#অপ্রকাশিত_ভালোবাসা
#পর্ব:২
#লেখক:ঐশি
–আপু বাচাও,,আমাকে নিয়ে গেলো,,(তাসফিয়া)
আমি তাসফিয়াকে খুজতে শুরু করলাম কিন্তু কোথাও তাকে খুজে পাচ্ছিলাম না ।আমার এখন মনে হচ্ছে তাসফিয়াকে এখানে নিয়ে আসা ই ভুল হয়েছে ।এখানে তো কাউকে চিনি ই না কার কাছে যাবো এখন ।তাসফিয়াকে তো খুজে ই পাচ্ছি না ।আমার মাথায় রাগ এখন চরম পর্যায়ে ।মনে হচ্ছে সব কিছু উল্টা পাল্টা করে ফেলি কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয় ।আমি যেদিকে পারছি সেদিকে ই খুজে চলেছি ।হঠাৎ দেখলাম তাসফিয়া দৌড়ে আসছে ।আমি কোনো কিছু না ভেবেই তার কাছে গেলাম ।তাসফিয়া কান্না করছে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ।আমি কিছু বলবো তার আগেই বলতে শুরু করলো,,
–চলো আপু আমরা এখান থেকে চলে যাই ।আর কখনই আসবো না এখানে ,,
–কেনো ?আর তোমার গালে কে চড় দিয়েছে বলো ?আমি তাকে দেখো কি করি ?বলো কে মেরেছে,,
–কেউ না বাসায় চলো আমি এখানে থাকবো না প্লিজ আপু,,
আমি আর কথা বাড়াই নি চলে আসলাম বাসায় ।তাসফিয়াকে এমন ভাবে চড় টা দিয়েছে মনে হচ্ছে এখন ই রক্ত বের হবে ।আমি বুঝতে পারছি তার অনেক ব্যাথা করছে কিন্তু বলছে না আমাকে ।আমি কিছু ই বলিনি ।তাসফিয়া কান্না করছে ।এভাবেই রাত হলো আমার বাসার সবার কথা মনে পড়তে লাগলো কিন্তু বাসা থেকে যে বেড়িয়ে এলাম কেউ একটা কল পর্যন্ত দেয় নি কেনো ?আমি কি করেছি ?এদিকে তাসফিয়ার মন আনেক খারাপ ।রাতে তাসফিয়াকে পাশে নিয়েই ঘুমালাম ।হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো উঠে দেখি পাশে তাসফিয়া নেই ।উঠে বসে ডানে তাকাতেই দেখি তাসফিয়া টেবিলে কান্না করছে আর কি যেনো লিখছে ।কোনো কথা না বলে আস্তে আস্তে তার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম ।সে অনবরত লিখে চলেছে ,,
“আম্মু ভালো না ,আম্মু ভালো না ”
সারাটা কাগজে এক ই লেখা ।আমি যে তার পিছনে দাড়িয়েছি সে এটা টের পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো ।আমি তাকে বুঝানোর মতো কোনো কথা ই পাচ্ছিলাম না ।আমি কোনো রকম কান্না থামানোর পরে বললাম ,,
–কে তোমাকে মেরেছে ?সত্যি কথা বলবে কিন্তু ?
–মামা মেরেছে ?
–কিহ তোমার মামা কেনো ?
–আম্মুকে দেখতে গেছি তাই,,আর যদি কখনো ওইখানে আম্মুর সাথে দেখা করতে যাই তাহলে আম্মু বলেছে আমার সাথে কথা বলবে না আর মামা মা কে দেখতে দিবে না ।তাই তো চলে আসলাম ,,,
–এই জন্য তোমার মতো একটা পিচ্চি মেয়েকে মারলো ?
–কালকে না আসলে মামা মা কেও মারতো আর আমার এতো কিছু দরকার নেই আমি দূর থেকে দেখেই চলে আসবো আম্মুকে ।
এই কথা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো ।হঠাৎ তাসফিয়া আমাকে ছেড়ে দিলো ।আমি বুঝলাম যে তাসফিয়া ঙ্গান হারিয়েছে ।কোনো কিছু না ভেবেই এই অপরিচিত জায়গায় এই রাতে ই ছুটে চললাম হাসপাতাল এর উদ্দেশ্যে ।এতো রাতে ভেবেছিলাম কোনো কিছু ই পাবো না হাসপাতাল এ যাওয়ার মতো কিন্তু রাতেও পাওয়া গেছে ।আমি তারতারি তাসফিয়াকে নিয়ে হাসপাতাল এ আসলাম ।সরকারি হাসপাতাল যতোটা নাজেহাল ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি উন্নত এটা ।ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতাল এ দীর্ঘ দুই দিন তাসফিয়াকে নিয়ে ছিলাম ।বুঝা ই যায় নি কিভাবে দিন কেটে গেলো কারন তাসফিয়া এর পর থেকে হাসি খুশি থাকে সব সময় ।তাসফিয়ার তেমন কোনো সমস্যা নেই ,তার গালের দাগ টাও একদম চলে গেছে। সেই ফুলের মতো চেহারাটা আবার দেখতে পেয়ে অনেক ভালো লাগলো ।ডাক্তার দের সাথে কত মিল তার ।তাসফিয়া সবার সাথে এমন আচরন করছে সবাই যেনো ওর বাসার সদস্য ।আমার এখনো মনে আছে ,ডাক্তার যেদিন তাসফিয়াকে রাতে দেখতে এসে বললো,,
–মেয়েটা তো অনেক সুন্দর,,
তাসফিয়া ধুপ করে এটাও বলে ফেললো,,
–এই যে আমার আম্মু উনি ও তো সুন্দর তাই আমিও সুন্দর ,,
–তা মামুনির বাবা কোথায় আসেনি ?
–না পাপা তো ঢাকা থাকে ।তাই আসে নি ,,
আমাকে তাসফিয়া কেনো আম্মু ডেকে ছিলো বলছিলাম তাকে কিন্তু সে বলেছিলো এমনি ই ।আমিও কিছু ই বলিনি ।কারন এই তাসফিয়া ছাড়া আমার আর কেউ নেই ।হাসপাতাল এর পাশের বেড এ তার সমবয়সী তার বান্ধুবিও জুটিয়েছে ।আমি জীবনেও সরকারি হাসপাতাল পছন্দ করিনা কারন এ হাসপাতাল গুলোর পরিবেশ এতো নোংরা থাকে ।কিন্তু এ ময়মনসিংহ হাসপাতাল অনেক উন্নত ।তাসফিয়ার একটা ডাক্তার বান্ধুবি আছে সে তার সাথে ই গল্প করে ।মানে ডাক্তার ইন্টার্নি করে,,।ভালো হয়ে উঠলো তাসফিয়া ।সব কিছু রেখে যখন আবার ফিরে আসবো সবার মুখ ই মলিন বুঝা ই যাচ্ছিলো ।তবুও ফিরে আসলাম ।এসে যে হোটেল এ থাকি সে হোটেল এর টাকা দিবো এমন সময় ম্যানেজার বললো,,
–আপনার বিল দেওয়া হয়ে গেছে ।আপনি আরও দশ দিন থাকতে পারবেন ।
–কে দিয়েছে ?
–জানি না ম্যাডাম ।আজকে সকাল এ অফিস খুলতেই একটা কাগজ এ আপনার নাম এ বিল এর টাকা দেওয়া ছিলো ।
–ওহহ,,
আবারও চিন্তায় ফেলে দিলো আমাকে ,,।কে দিলো এসব ?তাসফিয়া দেখি মুচকি মুচকি হাসছে ,,।তখন বললাম,,
–হাসছো কেনো এভাবে ?
–এমনি ই,,
–বলো বলছি,,
–তোমার বিএফ দিয়েছে মনে হয় ,,
–বিএফ বিএফ বলবা না তাহলে মাইর দিবো ।
তাসফিয়া একদম চুপ ।তারপর কোনো কথা না বলেই দরজা খুলতেই আমি অবাক ।সারা ঘর হাজানো ।দেয়ালে বড় করে লিখা ,”শুভ জন্মদিন প্রীতি” ।আরে আমি আমার নিজের জন্মদিন ই ভুলে গেছি ।টেবিলে একটা কেক ,আর বিছানায় একটা খাম ।খাম খুলে দেখলাম প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা ।রাতে ভাবছি কে করলো এসব ?হোটেল এর কেউ জানে না।আমি জানালায় দিয়ে বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ।তাসফিয়া তখন বললো,,
–চলো কেক কাটবে ,,
এক প্রকার জোড় করে কেক কাটালো ।তাকে খাইয়ে দিলাম ,আমাকে সে খাইয়ে দিলো ।আমি টিভি দেখি আর ও আমার মোবাই চালায় ।এক সময় বললো,,
–আপু ,চলো কালকে ঘুরতে যাই ,,
–কোথায় ?
–সিলভার কেসেল ,,,এখানের সুন্দর একটা রিসোর্ট ।
–ঠিক আছে,,
আমি ভাবছি এসব কিছু হচ্ছে কি করে ?সব কিছু ই উল্টা পাল্টা লাগছে ।তখন ই খেয়াল করলাম জানালার একটা কোনে রক্তের ছাপ ।স্পষ্ট হাত দিয়ে ছুয়া গেলো তার মানে কেউ এসেছিলো কিন্তু কে ?
তাসফিয়া তখন বলে উঠলো,,
–আপু দেখে যাও,,মামা,,
আমি এক দৌড় এ গেলাম ভাবলাম তার মামা হয় তো আবার এসেছে ।তাই গেলাম যেয়ে দেখি,,টিভি তে তাসফিয়ার মামা কে দেখাচ্ছে ।হ্যা সত্যি ই তো এটা তো তাসফিয়ার মামা ।খবর এ আরো বলছে বিয়ে বাড়ি থেকে কনে ও উধাও ।তাসফিয়ার মামার মৃত্যুর কথা শুনে সে একটুও বিচলিত হয়নি বরং তার মা নেই এটা ভেবেই সে কান্না শুরু করলো ।তার মামারও সেই একই রকম মৃত্যু ।চোখ এর মনি নেই ।তাসফিয়াকে বাসায় কোনো ভাবেই রাখা যাচ্ছে না সে বার বার চলে যেতে চাইছে তার মায়ের কাছে ।সেদিন রাতে হোটেল বয় দরজা কড়া নারে খাবার এর জন্য ।কিন্তু। সে আমাকে দেখে অদ্ভুত হাসি দেয় ।আমি উরনা পড়া ছিলাম না বলে এভাবে হাসবে ?হাজার বার নিজেকে বকেছি ।আসলেই কিছু মানুষ এমন ই হয় ।আমি সব ঘটনা মিলানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না ।এরপরের দিন হোটেল বয় খুন তারও চোখ নেই ।সারা বাড়ি পুলিশ এ ঘেরাও ।যখন পুলিশ এর অফিসার আমাকে দেখলো তখন বললো থানায় যেতে আমি কোনো ভাবেই যাইনি সেদিন ।সারা হোটেল পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করা ।এমন কি আমার দরজার সামনে ও ।সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তাসফিয়া হাসছে আর বলছে,,
–আপু ,আম্মুর কিছু ই হয়নি আম্মু ভালো আছে ।আর ওই ছায়া মানুষটা বলেছে আম্মু ফিরে আসবে ,,
–ছায়া মানুষ মানে ?
–কালকে রাতে এসেছিলো ।সে বলে গেছে এমন কি আম্মুর সাথেও কথা বলিয়ে দিয়েছে ।কিন্তু তাকে দেখি নাই তাই ছায়া মনে হলো,,
আমি একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম ।তারাতারি জানলা খুলে দেখলাম চারদিকে পুলিশ আর পুলিশ ।তাহলে সে আসলো কি করে ?সব কিছু আমাকে ই বের করতে হবে ।রাতে খাচ্ছি আর ভাবছি আমার সাথে যে ই খারাপ করবে সে ই মারা যাবে ।
এটা কি তাহলে কোনো মানুষ নাকি তাসফিয়ার বলা সে কোনো অদৃশ্য ছায়া ,,,,
চলবে,,,