অপেক্ষা পর্ব-০৪

0
7

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ4 [রেগিং]

শীতের মুখর্য পরিবেশ, গা ছমছমে ঠান্ডা। ব্যস্ত নগরী ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত প্রতিটি মানুষ নিজ কর্মক্ষেত্রে। দিনের পর দিন গায়ে খাটে শুধু অন্যে আহরণের জন্য। এই পৃথিবীতে যদি মানুষের অন্য গ্রহন করা না লাগতো তাহলে হয়ত মানুষ শুয়ে ভয়ে থাকত। কিন্তু অন্য গ্রহণ করা মানুষের এক ঐশ্বর্য পত্রিকা। তাই তো ব্যস্ত নাগরীতে যানজট পেরিয়ে যে যার কাজে বেরিয়ে পড়ছে। সময় স্রোত দুটাই বয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। কিভাবে যে মানুষের জীবন থেকে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে, বুঝে ওঠা দায়। এইতো দেখতে দেখতে চারটা দিন কেটে গেছে। আরুপিতার সাথে সামিরার এখন ভীষণ ভাব জমেছে। জমবে নাই বা কেন? সামিরার যে আময়িক মিশুক ব্যবহার তাতে ওর সাথে যে থাকবে তারই একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি হবে। সামিরার তো এখন অরুপিতা কে ছাড়া ভার্সিটি চলেই না।
এইতো সামিরা প্রত্যেকদিন ক্লাস করে আর ক্লাসে কি কি করলো তার প্রিয় বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে, সব বাসায় গিয়ে ওর , মাকে,ভাই শাহরিয়া কে প্রত্যেক দিন আরুপিতার কথা বলে। আর সে কি বায়না, মায়ের কাছে তো নিত্যদিনের আবদার একটাই থাকে। সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে তার ভাবি বানাতে চায়। এমন না এটা তার এখনকার ইচ্ছা, এটা যখন সামিরা আরুপিতাকে প্রথম দিন ভার্সিটিতে আসতে দেখেছিল তখনই মেয়েটাকে লক্ষ্য করেছিল। সুশীল ভদ্র ঘরের মেয়ে দেখে বোঝা যায়, প্রথম প্রথম শাহরিয়া আরুর কথা তেমন পাত্তা না দিলেও ইদানিং নিজে থেকেই সামিরার কাছে প্রশ্ন করে অরুর বিষয়।

“সামিরার এটা খুব পছন্দ তার ভাই তার বেস্টফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করে। হয়তো এবার সামিনা স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এই শ্যামবর্ণ নরম মনের মানুষকেও কেউ মনের দিক থেকে আহত করতে পেরেছে। এতেই সামিরা ভীষণ খুশি।”

*********************
শীতের সকাল মানে ঘুম ঘুম মনোরম পরিবেশ, শীতের দিনে আরুর বিছানা থেকে উঠতেই মনে চায় না। কিন্তু কি আর করার ভার্সিটিতে যেতেই হবে। তার ওপর আজকে আবার নিউ ইয়ার উপলক্ষে ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে। তাই বাধ্য হয়ে কম্বলটা সরিয়ে ওয়াশরুমের দিক ভৌ দৌড়। বেশ কিছু সময় হতেই আরুর ফোনে বুম বুম করে কল বেজে ওঠে। একবার কলের পর নেক্সট কল দিতে আরুপিতা, ছুটে এসে ফোনটা, তাড়াহুড়া করে কানে ধরেই, sorry sorry বেষ্টু রাগ করিস না। আমি এক্ষুনি চলে আসছি।

“সামিরার আর কি করার আছে এটা নিত্যদিনেরই কথা, প্রত্যেকদিন অরু লেট করবে সামিরা ফোন করলে sorry sorry বলে মনটা গলিয়ে নিবে, তাই কিছু না বলে, একটা লম্বা শাঁস ছেড়ে কঠিন গলায় বলল।”

সামিরা— তোকে আজকে আর আমি ক্ষমা করব না। প্রতিদিন তোর এক বাণী শুনতে হয় আমাকে। তুই থাক তোর মত, আমি আর তোকে ফোন দিব না। বাই রাখছি,

অরু— এই,এই না ফোনটা কাটিস না প্লিজ, এমন করছিস কেন। আমি তো চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি চলে আসার প্লিজ রাগ করে থাকিস না।

সামিরা— —-

অরু— প্লিজ কথা বল চুপ করে আছিস কেন?? আচ্ছা বাবা তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো, এবার তোমার সাথে কথা বল,

সামিরা— যা বলব তাই শুনবি তো??

অরু— ১০০% শুনবো,

সামিরা— পাক্কা,

অরু— হ্যাঁ রে বাবা পাক্কা,

সামিরা— ঠিক আছে তাহলে তুই একটা কালো শাড়ি পড়ে কলেজে চলে আয়, আর এক্ষণ যদি বলিস আমি শাড়ি পরব না তাহলে বুঝবি আজকে থেকে তোর সাথে আমি আর কথা বলবো না। আমি যেন তোকে কলেজে শাড়ি অবস্থায় দেখি,এই আমি বলে দিলাম, আরু কে প্রতি উত্তরে কিছু বলতে না দিয়ে সাথে সাথে ফোনটা কেটে দেয়।

“অরুর কি আর করার বাধ্য হয়ে শাড়ি না পড়ে, সুতির একটা কাজ করা কাপড় সুন্দরভাবে পড়ে নেয়, সাথে তো নিত্য দিনের হিজাব আছেই, ব্যস এতেই যেন অরুকে ভীষণ সুন্দর লাগছে, আসলেই সত্যি নারী মানেই শাড়ি, শাড়ি জিনিসটা ছোট থেকে বড় সবাই কেই সুন্দর লাগে, তবে কালো কাপড়টা অরুর গায়ে যেন একটু বেশি মানিয়েছে”অরু মেউরের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজেকে দেখে নেয়, না সব ঠিকই আছে, ব্যাস আর কি চাই প্রতিদিনকার মতো আজকেও নাস্তা না করে মাকে বাই বলে ভার্সিটিতে দৌড়ালো।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

“ভাইয়া আমি রেডি,এখন তাড়াতাড়ি চলো, নাইলে আবার তোমার জন্য আমার রাগ ও নিয়ে যাবে। তারপর তাকে আমার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। না বাপু, আমি আবার এটা চাই না। তাই তাড়াতাড়ি চলো।”

শাহরিয়া— দাঁড়া পিচ্চি হয়ে গেছে আমার, চুলটা স্পাইক করে নিলেই হল,

সামিরা— তোমার আর কতক্ষন লাগবে চুল ঠিক করতে। বাবা, মেয়েদের এত টাইম লাগে না তোমার মত।

শাহরিয়া— হয়েছে আমার, এবার তোর বকবকানি থামা, আর চল এখন।

” নিউ ইয়ার উপলক্ষে প্রতি বছরই ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে বিশাল বড় করে অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। এবার যেন তার থেকে একটু বেশি বড় করে আয়োজন করা হয়েছে। পুরো ভার্সিটি সাজানো হয়েছে তাজা ফুল দিয়ে। চারপাশটা বেলুনে ছড়াছড়ি, খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে ভার্সিটির চারপাশ, চারপাশটা দেখতে দেখতে অরুপিতা ভার্সিটির গেট দিয়ে কিছুটা দূরে যেতে দুই তিনটা মেয়ে পিছন থেকে আরুপিতার শাড়ি আঁচলটা টেনে ধরে, চলতি পথে বাধা পেয়ে আরুপিতা পিছন ঘুরে দেখে ওর থেকে সিনিয়র তিনটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার কিছু দূর সেদিনকার সেই ছেলে দুইটা সাথে আরো অনেকগুলো ছেলে আছে। অরুপিতা বুঝতে পারছে না হঠাৎ সিনিয়র আপুরা তাকে বাধা দিল কেন, সে তো শুধু এই ভার্সিটির ভিতর সামিরা সাথেই কথা বলে, আর তো কারো সাথে কথা বলে না। আর না কোনদিন বলবে। তাহলে এরা কেন হঠাৎ বাধা দিল তাকে, তাই কিছুটা কৌতূহ নিয়ে অরুপিতা জিজ্ঞেস করলো।

অরু— আপু আপনারা কিছু বলবেন??

আয়রা— হ্যাঁ, তুমি এই কাগজটা নিয়ে, ওই যে আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল কালার শার্ট পড়া ছেলেটাকে দেখছ, তাকে তুমি এটা নিয়ে দেবে। আর বলবে এটা তোমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে দিয়েছো, বুঝতে পেরেছ এবার যাও।

অরু— কিন্তু আপু আমি তো তাকে কিছু দিতে চাই না আমার পক্ষ থেকে, তাহলে আপনি কেন আপনার জিনিস আমাকে দিয়ে দেওয়াতে চাচ্ছেন?? আপনার জিনিস আপনি বরং দিয়ে আসুন। এতেই ভালো হবে,
আর দয়া করে আমার শাড়ি আঁচলটা ছাড়ুন।

আয়রা— ভালই তো ফটর ফটর কথা জানো, জানো আমরা ভার্সিটির লিডার গ্যাং আমরা যা বলি এখানে সেটাই হয়ে থাকে। তাই এই মুহূর্তে আমরা তোমাকে যা বলছি তুমি সেটাই করবে।

অরু— কিন্তু আপু,

আয়রা— ঠাস করে এখন একটা দিতে হয়, কথা প্যাচাচ্ছে। তুমি যাবে নাকি আমাদের হাতে চড় খাবে??

“আরু জানতো বড় বড় ভার্সিটি কলেজ গুলোতে এরকম উদ্ভট রেগিং দেওয়া ছেলেমেয়ে থেকে। যাদের প্রতিনিয়তই কাজ অসহায় ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়া। তবে ও আজ অব্দি কারো রেগিং এ পড়েনি। কিন্তু আজ এই অনুষ্ঠানের দিন ওকে রেগিং এ পড়তে হলো, কি আর করার এই মুহূর্তে তো আর কেউ সাহায্য করতে আসবে না ওকে, তাই এরা যা বলছে সেটাই করতে হবে, বাধ্য হয়ে অরু আয়রা নামের মেয়েটার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে যায় সামনের ছেলেটার দিকে।”

“ভাইয়া এইটা আমার পক্ষ থেকে আপনাকে দিচ্ছি” অরু

রিহান পা থেকে মাথা পর্যন্ত আরুপিতাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বাঁকা হেসে, আরুর হাত থেকে কাগজটা চট করে ছিনিয়ে নিয়ে মুখে বললো।

রিহান— তুমি সেদিন কার মেয়েটা না ?? তা এই কাগজে কি লেখা আছে শুনি,

রাফি— ভাই সুন্দরী দিয়েছে পড়ে দেখ কি লেখা আছে, আমরা ও একটু শুনি তারা আবেগ,প্রণয়নের কথা। বলে পাশে থাকা তিন চারটা ছেলে হো হো করে হেসে ওঠে।

“রাফিদের কথার ভিতর তখনকার মেয়ে তিনটা এসে যোগ হয় তাদের সাথে, রাফির সাথে তাল মিলিয়ে তখনকার আয়রা নামের মেয়েটা বললো।”

আয়রা— হ্যাঁ রে, রিহান। কি লেখা আছে পর আমরা একটু শুনি।

“সবার কথা মত রিহান চিঠিটা মেলে উচ্চসরে পড়া শুরু করল”

” পিও রিহান, ”

~~প্রথমে এক রাজ্য কার্ড গোলাপের শুভেচ্ছা নিন আমার পক্ষ থেকে, আর রাজ্য কি ফিরিয়ে দিন আমার ভালবাসার শুভেচ্ছা নিয়ে, ভালোবাসার জিনিসটার পতি আমার আবেগপূর্ণ টা একটু বেশি, তাই আপনাকে দেখার পর আমার আবেগকে আমি আটকে রাখতে পারিনি। তাই ছুটে টেবিলে বসে এই পত্র আপনার জন্য লিখতে শুরু করলাম। আপনাকে আমি একরাশ ভালোবাসা দিব, তার বদলে আপনি কি আমাকে একরাশ ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবেন?? নিবেন কি আপনার বৌ করে ঘরে তুলে? জীবনটা কি আপনার সাথে জড়াতে সাহায্য করবেন?? আমি জানিনা আবেগটা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। তবে পত্রের থেকে আপনার প্রতি ভালোবাসাটা একরাশ বেশি আমার। তাই আপনার প্রতি আশা রাখছি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।

ইতি~~প্রিয়তমা।

“রেহান চিঠিটা পড়ে বাঁকা হেসে সবার উদ্দেশ্য করে বলল।”

~~কিরে এখন কি আমার একে একসেপ্ট করে নেওয়া উচিত?

“রিহানের কথা শুনে সবাই ভৌ,ভৌ,করে হেসে উঠলো।”

“আরু প্রথম থেকে চিঠির সবটা শুনে তো শকের উপর শক সে যদি একবার বুঝতো চিঠিতে এমন কিছু লেখা আছে তাহলে কোনদিনও দিত না, তাতে যদি একটা চড় খেতে হত সে তাও খেতো তারপরও দিত না। তার ওপর তাদের এমন বিচ্ছিরি হাসি দেখে চিৎকার করে বললো।”

অরু— চুপ করুন আপনারা, এই চিঠি আমার না,আর না আমি নিজে থেকে, দিয়েছি। তাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করুন।

রাফি— ও লে লে লে লে, আসছে আমাদের ন্যাকা রানী। রাফির কথা শুনে আবারো সবাই একসাথে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।

রিহান— তোরা থাম, একে আমার সেদিনি মনে ধরেছিল, যেদিন একে আমি প্রথম দেখেছিলাম। But. তোরা এখন থেকে আমার তেজি মরিচকে ভাবী বলে সম্বোধন করবি, ওকে। আর ভুলেও তার সাথে বেয়াদবি করার চেষ্টা করবি না।

অরু— আপনাদের সাহস তো কম না, নিজেরা চিঠি দিতে বলে আবার নিজেরাই সবকিছুর ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন, বুদ্ধিটা ভালই ছিল, তবে আমার ক্ষেত্রে কাজ হবে না।

“বলে যেই চলে যাবে তখনই রিহান পিছন থেকে আরুর হাতটা চেপে ধরে শাসিয়ে বলল।”

~~আমি রিহান যা বলি তাই করি। আর এটা আমাদের রক্তের ধারা, আর এখন যখন বলেছি তুই আমার,মানে আমার, সেটা থেকে না তুই রেহাই পাবি আর না আমি তোকে রেহাই পেতে দেব। তাই চুপচাপ সব বিষয়ে রাজি হয়ে যা তোর তোর জন্য বিষয়টা ভালো হবে।

“আরু রিহানে এমন অসভ্যর মত ব্যবহার দেখে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।”

হঠাৎ করে কি হলো কারোই বোধগম্য হলো না। তাদের সবাই বুঝতে বুঝতে প্রায় এক মিনিট সময় লাগলো। যখন পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হল, তখন রিহান তেরে এসে আরুর দুই বাহু চেপে ধরে যেই কিছু বলতে যাবে অমনি পিছন থেকে একটা শক্ত পোক্ত হাত রিহানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল।

শাহরিয়া— সাহস কি করে হয় তোমাদের, মেয়েদের সাথে অসভ্যতা করার।

রিহান– কিন্তু ভা, ওহ, স্যার আমরা তো এর সাথে কোন অসভ্যতা করিনি। শুধু প্রপোজ করেছি। কিন্তু মেনে নিতে রাজি নয়। উল্টো আমাকে চড় মেরেছে। তাইতো আমি ওকে

শাহরিয়া— তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নিচ্ছি। আর রিহান বিষয়টা তোর জন্য মোটেও ভালো নয়। তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।

“বলে সামিরার সাথে অরু কে নিয়ে যায়।”

শাহরিয়া— তোমার কোথাও লাগেনি তো?? ওরা তোমাকে নিশ্চয়ই বকাঝকা করেছে ভীষণ,

অরু— না স্যার তেমন টা না ,

শাহরিয়া— তো কেমনটা??

“অরু শাহরিয়ার কথা শুনে নিচ থেকে ওর দিকে তাকায়।”

শাহরিয়া— কি ম্যাম বলবেন??

“আরু আবারো অবাক চোখে তার প্রফেসরের দিক তাকায়। ”

শাহরিয়া— কখনো একলা চাঁদকে উপভোগ করেছ?? সন্ধ্যাবেলা শ্যাওলা গাছের কাছে কখনো একলা গিয়েছো?? কখনো কি ঝিল গাছে উঠেছ??

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে