছিলাম ম্যাডামদের সঙ্গে। তখন মিহির প্রবেশ করে। এই মুহুর্তে তাহসিন হসপিটালে। আর তানসীব আর বাবা অফিসে। তাকে দেখে হেসে বললাম, ‘মিহির? এসো।’
মিহির এসে আমার পাশে বসে বলল, ‘মেবি বিজি আছো?’
‘হ্যাঁ ওয়েট আমার হয়ে গেছে। আচ্ছা ম্যাম আমি আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি৷ কাল স্কুলে কথা হবে।’
ল্যাপটপ অফ করে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কী হয়েছে মিহির? মন খারাপ মনে হচ্ছে?’
‘হুম।’
‘কেন?’
‘আজ আম্মুরা আসবে।’
‘কী?’
‘হ্যাঁ ভাবী।’
‘ওহ্.. কে কে আসবে?’
‘আম্মু, ভাইয়া, ইশি, ছোট ভাইয়া, আর ছোট ভাবী।’
‘বাবা.. মানে আঙ্কেল আসবে না?’
‘নাহ্। আব্বু নাকি একটু অসুস্থ তাই আসবে না।’
‘ওহ্!’
‘কী করবে?’
বাঁকা হেসে বললাম, ‘যা করার তা তো করবই। এবার ও বুঝবে যে আমি সেই ইবনাতই আছি। যে নিজের সঙ্গে করা অন্যায়ের প্রতিবাদ সে নিজেই করে।’
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]