অপেক্ষা পর্ব-১০

0
12

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ10

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

তোর সাথে দেখা করতে হবু ননদ আর সাথে জামাই বাবা এসেছিল??

“অরুপিতা মায়ের কথা শুনল তবে কোন উত্তর কোরলো না, যে ছোড়োপে বাসায় এসেছিল সেভাবেই রুমে চলে যায়।”

“অরুপিতার এমন আচরণে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয় আলেয়া। তাই সেও আর কথা না বাড়িয়ে, রাগ নিয়ে রুমের দিক চলে যায়,”

****************************************

“সুন্দর এক সকালের সূচনা, মধু মধু সূর্যের আলো, চারদিক ছড়িয়ে পড়ছে। যে যার কর্ম অনুযায়ী বাহিরে চলে যাচ্ছে, কেউ কেউ আবার নিজস্ব ফুল বাগানে যত্ন নিচ্ছে, আবার কেউ কেউ শরীরের ফিটনেস এর জন্য জগিং এ বেরিয়ে পড়ছে। ঠিক তেমনি বিবাহিত নারীরা সকালের ব্রেকফাস্ট বানানোর জন্য রান্নাঘরে মাতিয়ে রাখছে, সামিরার মা ও প্রতিটি ঘরের গৃহিণীদের মতো রান্না ঘরে ছেলে মেয়ে ও স্বামীর জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করছেন, তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বাড়ির কর্তা কর্তির হাতে রান্না ছাড়া খাবার খেতে পছন্দ করেন না, তাই বাধ্য হয়ে সামিরার মা কেই খাবারটা রান্না করতে হয়”

সামিরা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য সুন্দর একটা কাজ করা থ্রি পিস, সাথে ম্যাচিং হিজাব, জুতা, সাথে হালকা সাজুগুজু করে নিল, ব্যাস এতেই যেন মেয়েটা কে অপসরিয়া লাগছে। রেডি হয়ে সোজা খাবার খেতে টেবিলে বসে যায়,

~~ কালকে বৌমার সাথে কথা বলেছিলিস তোরা, আর হ্যাঁ আমার ছেলে মেয়েদের পছন্দ আছে। ‘শায়লা’

সামিরা— দেখতে হবে না আম্মু কার পছন্দ, প্রথমে তো তোমরা আমার কথা গ্রুপতই দিতে না। দেখলে তো এই সামিরা কতটা দক্ষ,নিও। খুঁজে খুঁজে চাঁদের মত একটা বউ ভাইয়ের জন্য খুঁজে নিয়ে এলাম। গলার সামনের দিকে জামাটা একটু টেনে।

“শাহরিয়া সামিরার মাথায় একটা টোকা দিয়ে ‘রসিয়ে’ ‘রসিয়ে’ বললো।”

শাহারিয়া— হ্যাঁ তা তো দেখতেই পাচ্ছি, নাক বোচা দাঁত উঁচু,,

সামিরা— একদম আমার বেস্টুকে নিয়ে তুমি বাজে কথা বলবে না, যদি তুমি একটা বাজে কথা বলো এই বিয়েটা আমি ক্যানসেল করে দিব।

শায়লা— হয়েছে হয়েছে দুই ভাই বোন এখন ঝগড়া করোনা, ভার্সিটিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি খেয়ে তোমরা যাও।

সামিরা— আম্মু, আজকে ভাইয়ের রাতে গায়ে হলুদ, আর আজকে তুমি আমাদের ভার্সিটি পাঠাচ্ছ, কোথায় আমরা আজকে সকাল থেকে মজা করব তা না ঠেলে ঠেলে ভার্সিটিতে পাঠাচ্ছ।

~~ আম্মু আজকে থাক না, ভার্সিটিতে ভাইয়ের বিয়ের পর থেকে যাই?

শায়লা— তোমার ভাই কেন যাচ্ছে সেটা তো তুমি জানো, আর তোমাকে আজকে ক্লাস করতে হবে, কালকে বিয়ে, তারপর থেকে তুমি তো অনেকদিন যাবত ভার্সিটিতে যেতে পারবে না, তাই আজকে ভাইয়ের সাথে তোমাকে যেতে বললাম, এখন তোমার যদি ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে না করে তাহলে থাক।

~~ ঠিক আছে, যেহেতু ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়েছি দুটো ক্লাস করে টপ করে আবার চলে আসব।

~~ পাগলি মেয়ে, শায়লা

সামিরা—আমি যতক্ষণে ভার্সিটি থেকে না আসছি কোন ইভেন্ট কিন্তু শুরু করবে না এই বলে দিলাম।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

“ভার্সিটি মাঠ পর্যন্ত আসতেই কালকের আরোহী নামের মেয়েটা ছুটে এসে সামিরার হাত দুটো ধরে বলল,”

আরোহী— সামিরা, কি বলেছে তোমার ভাইয়া?? উনি কি আমার সাথে রিলেশনশিপে আসতে রাজি?? কি হল বলো না।

‘সামিরা কিছুটা কাচুমাচু হয়ে বলল’

সামিরা— আসলে হয়েছে কি আপু, কালকে আমার ভাইয়া মাজ পথে আমাকে নিয়ে আমার হবু ভাবির বাসায় গিয়েছিল ভাবির সাথে কথা বলার জন্য, তাই দুর্ভাগ্যবশত আমি আপনার প্রপোজালটা রিহান ভাইকে দিতে পারিনি।

আরোহী— হোয়াট দা হেল? তোমার ভাইয়ের হবু বউ মানে?

সামিরা— আসলে হয়েছে কি আপু, আপনি আমার যে ভাইয়ের কথা বলছেন সে হলো আমার, বড় চাচ্চুর একমাত্র ছেলে, আমার cousin brother, আর আমি কাল আমার নিজের ভাইয়ের উরবি বউর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তাই আর রিহান ভাই কে আপনার কথা বলা হয়নি।

আরোহী— ওহ তাই বল, আজকে প্লিজ বলে দাও না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ,

সামিরা— মেয়েকি হেসে, জ্বী আপু আমি ভাইয়াকে এক্ষুনি আপনার কথা জানাচ্ছি,

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

উঁহুম, উহুম, ‘সামিরা’

আড্ডা মহলের মাঝখানে হঠাৎ মেইলি কণ্ঠ শুনে, রিহানের দল পিছন ফিরে তাকায়, হঠাৎ ভুল জায়গায় ভুল মানুষকে দেখে কিছুটা চমকায় আড্ডা মহলে সবাই। রাফি তো গলা ছেড়ে প্রশ্ন করেই বসলো,

রাফি— আরে সামিরা যে, তা হঠাৎ এখানে??

“রাফিকে এত সুন্দর মধু গলায় সামিরার সাথে কথা বলতে শুনে রিহান দাঁত কি’ড়’মি’ড় করে রাফির দিকে তাকায়, রাফি রিহানের চাওনি বুঝতে পেরে তক্ষণে অফ যায়।”

সামিরা— রিহান ভাইয়া আপনার সাথে কিছু কথা ছিল??

রিহান— নিষেধ কে করেছে, তুই কথা বলা শুরু কর আমি ,এখানে বসে শুনতে থাকি।

সামিরা রিহানের এমন কথায় কিছুটা অপমানিত বোধ করে, তারপরও এত বড়ো দায়িত্ব নিয়ে যখন এসেছে তখন তো আর পিছপা হওয়া যাবে না, কারণ সামিরা তো রিহানের স্বভাব জেনে বুঝেই এসেছে, তাহলে পিছপা হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। তাই নিচের দিক তাকিয়ে মিন মিন করে বললো।

সামিরা— আসলে সবার সামনে আমি কথাটা বলতে চাই না, যদি একটু আলাদাভাবে শুনতেন?

সামিরার এহেন কোথায়, রিহান হঠাৎ রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে, রানের উপর একটা থাপ্পড় মেরে দাঁড়িয়ে, স,জোরে সামিরা দুই বাহু চেপে ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

~~ দুই ভাই বোন কি পেয়েছিস আমাকে? খেলার নমনি পুতুল? তোরা যেমন নাচাবি তেমন নাচবো? তোর কি মনে হয় তুই এখানে কেন এসেছিস আমি সেটা জানিনা? নিজের কোন প্রয়োজোনিও জিনিস নিয়ে তো,কখনো আমার কাছে আসিস না? তাহলে অন্যজনের ওকালতি করতে আমার কাছে কেন আসিস?

সামিরা— ভাইয়া আমার পুরো কথাটা তো আপনি শুনুন,, ভয়ে ভয়ে

রিহান— এই এই, ওয়েট। আমি তোর কোন জন্মের মায়ের পেটের ভাইরে? যে দেখা হলে এমনভাবে ভাইয়া ডাকিস মনে হয় আমি তো তোর জন্ম জন্মান্তরের ভাই হই।

সামিরা— ভাইয়া আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন, আমার কথাটা তো শুনুন,

রিহান— তোর কোন কথা শুনতে আমি রাজি নই।

~~~ যা আমার সামনে থেকে, এই মুহূর্তে তুই চলে যা।

সামিরা— কিন্তু আমার,

রিহান— তোকে এখান থেকে যেতে বললাম না। চেঁচিয়ে

“সামিরা রিহানের এমন হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখে, আর কিছু বলতে না পেরে ছোট ছোট কদম ফেলে সেখান থেকে চলে আসার জন্য সামনে পা বাড়ায়। তখনই রিহান গম্ভীর কন্ঠে শুধালো”

ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেটে আসা এক অপরূপ কিশোরী, মস্তিষ্কে সারাক্ষণ বিচরণ করা এক ভয়ঙ্কর নারী, পতি ক্ষণে ক্ষণে মনের রাজ্য কে নতুন ভালোবাসায় সৃষ্টি করা এক অপরূপ মায়াবতী, পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলঝল করা এক পুনত্ব কন্যা, এই কন্যার পিছনে আমি আর কত ছুটবো কত বোঝাবো, যে আমি অন্য কাউকে নয় সেই ছোট্ট অষ্টদাসীকে ভালবাসি,

~~ সে কি আমার #অপেক্ষা বোঝে না?? নাকি বুঝেও আমার ভালোবাসাকে মূল্য দিতে জানে না??

সামিরা রিহানের এহেন কথায়, পা দুটো যেন ওখানেই আটকে যায়, তার এই রাগী ভাই এতো আবেগি কথা কাকে বলছে?? সে কি সত্যি শুনছে নাকি তার কানে কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে??

“সামিরা বুঝে উঠল না, হঠাৎ রেগে যাওয়া আবার হঠাৎ এমন কথা বলার মানে,তাই ওখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলো আসার জন্য পা বারাতেই, পেছন থেকে রিহান আবারও সামিরের দুই বাহু চেপে ধরে নিজের দিক ঘুরিয়ে চিৎকার করে বলল।”

~~ কেন এত অ্যাভয়েড করে চলিস আমাকে? আমার কোন ফিলিংসের দাম নেই তোর কাছে? আর না আছে তোর ওই ভাইটার কাছে। কিন্তু তোর ভাই তো ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে যাচ্ছে, তাহলে আমি কেন পাব না, কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন তো কোন রেকর্ড হয়নি। যেটা রিহান চেয়েছে সেটার রিহান আজ পর্যন্ত পাইনি, তাহলে আজকে কেন তোর মত একটা মেয়েকে রিহান চেয়েও পাবেনা। ‘রিহান’

সামিরা— কি বলছেন এসব আপনি ভাইয়া,আ,

রিহান— অনেক ভাইয়া বলার শখ তোর তাই না? আজকে তোর সব ভাইয়া বলার ওয়েটাই শেষ করে দিব , চল আমার সাথে,

সামিরা— আমা,,

“রিহান সামিরার কোন কথা না শুনেই সোজা, ওর বন্ধুদের নিয়ে কাজী অফিস চলে আসে।”

“সামিরা তো কাজী অফিস দেখে মুহূর্তে চমকে ওঠে। কি করতে চাইছে এই রিহান? রাগ করে কি এখন উল্টাপাল্টা কোন কাজ করবে। যদি এমন কোন চিন্তা নিয়ে রিহান সামিরা কে নিয়ে আসে তাহলে সামিরা কিভাবে আটকাবে রিহান কে”?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

বেলা ১১.২২ কি ২৩ শীত থাকায় সূর্যটার তেজ জানি একটু বেশি ছড়াচ্ছে, যানবাহন গুলো একের পর এক ছুটে চলছে, রিহান সামিরার হাত ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, কিছুক্ষণ আগে যেই সম্পর্কটা ভাই বোনের ছিল, তা এখন একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। হ্যাঁ সেই সময়টা সামিরা চেয়েও রিহানকে আটকাতে পারিনি, রিহান সামিরা কে জোর করে বিয়েটা করে নিয়েছে। সাক্ষী হিসেবে ছিল রিয়ানের সমস্ত বন্ধু মহল। সামিরা একা হওয়ায় ওর স্বার্থে বিয়েটা আটকানো সম্ভব হয়নি। নিজের সাথে কি হয়েছে সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এই মুহূর্তে সামিরার, কোথা থেকে কি হয়ে গেল। সামান্য একটা কাজের জন্য রিহান সরাসরি সামিরা কে বিয়ে করে নিল, সামির এখন আর, এক একটা মানুষ নয়, তার সাথে জড়িয়ে গেছে আরও একটা মানুষ।

রিহান— বউ তুই আমার, তাই এখন থেকে সব কথা শুনতে বাধ্য তুই, আমার অবাধ্য হওয়ার একদম চেষ্টা করবি না। আরে বিয়েটা সম্পর্কে তুই বাড়ি গিয়ে বলতে পারিস আমার কোন প্রবলেম নেই।

সামিরা— —–

রিহান— আজকে তো ভাইয়ের গায়ে হলুদ,

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে