অন্যরকম তুমি পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫

0
1948

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৩
#তানিশা সুলতানা

তিনশত একুশ বার কল দিছে সাদি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কিন্তু ছোঁয়া রিসিভ করে নি। রিসিভ করবে কিভাবে? ও তো ফোনের কাছে ছিলোই না। ফোন রেখে টই টই করে ঘুরে বেরিয়েছে পুরো এলাকায়। এতদিন পরে আসলো নিজের এলাকায় আর সবার সাথে দেখা করবে না?
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিমের ডালটা দাঁতে গুঁজে বেরিয়েছে। নাজমা বেগম হাজার বার বারণ করেছে কিন্তু শুনে নি৷ মুখটা ধুয়ে কিছু খেয়ে যেতে বলেছিলো সেটাও মানে নি।
টইটই করে ঘুরে আম পেরেছে বেশ কতগুলো। সেগুলোই খেয়েছে। বড়বড় গাছের মগ ডালে উঠেছে। ইসসস কতদিন এসব মিস করেছে। গ্রামে ছোঁয়ার একটা বেস্টফ্রেন্ড আছে রুনা। ছোঁয়ার সেম ইয়ারের। তারও বিয়ে হয়ে গেছে কয়েকমাস আগে। সেও এসেছে। রুনার বিয়ে গ্রামেই হয়েছে। বর মুদি দোকান করে।
রুনাকে সাথে নিয়ে পুকুরের দিকে গেছে। আজকে মনের ইচ্ছে মতো পুকুরের গোছল করবে৷ ওসব বাথটাপে গোছল করে বিরক্ত হয়ে গেছে ছোঁয়া। ওভাবে গোছল করা যায় না কি?

বাড়ির পাশেই ইছামতী নদী। নদীটার দৈঘ্য খুব বড় কিন্তু প্রস্থ ছোট। এখন বর্ষার মৌসুম বলে পানিতে ডুবে গেছে। গ্রীষ্ম কালে শুকিয়ে যায়।

দুজন মিলে নদীতে নেমে পড়ে। নতুন পানিতে অনেক মাছ এসেছে সাথে কচুরি পানা। রুনা বলে সে মাছ ধরবে। ছোঁয়াও সায় দেয়।
ওড়নায় আঁচল বিছিয়ে মাছ ধরতে চেষ্টা করে।

সাদি রাতেও অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ ছিলো। সারা রাত ঘুম হয় নি। ওই টুকু পিচ্চি মেয়ে সাদির মতো একটা দামড়া ছেলের রাতের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে। মানা যায়?
ফজরের নামাজ পড়ে আবারও কল দিতে থাকে সাদি। তখন ফোন বাজলেও রিসিভ হয় না। তখন থেকেই কল দিয়েই যাচ্ছে। ছোঁয়াকে কল দেওয়ার চক্করে রান্না করার কথা ভুলেই গেছিলো। ফলস্বরূপ না খেয়েই অফিসে যেতে হয়েছে।

এখন বেলা দুটো বাজে। সাদি অফিসের ডেস্কে চেয়ারে মাথা রেখে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে৷ লান্সে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে ইচ্ছে করছে না। বউয়ের চিন্তায় উদাসীন হয়ে গেছে। কন্ঠটা না শুনলে গলা দিয়ে খাবার নামবে না।

এবার নাজমা বেগমের ফোনে কল দেয় সাদি।

নাজমা বেগম ছোঁয়াকে খুৃঁজতে বের হয়েছে। বিবাহিত মেয়ের এরকম ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়ানো পছন্দ নাও হতে পারে শশুড় বাড়ির লোকদের। তাদের কানে গেলে মেয়েকে নিশ্চয় অনেক কথা শুনাবে।

নাজমা বেগমও কল রিসিভ করে না। সাদির রাগ এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই। ওই মেয়ে এবার দু’চারটা চর খাবেই খাবেই।
এবার কল করে সিমিকে। পরিকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে একটু খানি চোখ লেগে গেছিলো সিমির। ফোনের শব্দে চোখ খুলে।
আবারও চোখ বন্ধ করে হাতিয়ে ফোন খুঁজে নেয়। বালিশের নিচে পড়েছিলো। রিসিভ করে কানে রাখে।

“তোমার বোন কই?

সিমি হ্যালো বলতে যাবে তর আগেই বাজখাঁই গলায় বলে সাদি।
সিমি এক লাফে উঠে বসে। ফোনের স্কিনে একবার তাকিয়ে আবার কানে নেয়।

“তোমার মাকে কল করলাম রিসিভ করলো না। তোমার বোনকে তো কন্টিনিউ কল করেই যাচ্ছি। নো রেসপন্স।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।

” আসলে মা বোনুকে খুঁজতে গেছে৷
সিমি আমতা আমতা করে বলে।

“খুঁজতে গেছে মানে?

সাদির মাথায় রক্ত উঠে যায়। খুঁজতে গেছে মানে কি? কড়া গলায় ধমক দিয়ে বলে সাদি।
সিমি কিছুটা কেঁপে ওঠে।

” আসসসলে বোন সসকালে বেরিয়েছে। আগেও এরকমটা করতো।

রিনরিনিয়ে বলে সিমি।
সাদি খট করে কল কেটে দেয়৷ যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে দুই হাতে চুল খামচে ধরে। রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।
তারপর চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানে।

নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে মায়ের ফোনে কল দেয়। সাবিনা বেগম রান্না করছিলেন৷ ছেলের কল পেয়ে আঁচলে হাত মুছে ফোন রিসিভ করে।

“হ্যাঁ বল

” ভাইয়া এখুনি পাঠিয়ে দাও। এক ঘন্টার মধ্যে সিমির বোনকে আমি আমাদের বাড়িতে দেখতে চাই।

খানিকটা চিৎকার করে বলে সাদি৷ সাবিনা বেগম ঘাবড়ে যায়। হঠাৎ হলো টা কি?

“ওদের তো দুদিন থাকার জন্য রেখে আসছি।

” থাকতে হবে না। অনেক থেকেছে। আর না। এবার নিয়ে এসো। এক ঘন্টা পরে কল করবো। ও এই বাড়িতে না থাকলে আমি কি করবো নিজেও জানি না।

খট করে সাদি কল কেটে দেয়। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাবিনা বেগম। ছেলের রাগ সম্পর্কে ভালোই ধারণা তার। ছোঁয়ার ওপর খুব রেগে গেছে বুঝতেই পারছে।

ফোনটা রেখে গ্যাস বন্ধ করে সিফাতের রুমের দিকে ছোটে।
সিফাত উপুর হয়ে শুয়ে ছিলো। মেয়েকে ছাড়া কেমন উম্মাদের মতো লাগছে ছেলেটাকে। সকাল থেকে খায়ও নি। ওই বাড়ি থেকেও খেয়ে আসে নি।

“বাবু জেগে আছিস?

সাবিনা বেগম সিফাতের পাশে বসে গায়ে হাত দিয়ে বলে। সিফাত জেগেই ছিলো৷ পরিকে চোখের সামনে না দেখলে ঘুমও চোখে ধরা দেয় না।

মায়ের ডাকে ঘুরে মায়ের কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রেখে শয়। মুচকি হাসে সাবিনা বেগম।

“সাদু কল করেছিলো। এক ঘন্টার মধ্যে ছোঁয়াকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতে বলছে।

সিফাতের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উনি।

” আমি জানতাম এমনটাই হবে। আমি যখন ওই বাড়িতে আসছিলাম তখন দেখলাম ছোঁয়া নিমের ডাল দাঁতে গুঁজে লুকিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আজ দিন থাকতে বাড়িতে ঢুকবে না সেটা আমার জানা।

মুচকি হেসে বলে সিফাত। সাবিনা বেগমও হাসে। অবাক হয়ে যায় উনি এরকম উড়নচণ্ডী মেয়ে তার ছেলের সাথে শহরের এক ঘরে পরে থাকে। যেখানে সে নিজের খেয়াল খুশি মতো চলতেও পারে না। থেকে থেকে ছেলের ধমক। সবটা সয্য করে কেম৷ন পরে আছে ওনার সংসারে।

“আচ্ছা দেরি করিস না। তোর ভাইকে তো জানিস। আবার চলে না আসে বাড়িতে। নিয়ে আয় মেয়েটাকে।

সাবিনা বেগম তাড়া দিয়ে বলে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সিফাত উঠে বসে। সাবিনা বেগম চলে যায়। সিফাত গায়ে শার্ট জড়িয়ে বাঁকা হাসে।

পুরো গ্রাম খুঁজে অবশেষে ইছামতী নদীতে থেকে ছোঁয়াকে খুঁজে যায় নাজমা বেগম। কান টেনে বাড়িতে নিয়ে আসে। দুটো মাছ ধরেছে ছোঁয়া। একটা টাকি আর একটা পুঁটি। ভীষণ খুশি ছোঁয়া। রুনাকে মাছ দিয়ে দিতে চাই ছিলো। তারপর আবার মনে মনে কিছু চিন্তা করে দেয় নি।

সাবিনা বেগম বাড়িতে ঢুকতেই সাদি কল করে। ছোঁয়ার কান ছেড়ে দিয়ে উনি রান্না ঘর থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে

” ও বাড়িতে এসেছে।

সাদি নরম গলায় জিজ্ঞেস করে।

“হ্যাঁ বাবা। এখন নিয়ে আসলাম।

ছোঁয়া মাছ দুটো ওর খেলনা পাতির প্লেটে রেখে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাদি কল করেছে বুঝতে দেরি হয় না। এক গাল হেসে মায়ের থেকে ফোন টেনে নেয়।

“হ্যালো সাদু বেবি আমি আজকে ইছামতী নদী থেকে দুটো মাছ ধরেছি একটা টাকি আর একটা পুঁটি। ভীষণ কিউট দেখতে৷ কিন্তু সাইজে খুব ছোট। আপনি বাড়িতে আসলে আপনাকে করলা দিয়ে রেঁধে খাওয়া মাছ দুটো কেমন?

ছোঁয়ার কথা শুনে হা হয়ে যায় সাদি জীবনেও টাকি আর পুঁটি মাছ খায় নি সে। দেখলেই কেমন লাগে।

সাদি চুপচাপ ছোঁয়ার কথা শুনে উওরে কিছুই বলে না। ছোঁয়া ফোনটা মায়ের হাতে দিয়ে রুমে চলে যায়।

তিনটার সময় সিফাত আসে। পরি আর ছোঁয়াকে নিয়ে যাবে। ছোঁয়া কান্না করে দেয়। এখানে কয়েকদিন থাকবে ভেবেছিলো। কিন্তু ছোঁয়ার কান্নায় কারো মন গলে না। সবাই চাই ছোঁয়া চলে যাক। একরাশ অভিমান জমা হয়।
পরি তো সিফাতের কোল থেকে নরছেই না। কতখন পরে বাবাকে দেখলো। সিমি তাকিয়ে আছে সিফাতের দিকে৷ কই ওকে তো নেওয়ার কথা বললো না। তাহলে কি ওকে নেবে না?
বুকটা কেঁপে ওঠে ওর। মেয়ে ছাড়া থাকবে কি করে?

ছোঁয়া যা পরেছিলো তাই পরে হাতে ব্যাগ নিয়ে ওদের সামনে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বাবা বাড়িতে নেই। দোকানে গেছে। বাড়ি ফিরতে রাত হবে।
নাজমা বেগমের চোখ দুটো ভরে আসে। আঁচলে মুখ গুঁজে দরজার কাছে এগিয়ে যায়।

” আমি আমিও যাই ওদের সাথে?

সিমি রিনরিনিয়ে বলে। নাজমা বেগম কিছু বলবে তার আগেই সিফাত বলে

“ওমা আপনি যাবেন কেনো? বিয়ে তো এখনো অনেক দেরি।

অপমানে গা রি রি করে ওঠে সিমির। সিফাত আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরিকে নিয়ে বেরিয়ে যায়৷ পরির জামা কাপড়ও নেয় না।
নাজমা বেগম কোনো কথাই বলতে পারে না। সুযোগই দেয় না।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৪
#তানিশা সুলতানা

শশুড় বাড়ি এসেও কারো সাথে কথা বলছে না ছোঁয়া। একা একা রুমের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে৷ আজকের দিনটা থাকলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো?
রাগটা হচ্ছে শাশুড়ী মায়ের ওপর। ছোঁয়ার ধারণা শাশুড়ীই আনতে বলেছে ছোঁয়াকে।
আসার সময় ভুল করে ফোন আনেনি। সিফাত নিয়ে এসেছে। একটু আগে ফোনটা দিয়েও গেছে রুমে। ছোঁয়া এখন পর্যন্ত ফোনটা ছুঁয়েও দেখে নি। সাদি যে ওকে কল করতে পারে বা করেছে এটা মাথাতেই নেই। আপাতত ওর মাথাতে সাদি নামটাই নেই। আছে শুধু বাড়ি ফেরার ধান্দা। ঢাকায় যখন ছিলো তখন তো এতোটা বাড়ি আসতে মন চাই নি৷ তাহলে এখন কেনো চাইছে?

সন্ধা হয়ে গেছে প্রায়৷ সাদি ফাইলপএ গুছিয়ে নিয়েছে। এখনই বাসায় যাবে। পচন্ড খিদে পেয়েছে।
বা হাতে চুল গুলো পরিপাটি করে উঠে দাঁড়ায় সাদি। আর তখনই বস দরজা ঢেলে ভেতরে প্রবেশ করে। সাথে মেঘা। মেঘার চোখে মুখে খুশির ঝলক।

“স্যার কিছু বলবেন?

সাদি জিজ্ঞেস করে।

” আগে বসি তারপর বলছি।
বলেই বস বসে পড়ে। সাদি সটান দাঁড়িয়ে আছে। মেঘা মুচকি মুচকি হাসছে।

“জানোই তো বিদেশি কোম্পানির সাথে আমাদের ডিল হয়েছে। ডিলটা তুমিই করেছে। আমাদের প্রডাক্টও তাদের খুব ভালো লেগেছে। তো এবার সিঙ্গাপুর মিটিং ডাকা হয়েছে। ওনারা চাইছে মিটিং টা তুমি এটেন্ট করো।
আর আমি তাদেরকে বলেছি তুমি আমার সাথে পার্টনারশিপে আছো। তো বুঝতেই পারছে কতটা ইমপটেন্ট তুমি।

সাদি বড়বড় চোখ করে বসের দিকে তাকায়। মনে মনে প্রশান্তি হাওয়া বয়ে যায়।

” মিটিং আমি এটেন্ট করবো। তবে আপনি তাদের যা বলেছেন সেটা সত্যি করতে হবে।

সাদি বুকে হাত গুঁজে বলে। বস মুচকি হাসে।

“তুমি না বললেও কথাটা সত্যি করে দিতাম।

“কবে যেতে হবে?

সাদি জিজ্ঞেস করে।

” তুমি যেদিন যেতে চাও।

“আমি একা যাবো না।

” তোমার সাথে মেঘাকে পাঠানো হবে।

“ওনাকে লাগবে না। আমি আমার ওয়াইফকে নিয়ে যেতে চাই।

বস বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে। মেঘা দাঁত কটমট করে।

” তুমি বিয়ে করেছো?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন উনি।

“জি স্যার।

” আচ্ছা তাই হবে।

বস মুচকি হেসে বেরিয়ে যায়। মেঘা দাঁত কটমট করে সাদির দিকে তাকায়৷ সাদি তাতে পাত্তা দেয় না।

সন্ধার দিকে চোখ লেগে গেছিলো ছোঁয়ার। আর তখনই ফোন বেজে ওঠে। বিরক্ত হয় ছোঁয়া। নাক মুখ কুঁচকে ফোন রিসিভ করে।

“হ্যালো

” এই সন্ধা বেলায় ঘুমচ্ছো কেনো? যাও নামাজ পড়ে নাও।

সাদির কর্কশ গলা শুনে এক লাফে উঠে বসে ছোঁয়া। চোখ ডলে হামি দেয়।

“আজকে নামাজ পড়তে ইচ্ছে করছে না।

ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে।

” ইচ্ছে না হলেও পড়তে হবে। ইটস মাই অর্ডার। নামাজ শেষ করে কল দিবা।

বলেই সাদি খট করে ফোন কেটে দেয়। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে ওজু করতে যায়। শান্তি দেবে না আর এরা।
চট করে নামাজ সেরে নেয়।
সাদিও নামাজ শেষ করে রান্না করতে যায়।

ভাত চুলায় বসিয়ে ছোঁয়াকে কল দেয়।
ছোঁয়া তখন আবারও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সাদির ফোন পেয়ে আর সোয়ার সাহস পায় না। কুশন জড়িয়ে বসে ফোনটা কানে নেয়

“কি করছো?

সাদি জিজ্ঞেস করে।

” এই তো বসে আছি। আপনি?

“রান্না করছি। বসে কেনো আছো? মা একা একা রান্না করছে। তুমি যাও। মাকে হেল্প করো।

সাদি গম্ভীর গলায় বলে।

” আজকে ভালো লাগছে না

অলস ভঙিতে বলে ছোঁয়া

“ভালো লাগছে না বললে চলবে। ভালো লাগাতে হবে। যাও মায়ের কাছে। রান্না শেষ করে খাওয়া দাওয়া পড়ালেখা শেষ করে কল দিবা আমাকে। কেমন?

ছোঁয়া কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। ফোন চার্জে বসিয়ে সাদিকে বকতে বকতে চলে যায় রান্না ঘরে।
সাবিনা বেগম ভাত চড়িয়ে তরকারি কাটছে। ছোঁয়া ওনাকে উঠিয়ে তরকারি কাটতে লেগে পড়ে। একটা কথাও বলে না অপ্রয়োজনীয়। সাবিনা বেগম কিছুটা অবাক হয়। কথা কেনো বলছে না বুঝতে পারে না।

ছোঁয়া জেদ ধরে আজকে তরকারি ও রান্না করবে। সাবিনা বেগম হাজার বারণও সে শুনবে না। ইলিশ মাছের চরচরি রান্না করা হবে।

ছোঁয়ার জেদের কাছে হাত মেনে নেয় সাবিনা বেগম। ছোঁয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলে দিতে থাকে কিভাবে রান্না করতে হবে। ছোঁয়াও পাক্কা গৃহিনীর মতো রান্না করতে থাকে। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে প্রশান্তির ছায়া।
ছোঁয়া খুব ভালো ভাবে রান্না শেষ করে। চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। সাবিনা বেগম চেখে দেখে। দারুণ হয়েছে খেতে। ছোঁয়ার অভিমান শেষ।

“শাশুড়ী আমি ফোন নিয়ে আসি৷ ছবি না তোলা ওবদি কিন্তু চুলা থেকে নামাবেন না কেমন?

বলেই ছোঁয়া দৌড়ে চলে যায় রুমে। সাবিনা বেগম মুচকি হাসে। একদম পাগল মেয়েটা।

দুই মিনিটে ফোন নিয়ে আবারও হাজির হয়। ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।

তারপর শাশুড়ীর সাথে হাতে হাতে খাবার গুলো টেবিলে রেখে ফ্রেশ হতে যায়।

রুমে এসেই ফটাফট ছবি গুলো সাদিকে পাঠায়৷ সাদি তখন রান্না শেষ করে একটু রেস্ট নিচ্ছিলো। টিং টিং শব্দ হতেই ফোনটা হাতে নেয়। তাতে ছোঁয়ার দেওয়া ছবি গুলো দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে।
” রান্না করেছে? তাও আবার ছোঁয়া? বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সাদির। দেখতে দারুণ হয়েছে।
সাদি কল দেয়। সাথে সাথে ছোঁয়া রিসিভ করে।

“জানেন আমি রান্না করেছি আজ।

খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে ছোঁয়া।

” বাহ ভালোই তো।
তবে খাওয়া গেলে কথা।

ছোঁয়াকে খেপানোর জন্য বলে সাদি।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে।

“খুব ভালো হয়েছে খেতে।

নাকের পাটা ফুলিয়ে বলে।

” তুমি খেয়ে বলছো?

সাদি বলে।

“হ্যাঁ

“দেখেই বোঝায় যাচ্ছে এটা খাওয়ার অযোগ্য। বাড়ির সবার পেট খারাপ হয়ে না যায়।

অফসোসের সুরে বলে সাদি।

” আপনি একটা হনুমান, করলার জুস আপনি। কথাই বলবো না আপনার সাথে।গোমড়া মুখো বাঁদর একটা।
সামনে পেলে তরকারির কড়াইতে মুখ ঠেসে ধরতাম।
রাগে গজগজ করতে করতে বলে ছোঁয়া।

“গালি গুলো কি তুমিই বললে? নাকি কারো থেকে শুনে বললে?

সাদি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে। ছোঁয়ার রাগ এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই।

” আর কখনো কল দিবি না আমায়। শা*লা হনুমান।

খট করে ফোন কেটে দেয় ছোঁয়া। সাদি মুচকি হাসে। অল্পতেই কাউকে এতোটা খেপানো যায় ছোঁয়াকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না।

“ইডিয়েট একটা

চোখ বন্ধ করে বলে সাদি।

ছোঁয়া সাদিকে ব্লক করে দিয়েছে। কত বড় সাহস ছোঁয়ার রান্নাকে খারাপ বললো।
রাগে গিজগিজ করতে করতে পুরো রুম পায়চারি করতে থাকে ছোঁয়া। রাগটা কমছেই না।

🥀🥀
পরিকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে সিফাত৷ শরীর হালকা গরম। রাত সবে নয়টা বাজে। পরির পাশে আধশোয়া হয়ে আছে সিফাত। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কত ভালোবাসে বাবাকে। এখন যে ঘুমিয়ে আছে তবুও বাবার এক হাত জড়িয়ে ঘুমচ্ছে। বাবাকে ছাড়া অচল মেয়েটা।
সিফাত প্রশান্তির হাসি হাসে। ভালো হাসবেন্ড না হতে পারলেও ভালো বাবা হতে পেরেছে। এটাই অনেক।
মেয়ের কপালে পরপর কয়েকটা চুমু খায় সিফাত। তারপর ফোনটা হাতে নেয়। জানা আছে সিমি এখন ছটফট করছে। এই দিনগুলোতে মেয়েকে একদম আপন করে নিয়েছে। মেয়েকে ছাড়া থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে সিমির। কিন্তু পরি বাবাকে পেয়ে মা ভুলেই গেছে। ওই বাড়ি থেকে চলে আসার পরে আর একবারও মায়ের কথা বলে নি।

সিফাত কল করে সিমিকে। সিমি বালিশ জড়িয়ে বসে ছিলো। মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারছে না একদম। ইচ্ছে করছে এখনি ছুটে চলে যেতে। কিন্তু পারছে না। ছটফট করে মরে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে।

ফোন বেজে উঠতেই তারাহুরো করে ফোনটা হাতে নেয় সিমি। সিফাতের নাম্বার দেখে খুশি হয়ে যায়। নিশ্চয় পরি বায়না ধরে ছিলো বলেই সিফাত কল করেছে। এখন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে।

“হ্যালো
সিমি বলে৷ ওপাশ থেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলার শব্দ আসে। সিমির হাসি মুখটা চুপসে যায়।

” সিমি ফিরে আসবে? শেষ বারের মতো হ্মমা করে দেবে আমায়?

সিফাতের কন্ঠে অনুরোধ। চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে সিমি।

“আমার মেয়ে কি করছে?

গম্ভীর গলায় বলে। সিফাত ফোঁস করে শ্বাস টানে।

” ঘুমিয়েছে। গা গরম। জ্বর আসবে বোধহয়।
ক্লান্ত গলায় বলে সিফাত।

“খেয়েছে?

” আমার সাথে কখনো খাওয়া নিয়ে বায়না করে না।

সিফাত মুচকি হেসে বলে। দুজনের মধ্যে চলে পিনপিন নিরবতা।
কিছুখন নিরবতা পালন করে সিফাত বলে ওঠে।

“আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। মাফ চাইছি। তুমি বললে পায়েও ধরতে রাজি। ভুল তো মানুষই করে। আমিও করেছি। এখন কি বলো তুমি আমি মরে গেলে শান্তি পাবে?
বা এভাবেই কয়দিন চলবে? মেয়ে বড় হচ্ছে আমার। বাবা মা থাকতেও কেনো এতিমের মতো বড় হবে ও?
তুমি একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দাও। হয় ফিরে এসো। আমার কাছে না। নিজের মেয়ের কাছে। বাবা মায়ের সাথে বড় হোক মেয়েটা।

সিমি কল কেটে দেয়। এসব কথা শোনার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই নেই ওর। কিন্তু একটা কথা সত্যি। পরি বাবাকে ছাড়া ভালো থাকবে না। আর সিমি মেয়েকে ছাড়া ভালো থাকবে না। এখন কি করা উচিৎ ওর? কি করবে এই সমস্যার সমাধান?

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিমি।
বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে ওঠে।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৫
#তানিশা সুলতানা

সাদি মায়ের কাছে কল দেয়। সাবিনা বেগম তখন ফ্রেশ হয়ে হাত মুখ মুছছিলেন।
সাদির কল পেয়ে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। দ্রুত রিসিভ করে।

“হ্যাঁ সাদু বল

” কি করছো?

সাদি জিজ্ঞেস করে।

“এইত কিছু না। তুই?

” আমি রান্না শেষ করলাম। মা ও না কি রান্না করেছে? একটুখানি তরকারি ফ্রিজে রেখে দিও প্লিজ।

সাদি আমতা আমতা করে বলে। সাবিনা বেগম ফিক করে হেসে ফেলে। মায়ের হাসিতে লজ্জা পেয়ে যায় সাদি।

“তুলে রাখতে হবে কেনো? তুই আসলে আবার বলবি রান্না করে দিতে। রান্না তো শিখেই নিলো।

হাসতে হাসতে বলেন উনি।

“আজকে আমি যা বলেছি তারপর আর ও রান্না করবে না। আর এটাই ওর ফাস্ট রান্না। এটার তুলনা পরের রান্নার থেকে বেশি স্পেশাল।

সাদি লাজুক হেসে বলে।

” আচ্ছা বাবা রেখে দেবো। তুই আসছিস কবে?

“বিয়ের দিন আসবো

” আচ্ছা

আরও কিছুখন গল্প করে ফোন রেখে দেয়।
সাদি মুচকি হেসে খেতে যায়। ভীষণ খিধে পেয়েছে।।

খাবার খেয়ে সবাই খুব প্রশংসা করে। তাতে ছোঁয়ার মন নেই। যার থেকে প্রশংসা পেতে চায়। সেই তো করলো না। এদের প্রশংসা দিয়ে করবে টা কি?

চুপচাপ খেয়েছে। সিফাত জানায় পরির জ্বর হয়েছে। তনু বাসায় নেই সাগরের মায়ের সাথে তার বাপের বাড়ি গেছে। সাগর বন্ধুদের সাথে গেছে।

ছোঁয়া কোনোরকমে খেয়ে পরিকে দেখতে যায়। বেঘোরে ঘুমচ্ছে মেয়েটা। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। ছোঁয়া জলপট্টি দিতে থাকে। চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। সাবিনা বেগমও চলে এসেছে। পরির পাশে বসে আছে চিন্তিত মুখে।

সিফাত ডাক্তারকে কল করছে। আর সিফাতের বাবা এক কোনায় চুপটি করে বসে আছে। এরই মধ্যে ছোঁয়া সিমিকে মেসেজ দেয় পরির জ্বর হয়েছে। কিছুখনের মধ্যেই ডাক্তার চলে আসে৷ জ্বর মেপে ঔষধ দিয়ে চলে যায়। ডাক্তার চলে যেতেই হুরমুর করে পরির রুমে ঢুকে পড়ে সিমি৷ চোখে মুখে আতঙ্ক, এলোমেলো চুল গায়ে পরনে বাড়ির সাধারণ জামা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যেভাবে ছিলো সেভাবেই চলে এসেছে।
সবাই ওকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
সিমি দৌড়ে এসে পরির পাশে বসে পড়ে। পরপর কয়েকটা চুমু খায় মেয়ের কপালে। তারপর মেয়ের কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। যেনো এতখন শ্বাস আটকে ছিলো।

“তুমি এখানে? বাড়িতে বলে এসেছো?

সাবিনা বেগমের কথায় হুশ ফেরে সিমির। মাথা তুলে সবার দিকে এক পলক তাকায়। তারপর আবারও মাথা নিচু করে ফেলে।

” কাউকে বলে আসি নি

রিনরিনিয়ে জবাব দেয় সিমি।

“এই মেয়ে তোমার বাবা মাকে কল করে বল তোমার বোন এখানে আছে।

ছোঁয়ালে উদ্দেশ্য করে বলেই সাবিনা বেগম চলে যায়। সাথে শশুড় মশাইও চলে যায়। ছোঁয়া বোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

” ভাইয়া আপনি আমার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমরা এখানে থাকবো।

সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া। সিফাত এগিয়ে এসে পরির জ্বর চেক করে সিমির দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।

সিমি পরিকে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
একটু পরেই সাবিনা বেগম থালা ভর্তি ভাত নিয়ে হাজির হয়। সিমির সামনে ভাতের প্লেট রাখে।

“খেয়ে নাও। তোমার মেয়ের জ্বর কমে যাবে।

মুচকি হেসে সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সিমিও একটু হাসে।

” হুমম ভালোই তো। সব আদর আপির জন্য। আমাকে তো কেউ ভালোই বাসে না।

ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে গোল হয়ে বসে বলে। ছোঁয়ার কথায় সাবিনা বেগম শব্দ করে হেসে ফেলে। সিমিও হাসে।

“হিংসা হয় না কি?

ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন উনি।

” একটুও না

ছোঁয়া মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।

সাবিনা বেগম দুই হাতে জড়িয়ে ধরেন ছোঁয়াকে। ছোঁয়াও হেসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়।

“তুমি তো আমার পাগলী বউ মা।

” আর তুমিও আমার সোনা শাশুড়ী মা।
সিমি দুই একবার খাবার মুখে দেয়৷ গলা দিয়ে খাবার নামছে না। মাথায় হাজারও চিন্তা। ভাতের মধ্যেই হাত ধুয়ে প্লেট সরিয়ে রাখে। পরির একপাশে ছোঁয়া আরেক পাশে সিমি শুয়েছে।

ছোঁয়ার ঘুম আসছে না। সাদির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। দেরি করে না ছোঁয়া। চট করে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। রাত দশটা হবে।
রাস্তার লেমপোস্টের আলোতে রাস্তা আলোকিত হয়ে আসে। সেই আলো কিছুটা ছোঁয়ার মুখেও লাগছে।

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পা মেলে বসে ছোঁয়া।
তারপর কল করে সাদিকে।

সাদি তখন ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। ফোন বেজে ওঠায় মুচকি হাসে। জানা আছে ছোঁয়া কল দিয়েছে।

সাদি ফোনটা রিসিভ করে।

“কি করছো?
মায়া মিশ্রত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে সাদি।

” আপনাকে অনুভব করার চেষ্টা করছি।

ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে বলে।

সাদি ল্যাপটপ রেখে বিছানায় গাল এলিয়ে দেয়।

“আমাকে অনুভব?

” হুমমম।
একটু চুপ থেকে ছোঁয়া বলে ওঠে।
সাদু একটা জিনিস চাইবো দেবেন?

ছোঁয়া গম্ভীর গলায় বলে।

“বলো কি চাই?
সাদি চিন্তায় পরে যায়।

” আমার একটা বেবি প্রয়োজন। দেবেন?

সাদির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। পনেরো বছরের মেয়ে বেবি চাইছে। ভাবা যায়?
সাদি জোরে জোরে দুটো শ্বাস নেয়।

“দেবেন না?

সাদির থেকে উওর না পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে ছোঁয়া।

” হ্যাঁ দেবো তো। এখুনি গুগুল থেকে ডাউনলোড করে গোলুমলু নাদুসনুদুস একটা বেবি দিচ্ছি তোমায়।

সাদির রসিকতা শুনে রাগ উঠে যায় ছোঁয়ার। কতো সিরিয়াস একটা কথা বললো আর লোকটা সিরিয়াসলি নিলোই না।
দাঁত কটমট করে চোখ খুলে ছোঁয়া।

“আমি ওই বেবির কথা বলি নি।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়া।

” তাহলে কোন বেবি?

সাদি না বোঝার ভান করে বলে।

“আমার পেট থেকে যে বেবি হবে।

” এতে আমি কি করবো?

সাদি ভ্রু কুচকে বলে।

“লেজ ছাড়া বাঁদর, হনুমান, হাতি, শয়তানের নানা, করলার জুস, ফোন রাখ। তোর সাথে আর কোনো কথা নাই। তুই একটা

ছোঁয়া কল কেটে দেয়। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। রেগে গিয়ে এই মেয়ের তুই তুকারি করাটা সাদির একদম পছন্দ না। একবার বাড়ি যাই থাপ্পড়ে তুই বলা বের করে দেবো।

খুব ভোরে সিমির ঘুম ভেঙে যায়। পরি উঠে বসে আছে।

“মা বসে আছো কেনো?

পরিকে বসে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে বলে সিমি।
পরি হাসিমুখে মায়ের দিকে তাকায়।

” তুমি এসেছো?

সিমিকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে পরি। সিমিও মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

“আর যাবে না তো?

মাথা উঁচু করে সিমির দিকে তাকিয়ে বলে।

” নাহহহ সোনা আর যাবো না।

পরির এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে সিমি।

“খিধে পেয়েছে মা।

পরি আহ্লাদী সুরে বলে।

” চলে আগে দাঁত ব্রাশ করে নেবে।

সিমি পরিকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেয় পরিকে নিজেও দাঁত ব্রাশ করে নেয়। তারপর চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পরিকে খাতা কলম দিয়ে আঁকতে বলে কিচেনের দিকে চলে যায়। কিছু একটা বানানোর জন্য।

সিমি কিচেনে আসতেই দেখতে পায় সিফাত নুডলস রান্না করছে। ভ্রু কুচকে আসে সিমি।

“রান্না কেনো করছেন?

কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলে সিমি। সিফাত ঘাড় বাঁকিয়ে সিমির দিকে এক পলক তাকায়।

” পরির খিধে পেয়েছে।
সিফাত আবারও কাজে মন দিয়ে বলে।

“জানলেন কিভাবে?

অবাক হয়ে বলে সিমি।

” রাতে দুধ ছাড়া কিছু খায় নি। এত বড় রাত। এখন খিধে পাবেই। কমনসেন্স। তাছাড়া ছোট থেকেই পরির রাতে দুধ খেলে আমি ভোরে নুডলস করে দেই।

সিমি অবাক হয়ে যায়। একটা বাবা এতোটা কেয়ার ফুলি কি করে হতে পারে? কে বলেছে পৃথিবীতে মায়ের তুলনা অতুলনী? মা ছাড়া কেউ বেশি ভালোবাসে না?
এই তো সিফাত। অতুলনীয়, মায়ের থেকেও বেশি ভালো বাসতে পারে।

সিমির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।

“স্বামী হিসেবে এতোটা পসেসিভ থাকতে আজকে আমাদের সুন্দর একটা পরিবার হতো। আজকে আমরা সুখি দাম্পত্যি হতাম। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হতো না।

তাচ্ছিল্য হেসে বলে সিমি। সিফাতের হাত থেমে যায়। সিমি এগিয়ে গিয়ে নুডলসের বাটিটা নিয়ে চলে যায়। সিফাত হাত মুঠ করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
একটা ভুলের আর কত শাসুল দেবে?

এই বাড়িতে আসার পর থেকেই খালি একটু পরপর সাদিকে মনে পড়ছে ছোঁয়ার। এখানে তো চার দেয়ালে বন্দি। বাইরে বেরনো যাবে না।
একা একা বোর হচ্ছে। একটু পরপরই মনে হচ্ছে সাদির সাথে একটু কথা বলি।
মনে হওয়ার সাথেই কল দিচ্ছে কিন্তু সাদি রিসিভ করছে না। রাগ হচ্ছে খুব ছোঁয়ার। কোন মেয়ের সাথে নিকনিক করতে গেছে আল্লাহই জানে।

সাদি বেশ মজা পাচ্ছে। জানতো আজকে সারাদিন ছোঁয়া কল করবে। ছোঁয়ার থেকে কল পাওয়ার জন্যই তো ওকে এই বাড়িতে আনা। বাবার বাড়িতে থাকলে সারাক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবে সাদির কথা মনেও থাকবে না। আর এই বাড়িতে চার দেয়ালে বন্দি থাকবে। সারাক্ষণ সাদিকেই ভাববে।

কিন্তু আজকে তো সাদি কল রিসিভ করবে না। যতখন না তিনশত একুশ বার ছোঁয়ার কল না হবে ততখন রিসিভ করবে না। এটাই হলো রিভেঞ্জ।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে