অপেক্ষা পর্ব-০৭

0
10

#অপেক্ষা,
#mariam_akter_juthi
#পর্বঃ7

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

“কিচিরমিচির পাখির মুখর্য ডাকে যেন প্রকৃতি এক অন্যরূপে শোভা পাচ্ছে। সেই সাথে ফজরের আজানের ধনী চারপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে, সবাইকে আহ্বান করা হচ্ছে আল্লাহর পথে, মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে তার বান্দাদেরকে তাদের মনের ইচ্ছেকে চাওয়ার জন্য তার দুয়ারে ডাকছেন, হয়তো অনেক ব্যক্তিই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে যার যার চাওয়া পাওনা গুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করছে, আবার অনেকে আছে ঘুমের তাড়নায় আল্লাহর ডাক শুনেও আল্লাহকে এভোয়েড করে ঘুমের রাজ্যেয় তলিয়ে আছে। অরুপিতা প্রতিদিনের মতো আজও, আল্লাহর দরবারে মনের ইচ্ছা চাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি উঠে অজু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। নামাজ শেষে দুহাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে কান্না করে বলে,”

~~ “আমি জানিনা কিভাবে ডাকলে আপনি আমার ডাকে সাড়া দেবেন-
“আমি জানিনা আমি আপনার দরবারে কিভাবে চাইলে আপনি আমার চাওয়া পূর্ণ করবেন-
“আমি জানিনা আমার চাওয়া কতটা সৎ হলে আপনি আমার হাত ভরে দিবেন-
“আমি ঠিক জানিনা আমি কিভাবে আপনার কাছে দোয়া করলে আপনি আমার দোয়া কবুল করে নিবেন-
“কিন্তু আপনি তো আপনার এই গুনাহগার বান্দার অন্তরের খবর জানেন-
“ইয়া রব আপনি তো অন্তরের খবর জানেন দেখেন, এবং আপনি তো নিজেই বলেছেন-
“তোমরা আমার কাছে চাও আমি তোমাদের নেক ইচ্ছা পূরণ করে দিব-
“আপনি তো আপনার বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন আপনি খালি হাতে আপনার বান্দাদের ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন-
“আমি আপনার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার অযোগ্য, তবুও আপনি আমায় অনেক কিছুই দান করেছেন-
“আমি আপনাকে আমার শেষ নিঃশেষ অব্দি বিশ্বাস করি, আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না-
“আমি এও জানি আমি ব্যতীত আপনার নিকট অনেক উত্তম বান্দা রয়েছে, কিন্তু আমার আপনি ছাড়া কেউ নেই মালিক-
“আমার আবদার পূর্ণ করার, ডাকার মত, চাওয়ার মত, গুনাহ গুলো ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার জন্য, আপনি ছাড়া কেউ নেই রব-
“ইয়া মালিক আমি দুর্বল, আমি একবার ভেঙ্গে পড়েছি, এবার আর ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না-
“আমি তার উপযোগী নই, আমার জন্য তাকে সহজ করে দিন-
“আপনি আমার মোনাজাত শুনে থাকলে আমার মোনাজাতের সারাদিন, আমার চাওয়া কবুল করে নিন-

“আমার এই খালি দুহাত আপনি রহমত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিন-
” আমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টিকারী কে আমার করে দিন,রব-
“আমি শাহরিয়া নামক মানুষটাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই-
“আপনি তা আপনার রহমতের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন-
“আমিন”-

“অরুপিতা চোখের পানির গুলো মুছতে মুছতে জায়নামাজ টা গুছিয়ে রেখে, দুদিন আগের দেওয়া শাহরিয়ার গাঁয়ের কোডটার কাছে এগিয়ে যায়। গিয়ে সেটা হাতে তুলে নেয়, জ্যাকেটটা নাকের কাছে নিয়ে ঘনঘন দুই তিনটা নিশ্বাস নিয়ে জ্যাকেটটার ঘেরানটা সুখে নেয়। অতঃপর সেটা বুকের কাছে সজরে চেপে ধরে, জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। আবারো আগের মত দুচোখে বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। জ্যাকেট টা মুখের সামনে ধরে কান্না করতে করতে বলল।”

আরু— কিভাবে এতটা আপন হয়ে গেলেন আপনি, কেন আবার আমার এই বিষিয়ে যাওয়া মনটায় ভালোবাসা ঝড় তৈরি করলেন? আমি কি বলেছিলাম আপনি আমার মনে আসুন? আবার পুনরায় ভালোবাসা তৈরি করুন। তাহলে কেন এলেন? বলুন? বলবেন না তাইতো? সবাই এমন, সবাই এসে সাগরের নামিয়ে, মাঝ সাগর রেখে চলে যায়, আপনিও ঠিক তাই করবেন আমার সাথে তাই না? দয়া করে এবার আপনি আমার সাথে এমনটা করবেন না। আমি এবার হয়তো সহ্য করে নিতে পারব না, আপনি আমার হয়ে যান না। বিশ্বাস করুন কোনদিন আপনার কথার অবাধ্য হবো না। বিশ্বাস করুন কোনদিন আপনার থেকে মুক্তি চাইবো না, বিশ্বাস করুন আপনার কখন কোনটা প্রয়োজন ,কখন কোনটা প্রয়োজন না, সবটা আমি খেয়াল রাখবো, তবুও আপনি আমাকে আপনার করে নিন না। ভালোবাসা যখন সৃষ্টি করেছেন তখন সেটা পরিপূর্ণ করে দিতে সাহায্য করুন? আমি কথা দিচ্ছি এই অরুপিতা যদি আপনাকে না পায়, তো এ জীবনে আর কাউকে গ্রহণ করবে না, অরুপিতা নামে মেয়েটা শুধু আপনাকে চায়, হ্যাঁ হ্যাঁ শাহরিয়া আপনাকে চায়,

****************************************
“স্কুল ড্রেস পরিহিত পিচ্চি পিচ্চি ছেলে মেয়ে বাবা মায়ের হাত ধরে রাস্তার পার হয়ে যাচ্ছে, একের পর এক গাড়ি আসা-যাওয়া লেগে রয়েছে, কিছু দূর দুই পাশে দুই ছুটি বেঁধে, সাথে লং কামিজ প্যান কার্ড সালোয়ার পড়ে, মনের আনন্দে হেঁটে যাচ্ছে এক ছোট্ট কিশোরী, কি ধাঁধান সেই সৌন্দর্য, একা একাই রাস্তা বয়ে চলছে। রাস্তার চারিদিকে বুড়ো থেকে যুবক এবং কি কিশোর বয়সী ছেলেদের চোখ থেকেও এড়াতে পারেনি মুন নামে মেয়েটি, অসভ্য সমাজে কোন নারী শান্তিতে পদধ্বনি করতে পারেনা। তাদের উপর কুনজর যেন লেগেই থাকে। এইতো মুন কিছুটা পথ আঘাতেই দু তিনটা ছেলে, এসে মেয়েটার সামনে বাধা দিয়ে দাঁড়ায়।”

~~ তা এত সুন্দর করে বডি ফিটনেস বের করে দেখাচ্ছ কাকে? ছেলে

মুন— দেখুন রাস্তাঘাটে অসভ্যর মত ব্যবহার করবেন না, আপনাদের ঘরে যদি বোন নয় মা ও থেকে থাকে তাহলে অন্তত রাস্তার মেয়েদের দেখলে নিজের মায়ের স্থানে বসাবেন। তাহলে আর মেয়েদের দেখলে অসম্মান করতে মনে চাইবে না।

~~ আচ্ছা অসম্মান করলাম না। তবে একটা সুযোগ তো দাও, তোমাকে অনেক তৃপ্তি দেব।

মুন— ছি অশ্লীল, অসভ্য সমাজের অসভ্য লোক কতগুলো, মেয়েদের দেখলে ই উত্তেজনা শুরু হয়ে যায় তাই না, এত উত্তেজনা নিয়ে রাস্তায় না ঘুরে নিজের ঘরে নারীর সাথেই তো কাজ চালাতে পারেন, তাহলে তো আর রাস্তায় মেয়েদের চলাফেররায় ঝামেলায় পড়তে হতো না।

~~ ওহ সুন্দরী এই বয়সে একটু তেজ থাকে সব মেয়েদেরই, আমি বলছি,আমার সাথে চলো পাক্কা প্রমিস করছি এমন তৃপ্তি দেব না তোমাকে বারবার আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করবে।

~~ঠাসসসসসসসসস~~~

” জানোয়ারের বাচ্চা, কি মনে করিস নিজেকে। তৃপ্তি দিবি তাই না, অনেক পুরুষত্ব জেগেছে তাই না। তোর পুরুষত্বের যদি আমি বারোটা না বাজাতে পারি তো আমার নামও রিহান অরণ্য চৌধুরী নয়।”

~~ বল কতদিন ধরে এমন মেয়েদের ইভটিজিং করিস? তাড়াতাড়ি বল?

— ——–

রিহান— চুপ করে আছিস কেন বল। আর যদি তোরা চুপ করে থাকিস তো তোদের এমন অবস্থা করব যে নিজেদেরকে নিজেরাই চিনতে পারবি না। তোরা হয়তো ভালো করেই জানিস এই শহরের লোক রিহান অরণ্য কে খুব ভালো করে সবাই চেনে। সেই ক্ষেত্রে তোরাও বাদ যাবি না।

— রিহান ভাই দয়া,করে এইবারের মতো আমাদের ক্ষমা করবেন। বিশ্বাস করুন ভাই জীবনে কোন মেয়েকে ইভটিজিং করবো না। সত্যি বলছি,

রিহান— জীবনে অনেক সত্যি বলেছিস, কিন্তু এইবার তোদের একটু ঝাজ দিতে হবে, নয়তো তোদের মুখের কথায় বিশ্বাসয অন্তত আমি নই। বলে রিহানের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল।

~~ এই তিনটাকে আমার আস্তানায় নিয়ে ক্যালানী দিবি। যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের দু একটা করে হার ভাঙছে।

এতক্ষণ যাবত রিহান কে শুরু থেকে এখানে যা যা করেছে সামিরা মন দিয়ে দেখছে, এটা সামিনা আজ নয়। প্রায় লক্ষ্য করে রিহান কে, ওর বেশ ভালো লাগে যখন রিহান অন্য একটা মেয়ের সম্মান বাঁচায়। মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে সামিরা মুচকি হেসে ওখান থেকে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে চলে আসে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

“তোমার কাছে দুটো কন্ডিশন ভাইয়া,” রিহান

~~এক তুমি ওকে আমার হাতে তুলে দাও,

~~দুই নয়তো অরুপিতার জীবন থেকে সরে দাঁড়াও।

শাহরিয়া— আমি অরুকে ভালোবাসি রিহান। এটা তুই জেনে এমনটা করছিস তাই না??

রিহান— না ভাই, যখন এই মেয়েটাকে প্রথম দিন দেখেছিলাম বেশ ভালো লেগেছিল, আর লাগার কথা আরুপিতা মেয়েটা সবার চোখে পড়ার মতো। তবে আমার মনে তো একজন বাধা বেধে বেসে আছে, সেই কবে থেকে? কিন্তু তোমার মত ভাই নামক শত্রু থাকতে, আমি কি তাকে পাই বল? কিন্তু যখন দেখলাম অরুপিতা নামে মেয়েটি আমার ভাইয়ের পছন্দ। তো ব্যাস নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার সুবর্ণ উপায় পেয়ে গেলাম।

শাহরিয়া— রিহান তুই ভালো করে জানিস আমি কেন ওকে তোর হাতে তুলে দিচ্ছি না।

রিহান— কিন্তু ভাই আমি তো তোমাকে আগেই কথা দিয়েছি, আমি যতই খারাপ হই না কেন, ও কে আমার জীবন থাকতে কোন কষ্ট অনুভব করতে দিব না। নিজের শেষ অব্দি ওকে আগলে রাখবো, ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখবো। কোন অযত্ন হতে দিব না।কিন্তু তুমি তো আমার কথা শোনোনি, বাধ্য করেছ ওকে আমার থেকে দূরে রাখতে। আর সেটা তুমি করে ছেড়েছ, তবে আমি হাল ছাড়িনি, সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম, বাস আল্লাহ সুযোগ করেও দিল। এখন তোমার ইচ্ছা,

~~ হয়তো আরুপিতা, নয়তো সা,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে