#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩১
#তানিশা সুলতানা
গাড়ি থামতেই হুরমুরিয়ে নেমে যায় ছোঁয়া। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাদি চোয়াল শক্ত করে ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
প্রভা নামতে নিলে সাদি ডাকে।
“ভাইয়া কিছু বলবেন?
” ওকে একা ছেড়ো না। সাথে সাথে থাকবে। ভুলভাল কিছু করলে আমাকে কল করবে কেমন?
সাদি প্রভার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
“ঠিক আছে।
প্রভাও নেমে যায়।
ছোঁয়া স্কুলের গেট ওবদি যেতেই একটা ছেলে হাতে লাল গোলাপ নিয়ে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটাকে এক পলক দেখেই ছোঁয়া চিনে ফেলে। এটা তো সেই ছেলে। যাকে কাল কথা শুনিয়েছিলো।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।
ছেলেটা রীতিমতো ঘামছে। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করছে। একটু একটু হাত পাও কাঁপছে।
পরনে আকাশি কালার কলেজ ড্রেস কালো প্যান্ট আর সাদা জুতো। কালো একটা ব্যাগ কাঁধে। ক্লিন সেভ করে রাখা দাঁড়ি গুলো হালকা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ফর্সা ছেলেটা। বেশ লম্বা।
ছোঁয়া ছেলেটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিয়ে শুকনো কাশি দেয়। ছেলেটা কেঁপে ওঠে।
” কিছু বলবেন ভাইয়া?
ছোঁয়া কিছুখন ঠোঁট চিপে দাঁড়িয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে।
“না মানে হ্যাঁ
রিনরিনিয়ে বলে ছেলেটা।
সাদি গাড়িতে বসে দেখছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাদি যদি খুব ভুল না করে তাহলে ছেলেটা প্রপোজ করার সাথে সাথেই ছোঁয়া এক্সেপ্ট করবে।
” যাবো না আমরা?
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে মেঘা।
“তোমার লেট হলে যেতে পারো।
সাদি সোজা সাপটা বলে দেয়৷ কাচুমাচু হয়ে যায় মেঘা। ভীষণ লজ্জা পায়।
” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।
ছোঁয়া তাড়া দিয়ে বলে। ছেলেটা জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। তারপর বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে বা হাতে লম্বা চুল গুলো পেছনে ঠেলে ডান হাতে থাকা ফুলটা ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
ছোঁয়া যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। সাদির গাড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে হাসি মুখে ফুল নেয়। ছেলেটা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। পেছনে থাকা ছেলেটার ফ্রেন্ডগুলো শিশ বাজায় আর হাত তালি দিতে থাকে।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। প্রভা যেনো এতখনে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। এতে কিউট করে কেউ প্রপোজ করে। ইচ্ছে করছে ভিডিও করে টিকটিক বানাতে। রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাবে।
প্রভা নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রাখে না। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভিডিও করতে থাকে।
এবার ছেলেটা নিজের একটা হাত এগিয়ে দেয় ছোঁয়ার দিকে।
“আই লাভ ইউ। আমার বেস্টফ্রেন্ড হবা?
তিন দিন হলো চিনি তোমায়। জানি তুমি আমায় পছন্দ করো না। করার কথাও না। কারণ তুমি আমায় চিনো না। আমি ইমন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের পড়ি। ওই কলেজটাতে।
তিন মাস তোমার বন্ধু হতে চাই। তিনমাস পরে আবারও প্রপোজ করবো। তখন গার্লফ্রেন্ড হবা। তারপর ঠিক চার বছর আবারও প্রপোজ করবো বিয়ের জন্য। তখন বিয়ে করে নেবো।
একদমে বলে ফেলে ইমন। আবারও ভেসে আসে কড়তালি আর শিশের শব্দ। ছোঁয়া মুচকি হেসে ইমনের হাত ধরতে যায়। সাথে সাথে কেউ একজন ছোঁয়ার হাত টেনে নেয়। সবাই হতদম্ভ হয়ে যায়। ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে চমকে ওঠে ছোঁয়া। কেনোনা রক্তচক্ষে সাদি তাকিয়ে আছে।
প্রভা ভিডিও অফ করে এক দৌড়ে গেটের পেছনে লুকিয়ে পড়ে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ইমনের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া প্লিজ ওকে কিছু বইলেন না। আমি আপনার বোনকে পছন্দ করি। ও করে না।
ইমন মাথা নিচু করে বলে। সাদি জোরে শ্বাস টানে।
ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে ইমনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ইটস ওকে। তোমার বয়সটাই এমন। কাউকে ভালো লাগবে। তার কথা ভাবতে ভালো লাগবে। প্রপোজ করবে প্রেম করবে। এটা কমন।
বাট তুমি যাকে প্রপোজ করেছো সে একটা পাগল। মাথায় গন্ডগোল আছে।
ছোঁয়া ফুঁসে ওঠে। গাল ফুলিয়ে সাদির দিকে কটমট চোখে তাকায়। ইমন সাদির কথা বোঝায় চেষ্টা করছে।
” ওকে তো সুস্থ মনে হচ্ছে?
আর ও যেমনই হোক আমি
ইমনের কথা শেষ হওয়ার আগেই থামিয়ে দেয় সাদি।
“ও ম্যারিড। বর আছে ওর। তবুও কেমন তোমার থেকে ফুলটা নিলো। তাহলে কি ও পাগল নয়?
সাদি শান্ত গলায় বলে।
” ও ম্যারিড?
আশ্চর্য হয়ে বলে ইমন।
“হ্যাঁ। আর আমি ওর ভাইয়া নই। বর হই ওর। তো তুমি আমার সামনে ওকে প্রপোজ করছো তোমার ফ্রেন্ডরা সিটি বাজাচ্ছে। এটা আমার ভালো লাগলো না।
তুমি ওকে ডিস্টার্ব করলে বা কেউ ওকে ডিস্টার্ব করলে আমি বাধ্য হবো ওর পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে।
আশা করি বুঝেছো।
সবাই চুপচাপ সাদির কথা শুনছে। মেঘা গাড়িতে বসেই ওদের দেখছে। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে। ইমপটেন্ট মিটিং ফেলে এখানে নাটক করা হচ্ছে। মেঘার হাতে সবটা থাকলে চাকরি থেকে বের করে দিতো সাদিকে।
ছোঁয়া কটমট চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদি ছোঁয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখ থেকে ঠুতনিতে নামিয়ে রাখা মাক্স টেনে নাক ওবদি উঠিয়ে দেয়। ছোঁয়া শুধু বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
” এখানে পড়ালেখা করতে এসেছো। রুপ দেখাতে না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি। তারপর ছোঁয়ার মাথায় চাটি মেরে চলে যায়। ছোঁয়া শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
🥀
সিমি পরিকে গোছল করানোর জন্য ডাকছে। পরি সিফাতের কাছে। দরজা বন্ধ করে কিছু একটা করছে দুজন। দুই বার এসে ডেকে গেছে সিমি।
“মা ডাকছে তো বাবা। যাবো।
পরি গাল ফুলিয়ে বলে। সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়।
” মা বলছিলাম।
সিফাত আমতা আমতা করে বলে।
“বলো।
পরি সিফাতের চুলে হাত বুলিয়ে বলে।
” তোমার মাকে গিয়ে বলো বাবাকে টাইট একটা হাগ করতে।
“কেনো?
” বলো না মা। তোমাকে এতগুলো চকলেট কিনে দেবো।
“মা বকা দেবে।
” বকা দিলে কান্না করবে। আর আমাকে হাগ না করা পর্যন্ত কান্না থামাবে না। কেমন?
হেসে বলে সিফাত।
“এটা করলে তুমি হাসবে তো?
সিফাতের দুই গালে হাত দিয়ে বলে পরি।
সিফাত মুচকি হেসে পরির কপালে চুমু খায়।
” সব সময় হাসবো। সারাজীবন হাসবো।
“আমি আর তুমি মিলে মা কে আটকে রাখবো। কোথাও যেতে দেবো না।
” হু মা। না থাকলে চাইলে হাত পা বেঁধে রাখবো।
পরি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩২
#তানিশা সুলতানা
“মা একটা কথা বলি?
সিমি পরির মাথায় হালকা সরিষার তৈল ছোঁয়াচ্ছিলো। তখন পরি বলে।
সিমি এক পলক তাকায় পরির মুখের দিকে। ঠোঁট উল্টে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে। কোঁকড়া চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বেশ কিউট লাগছে। সিমি ভেবেছিলো বেশ অনেকখন পরির সামনে রেগে থাকবে। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না।
সিমি মুচকি হেসে পরির কপলে চুমু খায়।
” বলো
“একটা টাইট হাগ দেবে?
” তোমাকে?
ভ্রু কুচকে বলে সিমি।
“নাহহহ। বাবাকে।
এক গাল হেসে বলে পরি। সিমির হাসি মুখটা চুপসে যায়। যা দেখে পরি ভয় পেয়ে যায়। ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে। সিমি ঘাবড়ে যায়।
” মা কাঁদছো কেনো? বকি নি তো তোমায়?
বিচলিত হয়ে বলে সিমি।
“বাবা টাইট হাগ না দিলে আমি কান্না থামাবো না।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে পরি।
সিমি দাঁত কটমট করে।
” ড্রামাবাজ বাবার ড্রামাবাজ মেয়ে।
ডাক তোর বাবাকে। আজকে তার এক দিন কি আমার যতদিন লাগে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলপ সিমি।
পরির কান্না শেষ। এক গাল হেসে। এক দৌড়ে চলে যায় বাবাকে ডাকতে। সিমি পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মিনিট পেরনের আগেই সিফাতকে নিয়ে হাজির। সিফাত লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।
সিমি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে।
“পরি যা করার তাড়াতাড়ি করতে বলো। আমার আবার কাজ আছে।
ভাব দেখিয়ে শার্টের কলার পেছনে ঢেলে বলে সিফাত।
সিমির গা জ্বলে যায়। এই লোকটাকে দু’চোখে সজ্জ হয় না। ইসস কবে যে এই লোকটার মুখ দেখার হস্ত থেকে রহ্মা পাবে।
” মা তাড়াতাড়ি হাগ দাগ। বাবা আমার জন্য চকলেট আনতে যাবে।
পরি সামনে পরে থাকা চুল গুলো ঝাড়া দিয়ে পেছনে নিয়ে সিফাতের মতো ভাব দেখিয়ে বলে। সিমির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।
চেহারা বাবার মতো হয়ে স্বভাবটা মায়ের মতো হলো না কেনো? এটাই এখন অফসোস হচ্ছে সিমি।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সিফাতের দিকে। সিফাতের ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। সিমি সিফাতের হাসি দেখে তাচ্ছিল্য হাসে।
পরি খুশিতে লাফাচ্ছে। পরির খুশি দেখে সিমির প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে সিফাতকে। সিফাত চোখ বন্ধ করে ফেলে। সিফাতের বুকে নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয় সিমি।
পরি দৌড়ে এসে দুজনের পা জড়িয়ে ধরে। সিফাত আর সিমি নিচু হয়ে বসে। পরি আর সিমিকে জড়িয়ে ধরে সিফাত। পরি দুজনের কপালে চুমু খায়।
“এটা শুধুমাত্র আমার মেয়ের ইচ্ছে। এতে আমার মনের কোনো সায় না।
সিমি সিফাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে। সিফাতের ঠোঁট থেকো হাসি গায়েব হয়ে যায়।
” মেয়ের খুশির জন্যই না হয় এই পাপীকে হ্মমা করে দাও
করুন গলায় বলে সিফাত।
“নাইস জোকস
সিমি তাচ্ছিল্য হেসে বলে।
” পরি মা এবার হয়েছে? চলো গোছল করবে।
সিমি সিফাতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে।
“মা বাবাকে গোছল করিয়ে দেবে না?
পরির কথা শুনে সিফাত বিষম খায়। সিমি পরির গালে আলতো করে হাত রাখে।
“শুধু গোছল না তুমি চাইলে তোমার বাবাকে পটি করিয়েও দেবো।
সিফাত বড় বড় চোখ করে তাকায় সিমির দিকে।
” আমি আসছি
বলেই সিফাত চলে যায়। সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পরিকে গোছল করাতে নিয়ে যায়।
🥀
প্রভা ছোঁয়ার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। সাদি ওর বর এটা এতদিন কেনো বললো না?
ছোঁয়া একটু পর পর হাই তুলছে। বাংলা স্যার ক্লাস নিচ্ছে। ছোঁয়া আর প্রভা সবার পেছনের ছিটে বসেছে। সামনে বসে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকতে বোরিং লাগে।
” সাদি ভাইয়া বাড়িতে তোকে কি বলে ডাকে রে?
প্রভা ছোঁয়ার এক হাত জড়িয়ে বলে।
“ইস্টুপিট ইডিয়েট গাঁধা আরও আছে।
” এগুলো বলে কেনো ডাকে?
“অতিরিক্ত ভালোবাসে তো তাই।
” ওহহহ
তাহলে বিয়ের পর আমিও আমার বরকে বলবো এসব বলে ডাকতে।
লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে প্রভা।
“আচ্ছা বলিস
ছোঁয়া প্রভার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায়। এতো গাঁধা কেনো মেয়েটা?
ছুটির পর স্কুলের গেটের সামনে যেতেই দেখতে পায় সাদি দাঁড়িয়ে আছে। আজকে শুধু সাদির সাথে মেঘা না ইভাও আছে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়৷ দুই দুইটা মেয়ে নিয়ে ঘুরে ভাবা যায়?
ছোঁয়া কাছাকাছি আসতেই ইভা এক দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে।
” কেমন আছো কিউট সুইট ভাবি।
ছোঁয়ার গাল টেনে দিয়ে বলে ইভা।
“এই তো ভালো। আপনি?
ছোঁয়া একটু হেসে বলে।
” আমিও ভালো।
ছোঁয়া আর ইভা সাদির কাছে এসে দাঁড়ায়। মেঘা মুখ বাঁকায়। ছোঁয়াকে যে ওর পছন্দ না এটা ছোঁয়া বেশ বুঝতে পারে।
“ভাইয়া আপনার ফুল।
বয়স আট নয় হবে। একটা মেয়ে সাদির দিকে বেলি ফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে বলে। সাদি বিনা বাক্যে ফুলের মালা নেয়। আর মেয়েটা চলে যায়।
মেয়েটাকে দেখে তো ফুল বিক্রেতা মনে হয় না। যথেষ্ট ভদ্র ফ্যামেলির মেয়ে বলেই মনে হয়। আর সাদি টাকাও দিলো না।
কে এই মেয়ে? প্রতিদিন কি এই মেয়েটাই ফুল দেয় সাদিকে? কেনো দেয়? ফুল নিয়ে সাদি হাসলো না কেনো?
ছোঁয়া সাদির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে ভাবছে।
” এই ছোঁয়া ভাইয়া এখন তোকে ফুলের মালা দিয়ে প্রপোজ করবে। হাউ রোমান্টিক।
প্রভা ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। ছোঁয়া চোখ পাকিয়ে তাকায় প্রভার দিকে আর প্রভা চুপসে যায়।
“সাদি মেয়েটা এখনো তোকে ফুল দেয়?
ইভা অবাক হয়ে বলে
” হুমম মাঝেমধ্যে দেয়।
“বেপারটা তো খুব ইন্টারেস্টিং।
” আমার লেট হচ্ছে।
সাদি গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। মেঘা গিয়ে সাদির পাশে বসতে নেয়।
“মেঘা তুমি পেছনে বসো।
মেঘা সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছনে গিয়ে বসে।
প্রভা আর ইভাও পেছনে বসে। ছোঁয়া এখনো দাঁড়িয়ে। মনের মধ্যে ফুলের বিষয়টা ঘুরপাক খাচ্ছে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়।
” পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করার কথা ভাবছো নিশ্চয়?
সাদি বলে ওঠে। ছোঁয়া চমকে সাদির দিকে তাকায়।
মুখ বাঁকিয়ে সাদির পাশে বসে পড়ে।
ইভা আর প্রভা গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে। ছোঁয়া আড়চোখে সাদির দিকে তাকাচ্ছে।
“ফুল নিয়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন থাকলে সেটা এখনই ঝেড়ে ফেলো। এটা আমার পারসোনাল। তবে এটা শিওর থাকো এই ফুলের মালা তোমার আর আমার সম্পর্কটাকে কখনোই ফাটল ধরাবে না। এটা কোনো সিরিয়াস বিষয় না।
আশা করি এটা কে ইসু করে আবার ডিভোর্স পেপার বানাতে যাবে।
মন দিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে সাদি৷ ছোঁয়া ঠোঁট টিপে হাসে। সাদি যে ডিভোর্সে ভয় পাচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।
” ভাবছি আমিও প্রতিদিন ওই ছেলেটার থেকে ফুল নেবো।
ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাদি গাড়ি ব্রেক করে।
সবাই ভ্রু কুচকে তাকায় সাদির দিকে। সাদি চোখ বন্ধ করে মাথা ঝুঁকে বসে আছে।
“সাদি ঠিক আছিস তুই?
ইভা সাদির গায়ে হাত দিয়ে বলে। রীতিমতো ঘামছে সাদি। নীল শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি হয়ে গেলো?
ছোঁয়া ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে?
সাদি কথা বলছে না। শুধু জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
” এই সাদি?
খারাপ লাগছে?
ইভা সাদির কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
ছোঁয়া এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। টেনে হিঁচড়ে হিজাবটা খুলে সাদি মুখ মুছিয়ে দেয়।
“ককি হয়েছে আপনার?
কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না ছোঁয়া।
সাদি চোখ বন্ধ করে বুক ভরো শ্বাস টেনে ঘাড় বাঁকিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” আমি ঠিক আছি।
ছোট করে বলে সাদি। ইভা বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। মেঘা আর প্রভাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু ছোঁয়া কেঁদেই যাচ্ছে। উনি সুস্থ থাকলে এভাবে কেনো কথা বললো?
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৩
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়া কিছুতেই সাদিকে ড্রাইভ করতে দেবে না। সাদির হাত ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। বাচ্চা মেয়েটার পাগলামি দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে সাদি। এতোটা প্রসেসিভ এটা কখনোই ভাবেই নি সাদি।
“আমি ঠিক আছি।
ছোঁয়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে সাদি। সাদির এই টুকু আশকারা পেয়ে ছোঁয়া সাদির বুকে মাথা ঠেকিয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মিশিয়ে নেয় ছোঁয়াকে নিজের সাথে।
” কাঁদছো কেনো? কিছুই হয় নি আমার। জাস্ট পেসারটা কমে গেছে। তাই এমনটা হয়েছে।
ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে সাদি।
পেসার কমে যাওয়ার কথা শুনে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় ছোঁয়া। ওদের গ্রামে একজন পেসার কমে যাওয়াতে মরে গেছিলো।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
“এ কি পাগলামি শুরু করলে বলো তো?
মরে গেছি আমি?
ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়ার অভিমান হয়। ছেড়ে দেয় সাদিকে। জানালার সাথে ঘেসে বসে চোখের পানি মুছতে থাকে।
বাকি সবাই অবাক হয়ে যায়। এই টুকুনি একটা মেয়ে এতোটা ভালোবাসে সাদিকে?
সাদি নিজেই ডাইভ করা শুরু করে। সৈকতের চেম্বারের সামনে ইভা আর মেঘাকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে চলে যায়।
ছোঁয়া একটা কথাও বলছে না৷ মাঝেমধ্যে শুধু নাক টানছে।
তিন রাস্তার মোড়ে প্রভাকে নামিয়ে কাছের একটা ডাক্তারের চেম্বারে যায় সাদি। একা হলে কখনোই যেতো না। ছোঁয়ার গাল ফুলানো দেখেই গেলো। এতে যদি মেয়েটা খুশি হয় হ্মতি কি?
ডাক্তারের চেম্বারে গাড়ি থামার সাথে সাথে ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে। সাদির দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসে। সাদি গম্ভীর চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
তারাহুরো করে নেমে যায় ছোঁয়া। তারপর সাদির এক হাত জড়িয়ে ঢুকে পড়ে ভেতরে। তেমন ভিড় নেই। সোজা গিয়ে ডাক্তারের সামনে বসে পড়ে ছোঁয়া। সাদির হাত ধরে টান দিয়ে ওকেও বসিয়ে দেয়। বেশ বিরক্ত হয় সাদি।
” ডাক্তার আংকেল
উনি আমার বর সাদমান চৌধুরী। আজকে ড্রাইভ করার সময় উনি মাথা ধরে বসেছিলো। ওনার সারা শরীর অসম্ভব ঘেমে গেছিলে। কি হয়েছে ওনার?
খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে কাচুমাচু হয়ে বসে বলে ছোঁয়া। ডাক্তার সাদির দিকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।
“মামানি ওনার পবলেম তো ওনাকে বলতে হবে। নাহলে তো আমি বুঝতে পারবো না।
মুচকি হেসে বলে ডাক্তার। ছোঁয়া তাকায় সাদির দিকে। সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকায়।
” রাতে প্রচুর জ্বর আসছিলো।
সাদি বলে। ডাক্তার জ্বর পেসার মেপে ঔষধ লিখে দেয়।
ছোঁয়ার মনটা ভীষণ খারাপ। সাদির জ্বর হলো আর ও জানতেই পারলো না?
ছোঁয়ার জোরাজুরিতে ঔষধ কিনতে বাধ্য হয় সাদি। সাদির মতো এই সাধারণ অসুখ এমনিতেই সেরে যাবে।
সারা রাস্তা কেউ আর কোনো কথা বলে না।
সিমি রান্না করছে। সিফাত এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। এতে বিরক্ত হচ্ছে সিমি।
“এই আপনার পবলেম কি? এভাবে গায়ে পড়ছেন কেনো?
পেঁয়াজ কাটছিলো সিমি। সিফাত একটা পেঁয়াজ এগিয়ে দিতেই সিমি ছুড়ি সিফাতের দিকে তাক করিয়ে বলে।
সিফাত শুকনো ঢোক গিলে। সিমির এরকম রাগি রাগি ফেসটা বেশ লাগছে সিফাতের।
” ততোমাকে হেল্প করছি।
ছুড়িটা আলতো করে সিমির হাত থেকে নিয়ে বলে সিফাত।
“বলেছি আপনাকে?
” না মানে তোমার রান্না তো আমিও খাবো। তাই ভাবছিলাম আর কি?
মেকি হেসে বলে সিফাত।
“আপনাকে দেবো ভাবলেন কি করে?
সিমি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে।
সিফাত ভরকে যায়।
” আমি খাবো কি তাহলে?
“আমার মাথা খাবেন ইডিয়েট।
মুখ ঘুরিয়ে আবার পেঁয়াজ কাটতে শুরু করে সিমি। পরি ঘুমচ্ছে।
সিফাত বেহায়ার মতো দাঁড়িয়েই থাকে। সিমির সামনে মোড়া টেনে বসে পড়ে সিফাত। সিমি একবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।
” সিমি
চমকে ওঠে সিমি। হাতটা থেমে যায়। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়। কি ছিলোএই ডাকে? এই ডাকটা কেনো হৃদপিণ্ডে আঘাত করলে সিমির?
সিফাতের দিকে তাকানোর সাহস নেই।
“আমি বাবা মাকে বলেছি সব। আজকেই এখানে আসছেন তারা। এবার একটা বিহিত হয়ে যাবে বলো?
আমি তোমার সাথে খুব অন্যায় করেছি। কেনো অন্যায় করেছি জিজ্ঞেস করো না। আমি বলতে পারবো না। হয়ত লজ্জায় নয়ত তোমার কাছে দ্বিতীয় বার ছোট হতে চাই না তাই।
তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তাই মেনে নেবো। ছোট থেকে পরিকে দুহাতে মানুষ করেছি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না সিমি।
সিফাতের গলা ধরে আসছে। কথা বলতে পারছে না। সিমির চোখেও পানি চিকচিক করছে।
“সাদি স্যার আমায় কথা দিয়েছে সবটা ঠিক করে দেবে। দেখি উনি কি করে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে সিমি।
সিফাত উঠে পরির কাছে চলে যায়। সিমি তাচ্ছিল্য হাসে। ভাগ্য খুব কাজে একটা খেলা খেললো সিমির সাথে। কপালটা এতোটা খারাপ না হলেও পারতো।
বাসায় ফিরে আগে আগে ছোঁয়া সাদির রুমে ঢুকে পড়ে। এক প্রকার তারাহুরো করে। সাদির শরীরটা আবারও খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে।
সাদি রুমে ঢোকার সাথে সাথে ছোঁয়া সাদির থেকে ব্যাগ কেঁড়ে নেয়। অবাক হয় সাদি।
” কি করছে?
জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া উওর দেয় না। সাদির হাত ধরে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে সাদির ঘড়ি খুলতে যায়। সাদি বাঁধ দেয়।
“পাগল হয়ে গেছো?
চোখ পাকিয়ে বলে সাদি।
” বেশি কথা বললে মুখ সেলাই করে দেবো।
ছোঁয়া উল্টে চোখ রাঙিয়ে বলে। সাদি অবাক হয়ে যাচ্ছে ছোঁয়ার ব্যবহারে।
সাদি ঘড়ি খুলে শার্টের বোতাম খুলে দেয়।
“এবার বাকিটা আমি পারবো।
সাদি বলে। ছোঁয়া ভেংচি কাটে
কাবাড থেকে সাদির টাওজার আর টিশার্ট এনে সাদির হাতে ধরিয়ে দেয়।
” শুনেন সাদু
শাশুড়ী আসছে একটু পরে। উনি যদি জিজ্ঞেস করে রান্না কে করে কি বলবেন?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ছোঁয়া।
“আমি?
” নাহহহ বলবেন ছোঁয়া রান্না করে।
“মিথ্যে কেনো বলবো?
” না বললে আমিও বলে দিবো।
ছোঁয়া মিষ্টি করে হেসে বলে। ভরকে যায় সাদি।
“কি বলবে?
” বলবে আপনি আমার সাথে রোমাঞ্চ করেছেন?
দুই হাতে মুখ ঢেকে বলে ছোঁয়া। কেশে ওঠে সাদি। আস্ত ইডিয়েট এই মেয়ে।
“আর শুনেন। বলবেন আপনাকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব কিছু আমি করে দেই। ওকে
সাদি সরু চোখে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে কিছু বলে না।
” দুই মিনিটে সাওয়ার নিয়ে চলে আসবেন। নাহলে ওয়াশরুমেই লক করে রাখবো।
চোখ রাঙিয়ে গটগট পা ফেলে চলে যায় ছোঁয়া।
“আস্ত ইডিয়েট একটা
সাদি বিরবির করে বলে।
চলবে