#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৬
#তানিশা সুলতানা
আট বার কল দেওয়ার পরেও যখন সাদি ছোঁয়ার কল রিসিভ করে না। তখন ছোঁয়ার মাথা গরম হয়ে যায়। কেনো রিসিভ করবে না ওর কল? নিশ্চয় ওই মেঘার সাথে নিকনিক করছে তাই ছোঁয়ার কল রিসিভ করছে না। ডিস্টার্ব মনে করছে ছোঁয়াকে।
এই অবহেলা ছোঁয়া সয্য করবে না। কিছুতেই সয্য করবে না। এর একটা বিহিত দরকার। ছোঁয়া নিজেও খুব সুন্দরী। যখন তখন চাইলেই ছেলে পটাতে পারে। কই ছোঁয়া তো কোনো ছেলের সাথে নিকনিক করে না। তাহলে সাদি কেনো করবে?
আজকে নিকনিক করা বের করেই ছাড়বে ছোঁয়া। একদম হাতে নাতে প্রমাণ নিয়ে তবেই মুখ খুলবে। দরকার হলে পুলিশ কেছ করবে। প্রএিকায় খবর ছাপিয়ে দেবে “ঘরে বউ রেখে অফিসের কলিগের সাথে নিকনিক করে ছোঁয়া নামক এক নিষ্পাপ মেয়ের স্বামী। ”
হাতে একটা টাকাও নাই। টাকা না থাকলে সাদির কাছে যাবে কি করে? আর সাদির কাছে না পৌঁছালে নিকনিক করার দৃশ্য হাতে নাতে ধরবে কি করে? না ধরতে পারলে পিক তুলবে কি করে? পিক না তুলতে পারলে সবাইকে দেখাবে কি করে?
তাই সবার আগে টাকা দরকার। ছোঁয়া ফোনটা ঠাস করে বিছানার ওপর রেখে হনহনিয়ে চলে যায়।
সবে নয়টা বাজে। সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। ছোঁয়া গিয়ে শশুড় মশাইয়ের পাশে দাঁড়ায়।
“শশুড় মশাই আমার পাঁচশো টাকা লাগবে।
কাঠ কাঠ গলায় বলে ছোঁয়া। খাওয়া ছেড়ে সবার দৃষ্টি এবার ছোঁয়ার দিকে।ছোঁয়ার চোখ মুখ শক্ত। সিমি পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে।
” আচ্ছা আমি দেবো খাওয়া শেষ করে।
সিফাত খাবার মুখে পুরে বলে।
ছোঁয়া কিছু না বলে ধপ করে চেয়ার টেনে শশুড় মশাইয়ের পাশে বসে পড়ে।।
তনু এসেছে সকালে। কাকিমা খাবার বেরে দিচ্ছে। সাবিনা বেগম আজ খেতে বসেছে সবার সাথে। ভীষণ খিধে পেয়েছে ওনার।
আর দুই দিন আছে তনুর গায়ে হলুদের। আজকে থেকে প্যান্ডেল সাজানোর লোকজন চলে এসেছে।
“টাকা দিয়ে কি করবে ছোঁয়া?
তনু মুখে খাবার পুরে বলে। ছোঁয়া উওর দেয় না। কি উওর দেবে?
বলবে সাদির কাছে যাবো? কেউ যেতে দেবে না জানা আছে ছোঁয়ার। তাই বলা যাবে না।
“তনু ভাবি বলবে ওকে। সম্মানে তোমার থেকে বড়।
কাকিমা বলে তনুকে।
” আচ্ছা ভাবি। বলো?
তনু আবারও প্রশ্ন করে।
“আমি মিথ্যে বলতে চাই না। আর সত্যিটা বলতে চাইছি না।
ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে।
” আহহ তনু ওকে প্রশ্ন কেনো করছো?
লাগবে ওর তাই চেয়েছে। তোমার লাগলেও তো তুমি চেয়ে নাও।
শশুড় মশাই চোখ পাকিয়ে বলে।
“সরি ভাবি।
তনু মুচকি হেসে বলে৷ ছোঁয়াও একটু হাসে।
” সাদি বললো পৌরসু রাতে আসবে। তনু তুই ছোঁয়া আর সিমিকে নিয়ে শপিং করে নিস। আমার আর সাদির ভরসায় থাকলে পুরনো জামা পড়েই বিয়ে করতে হবে।
সিফাত বলে। তনু চোখ পাকিয়ে তাকায় সিফাতের দিকে।
“ওহহহ তাহলে সবার সাথেই কথা বলা হচ্ছে শুধু আমার সাথেই হচ্ছে না। ঠিক আছে। ইগনোর ছোঁয়া সয্য করবে না। কিছুতেই না।
ছোঁয়া মনে মনে বলে।
“তোদের যে আমার জন্য সময় হবে না এটা জানাই ছিলো আমার। বিকেলে দুই ভাবিকে নিয়ে যাবো আমি।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তনু।
” আমি এখনি বাড়ি যাবো।
সিমি রিনরিনিয়ে বলে। সিফাত তাকায় সিমির দিকে।
“মা যেয়ো না প্লিজ
পরি সিমির গলা জড়িয়ে ধরে বলে। সিমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় পরির দিকে।
” আমি তোমার বাবা মাকে আসতে বলেছি আজ। তাদের সবটা জানা দরকার।
সাবিনা বেগম বলে। চমকে ওঠে সিমি আর ছোঁয়া। সিফাতও কিছুটা চমকে ওঠে।
“প্লিজ বাবা মাকে বলবেন না। খুব কষ্ট পাবে ওরা।
ছোঁয়া করুন গলায় বলে।
” চিন্তা করো না। এটা লুকনো ঠিক হবে না। একদিন না একদিন তো জানতেই পারবে। তখন আরও বেশি কষ্ট পাবে।
সিমি কথা বলে না। চুপচাপ পরিকে খাইয়ে দিতে থাকে। ছোঁয়া কোনো রকমে খেয়ে উঠে যায়।
সাদি অফিসে বসে ছোঁয়ার কলের অপেক্ষা করছে। সবে আটবার হয়েছে। আর তিনশত বার দিলেই সাদি রিসিভ করবে। কিউট বউটার জন্য দশ বার বার কল মাফ করাই যায়।
সামনে গাদি গাদি ফাইল পরে আছে কিন্তু সেদিকে মন দিতে পারছে না। ছোঁয়া কল কোনো দিচ্ছে না এটা নিয়েই চিন্তা। আবার অন্য কিছু ভেবে ফেললো না তো? ডিভোর্সের ভুত মাথায় চাপলো না তো?
সাদি ভাবে। মাথা ভনভন করছে। যে বিচ্ছু মেয়ে। আবার উল্টাপাল্টা ভেবে ভুলভাল কিছু করে না ফেলে। নাহহ বাবা তিনশোবার কল দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আর একবার কল দিলেই রিসিভ করবে সাদি।
ভেবে ফেলে৷। কিন্তু সেই একবার কলাই কখন আসবে আল্লাহ জানে।
ছোঁয়া সিফাতের থেকে টাকা নেয়। পাঁচশো টাকার বদলে এক হাজার টাকা দিয়েছে সিফাত। ছোঁয়া নিতে না চাইলে জোর করে দিয়েছে। শশুড় মশাইও পাঁচশ টাকা দিয়েছে।
এবার ছোঁয়া চিন্তায় পড়ে গেছে। কিভাবে যাবে ঢাকার শহরে। পথঘাট তো কিছুই চেনে না। যদি হারিয়ে যায় তাহলে আবার ফিরবে কি করে? বা ছেলে ধরা যদি ওকে ধরে নিয়ে যায়?
মনে মনে ভয় ঢুকে গেছে। কিন্তু যেতে তো হবেই৷ সাদির নিকনিক একদম সয্য করবে না। বজ্জাত লোক একটা।
বাড়ি থেকে লুকিয়ে বেরতে হবে। নাহলে কেউ ওকে যেতে দেবে না। কিন্তু কিভাবে বের হবে?
বেলকনিতে উঁকি দেয় ছোঁয়া।মানুষ গিজগিজ করছ। রাতে বের হলে কেউ দেখতো না। কিন্তু অন্ধকারে ছোঁয়া ভীষণ ভয় পায়।
অনেক ভেবে চিন্তে বাড়িতে যে জিন্স আর টপস পড়ে ছিলো সেটা পড়েই বের হয়।
খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে। একটু রেস্ট নেবে সবাই।
ছোঁয়া পা টিপেটিপে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত আসে। যে কেউ ওকে দেখলে সন্দেহ করবে। নরমালি হেঁটে গেলে কেউ ধরতে পারবে না। এই সাধারণ কথাটা ছোঁয়ার ছোট্ট মাথা খেলে নি।
ভাগ্য ভালো থাকায় কেউ দেখে না।
গেইটের বাইরে এসে বুকে হাত দিয়ে দম নেয় ছোঁয়া।
পার্সটা ওড়নার তলায় থেকে বের করে।
তারপর রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ে বাসস্ট্যান্ডের যাওয়ার উদ্দেশ্য। রিক্সায় বসে আরও একবার ফোন চেক করে দেখে নেয় তাতে সাদি কল ব্যাক করেছে কি না। কিন্তু নাহহহ করে নি।
ছোঁয়ার মাথা আগুন জ্বলছে। আজকে হয় ডিভোর্স দিয়ে দেবে নয়ত সাদির মাথা ফাটাবে।
বড্ড বেড়েছে লোকটা। এই জন্যই তো ছোঁয়াকে বেবি দিতে চাইলো না। বেবি দিলে তো নিকনিক করতে পারবে না।
আস্ত একটা লুচু ওই হনুমানটা।
বারোটার দিকে ছোঁয়ার বাবা মা চলে আসে।
বসার ঘরে সবাই গোল হয়ে বসে আছে৷ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে বলে।
সিমি মাথা নিচু করে বসে আছে। পরি নাজমা বেগমের কোলে। সিফাত বেরিয়েছে কাজ আছে বলে।আসলে এদের মধ্যে থাকতে চাই না ও। এতো এতো পাপের বোঝা বইতে পারছে না।
“ছোঁয়াকে দেখছি না।
ছোঁয়ার বাবা বলে। এতখনে সবার টনক নরে। সত্যিই তো ছোঁয়াকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গেলো কোথায় মেয়েটা?
তনু আর সাগরে পাঠিয়ে দেয় ওকে খুঁজতে। দুজন পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও ছোঁয়াকে পায় না।
এবার সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাবিনা বেগম কড়া গলায় সবাইকে বলে দেয় যাতে সাদি এবিষয়ে কিছু জানানো না হয়। বেচারা চিন্তায় পাগল হয়ে যাবে।
বারোটায় গাবতলি বাস থেমে যায়। সব যাএী নেমে যাওয়াতে বাস আর যাবে না। অগ্রত্য ছোঁয়া কেও নামতে হয়। কিন্তু এখান থেকে যাবে কি করে।
ঢাকা বাবু বাজার যেতে হবে।
কন্টাক্টকে বললে তিনি ছোঁয়াকে অন্য বাসে উঠিয়ে দেয়।
আড়াইরের ভেতরে সাদির অফিসের নিচে এসে পৌছায় ছোঁয়া। এতখনে লম্বা দম টানে। অবশেষে এসে পৌছাতে পারলো।
দশতালা অফিসটা। এবার সাদি কয়তালায় সেটা জানে না ছোঁয়া।
কি করবে এবার?
লিফটে কখনো ওঠে নি। অব্ভাস নেই। জানেও না কি করে উঠতে হয়। পায়ে হেঁটে যাবে কি করো দশ তালা পর্যন্ত?
দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকে ছোঁয়া।
” আপা মনি কাউরে খুঁজতেছেন?
গেইটের দারোয়ান বলে।
ছোঁয়া এবার একটু সাহস পায়।
“হ্যাঁ।
আপনার বর সাদমান চৌধুরী এখানে জব করে। ওনাকে খুঁজতেই এসেছি।
ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে।
” দুই তালার বাশ পাশের কেবিনটা ওনার। যাও
দারোয়ান গেট খুলে দেয়। ছোঁয়া ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
এবার সাদির হয় মাথা ফাটবে নয়ত বউ হারা হবে।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৭
#তানিশা সুলতানা
সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে ডানপাশের রুমের ওপরে সাদমান চৌধুরী নামটা দেখতে পায় ছোঁয়া। বুঝে যায় এটাই সাদির কেবিন। কেবিনের বাইরে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
লোকটার গায়ে দারোয়ানের পোশাক। কেবিনের বাইরে যে দারোয়ান থাকে এটা জানা ছিলো না ছোঁয়ার।
ছোঁয়া এগিয়ে যায়। কেবিনে দরজায় হাত দিতে যাবে তখনই লোকটা এগিয়ে আসে।
“এক্সকিউজ মি ম্যাম।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা মাথা নিচু করে ফেলে।
” স্যার ইমপটেন্ট মিটিং এ আছে। এখন কাউকে ঢুকতে দেওয়া নিষেধ।
কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে বলে লোকটা।
ছোঁয়া সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। ইচ্ছে করছে লোকটার মাথা ফাটাতে। কতবড় সাহস? ছোঁয়াকে আটকে দেয়
“আমি কে জানেন?
বুক হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে ছোঁয়া।
লোকটা এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। তারপর আবার মাথা নিচু করে ফেলে।
” না মানে আপনি হয়ত স্যারের বাড়ির লোক হবেন।
আমতা আমতা করে বলে।
“বাড়ির লোক কি? আমি ওনার একমাত্র বউ।
বুঝলেন আপনি?
ছোঁয়া চিল্লিয়ে বলে ওঠে। লোকটা দুই হাতে কান চেপে ধরে। আশেপাশের মানুষরা এগিয়ে এসেছে। সবাই কানাঘুষা করতে থাকে এটা সাদি স্যার বউ।
” ম্যাম আস্তে কথা বলুন
লোকটা দুই হাত এক জোর করে ফিসফিসে বলে।
“কেনো আস্তে বলবো? আমার বরের অফিস। আর আপনি আমাকে ঢুকতে দিচ্ছেনা? আপনাকে পুলিশে দেওয়া উচিত। নিশ্চয় আপনার কোনো মতলব আছে।
আগুন চোখে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া। ততখনে অফিসের মেইন বস চলে এসেছে।
” রহিম কি হয়েছে?
ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে। বসকে দেখে যে যার কাজে চলে যায়।
ছোঁয়া বসের দিকে এগিয়ে আসে।
“এটা আমার বরের কেবিন। আমি ঢুকতে গেছি উনি আমাকে ঢুকতে দেয় নি।
ছোঁয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে। বস হেসে ফেলে।
” নাম কি তোমার.?
ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
“মিসেস সাদমান চৌধুরী।
গাল ফুলিয়ে বলে ছোঁয়া।
” ওহহ আচ্ছা।
তো আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো?
মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে উনি। ছোঁয়া লোকটাকে দেখে। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। চুল গুলো অধপাকা, ধবধবে ফর্সা। সুট কোট পড়ায় বোঝায় যাচ্ছে ভদ্রলোক। অফিসের বস বস একটা গন্ধ আসছে ওনার থেকে।
“ছোঁয়া বলে ডাকবেন।
মুচকি হেসে বলে ছোঁয়া।
” বাহহহ দারুণ তো নামটা।
বস ছোঁয়াকে দেখে। মেয়েটাকে সুন্দরী বলা চলে না। মায়াবতী বলা যায়। চোখে মুখে কি মায়া। সাদমান কি সাধে পাগল হয়েছে?
কিন্তু বয়সটা খুশই কম। নিসন্দেহে এই মেয়ের সাথে সাদমানের যায় না।
কিন্তু তবুও মানতে হবে। কারণ এই পিচ্চি মেয়েটার সাদমানের বউ।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন উনি।
রহিম তুমি এখানে কি করছো?
রহিম নামের লোকটা ঘাবড়ে যায়। দরদর করে ঘামতে থাকে।
“না মানে স্যার
আমতা আমতা করে বলতে যায়।
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমার কেবিনে এসো তুমি। অনেক হিসেব করার আছে।
রহিমকে উদ্দেশ্য করে বলে। রহিমের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে হাত পা থরথর করে কাঁপছে।
“তুমি যাও
ছোঁয়া বসের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। বসও ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছোঁয়ার মুখটা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ইসসস এই মেয়েটা যদি আমার মেয়ে হতো?
রহিমকে ভেংচি কেটে সাদির কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ছোঁয়া।
আস্তে করে ধাক্কা দেয়। খুলে না
তারপর সবটুকু শক্তি দিয়ে জোরে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে খুলে যায়। আর ছোঁয়াও হুরমুর করে ঢুকে পড়ে।
এভাবে রুমে ঢোকাতে সাদি আর মেঘার নজর পড়ে ছোঁয়ার দিকে। চমকে ওঠে দুজনই।
ছোঁয়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদির পাশেই চেয়ার টেনে বসেছিলো মেঘা। পরনে হাতা কাটা হাঁটু ওবদি কালো ফ্রক। চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি বাঁধা। গলা বড়।
সাদিও কালো শার্ট পড়েছে। ছোঁয়া চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
“ততুমি এখানে?
সাদি শুকনো ঢোক গিলে বলে।
ছোঁয়া পার্স থেকে ফোন বের করে ভিডিও করতে থাকে সাদি আর মেঘাকে। এটা দেখে মেঘা আরও একটু চিপে দাঁড়িয়ে। সাদির কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে বুঝতে ছোঁয়া ঠিক কি করছে। যখন বুঝতে পারে তখন এক লাফে সরে দাঁড়ায়। ছোঁয়া ফোনটা আবার পার্সে ঢোকায়।
-এখানে নিকনিক চলছে বলে বাইরে পাহারা দেওয়ার জন্য লোক ফিট করে রেখেছিলেন তাই না?
ছোঁয়া শান্ত গলায় বলে। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে। মেঘা মিটমিট করে হাসতে থাকে।
“তুমি এখানে কিভাবে আসলে?
সাদি জিজ্ঞেস করে।
” আমাকে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
অভিমানি কন্ঠে বলে ছোঁয়া।
চোখ দুটো টিকটিক করছে। গলা কাঁপছে।
“এই জন্যই আমাকে বেবি দিতে চান না আপনি। বেবি এসে গেলে তো আর নিকনিক করতে পারবেন না।
বলেই ছোঁয়া বেরতে নেয়। সাদি ছোঁয়ার হাত টেনে ধরে।
” শোনো আমার কথা।
ছোঁয়া তাকায় না সাদির দিকে।
“কালকে আমাদের প্রেজেন্টেশন। পুরোটা আমি আর মেঘা করেছি। সেটা নিয়েই ডিসকাসড করছিলাম।
সাদি বলে।
” তার জন্য আমার ফোন রিসিভ করছিলেন না?
ছোঁয়া কান্না আটকে বলে।
সাদি মুচকি হাসে। ছোঁয়াকে সামনে এনে দাঁড় করায়। ছোঁয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
“একা এসেছো?
সাদি ছোঁয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে। ছোঁয়া উওর দেয় না।
” স্যার আমাদের এখনো কাজটা কম্পিলিট হয় নি। নেকামি ছাড়ুন আর নিজের জায়গায় এসে বসুন৷
মেঘা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে।
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় মেঘার দিকে।
“তুমি এখন আসতে পারো। বাকিটুকু আমি একাই করে নিতে পারবো।
বলে সাদি। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে মেঘা।
” চলো তোমাকে দেখায় আমরা কি বানিয়েছি।
সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে ল্যাপটপের সামনে নিয়ে যায়। চেয়ার টেনে দেয় ছোঁয়াকে বসার জন্য। ছোঁয়া বসে না ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সাদি বসে যায়। ছোঁয়াকে দেখাতে থাকে স্বপ্নের বাড়িটা।
ছোঁয়ার সেদিকে মন নেই। মনটা পুরোপুরি মেঘার ড্রেসআপের দিকে। এই ড্রেস দেখিয়ে পাগল বানাতে চাইছে সাদিকে। এখন পাগল বানাবে তো ছোঁয়া।
বাঁকা হাসে ছোঁয়া।
“আমি আপনার কে হই?
বা হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নাক টেনে প্রশ্ন করে ছোঁয়া। সাদি ভরকে যায়। মেঘা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” বলুন?
সাদির উওর দিতে দেরি হচ্ছে বলে আবারও প্রশ্ন করে ছোঁয়া।
“ববউ হও
সাদি বলে।
“ইয়েস,
আমি আপনার বউ হই। সাত মাস হয়ে গেছে আপনার আর আমার বিয়ের।
তাই না?
এক গাল হেসে বলে ছোঁয়া।
সাদি ভেবলার মতো তাকিয়ে মাথা নারায়।
” তো আমি আপনাকে দুটো অপশন দিচ্ছি। ওকে?
১. আমাকে আজকেই ডিভোর্স দিতে হবো
২. নাহলে পুরো অফিসের সবাই মিষ্টি হওয়াতে হবে, আর সবাইকে বলতে হবে আমি আপনার বউ।
বলুন কোনটা করবেন?
ঘরে বউ রেখে বাইরে নিকনিক করতে আমি একদমই দেবো না।
সাদি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
“ডিভোর্স দিয়ে দেবে।
মেঘা বলে।
” আপনি চুপ থাকুন
ছোঁয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“আমি চুপ থাকবো না।
মেঘা বলে।
” তাহলে আমি চুপ করিয়ে দিচ্ছি।
ডেস্কের ওপর থেকে পানি গ্লাসটা নিয়ে মেঘনার মুখে ছুঁড়ে মারে। হতদম্ভ হয়ে যায় মেঘা। সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায়।
তারপর টিস্যু নিয়ে মেঘার মুখ ঘসতে থাকে ছোঁয়া। মেঘা ছোঁয়াকে ছাড়াতে না পেরে ধাক্কা দেয়। সাদির ওপর এসে পড়ে ছোঁয়া। সাদি দুহাতে আগলে নেয়। ছোঁয়া আরামছে সাদির কোলে বসে।
কড়া মেকাপ উঠে গেছে। কাজল লেপ্টে গিয়ে ভুতের মতো হয়ে গেছে৷ লিপস্টিক ঠোঁটের চারপাশে লেগে গেছে। চুল গুলো এলোমেলো। পারফেক্ট ভুত লাগছে মেঘাকে।
ছোঁয়া খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। সাদিও মুচকি হাসে।
মেঘা দাঁত কটমট করে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়।
মেঘা বেরিয়ে যেতেই ছোঁয়া সাদির দিকে ঘুরে বসে। দুই হাতে মুঠো করে ধরে সাদির চুল গুলো।
সাদি ছোঁয়ার হাত দুটো মুঠো করে ধরে।
🥀🥀
নিজের মেয়ের সাথে এতকিছু হয়ে গেলো অথচ বাবা মা টেরই পেলো না?
নাজমা বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছে। শফিকুল রহমান সিমির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমি শক্ত করে পরিকে দরে মাথা নিচু করে বসে আছে।
সাবিনা বেগম তনু তনুর বাবা কাকিমা সাগর সবাই মাথা নিচু করে বসে আছে।
“সিমি চল মা।
শফিকুল রহমান দাঁড়িয়ে বলে।
চমকে ওঠে সবাই।
” আমার ছেলে ভুল করেছে। আমি আপনার কাছে সমাধান চেয়েছি।
সোহেল চৌধুরী শফিকুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
“ভুল বলবেন না। এটা ভুল না। অন্যায় করেছে। আমি আমার মেয়েকে আর নাতনিকে নিয়ে যাবো। আশা করি আপনারা কখনো অধিকার নিয়ে যাবেন না।
তাহলে আমি পুলিশের সাহায্য নিতে বাধ্য হবো।
আপনাদের বিশ্বাস করতে পারছি না আমি। ছোঁয়া আসলে ওকেও নিয়ে যাবো আমি।
কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না আপনাদের সাথে।
কর্কশ গলায় বলেন উনি।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৮
#তানিশা সুলতানা
“মারছো কেনো?
সাদি ছোঁয়ার দুই হাত মুঠো করে ধরে ব্যাথাতুল কন্ঠে বলে৷ ছোঁয়া রাগে ফুসফুস করছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। এই মুহুর্তে সাদিকে তাজা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার।
সাদি হাত ধরে থামাতেই রাগটা আরও বেরে গেছে।
” হাত ছাড়ুন।
গম্ভীর গলায় বলে। সাদি হাত ছেড়ে দেয়৷ ছোঁয়া চিমটি কেটে দেয় সাদির হাতে। ব্যাথায় “আহহহ করে ওঠে সাদি।
ছোঁয়া সাদির থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
এতখনে সবটা ক্লিয়ার ছোঁয়ার কাছে। বাইরে দারোয়ান কেনো ছিলো এটাও পানির মতো পরিষ্কার। এটা অফিসে এখানে এসব ড্রেস এলাও না। এটা জানে ছোঁয়া। বস দেখলে চাকরি খেয়ে নেবে।তাই দারোয়ার দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। যাতে দারোয়ান কাউকে ভেতরে ঢুকতে না দেয়। আর মেঘা আরামসে সাদিকে পটাতে পারে।
সাদিটাই কি বুদ্ধুরাম বসকে কম্পেলেন না করে আরামসে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য যাবে নাই বা কেনো? ফ্রীতে শরীর দেখতে পেলো। কত মজা পেলো। আজকে ছোঁয়া জন্মের ঠ্যাং দেখিয়ে দেবে।
ছোঁয়া এক ঝটকায় সাদির থেকে দুরে সরে আসে। ঘাবড়ে যায় সাদি। একটু নরে চরে বসে। ছোঁয়া সাদির সামনা সামনি এসে দাঁড়ায়।
” মেঘার ড্রেসের দাম কত?
সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে। হাত পা কাঁপছে।
“বলেন?
সাদিকে চুপ থাকতে দেখে বলে ছোঁয়া।
” ককত আর হবে? তিন চার হাজার
সাদি ভয়ে ভয়ে বলে। তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
“ওহহহহ হো দামটাও জানেন?
বাই এনি চান্স ড্রেসটা আপনি কিনে দেন নি তো?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়া। সাদি মাথায় হাত দেয়৷ ভয়ে ঢোক গিলে। এই মুহুর্তে এই মেয়েটাকে সাংঘাতিক মনে হচ্ছে না, চরম সাংঘাতিক মনে হচ্ছে। কে বলবে এর পনেরো বছর বয়স? একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক স্ত্রী মনে হচ্ছে।
“আপনি কিনে দিছেন। এটা হান্ডের্ট পারসেন্ট শিওর আমি। ফ্রী তে ঠ্যাং দেখতে পারলেন। দারুণ ব্যাপার। আরও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে?
কোনো বেপার না। দেখাবো আপনাকে।
একদমে বলে ছোঁয়া। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। ছোঁয়াকে টেনে এনে পাশের চেয়ারে বসায়। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া সাদির দিকে কটমট চাহনিতে এক পলক তাকিয়ে
পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঠাস করে ফেলে দেয়। চোখের পলকে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় কাঁচের গ্লাসটা। সাদি হতদম্ভ হয়ে যায়। সামান্য কল রিসিভ না করার জন্য এতকিছু হবে আগে জানলে কখনোই এমনটা করতো না।
ছোঁয়া দুই হাতে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে কিছুখন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাগ কমানোর চেষ্টা যাকে বলে।
অতঃপর চুল ছেড়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। সাদি দেখছে শুধু ছোঁয়াকে।
“চলুন
ছোঁয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
” কোথায় যাবো?
সাদি বলে।
“গেলেই দেখতে পাবেন।
ছোঁয়া সাদির হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে যায়। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে যেতে থাকে।
রাস্তায় বেরিয়ে রিকশা ডাকে ছোঁয়া।
” গাড়ি নিয়ে যাই?
সাদি আমতা আমতা করে বলে। ছোঁয়া কঠিন চাহনিতে তাকায়। চুপ হয়ে যায় সাদি।
রিকশা আসতেই ছোঁয়া উঠি পড়ে। সাদিও ছোঁয়ার পেছন পেছন উঠে। নিউ মার্কেটে যেতে বলে ছোঁয়া রিকশা মামাকে।
সাদি বোঝার চেষ্টা করছে ওখানে যাবে কেনো?
“আমি যে বাচ্চা মানুষ। পড়ে যেতে পারি। সেদিকে খেয়াল নেই আপনার? না কি সব খেয়াল ওই মেঘা ডাইনির দিকে।
রাস্তার পাশে দোকান পাটের দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে ছোঁয়া। সাদি চমকে ওঠে। এখন ঠিক কি করা উচিৎ বা কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছে না। যদি আবার উল্টোটা বুঝে উল্টো রিয়াকশন দেয়। তাহলে মুশকিল।
” ওই সাদুর বাচ্চা
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে। সাদি ছোঁয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে।
ছোঁয়া কিছু না বলে চুপ থাকে। সাদি উসখুস করছে ছোঁয়াকে মানানোর জন্য। কিন্তু কি থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না
“এত অভিমানী কেনো তুমি? বোঝো না কেনো? সাদমান চৌধুরী নজর এই পিচ্চি ইডিয়েটটার মাঝেই আটকে আছে। এখন কেউ ঠ্যাং বের করে সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করলেও সেদিকে চোখ যায় না।
সাদি ছোঁয়ার আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল গলিয়ে দিয়ে বলে।
ছোঁয়া মুখ বাঁ কায়।
“চেনা আছে আপনাকে। মেঘার সাথে ছিলেন বলে আমার ফোনটাও রিসিভ করছিলেন না।
বলতে বলতে গলা ধরে আসে ছোঁয়ার। সাদি ছোঁয়ার কাঁধ জড়িয়ে একটু চেপে বসে।
ছোঁয়া সাদির বুকের ওপর মাথাটা রাখে।
” আসলে আমি
সাদিকে বলতে না দিয়ে সাদির ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখে ছোঁয়া। বা হাতে উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয় গড়ানোর আগেই।
“কোনো এক্সকিউজ চাই নি আমি।
” কেউ ব্যস্ত না। কথা বলার জন্য ইচ্ছে দরকার হয়। ইচ্ছে নেই এটাকে ব্যস্ত ছিলাম বানিয়ে দিবেন না প্লিজ।”
সাদি আর বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পায় না। খুব অন্যায় করে ফেলেছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।
🥀🥀
“ভাই এটা বললেন না।
সোহেল চৌ শফিকুলের হাত অরে বলে। শফিকুল হাত ছাড়িয়ে নেয়।
” আপনার মেয়ের সাথে এমনটা হলে কি করতেন আপনি? পারতেন সবটা মেনে নিতে?
পারতেন না। আমিও পারছি না। আমি গরিব হতে পারি কিন্তু কখনো মেয়েদের এতটুকু কষ্ট পেতে দেয় নি।মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মেয়ে দুটোকে মানুষ করেছি। সব চাওয়া পূরণ করেছি। কিন্তু হয়ত কোনো পাপ করেছি বা ওদের আপন হতে পারি নি৷ তাই আমার সিমি মা নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে নিয়েছিলো।
ওরা আমাকে ফেলে দিতেই পারে। কিন্তু আমি তো বাবা। আমি পারবো না।
সিমির বুক কেঁপে ওঠে। বাবা যে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। চোখোর পানি বাঁধ মানছে না সিমির। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। শফিকুলের চোখের কোনেও পানি।
সোহেল চৌধুরী আর কোনো কথা বলার সাহস পায় না। বলবেও বা কি?
শফিকুল পরির গায়ের জামা খুলে দিয়ে পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। নাজমা বেগমও স্বামীর পেছন পেছন চলে যায়। সিমি সাবিনা বেগমের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাবা মায়ের পেছনে চলে যায়।
এই বাড়ির এক টুকরো সুতোও তিনি নেবেন না। ছোঁয়া আসলেও ছোঁয়াকে নিয়ে যাবে। বড় এমন ছোট ভাই নিশ্চয় এমনি হবে। একই রক্ত বইছে দুজনের শরীরে। দুই মেয়েরই একই অবস্থা তিনি হতে দেবেন না ছোঁয়া অনেকটা ছোট। বসয় বাড়ার সাথে সাথে সবটা ভুলে যাবে। নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে যাবে।
সারাজীবন সুখে থাকার জন্য এইটুকু ত্যাগ করায় যায়।
সবাই হতাশ হয়ে বসে পড়ে। কি হয়ে গেলো এটা? ছোঁয়া কেও নিয়ে যাবে? কিভাবে কাটাবে ওনাকে?
🥀🥀🥀
নিউমার্কেটে গিয়ে শর্ট ফ্রক কিনে ছোঁয়া। সাদি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। কি আর বলবে?
কিছু বললেই তো ফুস করে ফনা তুলে উঠবে। কামড়ে টামড়ে দিলে আবার ঝামেলা। মানুষকে মুখ দেখাতে পারবে না।
আরেক দিকে চিন্তা হচ্ছে। রাতে তো এক সাথেই থাকতে হবে। তখন যদি এই রকম হট হট গ্রীষ্মকাল সেজে সামনে আসে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
শুকনো ঢোক গিলে সাদি। গলা শুকিয়ে আসছে। তুফান যে আসতে চলেছে সেটা আর জানা বাকি নেই।
কিন্তু এই তুফান থেকে রেহাই পাবে কি করে?
“ড্রেস টার দাম সত্যিই তিন হাজার নিলো। তারমানে আবার ধারনা ঠিক।
সাদির পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কটমট করে ফিসফিসিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি দুই হাতে মাথার চুল খামচে ধরে। বলার মতো কিছুই নেই। যা বলবে সেটারই উল্টো মিনিং খুঁজে বের করবে।
” ম্যাম টাকা।
দোকানদার প্যাকেট করে এগিয়ে দিয়ে বলে। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে। সাদি পকেটে হাত দিয়ে দেখে ক্যাশ নেই। এখন কি করবে সাদি? ছোঁয়া এবার নিশ্চয় বলবে মেঘার সাথে ঘুরতে গিয়ে টাকা শেষ করছেন?
আল্লাহ বাঁচাও
সাদি মনে মনে বলে চোরের মতো তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“বিশ্বাস কর। আমি মেঘাকে নিয়ে ঘুরতে যায় নি।
সাদি দুই কানে হাত দিয়ে বলে।
চলবে