অপেক্ষা পর্ব-০৯

0
5

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ9

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

“আমি এই বিয়েটা কিছুতেই করতে পারবো না মা, তোমরা আমাকে বোঝার চেষ্টা করো, আমি তোমাদের এই কথাটা রাখতে পারছিনা, দয়া করে তোমরা এই বিয়েটা ক্যানসেল করে দাও।” ‘অরু’

আলেয়া— আমরা ওনাদের কথা দিয়েছি, আর এখন আমরা এ কথা ফিরিয়ে নিতে পারব না। তাছাড়া আমরা তোমার খুশির কথা ভেবে এটা করছি। মা বাবার সিদ্ধান্ত কে সবসময় ভরসা করতে শিখো।

~~ তাছাড়া ছেলেটা খুবই ভালো, দেখতে শুনতে লম্বা চুড়া, সুন্দর তোমার পাশে বেশ মানাবে, তাছাড়া সব থেকে বড় বিষয় হলো ছেলেটা খুবই ভদ্র। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছিলাম। তারপর ছেলের নিজের প্রফেশন আছে, কের উপর ভরসা করে তোমাকে খাওয়াতে হবে না। তুমি ওর সাথে সুখী থাকবে। সেদিন তো তোমায় উনাদের সামনে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তুমি চলে এলে, পরে তো তোমাকে ডাকা হয়েছিল ছেলেকে দেখার জন্য তুমি তো গেলে না।

অরু— কিন্তু মা আমি তো একজনকে ভালোবাসি, আমার ভালবাসা কি কোন মূল্য নেই??

আলেয়া— তোমার ভালবাসা একবার আমরা দেখে নিয়েছি, এবার আমরা তোমার হাতে তোমার জীবনটা ছেড়ে দিতে পারি না, আমরা তোমার ‘বাবা মা’ তোমার কোন খারাপ হোক আমরা চাইনা। তাই আমরা যেটা বলছি সেটাই মেনে নাও, তুমি সুখী হবে।

“অরুপিতা বাধ্য মেয়ের মত মায়ের মুখে মুখে আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রুমে চলে যায়, এক বুক আশা নিয়ে গিয়েছিল তার মার কাছে, কিন্তু তাতেও মা পানি ঢেলে দিল। এখন তার কি করার আছে, মাএ ১৬ টা দিন হলো সে শাহারিয়ার সাথে কথা বলতে পারলো না,এর ভিতর এত সব হয়ে গেল, এখন কি করে কিভাবে সামলে নিবে সবকিছু, একদিনের ভিতর কি পারবে শাহারিয়াকে ম্যানেজ করে ওর বিয়েটা ভাঙ্গাতে, কিন্তু মা তো বলে দিল এই বিয়েটা টা তাকে করতে হবে, কিন্তু সে তো বিয়েটা করতে চায় না। এটা তার মা-বাবাকে কে বোঝাবে। সে শাহারিয়াকে অনেক ভালোবাসে। আর সে লক্ষ্য করেছে শাহরিয়া ও তাকে ভালবাসে, তাকে ঠকাচ্ছে না, তাহলে সে কি মেনে নিতে পারবে অরুপিতা অন্য একজনের হতে চলছে?? সেও হয় তো আমার মত হয়তো ভেঙে পড়বে। কিন্তু আমি কিভাবে আটকাবো, কালকে দিনটা আমার গায়ে হলুদ, পরশুদিনটা আমার বিয়ে, এরা আমার কাছে সময়টাও জিজ্ঞেস করলো না, তারা নিজেরাই তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা দুদিনের মাথায় দিয়ে দিতে চাচ্ছে। কে বুঝাবে এদের, আমি শাহরিয়ার নামক মানুষটাকে চাই, অন্য কাউকে না, না আমাকে শাহারিয়া কে জানাতে হবে, আমি আজকে ভার্সিটিতে যাব”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

প্রতিদিনকার মতো সামিরা দল গল্প করছিল তবে আজ জায়গাটা ভিন্ন, প্রতিদিন মাঠে বসলেও আজ তারা পুকুর ঘাটে বসেছে, তবে দুটো দিন ধরে তাদের দলের সবথেকে থেকে নিরব মেয়েটা তাদের মাঝে নেই। তাই তাদের দলের তিনজন আড্ডা দিয়ে তেমন মজা পায় না, অরু যেদিন থেকে ওদের তিনজনের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছিল এই দলটা যেন অনেক ভারী হয়ে গিয়েছিল, এখন তাদের দলটা খালি খালি লাগে অরুপিতা কে ছাড়া , তাই আজ মন মরা হয়ে তিনজনই এসেছে পুকুর ঘাটে, সবাই গল্পের মধ্যে থাকলেও সবার চোখ ভার্সিটি গেটের সামনে। এই বুঝি অরুপিতা আজকে ভার্সিটিতে আসলো। তবে তাদের আশায় জল ঢেলে আরুর জায়গায় ভার্সিটির এক ব্যাচ সিনিয়র একটা আপু হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের সামনে এসে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল ।

~~ সামিরা তোমার সাথে আমার ইম্পোর্টেন্ট কিছু কথা আছে, আর সেটা তুমি নিজে আমাকে করে দিবে। প্লিজ বলো করে দিবে, হাত দুটো সামিরা সামনে জোর করে ।

“সামিরা মেয়েটার হাবভাব দেখে, মেজাজ তো চঙ্গে, কারণ সামিরা তো ভালো করেই বুঝে গিয়েছে, এইসব ভার্সিটির মেয়েরা তার কাছে সাহায্য চাইতে কেন আসে, তার দুই দুই জন সুদর্শন যুবক ভাই এই ভার্সিটি তে সৌন্দর্যের তালিকায় রাজত্ব করে। আর মেয়েরা তো সব সময় এই সেই সুতা নিয়ে সামিরা কাছ থেকে হেল্প নিতে আসে, তার জন্যই তো সে ভার্সিটির কাউকে বলে না যে এই সুদর্শন দুই যুবক তার ভাই, কিন্তু কেমনে কিভাবে মেয়েরা যে জেনে যায় কে জানে, এখনো নিশ্চিত এই মেয়ে তার কোন ভাই কে পটানোর কথা বলার জন্যই এসেছে, তাই সিনিয়রের মান রাখার রক্ষার্থে অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বলল।

সামিরা— জ্বি আপু অবশ্যই করবো।

আরোহী— আমি জানতাম তুমি আমায় সাহায্য করবে,

~~ ওই তোমার রিহান অরণ্য নামে যে একজন ভাই আছে প্লিজ ওনাকে পটিয়ে দেও না, অনেক ভাবে টেরাই করলাম কাজ হলো না। এখন তুমি যদি একটু হেল্প করো??

“হ্যাঁয় আল্লাহ এতো দিন গম্ভীর রাগী ভাই টার পিছনে পড়ে ছিল, আজ আবার রাখখোশ ভাই টার, কিন্তু সামিরার কেমন কেমন জেন রাগ লাগছে রিহান তো তার ও ক্রাশ, তাছাড়া রিহান অনেক রাগী কোন মেয়েকে পাত্তাই দেয় না, যেখানে সামিরার সাথেই বেশী কথা বলতে চায় না, সেখানে অন্য এক জনার প্রেম প্রস্তাব শুনলে নিশ্চিত আমাকে একটা কানের নিচে দিবে। কিন্তু কি আর করার সিনিয়র আপু বলছে না ও তো বলতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো।”

সামিরা— ঠিক আছে আপু আমি বলবো ওনাকে আপনার বিষয়,

আরোহী— প্লিজ প্লিজ সামিরা সাহায্য যখন করবে আজকেই বলো,

” কি আর করার বাধ্য হয়ে তাতেও রাজি হয়ে গেল। ভার্সিটির রাগি ভাইয়া কে প্রেম প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে তাও বোনের অধিকার নিয়ে,কে জানে আজ তার কপালে কোন শাস্তি অপেক্ষা করছে। কারণ রিহান ভাই কোনদিন সামিরা কে বোন বলে পরিচয় দেয় না। আর তার ভাই শাহারিয়া রিহানের সাথে মিশতে দেয়। আর না রিহান সামিরা কে নিজের সাথে বেশি গিশতে দেয়, সব যেন সামিরার মাথার উপর ঝামেলা এসে পড়ল। তার ভাই বলে দিয়েছে রিয়ান কে কারো কাছে ভাই হিসেবে পরিচয় না করাতে, তাইতো সে রিহানের নামে কারো কাছে কিছু বলতে গেলে প্রথমেই ভার্সিটির বড় ভাই হিসেবে পরিচয় দেয়।”

**************************************

অরুপিতা প্রায় ভার্সিটিতে এসে অনেকক্ষণ যাবৎ সামিরাকে খুঁজে চলছে। কিন্তু কোথাও সামিরার খোঁজ নেই। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবে তারও উপায় নেই, আশেপাশের ঋতু মায়াকেও দেখতে পারছে না। তার এই কষ্টের দিনে তার বন্ধুরা লুকিয়ে বসে আছে। কই তারা তাকে খুঁজে তার কষ্টের কথা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু না এরা যে কোথায় নাপাত্তা হয়ে আছে কে জানে। কি আর করার এখন তো তাকেই খুঁজে বের করতে হবে। তাই সামনের কিছুটা পর যেতেই দেখতে পেল, ঋতু মায়া দাঁড়িয়ে আছে, ব্যাস অরুপিতার আর কি চাই, ছুটে গেল ঋতু মায়ের কাছে।

অরু— এই ঋতু সামু কইরে ??

ঋতু— ও তো ওর ভাইয়ের কাছে গিয়েছে।

অরু— ওর আবার ভাই আসলো কোথা থেকে??

ঋতু— আরে বইন তুই মনে হয় এই পৃথিবীতে আজকেই টুপ করে পড়েছিস, যে সামিরার ভাই আছে সেটা তুই জানিস না?

অরু— না আমাকে তো বলেনি, যাইহোক ও কোথায় সেটা বল।

মায়া— এই কানি তুই কি কানে শুনতে পাস না?? মাত্রই তো বলল ওর ভাইয়ের কাছে গেছে।

অরু— ও হ্যাঁ, কিন্তু কোথায় গেছে।

ঋতু— আরে সোজা সাপটা বলে দিতে পারিস না মায়ার বাচ্চা,

~~ অরু আমাদের ভার্সিটি যে রাগী বড় ভাইয়া আছে না, ওই যে রিহান নামে? ও হলো আমাদের সামিরার ভাই। সামিরা তার কাছেই গেছে,

আরুপিতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ওই রিহান সামিরার ভাই?? আর সামিরা তাকে একটা বার বলল না, আর সামিরা এই জন্য সব সময় তাকে বলতো ভার্সিটির বড় ভাইটা অনেক সুন্দর অরুপিতা যেন তার ভাইকে ভালোবাসে,শেষ পর্যন্ত সামিরা ওকে ঠকালো? নিজের স্বার্থের জন্য, যার কাছে মনের দুঃখ প্রকাশ করতে এসেছিল, শেষ পর্যন্ত সেই সবকিছুর মূল। অনেক আশা নিয়ে এসেছিল ভার্সিটিতে সেই সব আশায় জল ঢেলে। আবারো বাড়ির পথে হাটা দিল।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

তোর সাথে দেখা করতে হবু ননদ আর সাথে জামাই বাবা এসেছিল?

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে