অপেক্ষা পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
4

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#অন্তিম_পর্ব

[অনুমতি ব্যতীত কপি করে গঠনভাবে নিষিদ্ধ]

“সাব্বাস এই না হলো আমার মেয়ের কথা, ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের সাথে জুড়ে নেওয়া, তার হাত আঁকড়ে ধরে থাকা, তার সুখ দুঃখের সাথী হাওয়া” ‘মুচকি হেসে কথা গুলো বললেন আরমান চৌধুরী’

শাহরিয়া— এসব কি বলছো তুমি আব্বু, সামিরা কে পেয়েছি এখন ওকে নিয়ে চলো এখান থেকে।

আরমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামিরা সবার উদ্দেশ্য বললো।

— আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই, এবং কি বিয়ে টা আমাদের যেমন ভাবেই হোক না কেন, যতই তোমাদের কে আমরা না জানাই, বিয়েটা কিন্তু আমাদের সত্যি হয়েছি, তাই আমি চাইবো না তোমারা আমার স্বামীর থেকে আমাকে আলাদা করো,

— কিসের বিয়ে, ও নিশ্চয়ই তোকে ভয় দেখিয়েছে? তার জন্য তুই এরাকোম মিথ্যা বলছিস? কিন্তু তোর কোন ভয় নেই, তোর ভাই আছে তো? ‘শাহরিয়া’

— না ভাই কেউ আমাকে ভয় দেখায়নি, যা বলছি সব সত্যি, এইটুকু বলে কিছুক্ষন থেমে আবার বললো

~~ ৭ তেই জানুয়ারি তোমার গায়ে হলুদের দিন সকাল ১১.৪৩ মিনিটে আমারা বিয়ে করেছি, আমার ভয় ছিল বিয়ের বিষয়টা তুমি জানতে পারলে কি করবে, মেনে নিবে কিনা, আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে কিনা?? তাই আমি সেদিন তোমাদের কাউকে ভয়ে বলতে পারিনি,

আরমান চৌধুরী মেয়ের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়, তার মেয়ে তাদের কে না জানিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে নিল??আর রিহান?? সে কিভাবে পারলো? তাদেরকে না জানিয়ে তাদের মেয়েকে বিয়ে করে নিতে? রিহান যদি তার কাছে একটা বার মন খুলে বলতো, সে সামিরা কে বিয়ে করবে, তাহলে কোনদিনও না বলতো? আরো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতো, কিন্তু এরা কি করলো? তার একটা মাএ মেয়ে কত ইচ্ছা ছিল, কত ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিবেন, এই সব আশায় জল ঢেলে ছেলে মেয়ে দুটো লুকিয়ে বিয়ে করে নিল? তাই তিনি আফসোসের ন্যায় রাগী রাগী হয়ে বললো।

~~ রিহান আমার জানামতে তুমি বুদ্ধিমান ছেলে, তাহলে তুমি এমন একটা কাজ কিভাবে আমাদের না জানিয়ে করতে পারো??তুমি যদি আমাদের একটা বার বলতে তুমি সামিরা কে বিয়ে করতে চাও , আমার কি নিষেধ করতাম?? ‘আরমান’

রিহান যেন একের পর এক শক খাচ্ছে, প্রথমে সামিরার কথায় পরে আরমান চৌধুরী কথা,রিহান যে একাই শক খাচ্ছে এমন না ঠিক একই ডিগ্রির শক শাহারিয়া ও খাচ্ছে, তার বাবা সামিরা কে রিহানের সাথে বিয়ে দিতো?আর সামিরা ও রিহানের সাথে থাকতে চায়? তার মাথায় কিছুই আসছে না, এই রিহান টা কখন তার বাপ’বোনকে পটিয়ে নিল? যেখানে তার বাপ’বোন রিহান কে মেনে নিয়েছে, সেখানে সে ভাই,ভাই সম্পর্কে ফাও’ফাও শত্রুতা বারালো?কি আজব,

“আরমান চৌধুরী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন”

— কি আর করার বিয়ে যখন করে নিয়েছো, দুজনে যখন একে অপরের সাথে থাকতে চাও, তাহলে এখানে তো আর কিছু বলার নেই, তবে রিহান আমি এখন সামিরা কে আমার সাথে বাসায় নিয়ে যাবো, জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেব, এই কয়দিন ও আমাদের সাথে থাকবে।

শাহরিয়ার এখন কি আর বলার তাই বাবার কথার সায় মিলিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল।

— যদি আমার বোন রিহানের সাথে থাকতে চায় তাহলে তো আমারো কিছু বলার নেই, আমিও তাহলে বাবার কথার একমত।

রিহান কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না, সবাই তার ধারণা থেকে পাল্টি খাচ্ছে, এভাবে সামিরা কে নিয়ে আসলে যে তুফান না হয়ে মাখামাখি একটা বিষয় হয়ে যাবে,শয়ং শাহারিয়া‌ রাজি হবে,আহহহ আর মাথায় আর নিতে পারছে না, এবং কি সামিরার মনে যে তার জন্য সফট কর্নার আছে সেটাও সে ধারণাতে আনেনি,যাই হোক তুফান না হয়ে যে সব কিছু এতো সুন্দর মিটমাট হয়ে গেছে এটাই অনেক, তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনুতপ্ত কন্ঠে বললো

— আপনাদের যা ভালো মনে হয় , ‘রিহান’

********************************************

সময় তার নিতান্ত গতিতে এগিয়ে যায়,কাল বেধ, দেখে না,না কারো জন্য অপেক্ষা করে? সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় সব পুরোনো মুহূর্ত, স্মৃতি সব সম্পর্ক।কেরো কেরো সম্পর্ক হয়ে যায় বিছিন্ন আবার কারো সম্পর্ক‌ হয়ে উঠে বিশ্বস্ত তা ও মধুর , ঠিক তেমনি অরু সেদিন সামিরাকে বাসায় নেওয়ার পর সামিরার কাছে আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চেয়েছিল, সামিরা প্রথমে অভিমান করলেও, পরে প্রিয় বান্ধবী কে আবারো আপন করে নিয়েছিল, তাদের কে কেউ দেখলে বলবে না, তাদের মধ্যে ননদ ভাবীর সম্পর্ক জাতীয় কিছু আছে, সাড়া বাড়ি খুনসুটি করে মাতিয়ে রাখে তাঁরা দুজন। তাদের কেই খুনসুটি নিয়েই বাড়ির সকলের দিন রাত পার হয়ে যায়।

“আজ শুক্রবার,পুরো বাড়ি সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়েছে সামিরার বিয়ে উপলক্ষে, কিছুক্ষণ পরেই রিহান রা চলে আসবে,কাজী সাহেব সহ,সকলে উপস্থিত। সময় খনের ভিতর সামিরার পুনরায় বিয়েটা সম্পুর্ন হয়।”

প্রত্যেক টা বাবা-মায়ের, মেয়ে বিদায়ের কষ্ট টা যেন একটু বেশি থাকে, কিছু মুহূর্ত আগেও যেই মেয়েটা কত সুন্দর বাড়িটা হৈচৈ করে মাতিয়ে রাখতো,আজ সেই মেয়েটা বাড়ির সকলকে কাঁদিয়ে স্বামীর সংসার করতে চলে যাচ্ছে, বাস্তবতার কি আযব নিয়ম, যদিও সামিরা দের বাড়ি থেকে রিহানের বাড়ির দুরুতো ৩০ মিনিটের, তবুও বিদায় টা ভিশন কষ্ট কর,

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ফুল সজ্জিত বিছানায় গুটি’শুটি হয়ে বসে আছে সামিরা, তার মনে রিহান কে নিয়ে কোন অভিযোগ না থাকলেও, কেমন আনেজি লাগছে,আজ সবার অনুমতি নিয়ে তারা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে,রিহান নামক মানুষটা তার, ভাবলেই কেমন কেমন একটা অনুভুতি হয়, কিছু সময় হতেই রিহান রুমে আসে, তার সাধ্য হওয়া পুরোনো বউ কে বিছানায় গুটি’শুটি হয়ে বসে থাকতে দেখে অপরাধী কন্ঠে বললো।

— ভয়ের কোন কারন নেই, আমি তোমাকে কোন বিষয় জোর করবো না, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো, এটুকু বলে আবার বলো।

~~তখন তোমাকে নিয়ে আমার ভয় ছিল, আমি যদি তোমাকে না পাই?? তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি, তোমার ভাই যেভাবে আমার বিপাকে ছিল, আমার ক্ষণে ক্ষণে ভয় হতো, তোমাকে নিজের করার আগে হারিয়ে না ফেলি? তাই তখন তোমাকে বিয়ে টা জোর করে করেছিলাম,আর সেদিন ওই ছেলেটার সাথে তোমাকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না,তাই তোমর সাথে,,

আর কিছু বলার আগে সামিরা রিহান কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,বললো।

~~ আমি কোন এক্সেপেলেন শুনতে চেয়েছি,আপানার কাছ থেকে,না জানতে চেয়েছি। তাহলে কেন পুরোনো মুহূর্তের কথা বলছেন? ‘সামিরা’

