#সূচনা_পর্ব (1)
#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi (writer)
“কেমন মেয়ে মানুষ তুমি হ্যাঁ যে তোমারই সামনে তোমার হবু স্বামী তোমার বান্ধবীকে বিয়ে করছে আর তুমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছো। কিছু করছ না কেন তুমি।”
“পাশের বাড়ির এক আন্টির মুখে এমন কথা শুনে অরুপিতার পূর্ণিমার আধারে ঢাকা মুখ যেন ত্যোচ্ছিল্য ন্যায় হাসি ফুটে ওঠে। সে এখানে এসে এমন একটা দৃশ্য দেখবে কখনো কল্পনা করেনি। যেই জায়গার তার বসার কথা ছিল যেই জায়গাটা তার থাকার কথা ছিল সেই জায়গায় আজ তার বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল।”
অরু—সবার কপালে তো সব থাকে না। আমার কপালে হয়তো নেই তাই হয়তো আমিও পেয়েও পাইনি।
বলতে বলতে অঝোরে চোখের পানি টপটপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ার আগে মুছতে মুছতে ওখান থেকে চলে আসে।
সুখ জিনিস টা সবার কপালে থাকে না। অনেকেই বলে কালো মেয়েদের কাঁপালে নাকি সুখ থাকে না। তবে এই যে অরুপিতা দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। গায়ের রং চকচকে ফর্সা। শান্ত সৃষ্ট এক দেখাই পছন্দ হবার মত একটা মেয়ে। তবে কই তার কপালে তো সুখ জিনিসটা জুটলো না। হয়তো কেউ আরু কে না দেখলে বলবে না। সুন্দর আর কালো মেয়েদের ভিতরে তফাৎ নেই কারণ সুখ সবার কপালে থাকে না।
[আজকে আমাদের গল্পের নায়িকার নাম অরুপিতা ইসলাম। বাবা মায়ের দ্বিতীয় তম সন্তান। সবাই ছোট করে অরু বলে ডাকে। তার পারিবারিক অর্থ তেমন না হলেও মোটামুটি অবস্থানে। এবার H.S.C পরীক্ষা দিয়েছে সামনে রেজাল্ট আসবে। হাইট 5.2 ফিট।]
কেন নিশি কেন কেড়ে নিলে আমার থেকে ওকে। কই আমি তো তোকে কোনদিন বন্ধুর চোখে দেখিনি বরং নিজের বোনের মত ভালবেসেছি। আর তুই কিনা বন্ধু হয়ে বন্ধুর হবু স্বামী কে কেড়ে নিলি। কেন এমনটা করলি আমার সাথে। তুই জানতি না হৃদয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তাহলে কেন নিশি কেন।
নিশি কিছু বলবে তার আগে পাশ থেকে হৃদয় অরুর হাতটা চেপে ধরে শাসিয়ে বলল।
হৃদয়– দূরে থাকো আমার বউয়ের কাছ থেকে। আমার বউয়ের গায়ে বিন্দুমাত্র আঘাত আমি সহ্য করব না।
অরু– হৃদয় এই কথাটা তো আমার জন্য প্রাপ্য ছিল তাই না। হৃদয় আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু ভালবাসি না ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। প্লিজ হৃদয় তুমি আমার সাথে এমন টা করতে পারো না।
হৃদয়–আমি তো তোকে ভালবাসি না। তাই তুই আমাদের থেকে দূরে থাক এটাই ভালো হবে।
হৃদয় আরুর সাথে সব সম্পর্ক অস্বীকার করছে বলে। অরু নিশির কাছে গিয়ে হাতজোড় করে পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে।
অরু– প্লিজ নিশি তুই তো জানিস হৃদয় আর আমার মধ্যকার সম্পর্কে কথা। তাহলে তুই কেন এই বিয়েটা করলি। কিভাবে পারলি আমার সাথে এমনটা করতে।
নিশি– অরু তুই কত বোকা, তা না হলে বল একটা মেয়ে যখন তার বয়ফ্রেন্ড সাথে দেখা করে তখন কি তার বান্ধবী কে নিয়ে যায়। কিন্তু না তুই তো আমাকে নিয়ে গেলি। তারপর বয়ফ্রেন্ডের রূপে কাজিনের সাথে নিজের বান্ধবীকে একলা ছেড়ে দিলি। আমরা কোথায় কি করছি তাও তুই দেখলি না।তারপর কি একটু খোঁজ নিলি না তোর বয়ফ্রেন্ড বান্ধবী তোর পিছনে পিছনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে না তো। তুই তো বোকা তাই তো অন্ধের মত বিশ্বাস করে গিয়েছিস আমাদের। তাই আজ তোর মনে হচ্ছে এমনটা। তুই যদি শুরু থেকে আমাদের একসাথে থাকতে না দিতে তাহলে হয়তো আজ এমন হতো না। আর প্রথমে আমি নই তোর এই কাজিন ভাই আমাকে প্রথম প্রপোজ করেছিল। আর আমারও একটু তোর ভাইয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল। তাই রাজি হয়ে গেলাম।আর এখন আমরা বিয়ে করেছি বলে দোষ হয়ে গেল। আর হৃদয় তোকে নয় আমাকে ভালোবাসে। তাইতো আমরা বিয়ে করলাম।
ভালোবাসার মানুষ দুটোর মুখে এমন বিশ্বাসঘাতকের মত কথা শুনে। স্তব্ধ বণে যায় অরু। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। একদিকে প্রিয় মানুষ আরেক দিকে প্রিয় বিশ্বস্ত বন্ধু। কাকে কি বলবে। কেউতো তাকে ভালোবাসে না। যদি ভালোবাসতো তাহলে তো তার সাথে এমন কাজ করতে পারত না।
তার এসব চিন্তা করার ভিতরে হৃদয় নিশির হাত ধরে গাড়িতে উঠে বরযাত্রী নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
বিধ্বস্ত অরুর চিৎকার করে আজ কান্না করতে ইচ্ছে করছে খোলা আকাশের নিচে। কেন করলো তার প্রিয় মানুষ গুলো তার সাথে এমনটা। সে কি কারো সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। না মোটেও এমনটা করেনি।তাহলে কেন তার সাথে এমনটা হল। কোনরকম উঠে হেলিয়ে পড়া শরীরখানা নিয়ে চোখের অশ্রু গড়াতে গড়াতে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বললো।-
আরু– সময় হোক পূর্ণিমার চাঁদও একদিন আঁধারে ডুবে যাবে।ঠিক যেমন আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
সময় গড়াচ্ছে সময়ের মতন। যেমন দিনের আলো ফুরিয়ে রাত আসে ঠিক আবার রাতের আঁধার ফুরিয়ে দিন আসে। মানুষের জীবনের গতি ও ঠিক তেমনি ভাবে চলে। আমরা চাইলেও তা বাধা দিয়ে রাখতে পারি না। আর ঠকে যাওয়া মানুষ গুলোর ক্ষেত্রে এই জিনিসটা আরো প্রভাবশালী হয়। মানুষের থেকে নিজেকে আড়াল করে একাকীত্ব বেছে নেয়। ঠিক তেমনি অরু নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছে। যে মেয়েটা সারাদিন হইহুল্লোরে মেতে থাকতো। সেই মানুষটার মুখে এখন আর সচরাচর হাসি দেখা যায় না।
মেয়ের এমন রুম বন্ধতা দেখে বেশ চিন্তায় পড়েন মা রুবিনা। সেও কোনদিন ভাবিনি নিজের ননদের ছেলে তার মেয়ের সাথে এমন করবে। তারা তো চেয়েছিল হৃদয়ের সাথে অরুর বিয়ে দিতে। তাহলে হঠাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল তারও মাথায় আসছে না। রুবিনা দরজার সামনে এসে আস্তে করে দরজাটা টোকা দিয়ে বলল।
রুবিনা— অরু মা দরজাটা খোল। তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। তাছাড়া আজকে তো তোর রেজাল্ট দিবে সেটা তো মনে হয় দিব্যি ভুলে গিয়েছিস।
মায়ের বাধ্য সন্তান হওয়ায় মায়ের দরজায় টুকা পাওয়ার সাথে সাথে দরজাটা খুলে বলল।
অরু–আম্মু ভুলিনি আমি মনে আছে,
রুবিনা মেয়ের মুখের দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে বলল।
রুবিনা— আমি জানি আমার মেয়ে আমার আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে। শোনো মা যারা ঠকে যায় মূলত তারা ঠকে না মা। কিন্তু যারা ঠকায় দিনশেষে তারাই ঠকে যায়। তুই দেখে নিস মা একদিন তোর সুখের শেষ হবে না। তোর মুখে সুখের হাসি ফুরাতে চাইবে না। শুধু নিজেকে গড়ে তোল। তুই কোন বাজারের কুকুর নস যে শিস দিলে পিছনে তাকিয়ে থাকতে হবে। তুই আমার মেয়ে। তোকে বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে শক্ত হতে হবে। পথ চলতে হবে। নিজেকে গড়তে হবে সেইসব মানুষের জন্য যেসব মানুষেরা তোকে ঠকিয়েছে। তাদেরকে তুই দেখিয়ে দে তুই ঠকে যাসনি। বরং তোকে না পেয়ে সে ঠকে গিয়েছে।
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটা চলে এসেছে। যেটার আশায় এতদিন অরু অপেক্ষা করছিল। হ্যাঁ অরু 4.89 পেয়েছে H.S.C রেজাল্টে।আর তার স্বপ্ন ও পূরণ হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে।আজ তার কলেজে প্রথম দিন। তাই সুন্দর করে হিজাব করে রেডি হয়ে কলেজ উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
তবে অরু কি পারবেন তার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে। আদৌ কি এমন কেউ আসবে তার জীবনে যে এসে অরুর পুরনো স্মৃতি গুলোকে ভুলিয়ে জীবনটা সুখে ভরিয়ে দিতে নাকি ঠকে যাওয়া জীবনটা স্তব্ধই রয়ে যাবে?
চলবে।