#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১১
‘তোকে কিছু বলার ছিলো মা। কিন্তু কীভাবে বলব তা বুঝতে পারছি না।’
বাবার কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। বললাম, ‘কেন বাবা? বলো কী বলবে? আমায় বলতে এত সংকোচ করতে হবে না। বলো।’
‘আমি বুঝতে পারছি না তুই কীভাবে নিবি কিন্তু.. আমি এটা প্রয়োজনীয় মনে করছি।’
‘আচ্ছা বাবা বলো।’
‘তুই কী মানবি?’
‘তুমি আমার কাছে অনুরোধ করছো? কিন্তু তোমার কথা গুলো আমার কাছে আদেশ বাবা। আমি মানব ইন শা আল্লাহ্।’
‘যা বলি মানবি?’
‘হ্যাঁ বাবা মানব।’
‘যদি বলি তোর বিয়ে ঠিক করেছি। মানবি?’
চোখজোড়া পলকহীন হয়ে গেল। দুই অধর একে অপর থেকে হালকা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। থমকে গেলাম আমি। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। একটু পর অস্ফুট স্বরে বললাম, ‘ব-বাবা! এ-এসব কী বলছো?’
‘আমি যা বলার তাই বলছি ইবনাত।’
‘ম-ম-মানে?’
‘হ্যাঁ ইবনাত। আমি তোর বিয়ে ঠিক করতে চাই।’
‘তুমি না বলে বিয়ে ঠিক করেছ আমার? আমার মতামত একবারও জানার চেষ্টা করলে না?’
‘ঠিক করে ফেলিনি মা। শুধুই কথা চলছে। তোর মতামতই চাইছি। তুই যদি না করিস তাহলে আমি না করে দেব। কিন্তু মা.. আমি তোর ভালোর জন্যই করছি রে। আমি চাই না আমার মেয়েটা প্রতিনিয়ত এভাবে কষ্ট পেয়ে যাক।’
‘আমি কী তোমায় একবারও বলেছি আমি কষ্ট পাচ্ছি?’
‘বলিস নি। জানি বলবিও না। কিন্তু আমি কী বুঝি না?’
‘কিন্তু বাবা.. আমি চাই না এসবে নিজেকে জড়াতে।’
‘মা-রে। আমি জানি তুই রিশানের এসব দেখে সবার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিস। কিন্তু ছেলে খুব ভালো রে মা। আমার অধীনেই কাজ করে ও।’
‘মানে কী বাবা? আমি.. চাইছি না আর কারো লাইফে যেতে। তা ছাড়া আমি ডিভোর্সী। কোন ছেলেই চাইবে না কোন ডিভোর্সী তার স্ত্রী হোক।’
‘ছেলে টা খুব ভালো রে। ও মেয়েদের খুব সম্মান করে। রিশানের মতো নয়। ও একজন সার্জেন্ট। খুব ভালো ও। আর জানিস আমার স্বপ্ন ছিল একজন সার্জেন্টের সাথেই তোর বিয়ে দিব কিন্তু তুই তার আগেই.. যাক এসব কথা বাদ। তুই একবার ভেবে দেখিস৷ আমি তোকে জোর করব না। আর আমাকে ভুল বুঝিস না।’
চুপ করে রইলাম। মাগরীবের আজান দিতেই সবাই উঠে দাঁড়াল। বাবা মসজিদে চলে যায়। আমি আর মিহির রুমে ফিরে আসি। নামাজ শেষে দু’জন বিছানায় বসলাম৷ মিহির বলল, ‘তুমি কী ভাবছো আপু? আঙ্কেল কিন্তু ঠিক’ই বলছে। তোমার ভালোর জন্যই বলছে৷ আমিও মনে করি এতেই তোমার মঙ্গল।’
‘মানে? তুমিও বলছো?’
‘হ্যাঁ আপু। দেখ.. ভাইয়াকে দেখ। তোমার সঙ্গে ডিভোর্সের দু’দিন পরেই ও বিয়ে করে নিয়েছে ওর প্রেমিকাকে। আর তুমি? আগের বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে কষ্ট পাচ্ছ? কেন? ভাইয়া তো দিব্যি ভালো আছে। তুমি কেন নিজের সুখ কে বলি দিচ্ছ?’
নিরুত্তর আমি। কী বলব? আসলেই তো। সে তার সুখের বিয়ে করে নিয়েছে তাহলে আমি কেন তার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি? মিহির আবারো বলল, ‘আপু! তুমিও ভাইয়াকে দেখিয়ে দাও তুমি সুখে আছো। তুমিও ভাইয়াকে দেখিয়ে দাও তুমি হ্যাপিলি একজনের সঙ্গে লাইফ লিড করছ।’
নিরুত্তর তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মিহির আবারো বলল, ‘দেখ আপু, প্রথমবার তুমি তোমার বাবাকে কষ্ট দিয়েছ তার স্বপ্ন ভেঙে৷ তার আশা ছিল তোমাকে একজন সার্জেন্টের সঙ্গে বিয়ে দিবেন। কিন্তু তুমি তার আশা ভেঙে ভাইয়াকে বিয়ে করে নিয়েছ। কিন্তু তোমার সুখের কথা ভেবে আঙ্কেল কিছুই বলেনি। আর দেখ! বাবাকে কষ্ট দিয়েছ তাই সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিদান তোমায় দিয়েছে। ভাইয়াও তোমায় ধোঁকা দিয়েছে আর তোমার প্রাক্তন শশুড় শাশুড়ীও তোমায় কষ্ট দিয়েছে। আর শেষে ডিভোর্সও হয়ে গেছে। এখন অন্তত আঙ্কেলকে কষ্ট দিও না। উনার আবদার গুলো মেনে নাও। তুমিই তো বলেছিল। তার কথা গুলো তোমার কাছে আদেশ। তাহলে?’
‘আমি কী করব তাহলে মিহির?’
‘আঙ্কেল যা বলছে তাই করো। আঙ্কেলকে আজ ডিনারের সময় বলে দিও তুমি তার সিদ্ধান্তে রাজি।’
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম।
.
‘বাবা একটা.. কথা বলার ছিল।’
ডাইনিং টেবিলে উক্ত কথাটি বাবার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিলাম। বাবা বললেন, ‘কী?’
মাথা নিচু করে বললাম, ‘আমি প্রথমবারেই তোমার স্বপ্ন ভেঙে তোমায় কষ্ট দিয়েছি। আর দিতে চাই না।’
বাবা অবাক হয়ে বললেন, ‘মানে? কী বলছিস এসব তুই?’
‘ব-বাবা। আমি রাজি।’
‘মানে? মন থেকে বলছিস তো?’
‘হ্যাঁ বাবা মন থেকেই বলছি।’
‘দেখ তুই আমায় খুশি করতে বলছিস না তো?’
‘না বাবা আমি সত্যি বলছি আমি রাজি।’
‘আলহামদুলিল্লাহ্। তাহলে আমি কালই ওর বাবা মা’কে বলব।’
‘হুম।’
আম্মু বললেন, ‘এবারের টা কিন্তু বড় করে হবে৷ বড় অনুষ্ঠান হবে।’
‘না আম্মু ঘরোয়া ভাবেই করলে হবে।’
‘তুই বললেই হবে নাকি? আগেরবার কোন অনুষ্ঠানই হয়নি। একটা মাত্র মেয়ের বিয়ে এভাবে দিব নাকি?’
মিহির বলল, ‘হ্যাঁ আপু। প্রথম বিয়েটা তো বোধহয় বিয়েই ছিল না। আর তুমি তো আঙ্কেল আন্টিকে না জানিয়েই করেছ। কিন্তু এখন আঙ্কেল আন্টি যা চাইছে তাই হতে দাও। আর সার্জেন্ট ইবনান চোধুরীর মেয়ের বিয়েতে কেউ থাকবে না, এটা কী হয়?’
হেসে বললাম, ‘আচ্ছা তোমরা যা খুশি করো আমি কিছু বলব না।’
.
‘ইফা! ইফা!’
‘জ্বী হ্যাঁ বলুন।’
‘ওরা ইবনাতকে পছন্দ করেছে। বিয়ের ডেট তারা পাঁকা করেছে।’
‘বলেন কী? ওরা তো ইবনাতকে দেখেই নি তাহলে?’
‘দেখার দরকার নেই ছেলে আগেই দেখেছে ওকে।’
‘মানে? কবে?’
‘আরে ওর বাবা মা যখন বলল দেখতে যাবে কী না। তখন ও বলেছিল ও নাকি ইবনাতকে চেনে আর দেখেছে৷ তাই আর দেখার প্রয়োজন নেই।’
‘তাই নাকি? আচ্ছা ডেট কবে ফেলেছে?’
‘সামনের শুক্রবার।’
‘কীহ্? এত তাড়াতাড়ি? মাত্র তো আট দিন।’
‘তো কী হয়েছে আটদিন? এটা কী কম সময় নাকি?’
‘আচ্ছা ইবনাতকে বলুন।’
‘হুম।’
.
মাথায় কারো পরম শীতল স্পর্শ পেয়ে নেত্রপল্লব খুললাম। আম্মু মাথায় হাত বুলাচ্ছে। প্রায় সন্ধ্যা। স্কুলের কিছু কাজ করতে করতে টেবিলে মাথা রেখেই শুয়ে পড়েছিলাম। উঠে হেসে বললাম, ‘আম্মু? কিছু বলবে?’
‘হুম।’
‘বলো।’
‘তোর.. তোর বিয়ের ডেট ঠিক হয়েছে।’
কেঁপে উঠলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘কবে?’
‘সামনের শুক্রবার।’
‘এত জলদি?’
‘ওরাই বলেছে।’
‘ওহ্! তো তারা কী দেখতে আসবে না?’
‘ছেলে নাকি তোকে চেনে। তাই দেখার প্রয়োজন নেই।’
ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। সন্দিহান গলায় বললাম, ‘চেনে মানে? আমাকে কী দেখেছে?’
‘ইবনানের মেয়েকে কে না চেনে। তার উপর তোর বাবারই একজন স্টুডেন্ট ছিল ছেলেটা। এখন তোর বাবার সাথেই কাজ করে। আর ভালো সার্জেন্টও।’
‘ওহ্ আচ্ছা।’
‘ছেলেকে দেখবি? তোর বাবাকে বলব ছবি দেখাতে?’
‘না দরকার নেই।’
‘কী বলিস? তোরও তো পছন্দ হতে হবে ছেলেকে।’
‘আমি জানি বাবার পছন্দ কখনো খারাপ হবে না।’
আম্মু হেসে ললাটে অধর ছুঁইয়ে চলে গেলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আবারো।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]