#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫২
#তানিশা সুলতানা
দুই তালা একটা বাড়ির সামনে এনে গাড়ি দাঁড় করায় সিফাত। সিমি পরির গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। গাড়ি থামতেই পিটপিট করে চোখ খুলে। গাড়ির কাচটা নামিয়ে দেয় সিফাত। বাইরের দিকে তাকাতেই ভ্রু কুচকে যায় সিমির।
এখন তো ওদের হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ। তা না করে এই বাড়ির সামনে কেনো নিয়ে এসেছে সিফাত। রাগ হয় সিমির। চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
“এখানে কেনো আনলেন?
সিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
” এখানেই আছে সব সমস্যার সমাধান।
চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টেনে বলে সিফাত।
“আমি সমস্যা সমাধান করতে আসি নি। মেয়েকে চিকিৎসা করাতে এসেছি। আমার মেয়েটা জ্বরে বেহুশ।
সিমি চিৎকার করে বলে। ঘুমন্ত পরি কেঁপে ওঠে।
” তুমি বোধহয় খেয়াল করো নি। পরির জ্বর কমে গেছে।
সিফাত আলতো হেসে বলে। সিমি থমথমে খেয়ে যায়। পরির কপালে হাত দেয়। সত্যিই জ্বর কমে গেছে। কিন্তু কি করে?
চোখ নামিয়ে নেয় সিমি।
“পরি এমনই। ঔষধ খাওয়াতে হয় না ওকে তেমন একটা।
সিমি উওরে কিছু বলে না চুপ করে থাকে।
” আচ্ছা সিমি কখনো তো আমায় জিজ্ঞেস করলে না আমি কি করে পরিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেলাম? কি করো জানলাম তোমার ডেলিভারি ওই দিনই হচ্ছে? জানতে পারলাম কি করে? এটাই আমাদের ছোট্ট পরি? এত এত বাচ্চার মধ্যে?
খুব শান্ত গলায় বলে সিফাত। সিমি চমকে ওঠে। কেনো পুরনো কথা উঠছে? কেনো এসব বলছে সিফাত?
চোখ দুটো ভিজে ওঠে সিমির।
“পরিকে আমি চুরি করে আনি নি। হাসপাতাল থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলে যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখান আমার হাতে পরিকে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর বলা হয়েছিলো পরিকে আমি না নিয়ে গেলে ওর স্থান হবে অনাথ আশ্রয়।
দুই হাত বুকে গুঁজে একদমে বলে সিফাত। সিমি বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে থাকে সিফাতের দিকে। কি বলছে এসব? সিফাত যে মিথ্যে বলছে এটা শিওর সিমি। তাই অনুভূতি হচ্ছে না। বরং রাগ হচ্ছে।
” আমি মিথ্যে বলছি এটাই ভাবছো? এতোটা অবিশ্বাস?
তাচ্ছিল্য হাসে সিফাত।
“জানো তো সিমি যদি আমার মেয়েকে নিয়ে টানাটানি না লাগতো তাহলে কখনোই আমি প্রুফ দিতাম না।
কেনো বল তো?
থাক সেটা তোমার জানতে হবে না।
বুক ভরে শ্বাস নেয় সিফাত। তারপর সিমির দিকে তাকায়।
প্রুফ দেবো আজকে আমি।
চলো আমার সাথে।
সিমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে৷ সিফাত আসলে কি করতে চাইছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। তবে সিফাত যাই করুক না কেনো সিমির তাতে কোনো ইন্টারেস্টি নেই। যা খুশি করুক। নিজের জায়গায় শক্ত সিমি।সিদ্ধান্তের নরচর করবে না।
আত্মসম্মানটা সবার আগে।
কোনো প্রুফ বা কোনো কিছুই সিমিকে টলাতে পারবে না।
গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায় সিফাত। সিমির পাশে এসে দরজা খুলে দিয়ে সিমির কোল থেকে পরিকে টেনে নিয়ে নেয়।
সিমি শক্ত চোখে তাকায় সিফাতের দিকে। খুব যত্ন করে মেয়ের কপালে চুমু খায় সিফাত।
তারপর সিমির বা হাতটা ধরে নামতে সাহায্য করে।
” আত্মসম্মান তাই না?
ভালোবাসার হ্মেএে না আত্মসম্মান টিকে না। একটুখানি আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে যদি ভালোবাসার মানুষটির সারাজীবন পাশে পাওয়া যায়। তাহলে এটা দোষের নয়। আর আত্মসম্মান ধরে রেখে ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে সারাজীবন তার স্মৃতি মনে করে নিরবে কেঁদেই যদি যেতে হয়। তাহলে তুমি করলেটা কি জীবনে?
না পারলে নিজে ভালো থাকতে আর না পারলো তোমার আত্মসম্মান তোমায় ভালো রাখতে। টোটাল লসটা তোমারই হলো।
দুই দিনের জীবন আমাদের। এই দুটো দিনই কেনো কষ্টে কাটাবো?
সিফাত সিমির হাত ধরে বাড়িটার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে। সিমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে। এতো শক্ত কথার মানে খুঁজে পাচ্ছে না সিমি৷ বা লোকটা জানলোই বা কি করে সিমি আত্মসম্মানের কথা ভাবছে?
🥀🥀🥀
“এখানে একহাজার তিনশত পাঁচটা ফুল আছে।
সিফাত ছোঁয়ার কোমর জড়িয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় ছোঁয়া। লোকটার হলো টা কি? এত ঘেসাঘেসি করছে কেনো? মনে মনে বিরক্ত হয় ছোঁয়া।
” এএটা বলতে এতো ঘেসাঘোসি করতে হবে কেনো?
জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি ঠোঁট চিপে হাসি আটকায়।
আরও একটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। কাঁধ থেকে থুতনি সরিয়ে গলায় রাখে। সাথে সাথে ছোঁয়া দ্রুত গতিতে সাদির দিকে ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
হাত পা কাঁপছে চোখ খোলাও দায় হয়ে উঠেছে।
সাদি ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আরেক হাত কোমরে।
“কি হলো?
সাদি বলে। ছোঁয়া উওর দেয় না। এক হাত দিয়েই সাদির শার্টের দুটো বোতাম খুলে দেয় ধীরে সুস্থে। সাদির বুকের লোম গুলো বরাবরই ছোঁয়ার পছন্দ। অনেক ইচ্ছেও ছিলো লোম গুলো ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সাহস হয় নি বা সুযোগও হয় নি। তাই আজকের সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইছে না ছোঁয়া।
সাদিও চুপচাপ ছোঁয়ার কারসাজি বোঝার চেষ্টা করছে।
বোতাম খোলা শেষ হতেই ছোঁয়া নাক ডুবিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে সাদির শরীর থেকে। কই এই ঘ্রান তো ছোঁয়া আগে পায় নি। আর পাবেই কি করে কখনো এতো কাছে আসা হয় নি।
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ঘ্রাণ নেয় ছোঁয়া। তারপর পরপর কয়েকটা চুমু খায় বুকে। এখন তো চোখ খুলতেই ভুলে গেছে ছোঁয়া। কি করে তাকাবে লোকটার দিকে? লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে। আবেগের বসে কি করে ফেললো এটা?
সাদি দুই হাতে ছোঁয়ার মুখটা উঁচু করে তুলে৷ চোখটা আরও একটুও খিঁচে নেয় ছোঁয়া।
সাদি ফু দেয় ছোঁয়ার মুখে। ছোঁয়া কপাল কুচকে ফেলে।
সাদি মুচকি হেসে ছোঁয়ার নাকে নাক ঘসে ওষ্ঠাদয়ে নিজের ওষ্ঠাদ্বয় মিলিয়ে দেয়। ধপ করে চোখ খুলে ফেলে ছোঁয়া। কি হচ্ছে বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। ছোটাছুটি করেও লাভ হয় না। হনুমানটা বাঘের মতো ধরে আছে।
কয়েক মিনিট পরে সাদি ছাড়তেই ছোঁয়া কয়েক হাত পিছিয়ে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। দমটাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এতখনে শ্বাস আটকে ছিলো কি করে ছোঁয়া এটাই ভাবছে?
সাদি ছোঁয়ার মাথায় চাটি মারে।
“ইডিয়েট কিসটাও করতে জানে না।
ছোঁয়া লজ্জা সরম ভুলে কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে। সাদি ছোঁয়ার মতো করে ভেংচি কাটে।
” চেঞ্জ করে আসো। এই ড্রেস পড়ার বয়স তোমার এখনো হয় নি৷ ফিটার কিনে দিতে হবে তোমায়। ইডিয়েট
সাদি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়ার এবার কান্না পাচ্ছে। এভাবে বলতে পারলো? একটা বার তো বলতে পারতো “ছোঁয়া তোমাকে দারুণ লাগছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ”
বললে কি ভুমিকম্প হয়ে যেতো নাকি?
খারাপ লোক একটা।
ছোঁয়া ড্রেস চেঞ্জ করবে না। একদমই না। বরং এখন শাড়ি পড়বে। মোটামুটি আজকে “আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ” কথাটা সাদির মুখ থেকে শুনেই ছাড়বে।
শাড়িতে না বললে অন্য কিছু ট্রাই করবে। থেমে থাকার মেয়ে ছোঁয়া না। শেষমেশ না বললে চুল ছিঁড়বে সাদির।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫৩ (বোনাস পর্ব)
#তানিশা সুলতানা
কালো শিল্কের পাতলা ছিলছিলে শাড়ি সাথে হাতা কাটা ব্লাউজ। চুল গুলো আধখোপা করে বেঁধেছে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। চোখে মোটা করে কালো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ছোঁয়া। পারফেক্ট। বেশ লজ্জা লাগছে। সিনেমার হিরোইনরা এভাবে কি করে শুটিং করে কে জানে?
ছোঁয়ার তো নিজের বরের সামনে যেতেই লজ্জা লাগছে।
ইউটিউব দেখে একদম হিরোইনদের মতো করেই শাড়ি পড়ে নিয়েছে।
ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই খট করে দরজা খুলে যায়। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
সাদি দরজা আটকে পেছনে ঘুরতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে? এই মেয়ের হয়েছে কি আজ?
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা খাটের পাশে থাকা টেবিলে রেখে দেয়।
“এএসব কি পড়েছো?
শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে সাদি। ছোঁয়া পিটপিট করে চোখ খুলে। আয়নার মধ্যেই তাকায় সাদির দিকে।
” ভালো লাগছে না আমায়?
ছোঁয়া চোখ নামিয়ে রিনরিনিয়ে বলে।
সাদি শক্ত কিছু বলতে গিয়েও পারে না। সত্যি বলতে অসম্ভব লাগছে ছোঁয়াকে। সাদির চোখ ফেরানো দায় হয়ে গেছে।
“পাগল করেই ছাড়লে আমায়।
বুকের বা পাশে হাত দিয়ে নেশাতুল গলায় বলে সাদি। ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। আর সারা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারন করে।
সাদি ধীর পায়ে এগিয়ে ছোঁয়ার পেছনে দাঁড়ায়। চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।
“খাবে না?
ছোঁয়া মাথা নারায়। সাদি ছোঁয়ার বা হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে নেয়৷ ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসে সাদির অগোচরে।
ছোঁয়াকে খাটে বসিয়ে দেয় সাদি। নিজেও পাশে বসে পড়ে। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ছোঁয়ার মুখে খাবার তুলে দেয়। ছোঁয়াও কোনো রকম বায়না ছাড়া খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষে সাদি হাত ধুয়ে প্লেট রেখে আসে। ছোঁয়া ঘাপটি মেরে বসে আছে। এরপর কি হবে?
সাদি ছোঁয়ার পাশে এসে বসে। ছোঁয়া এক পলক সাদির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
” আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ছোঁয়া।
চমকে ওঠে সাদি। বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে। এই প্রথমবার সাদি ছোঁয়ার নাম বললো। বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পাঁচটা শব্দ শুনে কান জুড়িয়ে গেছে।
আবেগ প্রবল হয়ে ছোঁয়া ঝাপিয়ে পড়ে সাদির বুকে। সাদিও দুই হাতে আগলে নেয় ছোঁয়াকে।
“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।
ছোঁয়া সাদির বুকে নাক ঘসে বলে।
“শুধু মুখে বললে হবে? ভালোবেসেও তো দেখাতে হবে। তাই না?
ছোঁয়ার কানে ফিসফিস করে বলে সাদি।
🥀🥀
অনেক দিন পরে হিমুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সিমি। হিমুকে চেনাই যাচ্ছে না। দাঁড়ি গুলো বড়বড় হয়ে গেছে। চুল গুলো বাবড়ির মতো হয়ে আছে। চোখ দুটো শুকিয়ে গেছে। ফর্সা মানুষ কালো হয়ে গেছে।
এক দৃষ্টিতে হিমু সিমির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমিও পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
“হিমু কেনো তুমি সেদিন ছোট্ট পরিকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলে?
সিফাত ওদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হিমুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
হিমু মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ দুটো ছলছল করছে ছেলেটার।
সিমি শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
” বলো হিমু।
সিফাত শান্ত গলায় আবারও বলে।
“সিমির জন্য।
বুক ভরে শ্বাস টেনে বলে হিমু।
সিমি ভ্রু কুচকে তাকায় হিমুর দিকে। সিফাত তাচ্ছিল্য হাসে।
“আপনি ছিলেন না। সিমি একা একা পারতো না বাচ্চাটাকে বড় করতে। আর তাছাড়া বাবুটা থাকলে সিমি কখনোই আমাকে মেনে নিতে পারতো না।
হিমুর গলা ধরে আসছে। সিমি বড়বড় চোখ করে তাকায় হিমুর দিকে।
হিমু সিফাতকে ডিঙিয়ে সিমির মুখোমুখি দাঁড়ায়।
” সব কিছুই ঠিকঠাক ছিলো সিমি। কিন্তু বিশ্বাস করো সিফাতের সাথে তোমাকে সয্য করতে পারতাম না আমি। মনে মনে সব সময় প্রে করতাম যাতে তোমারা আলাদা হয়ে যাও। তোমাদের ঝামেলা হোক।
থামে হিমু। সিমি হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
“সিফাত সন্দেহ করতো তোমাকে আর আমাকে। আমি এটা বুঝতে পারতাম তাই একটু বেশিই মিশতাম তোমার সাথে। সিফাতের সন্দেহ বাড়তে থাকে আর তোমাদের দুরত্ব।
তোমাদের ধয্য কম। ইগো বেশি৷ কেউ কারো কাছে ছোট হতে চাও না। সিফাত যদি কখনো তোমায় জিজ্ঞেস করতো ” সিমি তুমি কেনো হিমুর সাথে বেশি মিশো?”
সিফাত এটা না করে তোমাকে জেলাসি করানোর জন্য অন্য মেয়ের সাথে মিশতে শুরু করলো।
সন্দেহ ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে থাকে। একটা পর্যায় ডিভোর্স পেপার।
খুব ভালোই লাগছিলো আমায়। কিন্তু যখন জানতে পারলাম তুমি প্রেগন্যান্ট। আকাশ ভেঙে পড়েছিলো মাথায়।
জানো সিমি সিফাতও আমাকে বিশ্বাস করে তোমার খবর জানতে চাইতো আমার থেকে। আর আমিও ওকে বলতাম কয়েকদিন পরেই বিয়ে করে নিচ্ছি আমরা।
ধপ করে বসে পড়ে সিমি। শূন্য লাগছে চারপাশ। এটা কি হচ্ছে?
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫৪
#তানিশা সুলতানা
“আমি পারছিলাম না তোমাকে অন্য কারো সাথে সয্য করতে। পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। বুঝতেই পারি নি ” জোর করে কারো মন জয় করা যায় না”
হিমু হু হু করে কেঁদে ওঠে। সিমির পাশে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
“কেনো এলে আমার জীবনে? কেনো পাল্টে দিলে জীবনটা? আমি মরে যাচ্ছি সিমি।
কখনো কোনো কিছুতেই জোর করি নি তোমায়। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম দিন শেষে তুমি আমারই হবে। কিন্তু হলে না। কেনো হলে না?
হিমু দুই হাতে ঝাঁকড়া চুল গুলো খামচে ধরে। সিমি এখনো চোখ বন্ধ করে বসে আছে৷ কি হয়ে গেলো এটা? যেই মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো সেই মানুষ টাই এইভাবে ঠকালো?
কি করে পারলো?
” তোমার হিমু সব সময় তোমার খবর দিতো আমায়। আমি মিথ্যে বলি নি সিমি। মা অসুস্থ ছিলো। ভাই দেশ ছাড়লো। তনু মায়ের কথা শুনতো না। মায়ের একমাত্র বিশ্বস্ত আমিই ছিলাম।
তারওপর প্রতিনিয়ত হিমুর সাথে লেপ্টে থাকতে।জাস্ট অসয্য লাগতো।
সিফাত চোখ মুখ কুঁচকে কিছুটা দুরে সরে যায়। পরি কেঁদে ওঠে। সিফাত ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
“মা কি হয়েছে?
পরি আধো আধো করে চোখ খুলে।
” বাবা তুমি এসেছো?
পরির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। জাপ্টে ধরে সিফাতের গলা।
“আমার মা চাই না বাবা। আমার শুধু তোমাকে চাই। মায়ের কাছে যাবো না আমি।
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে পরি। সিফাত পরির মাথায় চুমু খায়।
পরির কান্নায় সিমিও চোখ খুলে। বাবা মেয়ের দিকে তাকায়। কি সুন্দর দৃশ্য। ইসসস কত কিছু মিস করে গেছে সিমি। নিজের হাতে বড় করে তুলতে পারে নি মেয়েকে। মেয়ের ছোট বেলা উপভোগ করতে পারে নি।
হিমু দিকে তাকায় সিমি।
” খুব বিশ্বাস করতাম তোমায়। এটা ঠিক করো নি।
খুব শান্ত গলায় বলে সিমি। তারপর উঠে সিফাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“মায়ের কোলে আসবে না সোনা?
পরির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে সিমি৷ পরি অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সিমির।
” সরি মা। আমি বাবার সাথে থাকবো।
মাথা নিচু করে বলে পরি। সিমি আলতো হাসে। সিমির ঠোঁটের কোনে হাসি দেখে পরিও হেসে ফেলে। সিফাত মুখ বাঁ কায়। এতদিন কাঁদিয়ে ভালোই হাসা হচ্ছে।
“যাবেন এখান থেকে? না কি মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন?
কটমট চোখে তাকিয়ে বলে সিমি। সিফাত আলতো করে সিমির হাতটা মুঠোয় পুরে নিয়ে চলে যায়। হিমু অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।
” একতরফা ভালোবাসা হচ্ছে একপ্রকার
বিষের মতো, যে বিষ প্রাণ করলে আপনি মরবেন না কিন্তু সারাজীবন দাঁপড়াতে থাকবে।”
প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর যন্ত্রণা উপভোগ করতে থাকবে।
হিমু মনে মনে প্রার্থনা করে। এই এক তরফা ভালোবাসার কবলে যেনো আর কেউ না পড়ে।
গাড়িতে বসে আছে ওরা। পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে সিমি। সিফাত দেখছে সিমিকে। নাকটা লাল হয়ে আছে৷ মনে হচ্ছে যখন তখন কেঁদে ফেলবে। পরি গভীর মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। যেনো ওর কাছে খাওয়ার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।
“কোথায় যাবে বলো? তোমার বাড়ি?
সিফাত সোজা হয়ে বসে সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে।
” এখানেই থেকে যাবো।
ওড়নার কোনা দিয়ে পরির ঠোঁট মুছে দিয়ে বলে সিমি। সিফাত ভ্রু কুচকে তাকায় সিমির দিকে।
“বুঝলাম না।
” আপাতত বাড়ি ফিরতে চাইছি না।
“তাহলে কোথায় যাবে?
” জানি না।
“না জানলে
সিমি চোখ পাকিয়ে সিফাতের দিকে তাকাতেই সিফাত চুপ করে যায়।
” যেমনটা বলবে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ড্রাইভ করা শুরু করে সিফাত।
পরি গুটিশুটি মেরে আবারও মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। সিমি আড়চোখে সিফাতকে দেখতে থাকে।
🥀🥀🥀
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। পিটপিট করে চোখ খুলে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে। কারো শক্ত বাঁধনে নিজেকে আবিষ্কার করে ছোঁয়া। যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ছোঁয়াকে। ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
বিয়ের এত দিন পরে নিজের বরের বুকটাকে বালিশ বানাতে পেরেছে। ইসসস আগে কেনো হলো না? ঘুমটা অন্য দিনের তুলনায় ঢের বেশি ভালো হয়েছে। মনে হচ্ছে এমন শান্তির ঘুম কখনো ঘুমায় নি।
এখনো আলো ফুটে নি। হয়ত সবে মাএ আজান দিয়েছে। পাখি গুলো জেগে গেছে।
নীল ড্রিম লাইটের আলোতে সাদির মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ঘাড় ব্যাঁকা করে শুয়ে থাকায় এক পাশ দেখা যাচ্ছে। কপালে চুল গুলো লেপ্টে আছে। ছোঁয়া হাত উঁচু করে সাদির কপালের চুলগুলো পেছনে ঢেকে দেয়৷ খুব সাবধানে সাদির কপালে চুমু খায়।
নরে চরে ওঠে সাদি। চমকে যায় ছোঁয়া। তারাহুরো করে সরে আসতে চায় সাদির থেকে কিন্তু সেটা পারে না। তার আগেই কোমর জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে আটকে দেয় সাদি। অসহায় চোখে সাদির দিকে তাকায় ছোঁয়া। সাদি ঘুম ঘুম চোখ খুলে টেনেটুনে একটুখানি খুলে ছোঁয়াকে দেখে। তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ছোঁয়াকে পাশে শুয়িয়ে দিয়ে ছোঁয়ার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
“কককি করছেন?
ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলে।
” ভালোবাসা বাসি করছি।
সাদি ঘুম ঘুম কন্ঠে উওর দেয়।
গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে ছোঁয়ার। ঘুম ঘুম কন্ঠের কথা এরকম হয়? জানা ছিলো না ছোঁয়ার। কখনো শোনা হয় নি আগে।
“ছাড়ুন প্লিজ। এমনিতেও
ছোঁয়া থেমে যায়। সাদি মুচকি হাসে। সেই হাসিরও অদ্ভুত শব্দ হয়। আবারও কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। লোকটা জ্বালাচ্ছে কেনো এত?
” এমনিতেও কি?
কথা কম্পিলিট করো।
ঘাড়ে নাক ঘসে বলে সাদি। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে দুই হাতে সাদিকে ঠেলে উঠে দাঁড়ায়। ফ্লোরে শাড়িটা পড়ে আছে। ছোঁয়া সেটা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সাদি ছোঁয়ার বালিশটা টেনে নিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে তাতে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে ছোঁয়া। ইসসসসস কি যন্ত্রণা দ্বায়ক অনুভূতি।
ছোঁয়া আতঙ্কে আছে৷ শাশুড়ী মা কল করে বলেছে ঝামেলার কথা। এটাও বলেছে ছোঁয়াকে নিয়ে যাবে। সাদিকে ছাড়া থাকবে কি করে ও? দম বন্ধ হয়ে তো মরেই যাবে।
গোছল সেরে চুল গুলো মুছতেও ভুলে গেছে ছোঁয়া। সাদির একটা শার্ট পড়েছে এখন। কারণ এখানে ছোঁয়ার কোনো জামা নেই৷ শর্ট ফ্রকটা কিনে ছিলো ছোঁয়া আর কালো শাড়ি গিফট করেছিলো ইভা।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফুরফুরে সকালটা উপভোগ করছে ছোঁয়া আর সাথে টেনশন করছে। শাশুড়ী বোধহয় নামাজ পড়েই কল করেছে। ছোঁয়া গোছল সেরে বোর হওয়ার পরেই কল পায়।
হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পায় ছোঁয়া। বুঝে যায় এটাই সাদি।
“বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে।
ছোঁয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে।
” হুমম ভাইয়া বলেছে।
সাদিও ছোঁয়ার মতো দাঁড়িয়ে বলে।
“এবার কি হবে?
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকিয়ে বলে।
” কিচ্ছু হবে না। তুমি বাড়ি চলে যাবে বাবার সাথে।
সাদি সোজাসাপ্টা বলে দেয়। ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। চাইলো সমাধান দিয়ে দিলো বাঁশ
“আমি চলে গেলেই তো বেঁচে যান আপনি। তাই না?
কাঠ কাঠ গলায় বলে ছোঁয়া।
” একদম তাই।
সাদি উৎফুল্ল হয়ে বলে।
“থাকবোই না আমি। এখনি চলে যাবো।
ছোঁয়া চলে যেতে নেয়। সাদি হাত ধরে ফেলে। ছোঁয়া মনে মনে খুশি হয়। এখন নিশ্চয় বলবে ” আমি তো মজা করছিলাম ইডিয়েট”
“যাবে যাও। শার্টটা তো দিয়ে যাও। ১২০০ টাকা দিয়ে কিনছি। ফ্রী তে পায় নি।
ছোঁয়ার হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।
চলবে