রিহান সামিরার কথায় ওর দিকে ঘুরে মধু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

~~ সেইদিন তোমার সাথে ওই রকম ভিয়াইবিহার কারার পরেও তা খারাপ বদ মেজাজি আমি টাকে ভালোবাসা দিলে কবে থেকে? ‘রিহান’

~~ আপনার জন্য আমার মনে অনেক আগে থেকেই সফট কর্নার ছিল, যেদিন আমাকে আপনি বিয়েটা করেছিলেন, নিজের ভিতর একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল, কিন্তু সেদিন যখন আপনি ওইভাবে আমাকে জোর করে নিয়ে আসলেন, তখন আপনার উপর একটু রাগ হয়েছিল, তারপর যখন দেখলাম সেদিন আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করার পর আমি যখন কষ্ট পেয়ে কান্না করছিলাম, তখন আমার কষ্টে আপনিও কষ্ট পাচ্ছিলেন, আমার কান্না আপনার ভিতর একটা অনুতপ্ত ফিল হচ্ছিল, তারপর যখন আর কিছু না করে আমাকে ওইভাবে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন থেকেই বুঝেছিলাম আপনি আমাকে ভালবাসেন, শুধু ভালোবাসেন না মারাত্মক ভালোবাসেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম,তাইতো সেদিন আমাকে হারানোর ভয়ে অমনটা করেছিলেন। আমি নিজের চোখে এমন নিজের প্রতি এত ভালোবাসার একটা মানুষকে দেখতে পেয়ে কিভাবে হারিয়ে ফেলি বলুন। আপনার মত হয়তো আমাকে এমন মারাত্মক কেউ ভালোবাসবে না। হ্যাঁ আপনার সেই দিনের পদক্ষেপটা ভুল ছিল, তবে আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। শুধু আছে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা। হ্যাঁ স্বামী আমি আপনার, অর্ধাঙ্গিনী। একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ভুল কাজ করতেই পারে, আর সেটা কে শুধরে দেওয়াই আদর্শবান একজন স্ত্রীর কাজ। কোন আদর্শবান স্ত্রীর এমন কাজ নয় স্বামীর অন্যায় টাকে মনে রেখে তার থেকে দূরে চলে যাওয়া। তাকে একলা ফেলে চলে যাওয়া, অন্তত এমন স্ত্রী আমি নই। আমি আপনার সবকিছু ভুলে আপনার হাতটা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই।

রিহান সামিরার কথা শুনে সামিরার কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে, বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে কণ্ঠে মধুময় সুরে বলল।

অনেক বছরের সাধনা, তোমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। দিন শেষে পরিশ্রম, আজ তোমাকে নিজের জীবনে পেয়ে পূর্ণতা পেলাম। ভালোবাসি সামু রানী, তোমাকে ভীষণ রকম ভালোবাসি।

[দুজনের এক গভীর ভালোবাসা সাক্ষী হয়ে রইল ওই দূর আকাশের বাস উজ্জ্বল চাঁদ]

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

[দুই বছর পর]

হিম’শীতল, বহি’কুল এক বাতাসের সূচনা। পড়ন্ত এক গোধূলিরগ্ন, হাঁটতে বের হয়েছিল, শাহারিয়া’অরুপিতা। দুজন একে অপরের হাত ধরে গুটি গুটি কদম ফেলে প্রকৃতি উপভোগ করছিল। সাথে ছিল তাদের ভালোবাসার সাক্ষী, ১ বছর ৩ মাসের ছেলে। তিনজন মিলে খুব আনন্দে প্রকৃতিকে উপভোগ করছিল। কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎই অরুর সাথে ধাক্কা লাগে সামনে একটা লোকের গায়ে,অরু তাড়াহুড়ো করে লোকটার দিক ফিরে যাই ক্ষমা চাইতে নিবে তখনই চোখ দুটো যেন ছনা বরাদ্দা হয়ে যায়। একি দেখছে ও। এই মানুষটা কত সুন্দর পরিপাটি ছিলেন। আজ তার এমন বেহাল অবস্থা কেন?অরুর মাথায় আসছে না। অরুর সামনে থাকা লোকটা আর কেউ না স্বয়ং হৃদয় ছিল, তার সাথেও ছিল ১. দেড় বছরের একটা ছেলে।
কি বিভ্রস্থ অবস্থা তার, চোখমুখ কেমন শুকিয়ে রয়েছে। কি মায়াময় চেহারাটা, আজ অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে, অরু আরো কিছুক্ষণ হৃদয়ের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে আশ্চর্য কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।

— আপনার এই অবস্থা কেন ভাইয়া??

“হৃদয় অরুপিতার দিকে কিছুক্ষণ শুকনো চোখে তাকিয়ে, তাচ্ছিল্যের ন্যায় একটা হাসি দিয়ে আফসোসের কন্ঠে বললো”

— জানো তো তুমি সেই দিন ঠিকই বলেছিলে, আর আমি একটা বোকা, চকচক দেখতে আমি সেইদিন কয়লা কে বেছে নিয়েছিলাম, সামনে থাকা মুক্ত কে নয়। মুক্ত আমি পেয়েও হারালাম। ওই যে কথায় আছে না,

All that glitters is not gold.

অরু তুমি সেই দিন আমাকে একটা দোয়া দিয়েছিলে মনে আছে, যেদিন আমি তোমাকে ঠকিয়ে নিশিকে বেছে নিয়েছিলাম?

~~ চিত্তে ঠকে যাওয়া এক নারীর সতিত্বে মিশেছিলে তুমি নামক এক ব্যক্তি সেই নারী হৃদয়ের কোটা থেকে তোমায় দোয়া করছে , আমারে ঠকিয়ে বাধিলা তুমি অন্য কারো সাথে ঘর, তবে দেইখো সেই নারী হয়না যেন তোমার পর।
কলমে~ মারিয়াম জুথি

~~ হ্যাঁ অরু আমি পারিনি, পারিনি সেই নারীকে ধরে রাখতে। সেই নারী পর হয়ে গেছে আমার। ‘কান্না কে আটকানোর চেষ্টা করে’

— মানে, কোথায় নিশি? ‘অরু’

— সে তার দেহকে বিক্রি করে দিয়েছে,

— মানে??

— কখনো রেলস্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে টুকাই ছেলেমেয়েদের বোতল ঢোকাতে দেখেছো?? ‘হৃদয়’

— বুঝলাম না?

— যাইহোক বাদ দাও সাথে কে তোমার, সাথে নিশ্চয়ই তোমার উনি,আর বাচ্চা টা নিশ্চয়ই তোমার বাবু?’হৃদয়’

— হ্যাঁ, তবে আপনি যেন কি বলছিলেন? নিশি কোথায় ও ভালো আছে??

“হৃদয় অরুর দিকে কিছুক্ষণ মায়াভরা দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো”

— কি আশ্চর্য তুমি ঠিক আগের মত রয়ে গেলে। তবে বদলে গেলাম আমরা, বদলে গেল আমাদের জীবন। তুমি পেয়ে গেলে এক চিরন্তন সুখের ঠিকানা, আর আমি পেলাম তোমাকে ঠকানোর তার শাস্তি। ‘হৃদয়’

“অরুপিতা হৃদয়ের ঘুরপাক কথায় এখন বুঝতে পারছে। নিশি হয়তো এখন আর এই সম্পর্কে নেই। হয়তো হৃদয় কে ছেড়ে চলে গিয়েছে? কিন্তু কেন গিয়েছে? সেটা ধারণাতে আসছে না। তাই আবারও জিজ্ঞেস করল”

—নিশি আপনাকে কেন ছেড়ে গিয়েছে?? ওতো আপনাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল?? আর আপনিও তোকে ভালোবাসেন,তাহলে??

— আমি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম এটা ঠিক, তবে সে আমাকে ভালোবেসে নয় আমার টাকাকে বিয়ে করেছিল, আমার টাকা ফুরিয়ে গেছে সেও আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আজ আমার কাছে আমার ছেলেকে টাকে নিয়ে দুদিন খাবার পয়সা ঠিকমতো হয় না, যদি কাজ জোটাতে পারি তো সেই কাজটা করার পর টাকা পাবো তারপর আমার ছেলেটাকে নিয়ে খাব। এমন সংসার কেইবা থাকতে চাই বলো??

— বাচ্চাটা??

— হ্যাঁ এটা নিশির আর আমার ভালোবাসারই চিহ্ন। তবে সেই সব কিছু ছিন্ন করে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

“অরুর বেশ খারাপ লাগল হৃদয়ের জন্য। তাকে ঠকিয়েছে তাতে কি হয়েছে, সে তো একজন আদর্শবান ব্যক্তিকে পেয়েছে। কিন্তু সে তো এমনটা চাইনি হৃদয়ের জন্য। সে তো হৃদয়কে দোয়া করেছিল সে যেন সুখে শান্তিতে নিশিকে নিয়ে থাকতে পারে। তাহলে কেন হৃদয়ের জীবনটা আজ এমন হয়ে গেল? ওর ভীষণ খারাপ লাগছে, অরু আর হৃদয়ের কথা এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিল শাহরিয়া ও তার ছোট্ট ছেলে শাহার সীমান্ত , হঠাৎ করেই শাহারিয়া অরুকে জিজ্ঞেস করলো”

— উনি কে অরু?

“অরুপিতা শাহরিয়ার কাছে গিয়ে, ওর মানি ব্যাগ থেকে ৫০০০ টাকা নিয়ে, হৃদয়ের ছোট্ট ছেলেটার হাতে দিয়ে বলল”

— উনি হচ্ছে আমার প্রান্তক, উনার জন্যই আজ আমি আপনার বউ? অর ওনার জন্যই আমি পেয়েছি আপনার মত একজন আদর্শবান স্বামী।

~~ হৃদয় ভাইয়া আমি আমার ভাইয়ের ছেলেকে কিছু টাকা দিলাম, আশা করি এটা আপনি ফিরিয়ে দিবেন না। আপনাকে আমি ছোট করছি না আমার জানা ছিল না আপনার একটা ছেলে হয়েছে। তো আমি গিয়ে দেখে আসতাম আর আমার থেকে প্রাপ্ত পাওনাটা ওকে দিয়ে আসতাম। এই মুহূর্তে সেটা তো দিতে পারলাম না সামান্য টাই দিলাম , দয়া করে ফিরিয়ে দেবেন না।

‘হৃদয় টাকাটা ফেরত দিবে, করে পারল না অরুপিতার কথায়। একপ্রকার বাধ্য হয়েই কিছু না বলে, টাকাটা গ্রহণ করল। তারপর কিছুটা লজ্জাবোধ ও সংকোচ নিয়ে বলবো’

আমার তোমার সামনে দাঁড়ি থাকতে লজ্জা লাগছে। লজ্জা লাগছে তোমার সাথে কথা বলার। ঘেন্না আছে নিজের প্রতি নিজের। যদি সময়টাকে স্তব্ধ করা যেত। তবে আমি সেই দিনের সময়টাকে ফিরিয়ে স্তব্ধ করে তোমার হাতটাই বেছে নিতাম। তবে আমি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না অরু, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছি। তুমি সুখে থেকো। জীবনে যা হারিয়েছো তার থেকে দ্বিগুণ পাও। ভালোবাসার মানুষকে আগলে রেখো আজ আসি, ফের যদি কোনদিন দেখা হয় আর যদি তখন আমার সমর্থ্য হয়ে থাকে তো তোমার ছেলেকেও আমার থেকে যে প্রাপ্ত পাওনাটা পায় সেটা দেব।

[নিদারুণ এ ভাগ্য, কাউকে ঠকিয়ে কেউ কোনদিন জিততে পারেনি আর না পারবে। হয়তো তার কর্ম তাকে পৃথিবীতে শাস্তি দেবে,নয়তো আল্লাহতালা মৃত্যুর পর তাকে তার যোগ্য শাস্তিটা দিয়ে দেবে]

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

সুন্দর এক সকালের সূচনা, জালনার কাঁচ ভেদ করে রুমটাকে রোদের আলোয় আলোকিত করে দিচ্ছে। চারদিক মুক্ত পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। অনুকূল পৃথিবীকে মুগ্ধ করে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি এক সকালে অরুপিতা শাহরিয়ার বুকে মাথা রেখে তার কোলে রাখা বাচ্চা ছেলেটার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো।

~~ হয়তো কোনো ভালো কাজ করেছিলাম। তার বিনিময় আল্লাহ আপনার মত একজন জীবনসঙ্গী আমায় দান করেছেন। যে আমার সুখে দুখে সব সময় আমাকে সাপোর্ট করে, দুঃখকে সুখে ভরিয়ে দিতে পারে। দুঃখটাকে নিজের সাথে ভাগ করে নিতে পারে। এবং কি ঠকে যাওয়া এই মেয়েটাকে এত সুন্দর একটা জীবন দিতে পারে। সত্যি স্বামী ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে, আর অমৃত ভালবেসে যাব।

~~ শাহরিয়া অরুকে নিজের সাথে সজোরে জড়িয়ে আগলে নেয় বুকের সাথে, এ যেন এক চিরস্থায় সুখের ঠিকানা। পরম শান্তি। নিবেদিত এক পূর্ণিমার ঝকঝক করা এক পূর্ণাঙ্গ চাঁদ, তার বুকে শুয়ে আছে তার আর কি চাই, তাই ছোট করে স্লো বয়সে বললো।

~~আমিও ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি আমার
মায়াবতী কে~~

______সমাপ্ত________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে