অপ্রকাশিত ভালোবাসা পর্ব-০১

0
3444

#অপ্রকাশিত_ভালোবাসা
#লেখক:ঐশি

“আমাকে যে পাত্রপক্ষ ই দেখতে আসে এর পরের দিন ই সে খুন হয়” ।
.
এটা নতুন কিছু ই না ।গত দুই মাস এ চারজন পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে ।এরপরের দিন ই তাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় ।কি অদ্ভুত তাই না ?
এটাই সত্য ।সব কয়টা খুনের পর তাদের লাশ পাওয়া যায় একটা নদীতে ।এ পর্যন্ত যারা খুন হয়েছে তাদের কারো চোখে ই চোখের মনি ছিলো না ।কি জন্য যে এমন হয় আমি তা এখনো জানি না ।আমার ই বা কি করার আছে ।জীবনে কোন পাপের শাস্তি যে এখন পাচ্ছি তা জানি না ।যখন দ্বিতীয় পাত্র পক্ষ দেখতে এসে আমাকে পছন্দ করে আমি ভেবেছিলাম এবার বিয়েটা হয়েই যাবে ।এর পর দিন যখন শুনলাম সে আর এই দুনিয়াতে নেই তখন খারাপ লেগেছিলো কিন্তু কোনো কিছু করার মতো উপায় ছিলো না ।এই খুনের পর থেকে ই পুলিশ তদন্ত করে ।বিশেষ করে আমাকেই সন্দেহ তাদের ।আমাকে এ পর্যন্ত প্রায় দশ দিন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে নানা রকম প্রশ্ন করা হয়েছে ।আমি সব সত্যি কথা ই বলেছি ।আমার পরিবারও আমার উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছে ।আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম ।মা বাবা সবাই আমাকে অপমান করতো ।কথায় কথায় খুটা দিতো ।কোনো কিছু না পারলে যা ইচ্ছা বলতো ।মাঝে মধ্যে ভাবি যাদের কাছে নয়নের মনি ছিলাম তারা ই আমাকে এভাবে ফেলে দিচ্ছে ।মেয়ে মানে আসলেই একটা ঝামেলা ।তারপরও ভেঙে পরিনি ,আমার বিশ্বাস ছিলো আমার ভাই হয়তো ঠিক ই বুঝবে আমাকে ।কিন্তু সেও বুঝেনি ।সবাই আমাকে বাসা থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে আমি সব ই বুঝি ।আমি আগে অনেক কান্না করতাম এখন একদম এসব থেকে বাদ দিয়েছি ।কোনো রকম জীবন যাচ্ছিলো ।হঠাৎ খাওয়ার সময় বলেছিলাম ,মাছ খেতে ভালো লাগে না ।আমার ছোট ভাই আমাকেই মেরে একদম মুখ দিয়ে রক্ত বের করে ফেলে ।সাথে বাবা মা ও ছিলো তাদের মুখে কোনো কথা নেই তারা একদম চুপ ।আমি নিরুপায় মার খেয়েছি কারন যে ভাইকে নিজে কোলে নিয়ে মানুষ করেছি,নিজে খাবার না খেয়ে তাকে খাওয়াইছি আর সেই ভাই আমাকে মারলো ?
আমি একটা কথাও বলিনি ।আমার পরিবারের সবাই আমার জন্য বাসা থেকে বর হতে পারে না ।আমি খুব করে চাইতাম আমার মুক্তি হোক ।
এর পরের দিন আমার ভাইকে গাড়ি চাপা দিয়ে ফেলে যায় ।আমরা সবাই হাসপাতাল এ ছুটে যাই ।ছোট ভাইয়ের জীবন এখন আল্লাহর হাতে ।আমার প্রতি অবিচার হয়েছে ঠিক ই কিন্তু মন থেকে শুধু ছোট ভাইটার সুস্থতা ই কামনা করতাম ।নিজের ভাইকে নিজেই রক্ত দিয়ে ভালো করে যখন বাসায় আনলাম তাদের মুখে এক ই কথা আমার জন্য ই এমন হচ্ছে ।আমি একটা কথাও বলিনি ।সেদিন রাতে বাসা থেকে চুপ করে বড়িয়ে আসি ।কাউকে বলিনি এসব ।
বাসা থেকে বেড় হবার পর আমার জীবনে কি ঘটবে তা আমার জানা নেই ।রাতের বাসে চলে গেলাম ময়মনসিংহ ।এক অপরিচিত জায়গা তবে ঢাকার সেই বিষাক্ত পরিবেশ নেই ।আসলে শান্তি নগর এটা ।কত সুন্দর পরিবেশ সব কিছু ই কত গুছালো ।বাসার মানুষের কথা ভাবতে ভাবতে ব্রক্ষপুত্র নদীর ব্রীজ এর উপর দাড়িয়ে আছি একা ।খুব শীতল বাতাস মন কে জুড়িয়ে দেয় ।রাতে ই চলে এসেছি তবে যাওয়ার কোনো জায়গা আমার কাছে আপাদত নেই ।তাই এখানেই একা আসা ।রাস্তায় পুলিশ আছে তাই মনে কোনো ভয় নেই ।আনমনে এই পরিবেশ উপ লব্ধি করছি ।আসলেই এই শহর প্রানের শহর ।সব ই আছে এখানে তবও জীবনের তাগিদে ঢাকা থাকে মানুষ ।এসব ভাবছি কখন যে আমার পাশে একটা মেয়ে এসে দাড়িয়ে আছে তা খেয়াল ই করিনি ।মেয়েটাকে দেখে বেশ অবাক হয়েছি কারন এতো রাতে এই মেয়ে কোথা থেকে আসবে ?কাছে যেয়ে বললাম,,,
–তুমি এখানে কেনো ?
–আমি তো এখানেই থাকি,,,
–কি বলছো এসব ?এখানে থাকো মানে কি ?
–আমার আম্মু এখানে রেখে গেছে বলেছে আর আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে না এই রাস্তা তেই থাকতে হবে ।আমার তো ইয়া বড় বাড়ি ছিলো ।এখন এখানেই থাকতে হবে যে,,,
–কেনো ?এখানে থাকবে কেনো ?
–আম্মু আবার বিয়ে করবে ,,,তাই এখানেই থাকবো আমি ।কাল শুক্রবার আম্মুর বিয়ে আমাকে না যেতে বলেছে ।কালকে রাতে এখানে আসছি যায়নি,,,
–কি বলো এসব ?
–হ্যা,,আমি আর যাবোও না বাবা তো অনেক আগেই আকাশে চলে গেছে ।আপু তোমার পা এর জুতু তো ময়লা আমাকে দাও পরিষ্কার করে দেই আমাকে দুইটা দশ টাকার লকল নোট দিলে ই হবে ,,
এই কথা বলেই মেয়েটা পা ধরলো জুতু মুছার জন্য ।আমি তারাতারি সরে আসলাম ।এতো ভদ্র মেয়ে আর এতো সুন্দর একটা মেয়ে এমন ভাবে পা ধরবে ভাবি নাই ।সাথে সাথে ই বলে ফেললাম,,,
–কি করছো এসব ,,,পা ছাড়ো পা ধরো না ।এসব লাগবে না ,,,।
–আমি কালকে থেকে শুধু পানি ই খেয়েছি কিন্তু কোনো কিছু ই খাই নি ।আমি পা মুছে দেই তুমি টাকা দাও ওইটা দিয়ে খাবো ।
–আমি টাকা দিচ্ছি এসব কিছু ই লাগবে না ।
–না না।আমি এভাবে নিবো না ,,
–কোনো কথা না চলো আমার সাথে ,,
এক প্রকার জোড় করে ই নিয়ে গেলাম একটা হোটেল এ ।মেয়েটার নাম তাসফিয়া অনেক বড় লোক এর মেয়ে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ।তার খাবার স্টাইল ই বলে দিচ্ছে ।সে এসব খেতে চাচ্ছে না তবে ক্ষুদার কারনে এসব খাচ্ছে ।নিজ হাতে খেতে পারে না বুঝা ই যাচ্ছে ।নিজে হাত ধুইয়ে এই তাসফিয়াকে খাওয়াচ্ছি এক অন্যরকম অনুভূতি ।নিজের যখন চারটি বিয়ে ভেঙে গেলো ,বাড়ি ঘর আত্নীয় সব ছাড়লাম এসব এর কিছু ই দরকার নেই ।আমি এই মেয়েকে নিয়েই থাকবো ।তাসফিয়া ক্লাস টু এ পড়ে তবে এতো সুন্দর মেয়ে এতো রাতে রাস্তায় ই বা এখন ঘুরে বেড়ায় ।খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র ই আমাকে জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করলো ।আমি বুঝলাম এটা তার মা এর জন্যই কান্না করছে ।কোনো কিছু ই বললাম না ।এতো রাতে এসেছি তাই নিজেও একটু খেলাম ।যখন বিল দিতে গেলাম তখন হোটেল এর লোক বললো,,
–আপা বিল দেওয়া হইয়া গেছে,,
–কে দিয়েছে ?আমি তো এখনো দেই নি,,
–দিছে একজন ।আপনার টাকা আপনার লাইগা রাইখা দেন,,।আর এই মেয়েটার লাইগা কিছু খাওন লইয়া যান,,,,
বুঝলাম না এসব কে দিলো ।আমি ভাবছি ,,কিন্তু কোনো কিছু ই বুঝতে পারছি না ।আমি আবার হোটেল এ গেলাম যেয়ে বললাম,,,
–আচ্ছা যে আমার বিল দিয়েছে সে ছেলে না মেয়ে ?
–কেমনে কমু আপা,,এইখানে লেখা ছিলো ১৩ নং টেবিলের দুইজন এর বিল ।কে দিয়া গেছে জানি না।
কি অদ্ভুত ।এখানে সিসি ক্যামেরাও নেই যে দেখবো ।এসব ভেবেই রাস্তা পর্যন্ত আসলাম হঠাৎ তাসফিয়া বলে উঠলো,,,
–আপু তোমার বয়ফ্রেন্ড মনে হয় দিয়ে গেছে,,,হা হা হা ।
–এতো ছোট মেয়ে বয়ফ্রেন্ড বুঝো কিভাবে ?
–এাভাবেই বুঝি,,
আসলেই এখনকার যে যুগ সবাই সব কিছু বুঝে ।আমার তো কোনো বয় ফ্রেন্ড নেই ।রাত কোথায় কাটাবো একটা হোটেল এ যেয়ে উঠবো ভাবছি ।রাস্তায় আমি আর তাসফফিয়া ।রাস্তা পুরো খালি ।শুধু ট্রাফিক পুলিশ এক দুইটা টহল দিচ্ছে ।দুর থেকে এক পুলিশ বলে উঠলো,,
–কার বাসা থাইকা আইলেন ?কয় ঘন্টায় কত দিছে ?আমার লগে আহেন ভালা মাল দিমু,,,আপনে তো সেই মাল ।লগে আবার আরেক টা ।একটা কথাও বলিনি চুপচাপ সরে এসেছি ।অনেক খুজে একটা হোটেল পেলাম ।আমি আর তাসফিয়া চলে কোনো রকম ।এক ঘুম দিয়ে উঠলাম সকাল নয় টায় ।উঠে দেখি তাসফিয়া ঘুমাচ্ছে ।বাসার সবাই হয় তো খুশি যে আমি বাসা ছেড়ে এসেছি ।সকাল এর নাস্তা করলাম দুজনে ।তারপর তার এক কথা তার আম্মুর বিয়ে দেখতে যেতে হবে ।শেষ বারের মতো দেখবে ই ।দুপুর এ চললাম কমিউনিটি সেন্টার এ ।ঢাকার অনেক জায়গায় রাতে বিয়ে হয় কিন্তু এখানে দিনে আসলেই অনেক সুন্দর ।তাসফিয়াকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার এর ভিতরে গেলাম ।সে ধীরে ধীরে তার মায়ের কাছে যাচ্ছে ।তার মাও অনেক সুন্দরী তাই মেয়েটাও এমন সুন্দর ।তার মা ও কান্না করবে কিন্তু পারছে না ।তাসফিয়াকে নতুন একটা জামা পড়িয়ে নিয়ে এসেছি ।তাসফিয়া তার মায়ের পাশেই বসে আছে কোনো কথা নেই ।আত্নীয়রা সবাই তাকিয়ে আছে ।তাসফিয়া জোড় করে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলো ।হঠাৎ তাসফিযা এক দৌড় দিয়ে একটা লোকের কাছ থেকে পেপার নিয়ে আসলো ।আমাকে এনে দিয়ে বললো পড়ো ,আর দেখো রাতের ওই লোকটা তাই না ?
আমি পেপারটা হাতে নিয়ে উপরের হেডলাইন টা পড়লাম,
“কালকে রাতে এক পুলিশকে হত্যা ”
এই সেই পুলিশ যে অকথ্য ভাষায় আমাকে কথা শুনিয়েছে ।আর তার চোখের মনি নেই ।এবার ভাবতে থাকলাম আমার সাথে যে ই খারাপ করবে তার ই এমন মৃত্যু হবে ।হঠাৎ তাসফিয়ার চিৎকার,,,
–আপু বাচাও,,আমাকে নিয়ে গেলো,,
চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে