#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫৫
#তানিশা সুলতানা
রাগে গজগজ করতে করতে সারা রুমময় পায়চারি করছে ছোঁয়া। খাটের এক কোনায় আরামসে বসে বসে হাতের নখ গুলো দেখছে মেঘা। যেনো জীবনেও নখ দেখে নি। ছোঁয়ার রাগ তরতর করে বাড়ছে। একেতো মেয়েটা কথা বলছে। তারওপর ছোঁয়াও ঠিক করে নিয়েছে আগে আগে কথা বলবে না।
সাদি বেরিয়েছে অনেকখন হলো। কোথায় গেছে বলে যায় নি। খাবারটাও খেয়ে যায় নি। অবশ্য খাবেই বা কি? বিস্কিট ছাড়া তো আর নেই ও কিছু। সাদি চলে যাওয়ার পরপরই মেঘা এসেছে। না দেখেই দরজা খুলে ছিলো ছোঁয়া। আর ডাইনিটা হুরমুরিয়ে ঢুকে গেছে। এখনো যাওয়ার নাম নেই। সরাসরি বেড রুমে এসে পা গুটিয়ে বসেছে। যেনো আর নামবেও না।
মতলব সুবিধের ঠেকছে না ছোঁয়ার। ঘাপলা আছে কোনো। কিন্তু ঘাপলাটা কি ধরতে পারছে না।
ছোঁয়ার পেটের মধ্যে কথা গজগজ করছে। কিন্তু বলছে না। ইচ্ছে করছে না এই মহিলার সাথে কথা বলতে। তারওপর সাদির গুম হওয়া। আচ্ছা ছেলে ধরারা নিয়ে গেলো না কি? আরে ধুর এত বড় দামড়া ছেলেকে ছেলে ধরারা নেবে না। তাহলে গেলো কোথায়? ঝগড়াও তো হয় নি। মেঘা আসবে এটা আগে থেকে আন্দাজ করে পালায় নি তো? পালাতেও পারে। যে হারে ভীতু লোকটা।
ছোঁয়ার পরনে এখনো সাদির সেই সাদা শার্ট। শার্ট খুলতেও ইচ্ছে করছে না। আর শার্ট খুলে পড়ার মতো কিছু নেই ও। এখন থেকে ছোঁয়া ঠিক করে নিয়েছে সাদির শার্টই পড়বে। দারুণ হবে বেপারটা। টাকাও বেঁচে যাবে। ফ্রী তে সাদির ঘামের গন্ধও পাওয়া যাবে।
“সাদির শার্ট কেনো পড়েছো?
মেঘা গোমড়া মুখো হয়ে বলে। ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়। মেঘার দিকে তাকিয়ে কেবলা মার্কা হাসি দেয়।
” তাহলে কি আপনার অর্ধেক জামাটা খুলে নিয়ে পড়বো?
থমথমে খেয়ে যায় মেঘা। টেনেটুনে জামাটা একটু নিচে নামানোর চেষ্টা চালায়।
ছোঁয়া আবারও পায়চারিতে মন দেয়। পায়চারি করলে টেনশন কমে। এমনটাই শিখেছে সিনেমা দেখে। কারণ সিনেমার ম্যাক্সিমান হিরোরা টেনশনে পড়লে পায়চারি করে।
“এভাবে হাঁটছো কেনো?
মেঘা কাচুমাচু হয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া কোমরে দুই হাত দিয়ে বড়বড় চোখ করে তাকায় মেঘার দিকে।
“আপনাকে দেখে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছি না। তাই পায়চারি করে নাচ আটকাচ্ছি।
চিঁবিয়ে চিবিয়ে বলে ছোঁয়া।
” ওহহ আচ্ছা।
মেঘা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে। ছোঁয়া এবার এসে মেঘার পাশে বসে।
মেঘা মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনে ঢেলে ছোঁয়ার দিকে একটু এগিয়ে বসে।
“তোমাদের মধ্যে কি কখনো কিছু হয়েছে?
মেঘা জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায় মেঘার দিলে। আসলে মেঘা কিসের কথা বলছে সেটাই বোঝার চেষ্টা।
” কত কিছুই তো হয়েছে। তুমি কিসের কথা বলছো?
ছোঁয়া সোজাসাপ্টা বলে।
“বলতে চাইছি রোমাঞ্চ টোমাঞ্চ
রিনরিনিয়ে বলে মেঘা।
ছোঁয়া এতখনে বুঝতে পারে।
” ও মা হবে না? কতো আগেই হয়েছে। প্রেগন্যান্ট আমি। তুমি জানো না? দুই মাস চলছে। তোমার হাতটা দেখি। পেটে ওপর রেখে দেখে বেবি নরছে।
ছোঁয়া মেঘার হাত টেনে নিতে যায়। মেঘা হাত গুটিয়ে নেয়।
“তুমি প্রেগন্যান্ট?
চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে মেঘা।
” হ্যাঁ। দেখে মনে হয় না?
ছোঁয়া গোল হয়ে বসে বলে।
“হুম হয়।
আনমনা হয়ে উওর দেয় মেঘা।
এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে ওঠে। ছোঁয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সাদি দাঁড়িয়ে আছে৷ এক হাতে শপিং ব্যাগ অন্য হাতে খাবারের প্যাকেট। ঘাটে জবুথবু হয়ে গেছে। যে গরম পড়েছে ঘামারই কথা।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে সাদির হাত থেকে শপিং ব্যাগটা নেয়
” কোথায় নিকনিক করতে গেছিলেন?
ভেংচি কেটে বলে ছোঁয়া। সাদি উওর না দিয়ে ছোঁয়াকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে। ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দেয়।
ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে সাদির পাশে এসে দাঁড়ায়।
“যাও লেবুর শরবত করে নিয়ে এসো আমার জন্য। দেখছো না ক্লান্ত আমি।
সাদি চোখ বন্ধ করে বলে। ছোঁয়া চুল গুলো টেনে দিয়ে চলে যায়। সাদি মুচকি হাসে।
মেঘা গুটিগুটি পায়ে সাদির পাশে এসে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে আছে।
” স্যার ফাইলটা।
মেঘা রিনরিনিয়ে বলে। সাদি মেঘাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়। ধপ করে চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে।
“তুমি এখানে?
ভ্রু কুচকে বলে সাদি।
” সন্ধায় চলে যাচ্ছি। তাই আপনাকে ফাইলটা দিতে এসেছিলাম। আর দেখা হবে না কখনো।
সাদির গায়ের ওপর এক প্রকার ফাইলটা ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে চলে যায় মেঘা। মেঘার চোখ দুটো ভেজা ছিলো। কি হলো এটা বুঝতে পারলো না সাদি? কান্না কেনো করছে? আর চলেই বা গেলো কেনো?
ছোঁয়া শরবত নিয়ে সাদির পাশে দাঁড়ায়।
“আপনার শরবত।
সাদির দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি দরজার দিকে তাকিয়েই গ্লাসটা হাতে নেয়।
” মেঘা এসেছিলো?
একবার চুমুক দিয়ে বলে সাদি
“হুমম এসেছিলো। জিজ্ঞেস করছিলো আমাদের মধ্যে রোমাঞ্চ হয়েছে কি না? আমিও বলে দিছি আমি দুই মাসের প্রেগন্যান্ট।
সাদি সবে দ্বিতীয় চুমুক দেওয়ার জন্য গ্লাস মুখে নিয়ে ছিলো। ছোঁয়ার কথা শুনে বিষম খায়। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে সাদির দিকে তাকায়।
” বিষম কেনো খাইলেন? নিশ্চয় ওই ডাইরিটা আপনাকে বকছে।
সাদি কোনোরকমে কাশি আঁটকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অন্যের বউ হলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতো কতো রকম আহ্লাদ করতো। আর এই মেয়ে
🥀🥀🥀
সকাল বেলা সিমির নিয়ে বাসায় চলে আসে সিফাত। দুই বার কলিং বেল চাপতেই সাবিনা বেগম দরজা খুলে দেয়। সিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সাবিনা বেগমকে দেখে পরি দুই হাত বাড়িতে দেয়। উনিও মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয় পরিকে। সিফাত আর সিমির সাথে এক কথাও বলে না
“ভেতরে এসো
সিফাত বলেই গটগটিয়ে ভেতরে ঢুকে। সিমি ধীরে ধীরে পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে।
আজকে বাড়িটাকে বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে। ঝিকিমিকি বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেহমান এসেছে অনেক।
সিমি বসার রুমের সোফার পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। কোথায় যাবে? কি করবে বুঝতে পারছে না? আশেপাশে চেনা কেউ নেই ও। সব অচেনা মানুষ। যাদের কখনো দেখেই নি সিমি।
” এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও তনুর রুমে। শপিং এ যাবে ও। কাল গায়ে হলুদ অথচ এখনো কোনো শপিং করা হয় নি আমার মেয়েটার। তুমিও রেডি হয়ে যাও ওর সাথে।
সাবিনা বেগম গম্ভীর গলায় বলে। সিমি ঠিক বুঝতে পারছে না উনি কি রেগে আছে?
সিমি মাথা নারিয়ে তনুর রুমে চলে যায়। তনু এখনো ঘুমচ্ছে।
সিমি এক পাশে গিয়ে বসে। তনুকে কি ডাকবে?
এই বাড়িতে তো আগেও থেকেছে কিন্তু এরকম অস্বস্তি তো কখনো হয় নি? আজ এমন হচ্ছে কেনো?
“তনু ওঠ
শপিং এ যাবো
সিফাত তনুকে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে যায়।
সিমি উঠে দাঁড়ায়। ভীষণ নার্ভাস লাগছে। তনু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। সিফাত সিমির দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যরকম লাগছে সিমিকে। কিন্তু কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
সিফাত মনে মনে ভাবে।
” ডাকছিস কেনো?
তনু আবারও কোলবালিশ জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বলে। সিমিকে এখনো খেয়াল করে নি ও।
“শপিং এ নিয়ে যাবো তোকে। জলদি ওঠ।
তনুর থেকে কোলবালিশ নিয়ে বলে সিফাত। তনু বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। সাথে সাথে সিমিকে দেখে তনু। মুহুর্তেই ঘুম উবে যায়। ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।
” আপু তুমি এসেছো?
তনু এক লাফে উঠে জড়িয়ে ধরে সিমিকে। সিমিও আলতো হেসে জড়িয়ে ধরে তনুকে।
“জলদি কর।
আর ওকেও তোর একটা ড্রেস দিস।
বলেই সিফাত চলে যায়৷ তনু ঠাস করে সিমির কপালে চুমু দিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সিমি শব্দ করে হেসে ফেলে।
” পাগলী একটা
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫৬
#তানিশা সুলতানা
শাশুড়ী সিমিকে একটা মেরুন রঙের শাড়ি দেয়। ওটাই পড়তে বলে দিয়েছে। কিন্তু শাড়ির সাথে ব্লাউজ দেয় নি। এবার পড়বে কি করে? অস্বস্তিতে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। তনু গাউন পড়েছে। আপাতত সে সাজুগুজু করাতে ব্যস্ত। আর পরি? তার তো খোঁজই নেই। একবারও মায়ের কাছে আসে নি। সিফাত কোথায় জানে না সিমি। জানতে চায়ও না।
“আপু দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও দ্রুত
তনু ফেসপাওডার মুখে মেখে সেটা ঘসতে ঘসতে তনুর দিকে তাকিয়ে বলে।
” ব্লাউজ তো নেই।
রিনরিনিয়ে বলে তনু। নিজের ওপর নিজেই পরম বিরক্ত। এরকম লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এতো লজ্জা কেনো পাচ্ছে ও?
তনু আলমারি খুলে নিজের একটা স্কিন কালার ব্লাউজ দেয়। তনু প্রতিত্তোরে একটু মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
তনু শাড়ি পড়তে সাহায্য করে সিমিকে। তারপর বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
সিফাতের নানা বাড়ি দাদাবাড়ী থেকে সবাই এসেছে। ফুপি খালা যত আত্মীয় আছে সবাই উপস্থিত। সিমিকে নিয়ে তনু ড্রয়িং রুমে আসতেই সাবিনা বেগম পরিকে কোল থেকে নামিয়ে সিমির দিকে এগিয়ে যায়। মুচকি হেসে সিমির হাতটা ধরে সব মেহমানদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় সিফাতোর হবু বউ হিসেবে। সবাই খুব পছন্দ করে সিমিকে।
🥀🥀
সাদির শার্ট খুলতেই ইচ্ছে করছে না ছোঁয়া। কি এমন হবে এই শার্ট পড়েই বাড়িতে গেলে? কিচ্ছু হবে না। কিন্তু এই কথাটা ওই গোমড়ামুখোটাকে কে বোঝাবে? হনুমান একটা।
সাদি তখন শপিং ব্যাগে ছোঁয়ার জন্য গাউন নিয়ে এসেছে।
সাদি আরামসে খেয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া অল্প অল্প খাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে টেনশনে মরে যাচ্ছে। বাবা নিয়ে গেলে থাকবে কি করে ছোঁয়া? সাদিকে ছাড়া তো নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। কিন্তু এই কথাটা এই গোমড়ামুখে হনুমানটা বুঝলে তো।
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে হাত ধুয়ে নেয়।
“খাওয়া শেষ? এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আসো। জলদি ফিরতে হবে আমাদের।
সাদি মুখে রুটি পুরে চিবতে চিবতে বলে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি। আপনাকে বলতে হবে না।
এক গ্লাস পানি সাদির মাথায় ঢেলে দিয়ে গটগট করে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি চিবতে ভুলে গেছে। ছোঁয়ার দিকে হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কি হয়ে গেলো? এমন করলোই বা কেনো? রাগার মতো কিছুই তো হলো না?
এই মেয়েকে বুঝতে সাদির মনের ওপর পিএইচডি করতে হবে। না হলে একে বুঝতে পারবে না।
থালাবাসন সব সাদিকেই ধুতে হয়। কপাল করে বউ পেয়েছে সারাদিন গাল ফুলিয়ে থাকবে আর কাজ সব সাদিকেই করতে হবে। চিন্তার বিষয় এটাই যে বেবি হলে কি করবে? অফিস বাড়ি বেবি। ভাবতেই সাদির গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। নাহহহ বাবা বেবির দরকার নেই। পিচ্চি বড় হলেই বেবির কথা ভাবা যাবে। আপাতত এসব চিন্তা বাদ।
টেবিল পরিষ্কার করে রুমে ঢোকে সাদি। ছোঁয়া এখনো গাল ফুলিয়ে বসে আছে। ড্রেস পাল্টাই নি। সাদির মেজাজ খারাপ হয়। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে
“যাওয়ার ইচ্ছে নেই না কি?
সাদি আলমারির ওপর থেকে ব্যাগ নামিয়ে খাটের ওপর রাখতে রাখতে বলে। ছোঁয়া হাতের কাছে থাকা বালিশ টা সাদির দিকে ছুঁড়ে মারে
“আমাকে তাড়াতে পারলেই তো বাঁচেন আপনি। একটুও টেনশন নেই আপনার মধ্যে। এখান থেকে গেলেই যে বাবা আমাকে নিয়ে চলে যাবে এটা আপনি জানেন না?
ছোঁয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চিল্লায়ে বলে। সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে জামাকাপড় গোছাতে মন দেয়। ছোঁয়ার চোখে এবার পানি চলে আসে। একটুও চিন্তা হচ্ছে না মানুষটার?
ফুঁপিয়ে ওঠে ছোঁয়া। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জামাকাপড় রেখে ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসে।
” সবটা ঠিক হয়ে গেছে সিমি আর ভাইয়ার মধ্যে। আর তোমাকে নিতে চাইলেই আমি যেতে দেবো না কি? কমনসেন্স নেই তোমার।
ছোঁয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে সাদি। ছোঁয়ার মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। তবে সেটা প্রকাশ করে না।
“আগে কেনো বলেন নি? কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে?
ছোঁয়া আবারও গাল ফুলিয়ে বলে।
“সব কিছুই কি বলতে হবে? বুঝতেও পারো।
” আমি কম বুঝি
“কম বুঝলে হবে না। বুদ্ধি বাড়াও।
” হুমম বাদাম এনে দিয়েন।
“বাদাম দিয়ে কি হবে?
” বাদাম খেলে বুদ্ধি বাড়ে।
“আচ্ছা আনবোনি।
সাদির পরিপাটি চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি শব্দ করে হেসে ফেলে।
🥀🥀
দুপুরের আগেই শপিং শেষ করে বাসায় ফিরে আসে সিমি সিফাত আর তনু। বড্ড ক্লান্ত সিমি
তাই কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। এখন একটু রেস্ট প্রয়োজন। সিফাতও সিমির পেছন পেছন চলে আসে। মেরুন রঙের শাড়িতে দারুণ লাগছে সিমিকে। ইচ্ছে করছে বুকের মাঝখানে জাপ্টে জড়িয়ে নিতে। ইচ্ছেটাকে পূরণ করার জন্যই সিমির পিছু নেওয়া।
আপাতত সিফাতের রুমটাকেই নিজের রুম মেনে নিয়েছে সিমি। এত মেহমানের মধ্যে নিজের আলাদা রুম আশা করা ঠিক না।
রুমে এসে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সিমি। যে গরম পড়েছে
জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
চোখ দুটো সবে বন্ধ করেছে। আর তখনই কেউ ধাপ করে সিমির পাশে শুয়ে পড়ে। হকচকিয়ে ওঠে সিমি। দ্রুত উঠে বসতে নিলে কেউ একজন দুই হাতের শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ করে ফেলে। ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকায় সিমি।
সিফাত চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসছে। সিমি মুখ বাঁকিয়ে সিফাতের হাত সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। সিমির মোচরামুচরি দেখে সিফাত আরও একটু শক্ত করে ধরে।
সিমি চোখ পাকিয়ে তাকায় সিফাতের দিকে। কিন্তু কোনো কাজে দেয় না। কারণ সিফাত দেখছেই না।
“কি অসব্ভতামী হচ্ছে? চিৎকার করবো আমি?
সিমি রিনরিনিয়ে বলে।
” আজ ইউআর ইউস।
চোখ খুলে সিমির দিকে তাকিয়ে সিমির নাক টেনে দিয়ে বলে সিফাত।
সিফাত ঝাঁড়া দিয়ে সিফাতের হাত সরিয়ে দেয়।
“বাবা তুমি এটা কি করছো?
পরির কন্ঠ শুনে এক লাফে উঠে বসে সিফাত। সিমির হাত পা কাঁপছে। ছি ছি মেয়ে কি ভাবলো?
সিফাত ঘাবড়ে গিয়ে মাথা চুলকায়।
” তুমি মায়ের সাথে কি করছিলে?
পরি সিফাতের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কপাল কুচকে বলে।
সিমি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। এখন কি বলবে? মেয়ে যদি সবাইকে বলে দেয়।
“ইয়ে মানে মা হয়েছে কি
সিফাত একটু হাসার চেষ্টা করে বলতে যায়। পরি হাত তুলে থামিয়ে দেয় সিফাতকে।
” আমি বুঝে গেছি তুমি কি করেছে।
সিফাত চোখ বড়বড় করে তাকায়। সিমি ধাপ করে চোখ খুলে। কি বুঝলো পিচ্চিটা?
“আমি সবাইকে বলে দিবো। এখনি বলে আসছি।
বলেই পরি এক দৌড়ে চলে যায়। সিফাত ডাকতে গিয়েও থেমে যায়। একে থামানো সম্ভব না।
🥀🥀
একটা কবরস্থানের সামনে গাড়ি থামায় সাদি। ছোঁয়া কপালে তিনটে ভাজ ফেলে সাদির দিকে তাকায়। এখানে কেনো নিয়ে আসলো বুঝতে পারছে না?
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেলে। তারপর ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” মিথির শেষ পরিণতি শুনবে না?
তাচ্ছিল্য হেসে বলে সাদি। ছোঁয়া নরে চরে বসে।
“মানুষের জীবন খুব অদ্ভুত। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। তাই আজটাকে আজকের মতো করেই উপভোগ করতে হয়। কালকের জন্য ফেলে রাখতে নেই। কারণ কাল তুমি সেটা করার জন্য নাও থাকতে পারো।
কলেজের সবার সমনে মিথিকে থাপ্পড় মেরে খুব ভুল করেছিলাম আমি। সেটা কয়েক মিনিটেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। আমার উচিৎ ছিলো তখনই মিথটির পেছন পেছন গিয়ে ওকে সরি বলা। কিন্তু আমি সেটা না করে কালকের জন্য ফেলে রাখলাম।
পরের দিন জানতে পারলাম মিথটির বিয়ে। তখন বুঝতে পারলাম কেনো ও সবার সামনে প্রপোজ করেছিলো। বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলো মনের কথা চেপে না রেখে বলে দেওয়াই উচিত।
এক বুক আশা নিয়ে এসেছিলো মেয়েটাকে।
চলবে