অপেক্ষা পর্ব-১৪

0
8

#অপেক্ষা
#Mariam_aktrr_juthi
#পর্বঃ14

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

~~ ঠাসসসসসসসসসসসসসস

হাত-পা বাঁধা ছিল বলে হঠাৎ বাধন খোলার পর শরীরটা এমনি নরম হয়েছিল, এখন থাপ্পড় খাওয়ায় ছিটকে মেঝেতে গিয়ে পড়েছে, শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে কিছুক্ষণ মেঝেতে পড়ে মাথার চক্কর গুণ ছিল। মাথার চক্করটা ছাড়াতেই গালে টনটন ব্যথা অনুভব করাতে হাতটা চলে যায় সামিরার গালে, সাথে সাথে সামিরা ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। কিন্তু এতে রিহানের মনে হলো কিছুই যায় আসে না, তাই আবারও সামিরা কে মেঝে থেকে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে যেই কিছু বলবে, সামিরা বিনয়ের সুরে কোনরকম বললো।

সামিরা— প্লিজ ভাইয়া আমার কথাটা তো শুনুন,আ,,

সামিরার বাকিটুকু আর বলা হলো না, সামিরার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে রিহানের রাগ যেন আরো দাও দাও করে জ্বলে উঠলো। সামিরাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে, গায়ের শার্টের বুদাম খুলতে খুলতে গর্জন দিতে দিতে বললো।

~~ ভাইয়া, আবার সেই ভাইয়া ডাক? আজ তোকে বোঝাবো আমি তোর ভাই নয়, অন্য কিছু, যেটা এখন করবো ফের তুই কোনদিন ভাইয়া বলতে চেয়েও পারবি না? ‘রিহান’

~~ প্লিজ আমার কথাটা শুনুন, আমি ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে চাইনি, কিন্তু ওই ছেলেটা অরুর কাজিন ছিল, আমাকে বেয়াইন বলে সমর্থন করছিল, এতটুকুই, আর আপনি তো আমাকে জানেন আমি কেমন? এক রাত দিনের তফাৎ ই আমি অন্য ছেলের সাথে কথা বলবো? ‘সামিরা’

~~ আমি কিছু জানি না, তুই কথা কেন বলবি? তুই আমি ব্যতীত কারো দিকে ফিরেও তাকাবি না। তুই শুধু আমার, এখন সম্পূর্ণ আমার করে নিব। এই কাজে যদি তুই একবারও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিস তো তোকে জ্যান্ত কবর দিব। ‘রিহান’

সামিরা— ভাইয়া প্লিজ এমনটা করবেন না। আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি জীবনে কোনদিন কোন ছেলের সাথে আর কথা বলবো না, মরে গেলেও বলবো না, আপনার অবাধ্য তো দূর কোনদিন মুখের উপর দুটো কথা বলবো না। বিশ্বাস করুন ‘ভাইয়া’। উত্তেজিত কন্ঠে

“এই ভাইয়া ,ভাইয়া, ভাইয়া, ডাকটা আমি আর কত শুনবো, বলে সামিরা কে এক মুহূর্ত আর সময় না দিয়ে, সামিরার একটা পা ধরে টান দিয়ে একদম নিজের কাছে এনে, সামিরার গোলাপি রাঙ্গা ঠোঁট দুটো নিজের আয়তে নিয়ে নেয়।”

উহুম,উহুমমমমমমমম, সামিরা অনেকক্ষণ যাবত রিহানের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য উহুম উহুম করে যাচ্ছে। কিন্তু রিহানের ছাড়াছাড়ির কোন নাম নেই। সে নিজের মত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, এক পর্যায়ে ঠোঁট দুটো ছেড়ে মুখ ডুবায় সামিরা ফর্সা গলায়, হঠাৎ করেই সামিরা ‘আউচ’ এর ন্যায় একটা শব্দ করে উঠলো। কারণ রিহান সামিরার গলায় সুন্দর মত একটা লাভ বাইট দিয়েছে, আস্তে আস্তে ঘাড় থেকে একটু নিচে নামতে সামিরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল।

সামিরা— প্লিজ প্লিজ আর না, আর নিতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার, আমাকে ছেড়ে দিন।

রিহান— ও মাই হৃদয়ের রানী, মাত্র ধরলাম, ছুলাম না খেলাম না এর ভিতরে ছেড়ে দিব?? প্রশ্নই আসেনা, যখন ছুলাম তখন একটু খেয়ে দেখি টেস্টটা কেমন?

“সামিরার তো, এমনি শরীরে মধু কাপন সৃষ্টি হয়েছে, এর ভিতর আবার রিহানের এমন বিচ্ছিরি কথায় গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। ও বেশ ভালই বুঝতে পারছে এই রিহান আজকে ওকে কোনোভাবেই ছাড়বে না, স্বামীর অধিকার আজকে নিয়ে ছাড়বে, কিন্তু সে তো সবার জন্য তৈরি নয়, স্বামী-স্ত্রীর একটা মিল হতে হলে তাদের দুজনেরই সম্মতি থাকা উচিত। এই মুহূর্তে সামিরা সেটা নেই, তাই সজোরে রিহানকে নিজের থেকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করল, ধাক্কাও দিল, তবে তার ফলাফল শূন্য। কাজ তো হলোই না বরং রিহান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সামিরার জামাটা টেনে গা থেকে ফেলে দিল। সামিরা এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না, তাই হঠাৎ এমন হওয়ায় দুহাত বুকের উপর চেপে ধরে চোখ বুজে রইল”।

~~ আহহহ, তোর ফিগার যে এত সুন্দর হবে ভাবতেই পারিনি, যদি একবারও ধারনায় আসতো? তো কখনই তুলে এনে বিয়ে করে নিজের কাছে আবদ্ধ করে রেখে দিতাম, তাহলে এত অপেক্ষা আমি করতাম না, আর এত ভোগপোহিয়ে ভার্সিটির বড় ভাই হয়ে ওখানে থাকতেও হতো না। সত্যি বলছি মাইরি, একদম হট , ঠোঁট কামড়ে চোখ টিপ দিয়ে,’রিহান’

সামিরা রিহানের কথায় চোখ মেলে তাকিয়ে বোকার মত মুখ থেকে ফুস করে বের করে ফেলল।

সামিরা— মানে??

রিহান— তোর কি মনে হয় আমি তোর ভাইয়ের ছোট?? একদমই না, এটা ভাবলে তোর ভুল। কারণ আমাদের দু’জনের বয়সের ডিফারেন্স মাত্র ৬ মাসের। তোর মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আমি কিভাবে এখনো ভার্সিটিতে পরি?

~~ আমি কোন ভার্সিটিতে পড়ি না। তোর ভাই যেমন প্রফেসর, ঠিক তেমনি আমিও ওই লে’ভে’লে’রি, শুধুমাত্র প্রফেশনে ঢোকা হয়নি তোর জন্য। বাবার ব্যবসায় পর্যন্ত ঢুকিনি তোর জন্য । শুধুমাত্র তোকে নিজের কাছে আগলে রাখো বলে। ঠিক তাই করেছি, সবকিছু ফেলে রেখে ভার্সিটির প্রফেসরদের সাথে কথা বলে দিনের পর দিন অভিনয় চালিয়ে গেছি, তোকে সবার কাছ থেকে এড়িয়ে রেখেছি,এতে তোর ভাই চেয়েও আমাকে বাধা দিতে পারেনি, আর তুই তো আমার কোনদিন তেমনভাবে খুঁজে নিস নি তাই তোর এই বিষয়ে জেনে ওঠা হয়নি আর। তবে এখন তো, তোকে আমি বিয়ে করে নিয়েছি। সব জানিয়েওছি। এখন ভেবে দেখব কোন প্রফেশনে ঢোকা যায়। কারণ আমার জিনিসটা এখন আমার আয়তের মধ্যে চলে এসেছে। এখন নো চিন্তা ডু ফুর্তি।

~~কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছি না, প্লিজ কাম। ব্যথা দিব না সত্যি বলছি, জোর করে বাধ্য করিস না নিজে থেকে কাছে চলে আয়, বলে আস্তে করে সামিরার বুক থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়,

সামিরা না পারছে নিজেকে প্রটেক্ট করতে, আর না পারছে রিহানকে নিজের থেকে সরাতে। একপ্রকার রিহানের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হচ্ছে। কারণ ও জানে এই বন্ধ কুঠুরিতে, ও আজ কোন ভাবে রিহানের থেকে ছাড়া পাবেনা। তার উপর সব থেকে বড় কথা ও রিহানের স্ত্রী, আজ হোক কাল হোক ওকে তো রিহান কে গ্রহণ করতে হতোই। তাই চুপচাপ চোখের অশ্রু ফেলে রিহানকে কাছে স্বইচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দিল।

*******************************************

“কোন খোঁজ পেলে আমার মেয়েটার? কোথায় ও? কোথায় পাবো ওকে আমরা এখন। শায়লা

আরমান— চিন্তা করো না পেয়ে যাব। শাহরিয়া নাকি জানে সামিরা কোথায় আছে। ‘সামিরার বাবা’

শায়লা— ছেলেটার সবেমাত্র বিয়েটা হল, সকাল হতে না হতে ছুটেছে বোনের খোঁজে। এখন কোথায় আছে সামিরা সেটা বলেনি , আর তুমি বলছো ও নাকি জানে সামিয়া কোথায় আছে?

আরমান— তোমার মেয়ে রিহানের সাথে আছে। রিহান নাকি ওকে তোর বাসায় নিয়ে গেছে,আর শাহারিয়া আমাকে ফোন করে সেখানেই তোমাদেরকে নিয়ে যেতে বলেছে।

মুক্তা তার ভাই সমতুল্য দেবরের কথা শুনে কিছুটা চমকায়। তার মানে তার ওই বদমেজাজি ছেলেটা সত্যি সত্যি মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিল না তো? কতবার ছেলেকে বুঝিয়েছে, জোর করে কোন কিছু হয় না। আর এই ছেলে তো এক কথার ছেলে, তার সামিরা কেই লাগবে, এখন আমার সামিরাকে সত্যি সত্যি তুলে নিয়ে গেছে, কে জানে এটা মেয়েটা এখন কেমন আছে। বাচ্চা মেয়ে কিছু উল্টাপাল্টা না করে ফেলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিহান আবার খারাপ কিছু না করে ফেলে, মেয়েটার সাথে, চিন্তায় যেন মুক্তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। তাই অনুনয়ের সুরে দেবরের নিকট বলল।

মুক্তা— ভাই আমার ছেলেটা নিতান্তই একটা পাগল। এত করে বললাম সামিরার জীবন থেকে তুমি সরে দাঁড়াও, কিন্তু না পাগলের মত কাজবাজ সব ফেলে ভার্সিটিতে গিয়ে পড়ে রয়েছে দিনের পর দিন। তার নাকি তার সামিরা কি প্রটেক্ট করতে হবে, সামিরা অন্য কাউকে ভালো না বেসে ফেলে সেটা তাকে দেখতে হবে। কোন ভাবেই তাকে ফেরাতে পারিনি ভাই, তুমি দয়া করে আমার ছেলেটাকে খারাপ ভেবো না, শাহরিয়া ও যে রাগি ছেলে, কিনা বোনের জন্য আমার ছেলেটার কোন ক্ষতি করে দেয়। তুমি একটু বিষয়টা দেখো ভাই।

আরমান চৌধুরী তার বড় ভাবির এমন কথায় কিছুটা লজ্জা পায়। সে তো রিহানকে ভীষণ পছন্দ করে, ছেলেটা যথেষ্ট বুদ্ধিমান, লম্বাচুরা যথেষ্ট সুন্দর। তাছাড়া সে যখন থেকে জানতে পেরেছে রিহান সামিনা কে পছন্দ করে, তখন থেকে তার মনি সুপ্ত একটা বাসনা হয়েছিল, সে সামিরা কে রিহান এর কাছেই তুলে দিবে। আর যখন শুনেছে সামিরা বাসায় নেই, তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো সেই রিহানের কাছে, তখন থেকেই সে চিন্তা মুক্ত। তাহলে হঠাৎ এমন কথা হচ্ছে কেন, তার বড় ভাবি, তার নিকট বড় বোনের মত। সেই বড় বুনি তার কাছে ক্ষমা চাইছে বিষয়টা একদমই লজ্জা জনক। তাই সে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো।

আরমান—ছি ছি ভাবি’মনি আপনি এমন কোন কথা বলবেন না যাতে আমি ছোট হই। আর কে বলেছে রিহান কে আমি পছন্দ করি না, আমি রিহানের সাথেই আমার সামিরার বিয়ে দেব। এতে যদি আপনাদের মত না থাকতো আমি মত করিয়ে নিতাম। আমার রিহানকে ভীষণ পছন্দ, খুব ভালো ছেলে ও। হ্যাঁ মানছি রাগ টা একটু বেশি। কিন্তু আমি জানি আমার সামিরা ওকে ঠিক সামলে নেবে। আর এই বিষয়ে আমি নিজে শাহরিয়ার সাথে কথা বলবো। তোমার কোন চিন্তা করতে হবে না। এখন চলো শাহারিয়া সবাইকে নিয়ে, রেহানের আলাদা বাসায় যেতে বলেছে।

“অরুপিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে বড়দের কথা শুনছিল। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না,’রিহান’ছেলেটা সামিরাকে ভালবাসে, আবার কাউকে না জানিয়ে নিজের সাথে সামিরা কে বাসায় নিয়ে গেছে। রিয়ান কে যতটুকু অরুপিতা দেখেছে তার কাছে কাছে রিহান রাগী বদমেজাজি বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু এরকম যে সামিরা কে তুলে নিয়ে যাবে সেটা তো কল্পনাও করতে পারিনি। সেতো সকাল-সকাল তাড়াহুড়া করে উঠেছিল, সামিরার কাছে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে। তাদের সম্পর্কটা ঠিক আবার আগের মত করে নিবে। কিন্তু সকালে উঠেই এমন একটা খবর শুনতে হবে ও কল্পনাতেও আনেনি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

কোথায় আমার বোন?? তোর সাহস কি করে হলো কাউকে না জানিয়ে ওকে নিয়ে আসার?? কোন সাহসে তুই ওকে নিয়ে এলি?? কোন অধিকারে?? আমি তোকে নিষেধ করেছিলাম ওর থেকে দূরে থাকতে?? কিন্তু তোর এত সাহস তুই ওকে না বলে নিয়ে আসলি? আমি আমার বোনকে নিয়ে যাব? কোথায় ও? বল তাড়াতাড়ি। ‘শাহারিয়া’

রিহান— এত হট হচ্ছিস কেন ব্রো , রিলাক্স ভাই, আমার কথাটা শোন,

~~ বিয়ে কি তোর একার করতে ইচ্ছা করে?? বাসর ও কি তোর একার করতে ইচ্ছা করে?? আমার বুঝি ইচ্ছে করে না বিয়ে করার বাসর করার??

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে